এই টিউনের শিরোনামে “লিনাক্স” শব্দটির স্থলে “ওপেন সোর্স/ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম" লিখলে হয়ত আরও ভাল হত, তবে শিরোনামের প্রয়োজনেই এমনটি করতে হয়েছে। সাধারণত, আমরা ফ্রি/ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম বলতে চোখের সামনে প্রথমেই লিনাক্স ভিত্তিক উবুন্তুকেই ভেসে উঠতে দেখি। নিরাপত্তা হচ্ছে উবুন্তুর অনেকগুলো সুবিধার মধ্যে অন্যতম। একথা চরম উবুন্তু-বিদ্বেষী লোকেরাও স্বীকার করে নিতে বাধ্য। কি, “চরম উবুন্তু-বিদ্বেষী” কথাটি লিখায় অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। একটু চোখ-কান খোলা রেখে ইন্টারনেট ব্রাউজ করলেই উবুন্তু বা, ফ্রি ও.এস নিয়ে সমালোচনামূলক লেখা পোস্ট পেয়ে যাবেন। যাইহোক, সেদিকে আমি যাচ্ছিনা। বিশ্বব্যাপী যেসব দেশের বিরুদ্ধে সফটওয়্যার পাইরেসির দুর্নাম আছে আমাদের বাংলাদেশও তার মধ্যে অন্যতম। আমাদের বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারীরই পাইরেটেটেড সফটওয়্যার (উইন্ডোজ ও.এস) দিয়ে কম্পিউটারে হাতেখড়ি। সেই সাথে দোকান থেকে দিয়ে দেয়া অনেক ক্র্যাকড, সিরিয়াল-কি যুক্ত সফটওয়্যার তো রয়েছেই! আজকাল “One PC One DVD” তে নানান সফটওয়্যারের সমাহার পাওয়া যায় যার প্রায় সবগুলোই পাইরেটেড।
আমরা সবাই বুঝি, পাইরেসি অন্যায়। আমাদের নৈতিকতা, দেশপ্রেম এবং বিশ্বদরবারে মাতৃভূমির সম্মান রক্ষার আবেগ থেকেই ওপেনসোর্স এর দিকে যাত্রা শুরু। কিন্তু এই যাত্রা অনেক ক্ষেত্রেই কিছু কারণে থেমে যায়। আমাদের আবেগ ও বাস্তবতার সীমারেখা সেখানেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
“উবুন্তু”কেই আমি এই টিউনে ওপেনসোর্সের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার করব। উবুন্তু হচ্ছে অত্যন্ত সুপরিচিত লিনাক্স বেসড অপারেটিং সিস্টেম। ক্যানোনিকাল এর সহযোগিতায় উবুন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের মত গ্রাহকদেরকে ফ্রি’তে সিডি দিয়েছে- যদিও বর্তমানে শিপ-ইট (ফ্রি সিডি দেয়ার) প্রোগ্রাম বন্ধ আছে। সন্দেহ নেই, আমাদের যাদের ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত, তাদের জন্য শিপ-ইট একটি ভাল উদ্যোগ।
বছরখানেক আগের কথা, আমার এক বন্ধু, যে উইন্ডোজ এক্সপির খুব ভক্ত ছিল, তাকে একটা উবুন্তুর সিডি দিয়ে এর উপকারীতার কথা বলায় সে আগ্রহ নিয়ে উবুন্তু ইন্সটল করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু বেচারা ইনস্টল করার সময় তার পুরো হার্ডডিস্কটাই ফর্ম্যাট করে দিল! তার ভাষায়, একদম চোখের সামনেই নাকি “Erase The Disk” অপশন ছিল। তারপর কোডেক নামানো, সফটওয়্যারের “অপ্রতুলতা” ইত্যাদির কারণে সে আবার সেই এক্সপিতেই ফিরে গেল- মাঝখান থেকে থেকে হার্ডর্ডিস্কের যাবতীয় ডাটা হাওয়া হয়ে গেল।
আরও অনেকেই এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। উবুন্তুর ইউজার ইন্টারফেসের সাথে “দুর্বোদ্ধ্যতা” শব্দটির ব্যবহার হয়ত এখান থেকেই শুরু।
প্লাগ-ইন এর লাইসেন্স সংক্রান্ত একটা সীমাবদ্ধতা আছে আমি জানি, কিন্তু তবুও যখন উবুন্তু ইন্সটল দিয়ে অডিও-ভিডিও প্লে করা যায়না, তখন একটু হতাশই হতে হয়। যেখানে আমাদের অনেকেরই ইন্টারনেট সুবিধা খুব সীমিত, সেখানে চোখের সামনে প্লাগ-ইনের নামে মেগাবাইটের পর মেগাবাইট ডাটা বিসর্জন দেয়া একটু কষ্টকরই বটে।
উবুন্তুতে কিছু কিছু কাজ আছে যাতে কমান্ড লাইন ব্যবহার করা লাগে। অনেকে হয়ত কমান্ড ভালবাসেন, তবে আমার মত “ননটেকি” মানুষের জন্য এটা একটু কঠিন। অনেকে উইন্ডোজের “নেক্সট” বাটন চেপে সফটওয়্যার ইনস্টল করার চেয়ে উবুন্তুতে মুখস্ত কমান্ড বা সফটওয়্যার সেন্টারে গিয়ে “ওয়ান ক্লিক” পদ্ধতি পছন্দ করেন। কিন্তু উইন্ডোজের ঐ “নেক্সট” বাটন কিন্তু আপনাকে লোকেশন, কনফিগারেশনের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা দেয়!
উবুন্তুতে .deb প্যাকেজ ব্যবহার করে সফটওয়্যার ইনস্টল করা একটি সুবিধাজনক পদ্ধতি। কিন্তু উবুন্তুর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সফটওয়্যারই অনলাইনে থেকে ইনস্টল করতে হয় যা আমাদের অনেকের জন্য “অসম্ভব”।
আমার ডেস্কটপে উবুন্তু ১০.০৪, কুবুন্তু ১০.০৪ এবং উইন্ডোজ সেভেন সাইড বাই সাইড ইনস্টল করা। উবুন্তু ভালোই চলে, কিন্তু কুবুন্তু প্রায়ই হ্যাং করে। তার উপর “প্যাকেজ ব্রোকেন” সমস্যা দুইটায়ই পোহাতে হয়েছে। উবুন্তু ১১.০৪ বের হওয়ার খবর পেয়েই গ্রামীণফোনে পি৩ নিয়ে দুই দিন ধরে তা ডাউনলোড করেছিলাম। কিন্তু ইনস্টল করতে গিয়ে দেখলাম রুট পার্টিশন না কি যেন নির্ধারণ করতে বলতেছে, যা অনেক চেষ্টা করেও পারিনি। ইন্টারনেট সার্চ করে দেখলাম অনেকে অনেক কথাই বলছে যার মধ্যে কেউ কেউ এটাকে “বাগ” বলেও অভিহিত করেন। অবশেষে কোনক্রোমে ইনস্টল করে দেখলাম ইউনিটি (১১.০৪ এর ডিফল্ট ইউ.আই) হতাশাজনকভাবে স্লো। এর চেয়ে ১০.০৪ অনেক দ্রুত!
এরকম আরো অনেক কারণ রয়েছে যার জন্য আমরা চাইলেও সফটওয়্যার পাইরেসি এড়াতে পারছিনা। প্রতিদিন বাংলা ব্লগগুলোতে ওপেনসোর্স নিয়ে কয়টা পোস্ট হচ্ছে আর সফটওয়্যারের ক্র্যাক, সিরিয়াল, কিজেন নিয়ে কয়টা হচ্ছে একটু খেয়াল করলেই বাস্তবতা টের পাওয়া যাবে। উবুন্তু ব্যবহার করার লোকের অভাব নেই, কিন্তু এত এত টাকা খরচ করে ইন্টারনেট নিয়ে “সফটওয়্যার প্যাকেজ” ডাউনলোড করা সত্যিই কঠিন। তাই অনেকেই পাইরেসি বাদ দিয়ে ওপেনসোর্স ব্যবহার করে দেশের ভাবমূর্তি ঊজ্জ্বল করার প্রয়াস নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওপেনসোর্সের পথে যাত্রা করেন ঠিকই কিন্তু আমাদের টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতার কারণেই তা থেমে যেতে সময় লাগেনা। এক্ষেত্রে সরকার যদি ইন্টারনেটের খরচ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় কমিয়ে দিতে ISP গুলোকে বাধ্য করেন এবং ওপেনসোর্স নিয়ে বেশি বেশি কর্মশালার আয়োজন করেন, তবে হয়তো এর সুফল পাওয়া যাবে। সাথে সাথে আমাদেরও মেধাস্বত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ, আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন।
আমি আরাফাত বিন সুলতান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 197 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
khubi shundor totthobohul & bastobdhormi tune. prio te nilam. Jekono notun jinishe dakar age tar demerits gulo shomporke shobaike shocheton kora uchit,noile ashvonger bedona ta beshi hoy.