ম্যাক সিপিইউ আর্কিটেকচারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

টিউন বিভাগ প্রতিবেদন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

হ্যালো টেকটিউনস জনগণ, কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশাকরি সবাই ভাল আছেন। এখন থেকে নিয়মিত আবার নতুন টিউন নিয়ে আমরা হাজির হলাম আপনাদের কাছে। আর টেকটিউনসের নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিস নিয়ে ভালো না থেকে আর উপায় আছে? আর এই নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিসের ধারা বজায় রাখার নিমিত্তে, আজকে আমি আপনাদের সাথে একদম নতুন একটি টপিক নিয়ে হাজির হলাম। আর আপনারা এই টিউনের মাধ্যমে জানতে পারবেন অনেক নতুন নতুন সব তথ্য।

গত ৩৬ বছর ধরে অ্যাপল ম্যাকিনটোসের তিনটি আলাদা সিপিইউ আর্কিটেকচার ব্যবহৃত হয়েছে এবং বর্তমানে তারা চতুর্থ সিপিইউ আর্কিটেকচারে মাইগ্রেট বা স্থানান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ARM আর্কিটেকচারে মাইগ্রেট করবে তার একটি গুজব শুনা যাচ্ছে, আসুন আমরা এখন ম্যাকের সিপিইউ আর্কিটেকচারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে নেই।

Motorola 68 K (1984-1995)

১৯৮৪ সালে, অ্যাপল প্রথম ম্যাকিনটোস কম্পিউটার রিলিজ করেছে (যা অ্যাপল ম্যাকিনটোস নামে পরিচিত)। এতে 8 MHz Motorola 68000 সিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। আর ডেভেলপমেন্ট চলাকালীন, প্রথম দিকে ম্যাক প্রোটোটাইপ হিসেবে 8/16-বিট এর মটোরোলা 6809 সিপিইউ ব্যবহার করেছিল। যাইহোক, এরপরে একজন ডিজাইনার 68000 সিপিইউ এর উপর ভিত্তি করে Apple Lisa তৈরি করার জন্য গ্রাফিক্স রুটিনগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখার পরে, আরও ব্যয়বহুল 16/32-বিট এর 68000 সিপিইউ ব্যবহৃত হয়েছিল। অতঃপর, Apple Lisa 5 মেগাহার্টজ এর একটি 68000 সিপিইউ ব্যবহার করেছে, কিন্তু নতুন ম্যাক প্রোটোটাইপটি 8 MHz এ চালাতে সক্ষম। আর এই সফলতার কারনে স্টিভ জবস অনেক অনেক আনন্দিত ছিলেন।

এর পরের দশকে, ম্যাকিনটোস কম্পিউটারগুলোর নতুন মডেলগুলোতে পিওর 32-বিট এর 68020, 68030 এবং 68040 চিপ ব্যবহার করা হয়েছিল। এই চিপ গুলো সময়ের সাথে সাথে স্পীড এবং পার্ফরম্যান্সেও অনেক উন্নতি সাধন করেছিল।

সামগ্রিকভাবে, Apple কমপক্ষে 72 টি বিভিন্ন ম্যাক ডিভাইসে 68k সিপিইউ ব্যবহার করেছে। আর এই সিপিইউ এর সর্বশেষ ম্যাক মডেল ছিল ১৯৯৫ সালের PowerBook 190 ডিভাইসটি।

PowerPC (1994-2005)

১৯৮০'র দশকের শেষের দিকে, কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রিজ Reduced Instruction Set Computing (RISC) এর মতো নতুন ট্রেন্ডের কারনে ১৯৭০'র দশকের সিপিইউ আর্কিটেকচার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে। নতুন ধরনের সিপিইউ আর্কিটেকচার কৌশলটি আরও পাওয়ারফুল এবং ফাস্ট সিপিইউ এর নিশ্চয়তা দেয়। আর এর ধারাবাহিকতায় অ্যাপল বিভিন্ন RISC সিপিইউ এর অপশন খোঁজা করেছে, তবে শেষ পর্যন্ত একটি সাধারন সিপিইউ প্ল্যাটফর্ম ডিজাইন করতে IBM এবং Motorola সাথে চুক্তি করেছে। আর এই তিনটি কোম্পানি Microsoft-Intel এর মার্কেটে আধিপত্য কমিয়ে আনতে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল (এটি Wintel নামেও পরিচিত)।

অবশেষে, PowerPC আর্কিটেকচার তৈরি হয়ে গেল। এটি প্রথমে IBM এর ওয়ার্কস্টেশন গুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে এবং পরে ১৯৯৪ সালে Power Macintosh 6100 এ ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপরে, Apple একটি 68 K এমুলেটর ডিজাইন করেছিল যা Mac OS এর প্রত্যেকতি কপিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর এটি করা হয়েছিল এই কারনে যে, নতুন ম্যাক ডিভাইসগুলো প্রায় পুরানো 68 K আর্কিটেকচারের জন্য ডেভেলপ করা সকল সফটওয়্যার নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারে।

এর পরে কয়েক বছর ধরে, Apple প্রায় ৮৭ টি বিভিন্ন ম্যাক মডেল রিলিজ করেছে যাতে, 601, 603, G3, G4, এবং G5 সিরিজের চিপ ব্যবহার করা হয়েছিল PowerPC সিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছিল। আর PowerPC এর সিপিইউ এর ক্লক স্পীড এই সময়ে এসে অনেক উন্নতি সাধন করেছে, সিপিইউ গুলোর ক্লক স্পীড 60 MHz থেকে শুরু করে 2.7 GHz ক্লক স্পীড পর্যন্ত উন্নতি সাধন করা হয়েছিল। অতঃপর, Apple এর ফাইনাল PowerPC এর মডেলটি হচ্ছে  Power Mac G5 যা ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে রিলিজ করা হয়েছিল।

Intel x86 (2006-Present)

২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে, Apple তাদের PowerPC সিপিইউ এর উপর বেশি নির্ভরতার কারনে একটু অন্যভাবে চিন্তাভাবনা করা শুরু করেছিল। তারা নতুন PowerPC এর চিপ উৎপাদন করা এবং ডিজাইন করার বিলম্বের কারনে Mac ডিভাইসগুলো Intel ভিত্তিক পিসি বা সিপিইউ গুলোর সাথে স্পীডের সমতা রাক্ষা করতে সমস্যা হয়েছিল, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, G5 প্রজন্মের কারনে PowerPC চিপ গুলো খুবই ব্যাক ডেটেড হয়ে দিয়েছিল, আর অনেক হিট জেনারেট করতো যার ফলে ল্যাপটপ বন্ধ করে ঠান্ডা করে চালানো লাগতো।

সুতরাং, Apple যখন WWDC 2005 এ Intel চিপ ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছিল, তখন সমালোচকরা খুশি হয়েছিল সাথে সাথে অবাক ও হয়েছিল। তারা বহু বছর ধরে বিজ্ঞাপণে তারা PowerPC কে Intel এর চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতো আর তারাই Intel চিপে স্যুইচিং করবে যা আসলেই ম্যাকিনটোসের জন্য লাইফলাইনের মতো মনে হয়েছিল। আর ফলে ম্যাক সিপিইউ এর পারফরম্যান্স রাতারাতি প্রায় চারগুণ বেড়েছে। আর প্রথম Intel চিপের ম্যাক এর মডেলগুলো ২০০৬ এর শুরুর দিকে ঘোষণা করা হয়েছিলঃ মডেলগুলোর একটি হচ্ছে iMac এবং MacBook Pro।

আর Apple তাদের বিভিন্ন জেনারেশনের ডিভাসের মধ্যে সফটওয়্যার এর সামঞ্জস্যতা রক্ষা করতে, Mac OS X 10.4.4 ভার্সনে Rosetta নামের একটি উন্নত এমুলেটর প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তি করেছে। এটি PowerPC এর কোড ম্যাজিক গতিতে Intel সিপিইউ তে ট্রান্সলেট করতে পারে।

আর এর খুব অল্পসময় পরেই, ডেভেলপাররা তাদের প্রোগ্রামগুলো সর্বজনীন বাইনারি ডিস্ট্রিবিউট করা শুরু করে, যা PowerPC বা Intel ম্যাকে চালানো যায়, যা x86 ট্রান্সিশন কে খুব সহজ করে দিয়েছিল। এর পরে, আস্তে আস্তে Rosetta কে Mac OS X থেকে রিমুভ করে দেওয়া শুরু করে যার শুরু হয়েছিল Mac OS X 10.7 Lion ভার্সন থেকে।

এখন গণনা করা শুরু করেন ২০০৬ সাল থেকে অ্যাপল কমপক্ষে ৮০ টি মডেল ম্যাক রিলিজ করেছে যাতে Intel সিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত Intel ম্যাকের ফাইনাল মডেলটি এখনও নির্ধারিত হয়নি, তবে অনেক বিশেষজ্ঞই দাবি করেছে যে এই বছরের (২০২০ সালের) শেষের দিকে আসতে পারে বলে ধারণা করেছে।

ARM (2021?)

বর্তমান সময়ে, Apple এর Intel ভিত্তিক ম্যাকগুলো ভাল বিক্রি হচ্ছে এবং সম্ভবত তাদের আগে থেকেই একটি পাওয়ারফুল সিপিইউ বানানোর রোডম্যাপ রয়েছে। তা যাইহোক, অ্যাপল শীঘ্রই তার ম্যাক ডিভাইস গুলো কে ARM ভিত্তিক সিপিইউ এ স্যুইচ করবে তার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। তাহলে এটিই হতে যাচ্ছে ম্যাক ডিভাইসের তৃতীয় সিস্টেম আর্কিটেকচার? - যদি তাই হয় তবে কেন?

সেই ২০১০ সাল থেকে, iPhone, iPad, এবং Apple TV হার্ডওয়্যারগুলোর জন্য তাদের নিজস্ব ARM সিপিইউ ভিত্তিক system-on-a-chip (SOC) প্যাকেজগুলো ডিজাইন করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এর ফলে Apple কোম্পানি আশ্চর্যজনক অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছে। তাছাড়া এর স্পীড এবং পারফরম্যান্স প্রতি ওয়াটে  নাটকীয়ভাবে উন্নতি সাধন করেছে, কিছু iPads এখন MacBooks সিঙ্গেল কোর পারফরম্যান্সের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অতঃপর, ARM চিপসের সাথে Intel এর লেভেল পারফরম্যান্স সাথে কম্পেয়ার করে শেষ পর্যন্ত তাদের ম্যাক সিপিইউ আর্কিটেকচার কে ARM চিপসে সম্ভাব্য প্রতিস্থাপন করবে।

তাই ARM আরও কম্পিটেকটিউনসভ পারফরম্যান্স অনুযায়ী, Apple আরও বেশি দক্ষতা এবং কন্ট্রোল সুবিধা সহ এই আর্কিটেকচারের সিপিইউ তে স্যুইচ করে অনন্য সুবিধা অর্জন করবে। Apple ইতিমধ্যে অনেকগুলো ফিচার এই সিপিইউ আর্কিটেকচারের জন্য প্যাক করা শুরু করে দিয়েছে, এই আর্কিটেকচারের সিপিইউ তে যেমন দ্রুত ফটো প্রসেসিং এবং AI ফেস রিকোগনিশন করতে পারে যা Apple এর নির্দিষ্ট ডিজাইনের লক্ষ্যগুলোকে বাস্তবায়ন করতে পারে। তাছাড়া, Apple যদি ম্যাক ডিভাইসের জন্য তাদের নিজস্ব চিপ ব্যবহার করে তাহলে তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তা ক্রিয়েট করে নিতে পারবে এবং অতিরিক্ত কিছু সুবিধা তো রয়েছেই।

এছাড়াও, Apple এর পক্ষে Intel এর থেকে চিপ কেনার পরিবর্তে নিজেরাই চিপ উৎপাদন করা যাবে অনেক কম দামে। আর এর ফলে Apple এর প্রোডাক্ট গুলোকে আরও লাভজনক করে তুলবে যা এদের বটম লাইনের জন্য খুবই ভাল। তাছাড়া Apple যদি এই দিকে এগিয়ে চান তাহলে এই কস্ট সেভিং এর মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে আমরা সস্তাতে ম্যাক ডিভাইস পাবো বলে আশা রাখি।

তাছাড়া এর ফলে ডেভেলপাররাও অনেক লাভবান হবেন। কেননা Mac ডিভাসের জন্য ARM ভিত্তিক SOC এর জন্য অ্যাপ ডেভেলপাররা আরও সহজেই তাদের আইফোন এবং আইপ্যাড সফটওয়্যার ম্যাক প্ল্যাটফর্মে পোর্ট করতে সুবিধা দিবে। আর তারা আরও সহজেই তিনটি প্ল্যাটফর্মের জন্য সেম ফিচার বজায় রেখে সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে পারবে।

শেষ কথা

এখন, একটি মাত্র প্রশ্ন বাকি আছে আর তা হলঃ এটি কখন হবে? ২০২০ সালের শেষের দিকেই Apple নতুন আর্কিটেকচার এর সিপিইউ ব্যবহার করবে বলে আশা রাখি, সুতরাং আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং কি হয় তা সময় এলেই দেখতে পাবো। যাই ঘটুক না কেন, Macintosh সম্ভবত ভবিষ্যতে একটি ইউনিফাইড প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উম্নোচিত হবে - এমনকি যদি Apple কে আরও আর্কিটেকচার পরিবর্তন করতে হয় তাহলে তারা তাই করবে।

টিউন জোসস করুন, আমার টিউন শেয়ার করুন, টেকটিউনসে আমাকে ফলো করুন, আপনাদের মতামত জানান

আমি এরকম নিত্যনতুন কাজের সফটওয়্যার নিয়ে টেকটিউনসে হাজির হবো নিয়মিত। তবে সে জন্য আপনার যা করতে হবে তা হলো আমার টেকটিউনস প্রোফাইলে আমাকে ফলো করার জন্য 'Follow' বাটনে ক্লিক করুন। আর তা না হলে আমার নতুন নতুন টিউন গুলো আপনার টিউন স্ক্রিনে পৌঁছাবে না।

আমার টিউন গুলো জোসস করুন, তাহলে আমি  টিউন করার আরও অনুপ্রেরণা পাবো এবং ফলে ভবিষ্যতে আরও মান সম্মত টিউন উপহার দিতে পারবো।

আমার টিউন গুলো শেয়ার বাটনে ক্লিক করে সকল সৌশল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। নিজে প্রযুক্তি শিখুন ও অন্য প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানান টেকটিউনসের মাধ্যমে।

Level 8

আমি রায়হান ফেরদৌস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 191 টি টিউন ও 131 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 73 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস