এটি একটি কপি পেস্ট পোস্ট ।
মুল পোস্ট টি এখানে ঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/shamseerblog/29157343
লেখক সামশির ভাই । আমার অনেক প্রিয় একজন ব্লগার ।
বর্ষরে বর্ষরে -ঝুম বৃষ্টির মাঝে আমার ঐশ্বরিয়া ব্যাপক নাচানাচি করলেও যখন ঢাকা ছাড়লাম তখন আমাদের প্রায় গোসল হয়ে গেছে ঘামে। গ্রীন লাইন এর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র সাধ্যমত চেস্টা করে যাচ্ছে আমাদের ঠান্ডা করার জন্য। শীতল হবার আগেই ডিভিডিটা শব্দ বিহীন হয়ে গেল। লুমিক্স ক্লিক টু ফেইম - রিয়েলিটি শোর জন্য আমরা মোটামুটি হাইওয়েতে চলা সবগুলো বিলাস বহুল বাসই ট্রাই করে ফেলেছি, এবং প্রতিবারই কোন না কোন ভেজাল লেগে ছিল বাস গুলোর মিউজিক সিস্টেমে, কখনো মনিটর নস্ট তো কখনো ডিভিডি প্লেয়ারটাই নস্ট। এবার সব ঠিক থাকলেও সাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা । কিছু একটা করতে গিয়ে শেষে অস্কার জয়ী হার্ট লকার ছাড়া হল। সাউন্ড আসে যায়, ডিভিডি প্লেয়ারে জোরে ঝাকি দিলে সে কিছুক্ষন ভালো শব্দ করে !!!!
ভার্সিটি পড়ার সময় সিলেটের ওয়েদার নিয়ে আমাদের কমন ডায়ালগ ছিল- সিলেটের ওয়েদার আর নারীর মন, এর কোন টাকেই বোঝা সম্ভব নয় । হলও তাই। কটকটে ঢাকা ছেড়ে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশ মাত্রই এক পশলা বৃ্ষ্টি এসে আমাদের মনটাকে জুড়িয়ে দিল। এরপর প্রায়ই ক্ষনে ক্ষনে বৃষ্টি তার কোমল পরশ দিয়ে গেছে আমাদের।
মেঘের মধ্যে দিয়ে চলে আসা জীবন এর মধ্যে বলা আছে
বলা আছে কি ভাবে একটা বিন্দুর ওপর পাক খায় ঘূর্ণি ঝড় ...
না কোন কাল বৈশাখীর দেখা ছাড়াই হার্ট লকার শেষ করে আমরা পৌঁছে গেলাম সিলেট শহর ছেড়ে জাফলং এর পথে জাকারিয়া রিসোর্টে।
সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল বিরাট বিস্ময়। প্রতিযোগী শাওন বলল শামসীর ভাই মোনায়েম ভাই, ফখরুল ভাই, জন ভাই এসেছেন আমাদের সাথে দেখা করতে। তারা সিলেট ফটোগ্রাফী ক্লাবের নেতৃত্বে আছেন। সিলেট জীবনে কত যে আড্ডা দিয়েছি ওনাদের সাথে। মোনায়েম ভাই সেই ফ্লীম ফটোগ্রাফীর আমলে তার ল্যাবে কম মূল্যে আমাদের ছবি প্রিন্ট করে দিতেন, সে কথা ভুলি কি করে। তবুও তারা চাইতেন আমরা যেন ছবি তুলি। প্রায় চার বছর পর এই মানুষ গুলোর সাথে দেখা হয়ে অনেক ভাল লাগল।
এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে- সময় আমার কাটেনা ......তবুও কি আর করা সকালে উঠতে হবে বলে হালকা বৃষ্টি স্নান দিয়ে ঘুমাতে গেলাম।
সকালে নাস্তার টেবিলে গিয়েই মনটা ভাল হয়ে গেল। মনে হল আমরা জঙ্গলে বসে আছি।
আমরা যখন জাফলং এর দিকে যায় বৃষ্টি আবারও তার ডানা মেলে হাজির হয়। আমার অন্যতম পছন্দের একটা রাস্তা ধরে ছুটে চলেছি। প্রতিবারের মতই আবারও মনটা খারাপ হয়ে যায়। পাহাড় থেকে নেমে আসা চপলা চঞ্চলা ঝর্ণা গুলো শুধু দেখেই তৃপ্ত থাকতে হয় ছুয়ে দেখার উপায় নেই। সীমানাটা যে ভাগ করেছিল তার উপর আবারও মেজাজটা চড়ে যায়, ঐ পাহাড়গুলো আমাদের হলে পৃথিবীর কি এমন ক্ষতি হত। সে না পাওয়ার ক্ষতি মেনে নিয়েই সবাই ছবি তুলতে লেগে গেল। মেঘলা আলোয় , বৃষ্টিতে খুব ভাল ছবি উঠার কথা না, তবুও এই সৌন্দর্যটুকু ধরে রাখায় কারো চেস্টার কোন কমতি নেই।
জাফলং এখন মৃত, সেই রূপ সুধা আর নেই। আমাদের লোভাতুর দুটো হাত প্রতিনিয়ত একে গলা টিপে হত্যা করছে, আর হয়ত খুব বেশী দিন লাগবেনা একে পুরোপুরি নিঃশ্বেষ করে দিতে।
চা বাগান কে দুপাশে রেখে আমরা গিয়েছিলাম লাওয়াছড়া রেইন ফরেস্টে- বাংলাদেশের একমাত্র রেইন ফরেস্ট। একসময় বানর, হনুমান সহ নানা প্রানীর বিচরন ক্ষেত্র হলেও এখন প্রায়ই নিঃস্ব। কদাচিৎ দেখা মিলবে তাদের। ট্রেনে যারা সিলেট পর্যন্ত যাবেন তাদের কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মনে হবে এই বনের মাঝ দিয়ে যখন ট্রেনটি ছুটে যাবে তখন।
বৃষ্টি নেমেছে, রিম ঝিম বৃষ্টির লহরী -- তার বারে বারে আগমনে খুব একটা ভাল ছবি তোলা গেলনা। আমাদের ফিরতি পথ ধরতে হয় । হইহল্লা আর গান শুনতে শুনতে আমাদের মাইক্রো এগিয়ে চলে। হঠাৎ চোখে পড়ে একটা খালি খাটিয়া নিয়ে এগিয়ে আসছে কিছু মানুষ। হালকা বিষন্নতা ছুয়ে যায় তখন। তবুও জীবন থেমে নেই, জীবন চলছে জীবনের নিয়মে, ভালবাসা অথবা হারানোকে সাথী করে..........পরিবেশটাকে আবার সাবলীল করতে কেউ একজন গেয়ে উঠে-
আমার সারা দেহ খেয়োও গো মাটি
এই চোখ দুটো তার খেয়োনা
আমি মরে গেলেও
তারে দেখার সাধ মিটবেনা গো মিটবেনা।
আমাকে ফিরে আসতে হবে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস এ যখন দিয়েছি আমি এখন সিলেটে তখন ভার্সিটির সহপাঠী বন্ধু আসিফ ফোন করে বলল দোস্ত পারলে একবার দেখা করিস শহরে আসলে, চার বছর হতে চলল দেখা হয়না। আসার কিছুসময় আগে ওকে ফোন দিয়ে অপারগতা জানালাম, আমার যে শহরে যাওয়া হচ্ছেনা, প্রিয় ভার্সিটিকেও দেখা হবেনা এবার। কিছুক্ষন পর ও ফোন দিয়ে বলল আমি আসতেছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে রাত নয়টার সময় প্রায় বিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ও চলে এল জাকারিয়া রিসোর্টে। অনেকদিন এমন আপ্লুত হইনি ।
ছুটে যেতে হয়, ছুটে চলাই জীবন, রাজ্যের বিষন্নতা যখন ভর করে তখন এই গানটিই গুন গুন করি বারবার-
বহুদূর যেতে হবে,
এখন ও পথের অনেক রয়েছে বাকী
তুমি ভয় পেয়োনা, তুমি থেমে যেওনা
ভালবাসায় বিশ্বাস রেখো ..............।
আমি সিনবাদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 58 টি টিউন ও 594 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ভালবাসি ইন্টারনেট , আমার ল্যাপটপ , আর আমার পরিবারকে ।
ছবিগুলো দারুন। কিছু মনে করবেন না। আপনারকি মনে হয়না ইদানিং টেকনোলজির বাইরে সব টিউন করছেন?