শিরোনাম দেখে অনেকেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে আসলে আমি কী শেয়ার করতে যাচ্ছি। যাইহোক, সরাসরি লেখায় চলে যাচ্ছি। Google Tanslate- যারা ব্যবহার করেছেন তারা জানেন যে এটা কী রকম ভয়াবহ অনুবাদ দেয়। বিশেষ করে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করতে গেলে এ বিষয়টি বেশি পরিলক্ষিত হয়।
আমি সেগুলো দেখে হাসি। মজা নিই। কিন্তু কখনই ভাবি না যে এটা আসলে সমাধান করা যায় কিনা। আপনি নিজে সার্চ করছেন ভেবে মনে হচ্ছে এটা খুব ছোট একটা বিষয়। কিন্তু এটা যে কত বড় বিষয় তা বুঝতে চাইলে নিচের ফটোগুলো দেখুন। আজ সারা বিশ্বে আমাদের ভাষাটা কী অযত্নে অবহেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখুন-
হ্যাঁ ভাই। বিদেশেও আমাদের ভাষাটা কত ক্ষ্যাৎনামা দেখুন! শুধু তাই নয়। আপনি সহজ কিছু ইংরেজি বাক্য লিখে অনুবাদ করতে চাইলে মাঝে মাঝেই আপনাকে বিপাকে পড়তে হবে। কিছু উদাহরণ দিলাম।
এটা কী হলো? এটা কিছুই হলো না। প্রতি বছর বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির জন্য গুগল ট্রান্সলেটে হাজার হাজার শব্দ বাক্য যোগ করা হয়। কিন্তু তারপরেও এ সমস্যা থেকেই যায়। আসুন দেখা যাক সমস্যাগুলো কেনো হয়।
I go | আমি যাই |
You go | তুমি যাও |
You go | আপনি যান |
You go | তুই যাস |
He goes | সে যায় |
He goes | তিনি যান |
They go | তারা যায় |
উপরের টেবিল দেখা শেষ হলে নিচের টেবিলটা দেখুন বিশেষ করে বোল্ড করা জায়গাগুলোতে-
I walk | আমি হাঁটি |
You walk | তুমি হাঁটো |
You walk | আপনি হাঁটেন |
You walk | তুই হাঁটিস |
He walks | সে হাঁটে |
He walks | তিনি হাঁটেন |
They walk | তারা হাঁটে/হাঁটেন |
আসুন একটু প্রাইমারি স্কুলে চলে যাই।কয়েকটা বিষয় লক্ষ করবেন।প্রথমত,ইংরেজিতে শুধু মাত্র 3rd Person এবং Singular Number-এর সময় Verb এর শেষে s/es যুক্ত হয়।
যেমন: He walks, She goes, It jumps ইত্যাদি।
অথচ বাংলায় দেখুন, শুধুমাত্র 3rd Person এবং Singular Number-এর ক্ষেত্রেই বাক্যের ক্রিয়ার কত বৈচিত্র। সে যায়। তিনি যান।
মূল ক্রিয়ার সাথে একবার ‘য়’ আরেকবার ‘ন’তাও শুধুমাত্র ‘যাওয়া’ শব্দটার ক্ষেত্রে।
আবার হাঁটার জন্য-
সে হাঁটে। তিনি হাঁটেন। একটাতে ‘টে’ আরেকটাতে ‘টেন’। এটাতো গেলো শুধুমাত্র 3rd Person এবং Singular Number-এর ক্ষেত্রে।
আরগুলোতে টেবিলের বোল্ড করা জায়গাগুলোতে দেখুন-
ই,ও,ন,স,য়,ন,য় (যাওয়া শব্দটার ক্ষেত্রে)
আর হাঁটার ক্ষেত্রে তো আরো মারাত্মক,
টি,টো,টেন,টিস,টে,টেন,টেন।
এতগুলো পরিবর্তন শুধুমাত্র আমি আবারো বলছি শুধুমাত্র দুইটি শব্দের জন্য। এই ভ্যারিয়েশনগুলো নিজেদের মধ্যে কম করে হলেও ৮৪০ রকম উপায়ে সাজানো যায়। তাই Google Translate ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক।
আমি আবারও বলছি এই ৮৪০ রকম ভুল তাও আবার মাত্র একটা শব্দে! এতটা জটিল আমাদের ভাষা! সমস্যাটা কি জানেন? আমরা আমাদের ভাষাটা তৈরি করি নি। আমরা শুধুমাত্র কিছু ব্যবহার দেখে সে অনুযায়ী নিয়ম তৈরি করেছি। একটু দেখে নিন।
‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে’ দেখে ঘাবড়িয়েছেন তো! এটা দ্বারাই বোঝা যায় আমরা আমাদের ভাষাটা তৈরি করতে পারি নি। কিছু প্রচলিত শব্দ দেখে সে অনুযায়ী কিছু নিয়ম তৈরি করেছি। আমাদেরকে কত সুন্দরভাবে শেখানো হয় প্রকৃতি-প্রত্যয়ের গুণ-বৃদ্ধি। কিছু শব্দের ক্ষেত্রে সেগুলো ঠিক থাকলেও একটা বড় সংখ্যক শব্দই এর বাইরে পড়ে যায়।
আমার কথা যে সত্য তার প্রমাণ আরো একবার দিচ্ছি। একটু আগেই বলছিলাম যে আমরা শব্দের ব্যবহার দেখে নিয়ম তৈরি করেছি। আমরা নিয়ম তৈরি করে তারপর শব্দ ব্যবহার করি নি। এ কারণেই যখন নিয়মে কোনো কিছু না পড়ে তখন সেটা ‘বিশেষ নিয়মে’ বা ‘নিপাতনে সিদ্ধ’ বলে পাশ কেটে গেছি। দেখুন ফটো দেখুন।
যে ভাষায় এত ‘বিশেষ নিয়ম’ বা ‘স্বভাবতই’ বা ‘নিপাতনে সিদ্ধ’ আছে সে ভাষা জটিল হবে না তো কোন্ ভাষা জটিল হবে! এ পর্যায়ে এসে অবশ্য বাংলা একাডেমীর লোকেরা আমার উপরে চটবেন এটা নিশ্চিত।কারণ,আমি শুধু সমস্যার কথা বলেছি। সমাধানের কথা বলি নি।
আমার প্রথম সমাধানের কথা শুনলে এ পর্যন্ত প্রকাশিত সমস্ত গল্প উপন্যাসের বইগুলো নতুন করে প্রিন্ট করতে হবে। না না। এতটা চমকানোর দরকার নেই। সেটা অসম্ভব। আর সেটা তো কোনো সমাধানের পথও না।
দেখুন, ইংরেজিতে শুধুমাত্র You ব্যবহার করে তুমি, আপনি, তুই এসব বোঝানো হয়। আর আমাদের তিন রকমের শব্দ লাগে। বয়সে বড় বা সম্মানী কেউ হলে ‘আপনি’, সমবয়সী বা আন্তরিক সম্পর্কযুক্ত হলে ‘তুমি’, অপেক্ষাকৃত নিচুস্তরের বা অধিক ঘনিষ্ঠ কেউ হলে ‘তুই’। এত্তগুলো ভ্যারিয়েশন।
কে বলতে পারে,আমাদের মানুষে মানুষে এত বিভেদ হয়তো এই তিন স্তরের শব্দব্যবস্থার কারণেই। না না। একদম হেসে উড়িয়ে দেবেন না। বুঝিয়ে বলছি।
আপনি রেগে গেলে অনেককেই ‘তুই’ করে বলেন, ‘তুই’ শব্দটা না থাকলে কি এতো জোরালোভাবে রেগে কথা বলতে পারতেন! পারতেন না। যে নেতার চামচামি করেন, ‘বস্, কী করবো বলেন!’ এ জায়গায় যদি ‘বস্, কী করবো বলো!’ বলেন তাহলে কী সবাই প্রায় কাছাকাছি অবস্থায় আসছি না! মানুষে মানুষে এত দূরত্ব থাকছে! অন্তত মানুষকে আপনি তুচ্ছ করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না শুধুমাত্র একটা শব্দের পরিবর্তনে।
আমি অবশ্য মাঝে মাঝে সাইকোলজি চর্চা করি। একটা গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিই। সারাজীবন মনে রাখবেন। যাদের অল্পতেই রাগ আসে, তারা প্রতিজ্ঞা করুন ‘তুই’ শব্দটি পরিত্যাগ করবেন। তাহলে দেখবেন আপনার রাগের এরিয়া কমে এসেছে। তো যেটা বলছিলাম। আসলে ১৬ কোটি লোককে বলে ‘তুই’ বা ‘তুমি’ কোনোটাই বা দুটোই তুলে দিয়ে ‘আপনি’ শব্দের প্রচলন করা সম্ভব না। এটা বাংলাদেশের জন্য সম্ভব না। কারণ, মালয়েশিয়ায় একটা এলাকা আছে সেখানে কেউই কখনো হাসে না। অকারণেই হাসে না। তারা ঠিকই করে নিয়েছে যে তারা হাসবে না। হুদাই হাসে না।
তো যাই হোক। আমরা গুগল ট্রান্সলেটে সার্চের সময় বা শব্দ বা বাক্যযোগের সময় এরকম একটামাত্র সম্বোধনবাচক শব্দের আঙ্গিকে শব্দ বা বাক্য যোগ করি তাহলে সমস্যাটা অনেকটাই কমে আসবে।
আমি আরেকটি সমাধানের কথা বলতাম সেটি হলো বাংলা ফোনেটিক্স ডিকশনারি বের করা। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদের ভাষা তার স্বকীয়তা হারাবে। বর্ণ হারাবে। তবে এটা একসময় হবে জানেন। সেটা অনেক পরে। কারণ, আজ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে আমরা ‘kire kemon achis’ বা আরো সংক্ষেপে ‘kire kmn acis’ এভাবেই লিখি। বাংলা শব্দে খুব কম মানুষই বার্তা প্রদান করে থাকেন। তাই একদিন এমন একটা সময় আসবে যখন মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই ফোনেটিক্স বেছে নেবে।
এখনও প্রয়োজন আছে। কারণ, বাংলা ভাষার কারণে আমরা Adsense থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এরকম আরো প্রয়োজন আসবে। কে জানে আমি নিজেও হয়তো একটা বাংলা ভাষার ফোনেটিক্স ডিকশনারি কোনো এক বই মেলায় প্রকাশ করতে পারি। আমার মাথায় এখনও ঢোকে না,
‘বাংলা’ শব্দে ব্+আ= বা, মানে আ-কার’টা ‘ব’ এর পর যুক্ত হয়েছে বিধায় সেটা ‘ব’ এর ডানপাশে সুন্দর করে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এ-কার বা ই-কার বিশিষ্ট শব্দে, যেমন-
‘দেশ’ শব্দে দ্+এ=দে; এ-কার’টা ‘দ’ এর পরে বসেও কেনো ‘দ’ এর আগে বা বামপাশে পেঁচিয়ে অবস্থান নিলো তা আমার মাথায় আজো খেলেনা।হওয়া উচিত তো ছিল ডানপাশে বাংলা ‘১’ এর মতো পেঁচিয়ে। যেমন অনেকটা এরকম- বাংলাদ১শ
তাহলেই নিয়ম অনুযায়ী মানা যেতো।
আমাদের শব্দের ক্রিয়ামূল বা ধাতু দিয়েই শব্দ ব্যবহার করতে হবে। আগেই বলে নিচ্ছি হাসবেন না। কারণ, আমি ব্যাখা করবো।
যেমন:
আমি খা। তুমি খা।সে খা।
অথবা
আমি খাই। তুমি খাই। সে খাই। (‘তুমি খাই’ টাইপ বাক্য আজকাল ফেইসবুকে এখনই ব্যাপক দেখা যায়)
অথবা
আমি খান। তুমি খান। সে খান।
এগুলোর যেকোন একটি। অর্থাৎ Subject, Number, Person-ভেদে যাতে ক্রিয়ামূল একই থাকে। হ্যাঁ আপাতদৃষ্টিতে এটা দৃষ্টিকটু লাগতে পারে। কিন্তু কয়েক বছরে মানে শুধুমাত্র একটা জেনারেশানে এ ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দিলে বাকীগুলো এমনিতেই চলে আসবে।
এক্ষেত্রে জটিলতা বা ফলাফল যেগুলো হবে সেগুলো আমি বলছি:
এই দুটো সমাধানের মধ্যে দ্বিতীয়টাই ফলপ্রসু হবে ভালভাবে। সেজন্য অবশ্য প্রচার-প্রচারণার দরকার আছে। সেটা সরকার করবে। আজকাল মাতৃভাষার জন্য সবার দরদ শুধু মুখে মুখেই। গুগল ট্রান্সলেটের জন্য সরকার কিছু কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। তাতে করে সরকারিভাবে বাংলা ভাষাটাও আরো এগিয়ে যাবে। একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা ভাষায় পরিণত হবে আমাদের ভাষা। আর সেজন্য এত চিন্তার কিছু নেই। ভাষা তো পরিবর্তনশীলই। তাও আমি বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষাকে বাজেভাবে দেখতে চাই না।
যারা বাংলা কি-বোর্ড ডেভেলপ করেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ বাংলা ব্যাকরণটার জ্ঞান থেকে আপনারা অ্যাপ বা সফটওয়্যার নির্মাণ করলেও আরো কিছু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র লজিক যোগ করতে পারেন।
নিচে বিস্তারিত বলছি।
৪। আর জব্বার ভাই, মেহেদী হাসান ভাই লে-আউটটা কপি করেছিল বাংলা ভাষার জন্য। সকলের সুবিধার জন্য। দেশের জন্য কি আমরা ব্যবসায়িক মনোভাবটা ছাড়তে পারি না!
একবার একটা আন্দোলন হয়েছিল। দেশের সকল সাইনবোর্ড বাংলা করতে হবে। তো ঢাকায় এক কলেজের ছাত্ররা আন্দোলনরত অবস্থায় তাদের এক শিক্ষকের বাসায় গিয়ে বললো, ‘স্যার আপনার বাসার ইংরেজি সাইনবোর্ডটা ইমিডিয়েটলি রিমুভ করতে হবে’।
শিক্ষকটি তখন বলেছিলেন, আমি না হয় সাইনবোর্ড নামালাম। কিন্তু তোমাদের মুখের সাইনবোর্ড কীভাবে নামবে?
-মানে স্যার?
-মানে, ‘ইমিডিয়েটলি’, ‘রিমুভ’ এগুলো কী?
আর ভাষা নিয়ে এত আবেগের ফলাফলের কারণেই একেকটা মাস্টারমাইন্ড তৈরি হয়। মুস্তাফিজের কথা গুগল ট্রান্সলেটে বাংলা করে ভারতীয়দের হাসতে হয়। মাঝে মাঝেই মনে হয় এই ভাষার জন্যই কি সালাম, রফিক, জব্বার প্রাণ দিয়েছে! এতটা অবহেলায় কেনো ভাষাটা!
আমাদের দেশের লোকেরা বাংলা ভাষার প্রতি যতটা দরদ দেখায় বাস্তবে কেউ ততটা এটার জন্য কাজ করতে আগ্রহী না। ভাষা নিয়ে কেউ চিন্তিতও নই। শুধু বাংলা একাডেমি না, সরকারের উচিত বাংলা ভাষার উন্নতিতে আরো অনেক পদক্ষেপ হাতে নেয়া। সেজন্য যদি এই অধমের সামান্যতম সাহায্যও লাগে আমি সেটা গর্বভরে করবো।
আমার বানানরীতিতে অসংখ্য ভুল থাকতে পারে। সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারণ, বাংলাতে এমনও অনেক বাক্য আছে যেগুলো অর্ধেক পড়ার উচ্চারণ অন্যরকম বুঝে আবার প্রথম থেকে পড়ে বাক্যটা শেষ করতে হয়। এটা আসলে কোনো ভাষাতেই থাকা উচিত নয়। সবাই অনেক ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আর কোনো মতামত থাকলে টিউমেন্ট বা ফেইসবুকে জানাতে পারেন।
ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
টিউনটা পড়ে অনেক ভাল লাগল ।