মোবাইল ফোন আমাদের একটি অতি অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বলতে গেলে আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে এই ডিভাইসটি। মোবাইলের ব্যবহার দিনে দিনে বেরেই চলেছে। মোটামুটি আমরা অনেকেই জানি মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারে আমাদের ক্ষতি হয়। কিন্তু কি ক্ষতি হয় তা কয়জন জানি? হাতে গোনা কয়েকজন জানি এর ক্ষতিকর প্রভাব গুলো। ঐ হাতে গোনা কয়েকজনও জানা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারেনা প্রয়োজনের তাগিদে। আসুন জেনে নেই কিভাবে এবং কি কি ক্ষতি করে আমাদের সকলের প্রয়োজনীয় এই ডিভাইসটি।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় বার্তা আদান প্রদানের সময় ফোন থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় রশ্নির বা রেডিয়েশনের (Radiation) প্রভাবে মানব দেহের ক্ষতি হয়ে থাকে। সবাই কানে অর্থাৎ মাথার পাশে ফোন ধরে কথা বলি। কথা বলার সময় মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন মস্তিষ্কেরে কোষগুলোর সংস্পর্শে চলে আশে। ফলে মস্তিষ্ক তথা দেহের অনন্যা অংশেও প্রভাব পড়ে ও নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকির সৃষ্টি হতে পারে।
মৌলিক কিছু কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার প্রয়োজনে প্রতিটি মোবাইল ফোনকেই কিছু পরিমাণে বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তা তথা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন(Electromagnetic Radiation) নির্গত হয়। মোবাইল ফোন রেডিও ওয়েভ বা বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে সিগনাল প্রেরণ করে। এই রেডিও ওয়েভ আছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এনার্জি, যা আসলে এক ধরনের বিদ্যুৎচৌম্বকিয় তেজস্ক্রিয়তা।
আমরা যখন মোবাইল ফোনে কতা বলি তখন ফোনের ট্রান্সমিটারটি আমাদের মুখ থেকে নির্গত শব্দকে গ্রহণ করে সেটিকে ধারাবাহিক সাইন ওয়েভে সংকেতায়িত করে। সাইন ওয়েভ হচ্ছে একধরনের অনির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ যেটি ফোনের এন্টেনা থেকে নির্গত হয়ে ইথারে প্রবাহিত হয়। সাইন ওয়েভকে মাপা হয় ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে। ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে একটি তরঙ্গ কত বার উঠা নামা করে তারই হিসাব। আমাদের মুখ থেকে নিঃসৃত শব্দকে সাইন ওয়েভে রাখা হয়, তখনই ট্রান্সমিটার ঐ সিগনাল বা সঙ্কেতকে এন্টেনার কাছে প্রেরণ করে, এন্টেনা আবার এই সিগনালকে অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়।
মোবাইল ফোনের মধ্যে যে ট্রান্সমিটার থাকে সেগুলো বেশ কম শক্তির হয়ে থাকে। সেলফোন ০.৭৫ থেকে ১ ওয়াট শক্তিতেই দিব্যি চলতে পারে। ফোনের নির্মাতাভেদে এর ভেতরে ট্রান্সমিটারের অবস্থান বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে; তবে সাধারনত এটি ফোনের এন্টেনার খুব কাছাকাছি থাকে।
সংকেতায়িত সিগনালকে প্রেরণ করার দায়িত্ব যে বেতার তরঙ্গের, সে তরঙ্গ গঠিত হয় এন্টেনা থেকে নির্গত বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তা বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন দিয়ে। এন্টেনার কাজ হচ্ছে বেতার তরঙ্গকে শূন্যে ছড়িয়ে দেওয়া। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এসব তরঙ্গকে গ্রহণ করা বা রিসিভ করার দায়িত্ব হচ্ছে মোবাইল ফোনের টাওয়ারে স্থাপিত একটি রিসিভারের।
বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তা আছে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় শক্তির তরঙ্গ যা চলাফেরা করে আলোর গতিতে। সকল বিদ্যুৎচৌম্বকীয় শক্তিই Electromagnetic Spectrum এর রেঞ্জ বা পরিধির মধ্যে অবস্থান করে। এই রেঞ্জের মধ্যে কম শক্তির ফ্রিকোয়েন্সির শক্তি যেমন আছে তেমন আছে এক্সরে এবং গামারে – র মত শক্তিশালী ফ্রিকোয়েন্সি।
বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তা বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন দুই ধরনের হতে পারে। যথাঃ
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ আডমিনিস্ট্রেশন (FDA) নানা ভাবে গবেষণা করার পর ঘোষণা করে ‘মোবাইল ফোন থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে এর তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।’ এর মানে এই না যে মোবাইল ফোন থেকে স্বাস্থ্য হানি বা শারীরিক ক্ষতির সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অতিমাত্রায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশনের কারণে মানব দেহের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন যেমন খাবারকে গরম করে ঠিক একই ভাবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন মানুষের দেহকোষকে উত্তপ্ত করে। কারণ মানুষের দেহ অতিমাত্রায় উত্তাপ সহ্য করারমত করে তৈরি হয় নি। বিশেষ করে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার কারণে আমাদের চোখ অ এর আশেপাশের এলাকা এই উত্তাপ থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মোবাইল ফোন আয়োনাইজিং রেডিয়েশন ও নন- আয়োনাইজিং রেডিয়েশন দুই ধরনেরই হতে পারে। আয়োনাইজিং রেডিয়েশন এর চেয়ে নন- আয়োনাইজিং রেডিয়েশনে ক্ষতির মাত্রও অনেক কম হলেও দীর্ঘ দিন ধরে এই রেডিয়েশন ঘটলে কি হয় বলা মুশকিল। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, একনাগাড়ে অনেক দিন এই রেডিয়েশন ব্যবহারের কারণে মানব দেহের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। মানুষ বর্তমানে যে হারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেছে তাতে স্বাস্থ্য হানি হওয়াটা স্বাভাবিক।
মোবাইল ফোনের সঙ্গে জরিত যত রোগের কথা এ পর্যন্ত উঠেছে তার মধ্যে ক্যান্সার ও ব্রেইন টিউমারই প্রধান। তবে এ ব্যাপারে অনেক গবেষণে চালিয়েও গবেষকরা এ পর্যন্ত কোন স্থির সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারেনি।
ডেনমার্কের এক দল প্রায় ২০ বছর ধরে ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডনিশ নাগরিকের উপর গবেষণা চালানোর পর ২০০৬ সালে তারা ফল প্রকাশ করে – তাদের গবেষণায় মোবাইল ফোন ও কান্সারের কোন সম্পর্ক পাওয়া যায় নি। আমরা জানি যে মোবাইল ফোন দেশ ও মহাদেশ ভিত্তিক তৈরি হয়। তার মধ্যে ধরা হয় ইউরোপ মহাদেশের জন্য যে মোবাইল ফোন গুলো তৈরি হয় তার গুনাগুন সবচেয়ে ভালো। তাই ডেনমার্কের গবেষকদের তথ্য সকলের জন্য নির্ভর যোগ্য নয়।
২০০৫ সালের সুইডিশ গবেষকদের একটি গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে Glioma বা Meningioma (মস্তিস্কের টিউমার বিশেষ) হতে পারে এমন কোন তথ্য প্রমাণ পায় নি গবেষকরা। তবে দশ বছরের বেশি সময় ব্যবহার করলে কোন মস্তিস্কের টিউমার হবার সম্ভবনা আছে কিনা সে ব্যাপারে সন্দিহান তারা।
সুইডেনের ক্যারিলিওনস্কা ইন্সিটিউট- এর গবেষকরা মোবাইল ফোনের সঙ্গে ব্রেইন টিউমারের সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা চালান। গবেষণা শেষে তারা মন্তব্য করেন – দশ বছর বা তার বেশি রিতিমত মোবাইল ব্যবহার করলে Acoustic Neuroma নামক ব্রেইন টিউমারের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তবে ১০ বছরের কম সময় মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই টিউমার হবার কোন লক্ষন দেখা দেয় নি।
২০০৭ সালে Dr. Lenart Hardel নামক এক সুইডিশ গবেষক তার গবেষণা রিপোর্টে বলেন – অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষতিকর তথা Malignant Tumor হবার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়াও মানুষ মাথার যে পাশে ফোন ধরে কথা বলে সেপাশে টিউমার হবার সম্ভবনা বেশি থাকে বলে জানান Dr. Hardel . শুধু তাই নয় টানা ১০ বছর ধরে প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে টিউমারের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায় বলে অভিমত দেন Dr. Hardel .
এখনও বিভিন্ন দেশে এই নিয়ে গবেষণা চলছে।
গবেষণা নিয়ে অনেক মতবাদ রয়েছে তার মধ্যে মোবাইল ব্যবহারে ক্ষতি হবার সম্ভবনা আছে বলে বেশির ভাগ গবেষকদের ধারনা। যেহেতু মোবাইল একটি খুব প্রয়োজনীয় ডিভাইস তাই এটা ব্যবহার করতেই হবে। তাই নিরাপদ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং সুইডেন ইত্যাদি দেশের তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত জাতীয় উপদেষ্টা কতৃপক্ষ মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তাদের নাগরিকদের কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছেঃ
আসুন সকলে মোবাইল ফোন ব্যবহারে সচেতন হই ও অন্যকে সচেতন করি। এতে আমারাই বিপদ থেকে রক্ষা পাবো।
টিউন টি সর্বপ্রথম “মৌমাছি” তে প্রকাশিত। সময় থাকলে ঘুরে আসুন জানার আছে অনেক কিছু – মৌমাছি
আমার মনে হয় এই বিষয়টাতে সকলের জানা উচিত। আপনারও যদি মনে হয় তবে নীচে নির্বাচিতটিউন হিসাবে মনোনয়ন করুন।
আমি হোসেন রাহাত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 210 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তিকে ভালোবাসি আর মানুষকে সাহায্য করতে পছন্দ করি তাই Blogging এর মাধ্যমে নিজের মনের ইচ্ছাকে পূরণ করার চেষ্টা করছি। আমাকে আরও জানতে Visit করুন -হোসেন রাহাত
shikkhonio tune, onek kichhu jante parlam,
ekta prosno–bluetooth die je amra hands-free kotha boli, shetate rdiation er matra kemon?