ল্যারি এলিসন সম্পর্কে ১৫টি তথ্য যা হয়তো আপনি জানেন না!

ল্যারি এলিসন (Larry Ellison) সম্পর্কে আজ আমি ১৫টি তথ্য আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি যেগুলো হয়তো আপনারা আগে জানতেন না। তবে ল্যারি এলিসনের সম্পর্কে এই তথ্যগুলো বলার আগে আপনাদের মধ্যে যারা ল্যারি এলিসনকেই চেনেন না তাদের জন্য টিউন শুরু করার আগে তার সম্পর্কে হালকা ধারণা দিয়ে নেই।

তার পুরো নাম লরেন্স জোসেফ এলিসন। তবে প্রযুক্তি বিশ্ব তাকে একনামে চেনে ল্যারি এলিসন হিসেবেই। তিনি ওরাকল কর্পোরেশনের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। ১৯৪৪ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করা ল্যারি তার শিক্ষাজীবনে ছিলেন অত্যন্ত অমনোযোগী। বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত সফলভাবে তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে পড়ার সময়ে তিনি প্রথম পরিচিত হন কম্পিউটার ডিজাইনের সাথে। ১৯৬৪ সালে তিনি স্থায়ীভাবে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসেন। সত্তরের দশকে তিনি এমডাল কর্পোরেশনের কাজ শুরু করেন। এখানে তার একটি কাজ ছিল সিআইএ’র জন্য ডাটাবেজ তৈরি করা। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি উৎসাহী হয়ে ওঠেন ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করতে। ১৯৭৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন নিজের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরিজ। পরে ১৯৭৯ সালে এরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওরাকল। দুই সন্তানের জনক ৬৯ বছর বয়স্ক ল্যারি এলিসনের সম্পদের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ার উডসাইডে। বর্তমানে তিনি বিশ্বের ৭তম ধনী ব্যক্তি! বেসিক ধারণা হয়ে গেল! এবার চলুন মূল টিউনে চলে যাওয়া যাক!

১) ঝুঁকিপূর্ণ স্পোর্টসের নেশা!

ল্যারি এলিসন ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্পোর্টসের প্রতি নেশা রয়েছে এবং এগুলোর জন্য অনেকবার ইনজুরির মুখোমুখিও হয়েছেন। তিনি মাউন্টেন বাইকিং, বডি সার্ফিং, ইয়াট রেসিং সহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্পোর্টসের হার্ডকোর ফ্যান হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করে থাকেন। অনেকবার ইনজুরির পরেও তিনি এগুলোর থেকে পিছপা হন না। বরং তার নিজের ইয়াট রেসিং ওরাকল ইউএসএ এর সাথে প্রায়ই রেসিংয়ে নেমে যান তিনি!

২) ৬৩টি ভাষার ডাটাবেজ!

তার প্রতিষ্ঠিত ORACLE ডাটাবেজটি বর্তমানে প্রায় ৬৩টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষার জন্য পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে বৃট্রিশ ইংলিশ, আমেরিকান ইংলিশ সহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ওরাকল পাওয়া যায় এখন!

৩) ইহুদি বিদ্বেষ

ল্যারি এলিসনের মা ছিলেন একজন ইহুদি এবং তার পিতা ছিলেন একজন ইতালিয়ান, কিন্তু তার মা তার ভরণপোষনের দ্বায়ভার নিতে চাননি তাই তাকে পালক পরিবারের কাছে তুলে দেন। এই কারণে এলিসন ইহুদি পরিবার থেকে আসলে তিনি ইহুদি সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন না। কিন্তু তিনি যে ফ্যামিলীতে পালক হয়ে আসেন সেটাও ইহুদি পরিবার ছিলো, তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যলাপে এলিসনে যেতেন না এবং অনিহা প্রকাশ করতেন।

৪) ব্যয়বহুল জীবন!

বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েও তাদেরকে বাজেট করে চলা দরকার সেটা হয়তো ল্যারি এলিসন প্রায়ই ভুলে যান। তাই তার ব্যক্তিগত ফাইনান্সিয়াল এডভাইজর তাকে বিভিন্ন বার অতিরিক্ত ব্যায় না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বরাবরেই দামী দামী বোট এবং গাড়ির পিছে তার অনেক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন।

৫) গোপন তল্লাশি!

গুজব রয়েছে যে ল্যারি এলিশন ব্যক্তিগত ভাবে প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নিয়োগ করেছিলেন মাইক্রোসফটের পরিত্যাক্ত প্রজেক্টগুলো থেকে আইডিয়া খুঁজে বের করার জন্য! পরবর্তিতে জানা যায় যে এটি মাইক্রোসফট ছিলো না বরং মাইক্রোসফটের আন্ডারে কার্যরত আরেকটি সফটওয়্যার কোম্পানি ছিলো। তবে পরে খবরটি লিক হয়ে যাবার পর এলিসন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেই বিষয়টির সত্যা নিশ্চিত করেন।

৬) ঝুঁকিপূর্ণ বিক্রি কৌশল!

তার সফটওয়্যার ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠান ORACLE কয়েকবার তার Aggressive সেলস কৌশলের জন্য প্রায় ধ্বংস হয়েই গিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে ওরাকলের ১০ শতাংশ স্টাফদের চাকরি ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার বিক্রি কৌশলের কারণে! এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হয়েছিল কোম্পানিটিকে।

৮) NBA প্রীতি!

তিনি একদা একটি NBA টিম ক্রয় করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পেরে উঠতে পারেননি। ২০১১ সালে তিনি নিউ ওরলেন্স হরনেট টিমকে ক্রয় করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে টিমটি আরো বেশি অর্থে বিক্রি হয়ে যায়। ২০১০ সালেও তিনি একটি টিমকে ক্রয় করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেখানেও বেশি মূল্যে টিমটি অন্যত্র বিক্রি হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি একটি NBA স্টেডিয়াম কিনে  রেখেছেন।

৮) শহরের বিরুদ্ধে আইনী অভিযোগ!

২০০০ সালে তিনি আমেরিকান City of San Jose এর বিরুদ্ধে আইনী অভিযোগ এনেছিলেন! তখন তিনি এই শহরে মধ্যরাতে এয়ারপোর্টে টেকঅফ নিয়ে কিছু সমস্যায় পড়েছিলেন, তবে তিনি শহরের নিয়মাবলীর কেয়ার না করে পুরো শহরের বিরুদ্ধেই আইনী অভিযোগ আনেন এবং তিনি এই কেইসে জিতেও যান!

৯) ব্যয়বহুল রেকর্ড!

২০০৪ সালে কয়েক মাসের জন্য তিনি আমেরিকার সবথেকে বড় আবাসিক প্রকল্পের ডিলের রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন, তখনকার সময়ে Malibu ক্যালিফোর্নিয়াতে তিনি ৫টি বড় বড় আবাসিক প্রকল্প কিনে নেন প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, আর এই পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তখন আর কোনো আবাসিক প্রকল্পে ডিল হয়ে থাকে নি! তবে তিনি এ রেকর্ডটি বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। কয়েক মাস পর ৭০ মিলিয়ন মার্কিণ ডলারে আরেকটি আবাসিক প্রকল্পের ডিল হয়ে যাবার পর তার এই রেকর্ডটি ভেঙ্গে যায়!

১০) স্টিভ জবস ফটোগ্রাফি!

এই পয়েন্টটি আপনাদের কাছে অন্যরকম লাগতে পারে! আপনি জানেন কি ল্যারি এলিসনের বিয়ের অনু্ষ্ঠানের ফটোগ্রাফার হিসেবে ছিলেন স্টিভ জবস! হ্যাঁ আপেলের স্টিভ জবস! ২০০৩ সালে তার ৪র্থ তম স্ত্রীর সাথে বিয়ের সময় তিনি স্পেশাল গেস্ট স্টিভ জবসকে তার বিয়ের ফটোগ্রাফির দায়িত্ব দিয়েছিলেন!

১১) হাওয়াই দ্বীপের মালিক!

পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দ্বীপ LANA-I যেটি Hawaian শহরে অবস্থিত, ল্যারি এলিসন এই দ্বীপের ৯৮% অংশের মালিকানায় রয়েছেন! ২০১২ সালে তিনি এই দ্বীপটির ৯৮ ভাগ অংশ কিনে নেন।

১২) গাছ বিদ্বেষ!

গুজব রয়েছে তিনি মাত্র ৪টি গাছের জন্য তার প্রতিবেশীকে কোর্টে নিয়ে গিয়েছিলেন! বলা হয়ে থাকে, তিনি তার বাসার পাশের প্রতিবেশিদের বাসাটি কিনে নেন মাত্র ৪টি গাছের জন্য! প্রতিবেশিদের ৪টি গাছ তার বাসার থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ কে নস্ট করে দিচ্ছিলো দেখে তিনি এই আইনী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন!

১৩) দানবীর!

কথিত রয়েছে ল্যারি এলিসন তার জীবনের প্রায় অর্ধেক সম্পদই বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থায় দান করে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেনও। তিনি অনান্য ধনী ব্যক্তিদেরকেও এই দান প্রক্রিয়া আসার অনুরোধ জানিয়ে থাকেন।

১৪) ৫০০ ডলার!

এলিসনের ২য় স্ত্রী ORACLE থেকে তার দাবীপূরণ মাত্র ৫০০ ডলারে করেছিলেন! ল্যারি এলিসন মোট ৪ বার বিয়ে করেছিলেন। ২য় বার বিয়ের সময় তিনি ওরাকল কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত করার শুরু সময়ে করেছিলেন। তার ২য় বিয়েটির ডির্ভোসের সময় তার স্ত্রী তার কোম্পানির উপর দাবী বসান এবং ডিভোর্সে সেই দাবীর অর্থের পরিমাণ হয়েছিল মাত্র ৫০০ ডলার! হয়তো তার সাবেক স্ত্রী তার এই কোম্পানি ভ্যালু সম্পর্কে কোনো আইডিয়া ছিলো না কিংবা তিনি এই ব্যাপারে কোনো কেয়ার করেন নি!

১৫) প্রতি বছরে ১ ডলার:

অনান্য বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের মতোই ল্যারি এলিসনও তার ORACLE কোম্পানির বার্ষিক স্যালারী ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছরে ১ মিলিয়ন ডলার থেকে ১ ডলারে নামিয়ে আনেন। কারণ তিনি এই অর্থের প্রয়োজন মনে করেন না! কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে তাকে তার কোম্পানি থেকে স্যালারী নিতে হবে তাই তিনি সেটাকে কমিয়ে সর্বনিম্ব পযার্য়ে ১ ডলারে নামিয়ে আনেন। TESLA কোম্পানির ইলন মাস্ক, ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ, টুইটারের জ্যাক ডোরসির মতো বছর প্রতি ১ ডলারের নীতিতে চলে আসেন ল্যারি এলিসন!

 

ল্যারি এলিসন একজন জটিল ধরনের মানুষ, তিনি একাধারে সফটওয়্যার বিজনেসম্যান, কোটিপতি, গাড়ি এবং স্পোর্টসের প্রতি তার নেশা রয়েছে, কয়েকবার বিয়ে করেছেন এবং ডিভোর্সেরও স্বাদ নিয়েছেন অন্যদিকে তিনি এয়ারপোর্টে নিয়মাবলী ভেঙ্গেছেন এবং প্রতিবেশিদের গাছকে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যকে কেটে ফেলার পাগলামীও করে থাকেন! আশা করি আজকের টিউনের এই তথ্যগুলো আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে! আজ এ পর্যন্তই! আগামীতে কোনো ভিডিও গেমের রিভিউ নিয়ে আমি গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে!

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস