এই টিউন টিতে আমি আমাদের দেশের গ্রাম বাংলার পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি। টেকনোলজি কিভাবে আমাদের গ্রামে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে তা তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্য। দেশের উপকার করতে হলে দেশকে জানা জরুরী। আর গ্রামগুলোকে বাদ দিয়ে তা অসম্ভব। তাই আসুন, জেনে নেই আমাদের পরিবর্তিত গ্রাম্য জীবন সম্পর্কে।
অনেকদিন পর গ্রামে গেলাম। প্রায় ১বছর। এই ১বছরে গ্রামে আশাতীত পরিবর্তন দেখতে পেলাম। ছোট বেলায় সমাজ বইয়ে পড়েছি শহরে গ্রাম অপেক্ষা অনেক দ্রুত পরিবর্তন হয়। কিন্তু আমার মনে হয় বর্তমানে গ্রামে শহরের চেয়ে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। যাই হোক মূল কথায় আসি। বাস থেকে নেমে ভ্যানে চড়ে যেতে যেতেই দেখলাম লোকজনের মধ্যে বিশাল পরিবর্তন। পোশাক আশাক, দোকান পাটের বিন্যাস সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। লোকজনের মধ্যে একধরণের ফুর্তির আমেজ দেখতে পেলাম। আগে গ্রামে গেলেই দেখতাম,বিষণ্ন চেহারার ক্লান্ত শীর্ণ চেহারা। এখন আর তা নেই। টেকনোলজির হাওয়া মানেই বিনোদন ক্ষেত্রে পরিবর্তন। আগে গ্রামে ডিশ ছিল না। এখন তাদের ডিশ আছে। ১০-১২টা চ্যানেল ধরে। বাইরের বিশ্বের সাথে তাদের পরিচিতি বাড়ছে। লোকজন আর বিটিভি দ্যাখে না। এই ডিশের একটা কুফলও আছে। বেশিরভাগ লোকই ইন্ডিয়ান চ্যানেল নিয়া পড়ে থাকে। আমি ইন্ডিয়ান সংস্কৃতির কুত্সা রটাচ্ছি না। আমি চাই না, আমাদের লোকেরা এমন বেশ ধারণ করুক যে তাদের দেখে ইন্ডিয়ান মনে হয়। স্বকীয়তা বলে একটা জিনিস আছে।
আমার গ্রামটা থানা থেকে একটু ভিতরে। সেখানে দেখলাম কয়েকটা সিডির দোকান। এগুলো আগেও ছিল। কিন্তু এখন ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত কম্পিউটার এসেছে। খোজ খবর করে দেখলাম মোটামুটি আগ্রহের বশেই নেট নেওয়া। অজপাড়াগাঁয়ে যেখানে এস এস সি পাশ লোকই হাতে গোনা,সেখানে নেট ইউজ করবে এমন লোক আরও কম।
বিনোদন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসলেও শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন নাই বললেই চলে। আমার চাচাত বোনটা এইবার জেএসসি দিয়েছিল। গ্রেড পয়েন্ট ৩। সে তার স্কুলের ফার্স্ট গার্ল। তাকে তার পিতামাতা science দিয়েছে। এস এস সি তে সে জিপিএ ৫ পাবে বলে মনে হয় না। এর অন্যতম কারণ, যোগ্য শিক্ষকের অভাব।নারী শিক্ষার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আরও প্রকট। আমার সেই বোনটি প্রায় ৩কিমি দুরে এক শিক্ষকের কাছে পড়তে যেত। যানবাহন বলতে ভ্যান ছাড়া আর কিছু নেই। সবসময় তা সুলভ নয়। গ্রামের লোকেরা কয়েকদিন পরেই বলাবলি শুরু করল,আমার বোনটি নাকি মাঝে মাঝেই ছেলেদের সাইকেলে চড়ে আসে। ফলাফল : তার প্রাইভেটে যাওয়া বন্ধ।
গ্রামে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। ৫বছর আগে মোবাইল নেটওয়ার্ক যে বেহাল দশা ছিল,এখনও তা বিদ্যমান। আমাদের মোবাইল অপারেটরগুলো রঙচঙে বিজ্ঞাপনের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে। কিন্তু গ্রামে নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয় না।
ইন্টারনেট সম্পর্কে গ্রামের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এখন বেশ ধারণা এসেছে। আমার ফুফাত ভাইয়ের খুব সখ ছিল ইন্টারনেটে তার একটা ছবি দেওয়া (আমাকে ফেসবুক ব্যবহারের সময় ছবি আপলোড দিতে দেখেছে)। আমি তার একটা ছবি আমার ফেসবুক একাউন্টে আপলোড দিলাম। আমার বন্ধুরা কমেন্ট করল। আমি তাকে পড়ে শোনালাম। সে খুব খুশি হল। তার বয়সটা টিন এজ। আমারো। তাই এই বয়সের কাউকে খুশি হতে দেখলে আমার খুব ভাল লাগে। কারণ,বিশুদ্ধ বিনোদনের খুবই প্রয়োজন এই বয়সে। যাই হোক,টিউনটা বড় হয়ে গেল। ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমাদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য আমাদেরকেই কাজ করতে হবে। সরকারের উপর সবকাজ চাপিয়ে দিলে হবে না।
তাই আসুন,সবাই এক হয়ে কাজ করি।
সবাইকে ধন্যবাদ।আল্লাহ সবার মঙ্গল করুন।
আমি আহমাদ মুসা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 98 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
পড়ে ভালো লাগলো ।