প্রযুক্তিবোদ্ধারা সবসময় ব্যস্ত নতুন কি গেজেট আসছে, যে গেজেটটা কিছুদিন আগে এসেছে সেটা কেমন পারফর্ম করছে, ভবিষ্যতে কি ধরনের প্রযুক্তি পণ্য আসতে চলেছে, কোন পণ্যে কি সমস্যা আছে এই সব বিষয় নিয়ে। কিন্তু প্রযুক্তি দুনিয়ার, প্রযুক্তি সংস্কৃতির নিজের যে ছিদ্রগুলো, যে ব্যার্থতাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কেউ কোন কথা বলে না। এমন ভাবে ব্যার্থতা এবং ছিদ্রগুলো প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা এড়িয়ে চলে যাতে মনে হয় আসলে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কোন স্ক্যান্ডাল নেই।
ব্যাপারটা আসলে এমন না যে প্রযুক্তি সংস্কৃতির কোন সমস্যা নেই। প্রযুক্তি দুনিয়ায় অনেক ছিদ্র আছে, অনেক ভুল আছে, অনেক সমস্যা আছে কিন্তু তারপরও এগুলো এড়িয়ে যাবার কারণ হল প্রযুক্তির সকল ব্যার্থতাগুলো, সকল ছিদ্রগুলো অস্পষ্ট। কেননা কোন প্রযুক্তিই আসলে পুরোপুরি ব্যার্থ হয় না। কোন প্রযুক্তিই ১০০% ভাল হয় না বা খারাপ হয় না। আর সবচেয়ে বড় কারণ হল আমরা ব্যার্থতাগুলো ভুলে যেতে চাই, সেগুলো একদম হারিয়ে যাক এমন চাই।
কিন্তু আসলে সেটা হয় না আর হওয়াটাও ঠিক না। ব্যার্থতাগুলো, ছিদ্রগুলো, ভুলগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। সেগুলো মনে রেখেই আমাদের পরবর্তিতে এই ভুলগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে, ভুলে গেলে হবে না ব্যার্থতাই সাফল্যের জন্মদানকারী। আজকে এই টিউনে আমরা প্রযুক্তি সংস্কৃতির ছিদ্র, ভুল এবং ব্যার্থতা নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন শুরু করা যাক।
এই টিউনে কোন পণ্যের ব্যার্থতা বা ভুল নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি। আমি আবারো বলছি কোন পণ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। টিউনটিতে সম্পূর্ণ প্রযুক্তি সংস্কৃতি বা প্রযুক্তি দুনিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর তাই দয়া করে কোন বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না।
ইন্টারনেট ছাড়া নাকি এক মুহুর্তও চলা সম্ভব না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকালের প্রায় সকল কাজের জন্য আমরা হয়ে পড়েছি ইন্টারনেট নির্ভর, ইন্টারনেট ব্যাতীত কোন একজন মানূষের জীবন আমরা কল্পনাও করতে পারি না। বাতির নিচে আসলেই চিরকাল অন্ধকার থাকে। আজকে আমি এই আর্টিকেলটি প্রকাশ করতেও ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েছি। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়েছি, ইন্টারনেট থেকে ছবি নিয়েছি, ইন্টারনেটের একটি মাধ্যমে লিখেছি এবং প্রকাশও করছি একটি ইন্টারনেট প্লাটফর্মে।
আজকাল যেসময় আমরা যখন হাই-স্পিড ইন্টারনেট কানকশনের কথা বলছি, যখন ১০ এমবিপিএস/ ১৫ এমবিপিএস এর ইন্টারনেট কানেকশনও আমাদের কাছে ধীরগতির মনে হয় সেই একই সময় পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষের কাছে কোন ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ৪০০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত। আমরা আজ তাদের নিয়ে সেই ইন্টারনেটেই লিখছি। কিন্তু তাদের কাছে হাই-স্পিড ত দূরে থাক নেই কোন ইন্টারনেট।
যখনই আমরা অ্যাপ ডেভেলাপিং বা প্রোগ্রামিং এর নাম শুনি এক নিশ্বাসেই আমরা এর প্রশংসার পর প্রশংসাই করতে থাকি। এর একটি কারণ হল ইন্টারনেট এবং মিডিয়ায় প্রোগ্রামিং সম্পর্কে থাকা অতিরঞ্জিত সব তথ্য। কিন্তু এরও রয়েছে খারাপ অনেক দিক। প্রোগ্রামিং বা অ্যাপ ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে একটু খবর পেয়েই একটা ছেলে বা মেয়ে যখন এর পেছনে ধুমধাম করে ছুটতে শুরু করে তখনই এটার খারাপ দিক প্রকাশিত হয়।
পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং এর ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল এটা শুনেই যে ছেলে বা মেয়েটা প্রোগ্রামিং এ ঝাপিয়ে পড়ে তার জন্য খবর খারাপই। প্রোগ্রামিং কোন সীমাবদ্ধ জ্ঞান নয়। ধামধুম প্রোগ্রামিং শিখে ফেলেই মাইক্রোসফট বা গুগলে চাকরি পেয়ে যাবে ভাবাটা অন্যায়। তোমাকে হতে হবে সেরা। হ্যাঁ প্রোগ্রামিং এর ভবিষ্যত অনেক ভাল। কিন্তু তুমি কেন প্রোগ্রামিং শিখবে? নিজেকে আগে প্রশ্নটা কর।
যদি ভালবাসা না থাকে প্রোগ্রামিং এর প্রতি, প্লিজ এস না তুমি এই দুনিয়ায়। তুমি সেটা কর যেটার প্রতি তমার ভালবাসা আছে, যেটা করে তুমি শান্তি পাও। মনে রাখবে পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রেরই ভবিষ্যত অনেক অনেক ভাল, শুধু তোমাকে হতে হবে সেরা, আবার কখনো সেরা হলেই চলে না হতে হয় সেরাদের সেরা। যাই হোক এসব আমার টিউনের বিষয় না। মূল কথা হল ট্রেন্ডের পেছনে ছুটো না। প্রযুক্তি দুনিয়ায় একটার পর একটা ট্রেন্ড আসতেই থাকবে এর পেছনে ছুটলে হবে না। বুঝে শোনে কাজ করতে হবে।
আমি শুনেছি, দেখেছিও। কিন্তু আগেই যেহেতু বলেছি এই টিউনটি কোন অ্যাপ সম্পর্কে না আই কোন অ্যাপ এর উল্লেখ করব না। তবুও বলছি শোন, Fitness App/Tracker গুলো এখন তো তুমুল জনপ্রিয়। স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য আমরা অনেকেই এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। এগুলো আমাদের দেহের নানা বিষয় সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখে। একদম মায়ের মত যত্ন মনে হচ্ছে না? একদমই না মায়ের সাথে কোন তুলনা তো কখনই সম্ভবই না তার উপরে এই যত্নে থাকে যদি ভেজাল তখন কি করবে? অবাক হবে কি যদি বলি, ফিটনেস অ্যাপগুলো অনেক সময় মিথ্যা তথ্য দেয়।
হ্যাঁ, মিথ্যা তথ্য দেয়ার একটি কারণ হল বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করা। মিথ্যা বললে ধরে ফেলা সম্ভব, কিন্তু সত্যের কাছাকছি যে মিথ্যাগুলি সেগুলো ধরা অনেক কঠিন। এই অ্যাপগুলো তোমাকে সত্যের কাছাকাছি মিথ্যা তথ্য দিবে। ভাবছ কিভাবে? সাধারণ সুস্থ্য একজন মানুষের শারীরিক অবস্থা এবং একজন অসুস্থ্য মানুষের শারীরিক তথ্য তুমি একটু গুগল করলেই পেয়ে যাবে। এই অ্যাপগুলো স্বাভাবিক মানুষের সাথে তুলনা করে একটা রিপোর্ট প্রস্তুত করে, সেটা সত্যের কাছাকাছি হবার আরেকটি কারণ হল কিছু কিছু সেন্সরের মাধ্যমে হালকা কিছু সত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে রিপোর্ট করা। (অবশ্যই আমি বলছিনা যে সব ফিটনেস অ্যাপ ভুয়া, আমি বলছি ভুয়াগুলো অনেক বেশি ক্ষতিকর)
এ তো গেল এক ধরনের অ্যাপের কথা এরকম আরো হাজারো ধোঁকাবাজ অ্যাপ আছে। একটু খেয়াল করলে নিজেও হয়ত একয়াত পেয়ে যেতে পারো। আছে নাকি তোমার জানাশোনা কোন ধোঁকাবাজ অ্যাপ? থাকলে জানাতে পারো টিউমেন্টে, সেখানে কোন নিষেধ নেই।
প্রাইভেসি মানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার সবারই আছে। যে কেউ চাইলে আরেকজনের কোন কিছু দেখতে পারে না। হোক সেটা কোন একটা ডায়েরী বা একটা খেলনা। তোমার কোন কিছু তুমি না চাইলে ধরার বা দেখার অধিকার নেই কারোরই। অনলাইনে ফেসবুকে বা টুইটারে তুমি কার সাথে কি মেসেজ করছ এই ধরনের স্পর্শকাতর কোন কিছু তোমার বিনা অনুমতিতে কেউ দেখলে সেটা হবে অপরাধ। আর কেউ যদি তোমার বিনা অনুমতিতে তোমার ছবি তুলে বা ভিডিও করে আপলোড করে তাহলে সেটা আরো বড় ধরনের অপরাধ। কিন্তু অনলাইনে এই ধরনের হয়রানী হচ্ছে অহরহ। এ সম্পর্কে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই কেননা ইতিমধ্যেই এ সম্পর্কে অনেক কথাবার্তা হয়েছে এই ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেটা দেখা যায় কারো কোন ছবি নিয়ে তাকে সমানে ট্রল করা হয়। তাকে নিয়ে মেমে এবং কার্টুন বানানো হয়। এটা অনলাইন প্রাইভেসির সরাসরি লঙ্ঘন। তোমার অনুমতি ব্যাতীত তোমার কোন ছবি কেউ কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। সেটা তোমার নিজের মুখের ছবিই হোক কিংবা হোক তোমার তোলা কোন একটি ছবি। তাছাড়া কারো ছবি ইচ্ছাকৃত বিকৃত করে তাকে অসম্মান করাটা বড় ধরনের অপরাধ।
প্রযুক্তি বা টেকনোলজির সবচেয়ে বড় ফল্ট হল কারো কাছে এর নিয়ন্ত্রন নেই। বিশেষ করে ইন্টারনেটের। যতই কড়াকড়ি আরোপ করা হোক না কেন কেউ যদি চায় তাহলে গোপনে থেকে এর খারাপ ব্যবহার করতেই পারে। আর তাই এ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হল নিজে ভাল হওয়া। আর সচেতনতা গড়ে তোলা।
গুগল প্রথম ওপেন অফিস বা অনলাইন অফিসের ধারণা সামনে নিয়ে আসে। এই ধারণা সামনে আসার সাথে সাথেই একটা কিকস্টার্ট পায়। অর্থাৎ অল্পদিনেই বিপুল জনপ্রিয়তা পায় ওপেন অফিসের থিমটি। কিন্তু এটা হতে পারে নি লম্বা রেসের ঘোড়া। কিক স্টার্ট পাওয়ার মতই হুট করেই মুখ থুবড়ে পরে ওপেন অফিস আইডিয়াটি।
এর কারণ হিসেবে দায়ী করা যায় ফাঁকি দেয়ার সুযোগকে। স্বশরিরে যেহেতু হাজিরা দিতে হয় না তাই এখানে সুযোগ আছে দুর্নীতি করার। আর সুযোগ সন্ধানী কিছু মানুষ এর সম্পূর্ণ ব্যবহার করেছিল যার ফলে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে সব প্রতিষ্ঠানই ব্যার্থ হয়েছে ওপেন অফিস ধারনা নিয়ে, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে এই ধরনের সার্ভিসে সফল হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় তথ্য ও প্রযুক্তি ব্লগ টেকটিউনসের কথা।
প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয় জীবনকে সহজ করার জন্য। যে কোন প্রযুক্তির পেছনেই মূল থিম থাকে মানুষের কাজে লাগা। কিন্তু আমরা এর ভুল ব্যবহার করে নিজেদের সহ অন্যান্য মানুষেরও ক্ষতি করছি। আমাদের অসচেতনতাই আমাদের সমস্যার জন্য দায়ী। সচেতন হতে হবে আমাদের।
কেননা প্রযুক্তি বা টেকনোলজির সবচেয়ে বড় ফল্ট হল কারো কাছে এর নিয়ন্ত্রন নেই। বিশেষ করে ইন্টারনেটের। যতই কড়াকড়ি আরোপ করা হোক না কেন কেউ যদি চায় তাহলে গোপনে থেকে এর খারাপ ব্যবহার করতেই পারে। আর তাই এ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হল নিজে ভাল হওয়া। আর সচেতনতা গড়ে তোলা। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যে কোন মতামত জানাতে ভুলবেন না। টিউমেন্টে জানান আপনার কথা।
আমি হাসিবুর ইসলাম নাসিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বিষাদময় পৃথিবীতে আমি আনন্দ খুঁজে নিই সবকিছু থেকে। আর স্বপ্ন দেখি মহাকাশ ভেদ করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবার। স্বপ্নচারী আমার স্বপ্নগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। হাত ধরে চলো স্বপ্ন দেখি একসাথে।