আজ আমি একটি সম সময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যে বিষয়টি হয়তো সবার চোখের অগোচরে হয়ে যাচ্ছে। তাই সবার উচিত বিষয় টির প্রতি খেয়াল করা।
বাংলাদেশের টেলিকম বাজার দখল করার ভারতীয় নীলনকশার অংশ হিসেবে গতকাল এয়ারটেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে এ উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান তারা করেনি।
কর ফাঁকির মাধ্যমে এবং ভারতীয় উচ্চাভিলাষের অংশ হিসেবে গত ৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার মাত্র এক লাখ ডলারে কিনে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতী এয়ারটেল। তবে এয়ারটেলের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ‘এখানে কর ফাঁকির কিছুই নেই। আমরা লোকসানি একটি প্রতিষ্ঠানকে টোকেনমূল্যে কিনেছিলাম, কোনো অনিয়ম করে নয়।’
সূত্রমতে, বাংলাদেশের টেলিবাজারে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে রয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু। তবে বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সুনিল কান্তি বোসসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা সরকারের বাইরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এয়ারটেলের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছে, সরকার ভারতকে ট্রানজিটের পাশাপাশি টেলিকরিডোর দিচ্ছে। ভারতী এয়ারটেল ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স যৌথভাবে বিটিআরসির কাছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের টেলিকরিডোর স্থাপন করার অনুমতিও চেয়েছিল। সরকার বিতর্ক এড়াতে শেষ পর্যন্ত বিটিসিএল ও ভারতীয় সরকারি কোম্পানি বিএসএফএলের মাধ্যমে এ টেলিকরিডোর প্রদানের বিষয় চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এয়ারটেল গত বছরের শেষদিকে টেলিকরিডোর দেয়ার আবেদন করে।
জানা গেছে, এ করিডোরের মাধ্যমে এয়ারটেলসহ ভারতীয় টেলিকম অপারেটররা ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপন করে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ সহজ ও সস্তা করতে চাইছে। তারা আসামে টেলিকরিডোরের জন্য দুটি রুটের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কলকাতা-মেহেরপুর-ঢাকা-জাফলং এবং অন্যটি কলকাতা-মেহেরপুর-ঢাকা-কুমিল্লা-আগরতলা রুট। বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো ভিস্যাটের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্র ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত, যা খুবই ব্যয়বহুল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ট্রানজিটের মতোই ভারত কৌশলে এই টেলিকরিডোর আদায় করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট ইত্যাদি সস্তা হবে আর বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছু চার্জ বা ভাড়া পাবে মাত্র। পাশাপাশি বিটিসিএল বাড়তি ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে চাইছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, টেলিকরিডোরের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামী মানুষের কথোপকথন মনিটরিং থেকে শুরু করে ফাইবার অপটিক কেবলের নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক ও প্রযুক্তিগত নজরদারি আরোপিত হবে। এতে দেশের যোগাযোগ খাতের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ খর্ব হবে এবং তা বিপজ্জনকভাবে ভারতের হাতে চলে যাবে।
ভারতী এয়ারটেল ভারতের সর্ববৃহত্ টেলিকম কোম্পানি। এর গ্রাহকসংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি। কোম্পানিটি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। ফলে মুনাফা বাড়াতে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করার উদ্যোগ নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মার্জার বা একীভূত হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে কার্যত বাংলাদেশে একটি মোবাইল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। আর এর মাধ্যমে ভারতের টেলিকরিডোর পাওয়ার স্বপ্নও বাস্তবায়নের পথ খুলে যায়। এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ১৫ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে এরই মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ, বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ, রবির গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও কেন কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ করতে এলো?
সূত্র জানায়, এর পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানিগুলোর গ্রাহকসংখ্যা অনেক হলেও এর ঘনত্ব বা টেলিডেনসিটি ভারতের তুলনায় এখনও অনেক কম। ভারতের টেলিডেনসিটি যেখানে শতকরা ৪৬ ভাগ, বাংলাদেশে সেখানে মাত্র ৩২ ভাগ। ফলে এয়ারটেলের পক্ষে সুযোগ রয়েছে গ্রাহকসংখ্যা আরও বাড়ানোর। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবল ভারতের কেন্দ্র থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানকার বিশাল বাজার ধরা।
সূত্র জানায়, ভারতী এয়ারটেল এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঠিয়েছে। তারা কাজে যোগও দিয়েছেন। ওয়ারিদের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও এয়ারটেল কৌশলের আশ্রয় নেয়। ওয়ারিদের মোট মূল্য ১ কোটি টাকা দেখিয়ে মাত্র ৭০ লাখ টাকা বা ১ লাখ ডলারের বিনিময়ে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ওয়ারিদ একটি লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে, ফলে টোকেনমূল্য দিয়ে ওয়ারিদকে এয়ারটেল কিনে নিয়েছে। বিশ্বে টোকেনমূল্যে একটি কোম্পানি কেনার প্রথম ঘটনা এটাই।
২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ওয়ারিদের মালিক ধাবি গ্রুপের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুসারে ওয়ারিদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ধাবি গ্রুপের ৭৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার কথা। প্রশ্ন উঠেছে, এই ৭৫ কোটি ডলার গেল কোথায়? ওয়ারিদ কি এতই দেনাগ্রস্ত ছিল যে এর দাম মাত্র ১ লাখ ডলার হয়ে গেল? অথচ নেটওয়ার্কের কাজে ওয়ারিদ এরিকসন বা মটোরোলার কাছ থেকে যেসব যন্ত্রপাতি কিনেছে সেগুলোর দাম হিসাব করলেও তা ৫০ থেকে ৬০ কোটি ডলারের কম হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ওয়ারিদের ব্যবহার করা প্রায় তিন হাজার বিটিএসের একেকটির দামই ৫০ হাজার ডলার, সেই বিটিএসগুলোর কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহৃত মোট ২৫টি বিএসসির একেকটির দাম কমপক্ষে আড়াই লাখ ডলার। এর সঙ্গে যুক্ত হবে এমএসসি, আইএন, ভাস, ট্রান্সমিশন ইকুইপমেন্ট ইত্যাদির মতো আরও মূল্যবান যন্ত্রপাতির দাম। সঙ্গে রয়েছে ব্র্যান্ড ভ্যালু, লাইসেন্স ফি ইত্যাদির হিসাবও। এ বিষয়ে ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভেঞ্চার ক্যাপিটালবিষয়ক ওয়েবসাইট ভিসি সার্কেল একটি হিসাব প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, ‘ওয়ারিদের সম্পদের মূল্যায়ন করে বলা যায়, এর পরিমাণ ৫০ থেকে ৫৫ কোটি ইউএস ডলার হবে, ফলে ভারতী এয়ারটেলকে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি ডলারে ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনতে হতে পারে।’ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর ধারা ৩৭(১) অনুসারে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানিকে লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু ৩৭(৩)-এর ঝ উপধারা অনুসারে শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। আর এই শেয়ার হস্তান্তরের সময় শেয়ারের মূল্যের ৫.৫ ভাগ বিটিআরসিকে দিতে হবে। ভারতী এয়ারটেল হিসাব করে দেখেছে, ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ারের মূল্য ৩০ কোটি ডলার দেখালেও এর ৫.৫ ভাগ, অর্থাত্ ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বা ১১৫.৫ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দিতে হবে। কিন্তু শেয়ারের মূল্য নামমাত্র ৭০ লাখ টাকা দেখানোর কারণে তারা তখন বিটিআরসিকে দিয়েছিল ৭০ লাখ টাকার ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ মাত্র ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সূত্রমতে, তথ্য গোপনের মাধ্যমে ভারতী এয়ারটেল ১৩৫ কোটি টাকা থেকে বাংলাদেশ সরকারকে বঞ্চিত করতে পেরেছে।
কারণ মোবাইল অপারেটর একটেলে এ কে খান গ্রুপের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল। সেই শেয়ার ৩৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয় জাপানের এনটিটি ডকুমো। ওই শেয়ার বিক্রি থেকে তখন সরকার প্রায় ১৩২ কোটি টাকা ফি পেয়েছিল। এর আগে সিটিসেলে প্যাসিফিক টেলিকমের শেয়ার সিং টেলের কাছে হস্তান্তর থেকে সরকার শত কোটি টাকা পেয়েছিল।
এসব কারণে বাংলাদেশের টেলিকম বাজারে ভারতী এয়ারটেলের অন্তর্ভুক্তি সুস্থ প্রতিযোগিতার জন্ম নাও দিতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন টেলিকম বিশেষজ্ঞরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে পারলে ভারতী এয়ারটেল ভালো ব্যবসা করতে পারবে এদেশে। কিন্তু তারা যদি ভারত থেকে কল সেন্টারগুলো অপারেট করে, তাহলে বাংলাদেশের টেলিকম বাজারে অস্থিরতা বাড়বে।
২. দৈনিক আমার দেশ -বুধবার ২২ ডিসেম্বর ২০১০
বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যসহ সিকিমের সঙ্গে টেলি ও তথ্যপ্রযুক্তিকেন্দ্রিক যোগাযোগ সহজতর করতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারতী এয়ারটেলের বাংলাদেশী উইং এয়ারটেল বাংলা। ভারতকে ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথসহ টেলিকরিডোর পাইয়ে দিতে বহুল সমালোচিত এয়ারটেল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নিজেদের প্যাডে এ আবেদন জানিয়েছে। টেলিট্রানজিটের ব্যানারে এ টেলিকরিডোর নিশ্চিত করতে ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ভারত সরকারের নীলনকশার অংশ হিসেবে গত ২৬ নভেম্বর এয়ারটেলের একজন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়।
পাশাপাশি বিতর্কিত টেলিকম অপারেটর এয়ারটেল বাংলাদেশে পরিকল্পনামাফিক দিল্লির সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ সম্প্রসারণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্রমতে, প্রস্তাবিত এ টেলিকরিডোর নিশ্চিত করতে ঢাকার সঙ্গে ভারতের দিক থেকে যোগাযোগ করছে আসাম সরকার। এক্ষেত্রেও তারা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। কারণ তাদের যোগাযোগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ভিত্তিক না হয়ে বরং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হচ্ছে। আর এ কাজটিকে এগিয়ে নিতে আসাম সরকারের হয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এয়ারটেল। বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির (বিএসসিসিএল) এমডি ইঞ্জিনিয়ার মো. মনোয়ার হোসেন গতকাল দৈনিক আমার দেশকে বলেন, আসামের প্রতিনিধি দলটির মুখপাত্র হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছে এয়ারটেল। তবে ভারতকে টেলিট্রানজিট দেয়া না দেয়া মোটেও বিএসসিসিএলের ওপর নির্ভর করছে না বরং এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএসসিসিএলের সঙ্গে বৈঠক করে ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ চেয়েছে। তবে প্রাইস চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, এর মধ্যে একদফা ঢাকায় এসে কয়েকটি বৈঠক করেছেন আসামের প্রতিনিধিরা। গত ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারে বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশনও পরিদর্শন করেছেন তারা। সূত্রমতে, নতুন বছরের শুরুতেই আসামের উচ্চপর্যায়ের আরও একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে।
সূত্র জানিয়েছে, এয়ারটেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আসামের প্রতিনিধিদের ঢাকার বৈঠক এবং কক্সবাজার সফরের বিষয় চূড়ান্ত হয়।
জানা গেছে, দুটি দিক দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবলের সংযোগ চায় ভারতীয়রা। সেক্ষেত্রে ঢাকা হয়ে রংপুর-ধুবরী এবং আসামের গৌহাটিকেন্দ্রিক একটি লিংক স্থাপিত হবে। অন্যদিকে কুমিল্লা-ত্রিপুরার আগরতলাকেন্দ্রিক অন্য একটি সংযোগ স্থাপিত হবে। এক্ষেত্রে একটি লিংক অন্য লিংকের ব্যাকআপ হিসেবেও কাজ করবে।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব-উত্তরে ভারতের এক সময়ের সেভেন সিস্টারস হিসেবে খ্যাত সাত রাজ্য (এখন আটটি) আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশের সঙ্গে টেলিযোগাযোগে নানা সমস্যা পোহাতে হয় ভারতীয় অপারেটরদের। বর্তমানে তাদের মধ্যে সংযোগ বা যোগাযোগ হয় ভিস্যাটকেন্দ্রিক। তাতে খরচও পড়ে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে টেলিকরিডোর নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ভারতীয় অপারেটররা খুবই সহজে এবং কম খরচে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারবে।
তবে মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, শুরুতে ব্যান্ডউইথের স্থানীয় মূল্যের বাইরে আরও কিছু প্রিমিয়ামও দাবি করা হয়েছে। তিনি এটাও বলেন, ভারতীয়দের দিক থেকে সরাসরি ব্যান্ডউইথ কিনে না নিয়ে বরং ব্যবহারের ওপর রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের প্রস্তাব রয়েছে। প্রাথমিক আলোচনা অনুসারে সংযোগ পাওয়ার পর ভারতীয়রা তাদের রাজ্যগুলোর আন্তঃসংযোগের কাজ করবে। আর বাংলাদেশ বা ভারত যার যার এলাকার সংযোগের ব্যবস্থাপনা বা মেরামত সংক্রান্ত কাজ করবে।
বাংলাদেশের ভেতর এরই মধ্যে প্রায় সব জায়গাতেই ফাইবার অপটিক কেবলের সংযোগ সম্প্রসারিত হয়েছে। তাই নতুন করে বাড়তি সংযোগ লাইন খুব একটা টানার প্রয়োজন হবে না।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, গত ৫ ডিসেম্বর আসামের রাজ্যসভার গণপ্রতিনিধি মহিবুল হকের নেতৃত্বে একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোসের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করে।
সূত্রমতে, ট্রানজিটের মতোই সরকার ভারতকে টেলিকরিডোর দিতে চাইছে এবং এয়ারটেলের লবিংয়ের কারণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় খুব দ্রুত একটি প্রকল্প তৈরি করতে চাইছে। তবে এ প্রকল্পের ব্যাপারে নিয়মমাফিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামতও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএসসিসিএল এমডি ইঞ্জিনিয়ার মো. মনোয়ার হোসেন।
মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, আসাম ছাড়াও ভারতের আরও দুটি কোম্পানি সংযোগ পেতে যোগাযোগ করছে। মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করে গেছে তারা। এর বাইরে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপালও বাংলাদেশের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ পেতে চায় বলে জানান তিনি।
গত বছরের মাঝামাঝি ভারতের টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান এয়ারটেল এবং টাটা রিলায়েন্স এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল এবং ঢাকায় এসে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তাদের পরিকল্পনাবিষয়ক প্রেজেন্টেশনও দিয়েছিল তারা। সেই প্রস্তাবে বেনাপোল হয়ে ঢাকা-জাফলং অথবা ঢাকা-কুমিল্লা-আগরতলা রুটে ট্রানজিট চেয়েছিল এয়ারটেল এবং টাটা রিলায়েন্স। প্রস্তাবটি অনুমোদন না পাওয়ায় এয়ারটেল আসাম সরকারকে সামনে দাঁড় করিয়ে ভারত সরকারের বহুল আকাঙ্ক্ষিত টেলিকরিডোর নিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
দিল্লির সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ : বাংলাদেশে দিল্লির সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ বাস্তবায়নে এয়ারটেলের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের রি-ব্রান্ডিং বিজ্ঞাপনে। নগরীর খিলগাঁও এলাকার এক ব্যবসায়ী গতকাল দৈনিক আমার দেশকে তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, সকালে পত্রিকায় এয়ারটেলের বিজ্ঞাপন দেখে আমি বিস্মিত না হয়ে পারিনি। আমার মনে হয়েছে ভারতের বিজ্ঞাপন বোধহয় ভুলে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ছাপানো হয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রথমদিনেই এয়ারটেল যেভাবে ভারতমাতাকে আমাদের এ দেশে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাতে এটা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, মোবাইল অপারেটরটি এ দেশে শুধু ব্যবসাই করতে চায় না, একটি পরিকল্পিত সাংস্কৃতিক এজেন্ডা নিয়েও এগিয়ে যেতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, এয়ারটেলের প্রথমদিনের হট অফার হচ্ছে এসএমএস জয়ীরা সাইফ-কারিনার সঙ্গে ডিনার করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশে ব্যবসা করে ভারতীয় তারকাদের প্রমোট করার উদ্দেশ্য মোটেও সত্ হতে পারে না। তাছাড়া কোনো দেশে ব্যবসা করতে গেলে সে দেশের নিয়ম-রীতিনীতি মেনে চলতে হয়। অথচ এয়ারটেল এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভারতের নায়ক-নায়িকা দিয়ে বাংলাদেশী গ্রাহকদের মন জয়ের অপচেষ্টা করছে।
৩. দৈনিক আমার দেশ -বৃহস্পতিবার ২৩ ডিসেম্বর ২০১০
শুরুতেই বাংলাদেশকে শতকোটি টাকা ঠকিয়ে ওয়ারিদ টেলিকম কিনেছে ভারতী এয়ারটেল। অন্যদিকে ওয়ারিদ টেলিকম কেনার মাধ্যমে শুধু ভারতী এয়ারটেলই সুবিধা পায়নি, টেলিকম খাতে নতুন চাকরি সৃষ্টির নামে ভারত বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণেরও সুযোগ পেয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রান্সপোর্ট, গার্মেন্ট, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, খাদ্যপণ্য, পানীয়সহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ থাকলও টেলিকম সেক্টরে এটাই প্রথম। এদিকে বছরশেষে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে বৈ কমবে না। আর এয়ারটেল সে ঘাটতির ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
অভিযোগ রয়েছে, ভারতকে এ সুযোগটি করে দেয়ার পেছনের ব্যক্তি দু’জন হচ্ছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহাম্মেদ রাজু এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ। কারণ ওয়ারিদ টেলিকমের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এ দু’জন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ওয়ারিদের মোট মূল্য ১ কোটি টাকা দেখিয়ে মাত্র ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয়ার সুযোগ করে দেন এয়ারটেলকে। তবে টেলিকম বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর পেছনে প্রশাসনের বড় কোনো কর্মকর্তার পরোক্ষ মদত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর ধারা ৩৭(১) অনুসারে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো কোম্পানি অন্য কোনো কোম্পানির কাছে লাইসেন্স বিক্রি করতে পারবে না; কিন্তু ৩৭(৩)-এর ঝ উপধারা অনুসারে শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। এই শেয়ার হস্তান্তরের সময় শেয়ারমূল্যের ৫.৫ ভাগ বিটিআরসিকে দিতে হবে। ওয়ারিদের ৭০ ভাগ শেয়ারের মূল্য ৩০ কোটি টাকা দেখালে এর ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ ১১৫.৫ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দিতে হতো। কিন্তু ৭০ শতাংশ শেয়ারের দাম নামমাত্র ৭০ লাখ টাকা দেখানোর কারণে দিতে হয়েছে ৭০ লাখ টাকার ৫.৫ ভাগ অর্থাত্ মাত্র ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে—এই আশঙ্কায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে এ আইনটিই পরিবর্তন করে ফেলে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির নামে সবচেয়ে বেশি শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে ওয়ারিদ টেলিকম লিমিটেড, যা এখন এয়ারটেলের নামে চলছে। এক তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকা কাস্টমস হাউস দিয়ে আমদানি করা ১৫টি চালানে ওয়ারিদ টেলিকম এ পর্যন্ত ৬৯ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমদানি চালান আটক করে পুনরায় কায়িক পরীক্ষা করা হলে মিথ্যা ঘোষণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়। পরে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হলে শুনানির পর ঢাকা কাস্টমস কমিশনারের বিচারাদেশে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এর বিরুদ্ধে ওয়ারিদ কাস্টমস আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেছে বলে জানা গেছে।
গত ২০ ডিসেম্বর হয়ে গেল এয়ারটেলের লোগো উন্মোচন তথা খোলস পরিবর্তন পর্ব। নতুন স্লোগান ‘ভালোবাসার টানে, পাশে আনে’ নিয়ে তাদের লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে এয়ারটেলকে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহারকারীর ভালোবাসাসিক্ত ব্র্যান্ডে পরিণত করা।
ওয়ারিদের যাত্রা শুরু হয়েছিল পহেলা বৈশাখে। এদেশের সংস্কৃতি ও লৌকিকতা তুলে ধরে চিত্রায়িত বাপ্পা মজুমদারের ‘সালাম বাংলাদেশ’ গানের মাধ্যমে। কিন্তু এয়ারটেলের প্রথম বিজ্ঞাপনটি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তো নয়ই, বরং বিজ্ঞাপনটি দেখে যে কারও ধারণা হতে পারে, এটি ভারতে চিত্রায়িত এবং ভারতীয় মডেল দ্বারা অভিনীতও বটে। ইউনিলিভারের কল্যাণে ইতোমধ্যেই দেশীয় চ্যানেলে ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের মুখশ্রী দেখা যাচ্ছে। শাহরুখ খানের পদধূলির সুবাদে ডেসটিনির চ্যানেল বৈশাখী একমাস অনবরত হিন্দি গানের আসর বসিয়েছিল। এখন সেই যাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এয়ারটেল।
এয়ারটেল শুধু ভারতীয় মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন করেই ক্ষান্ত থাকেনি, তাদের লঞ্চিং বোনাঞ্জার প্রথম পুরস্কার হিসেবে তারা রেখেছে বলিউড সেলিব্রেটি জুটি সাইফ এবং কারিনার সঙ্গে ডিনারের সুযোগ। দৈনিক আমার দেশ-এর একজন পাঠকের ভাষায়, ‘ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বাদে অন্য কোনোভাবে ব্যাপারটিকে নিতে পারলাম না।’
এয়ারটেল শুরুতেই ঘোষণা দিয়েছে তারা বাংলাদেশে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। কিন্তু টেলিকরিডোর নিয়ে এয়ারটেলের দৌড়ঝাঁপ দেখে এ খাতের বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা হচ্ছে, এয়ারটেল বাংলাদেশের বিকাশমান টেলিকম খাতকে ভারতীয়করণের চেষ্টা করছে।
৪. দৈনিক আমার দেশ -শুত্র বার ২৮ ডিসেম্বর ২০১০
ভারতীয় মোবাইল অপারেটর এয়ারটেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে বিজ্ঞাপন ও প্রচার চালাচ্ছে। অনুমোদন ছাড়া ওই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল ক্যাম্পাস থেকে বিজ্ঞাপনের সব ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া ভাসমান প্রচারণাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিয়ম রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, শুটিং, সভা-সমাবেশ ও মিছিল কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া সম্পূর্ণ অবৈধ। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো অনুমতি ছাড়াই এয়ারটেল বাংলাদেশে তার যাত্রা শুরুর দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচারণা শুরু করে। পুরো ক্যাম্পাস ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার দিয়ে দেয়। এছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্পটে গাড়িতে করে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এসব প্রচারণার দায়িত্ব দেয়া হয় স্পেলবাউন্ড নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে।
একদিকে কোনো অনুমতি নেই, অন্যদিকে ক্যাম্পাসে সেখানে সেখানে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার কারণে শিক্ষার পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি ও সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ায় বিষয়টি নজরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এরপর গতকাল প্রক্টরিয়াল বডি বৈঠকে বসে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এয়ারটেলের সব ধরনের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয় এবং গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে সব ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার উচ্ছেদ করে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে এয়ারটেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বিজ্ঞাপনী সংস্থা স্পেলবাউন্ডের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞাপনের জন্য আমরা ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিয়েছি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে এ বিষয়টি আমরা জানতাম না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক কেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন কাকে অনুমতি দিলো তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাসে অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, শুটিং নিষিদ্ধ। এয়ারটেল বা কোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থা অনুমতি ছাড়া বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা করায় তারা নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। তাই ক্যাম্পাস থেকে তাদের সব ধরনের প্রচারণা সামগ্রী উচ্ছেদ করা হয়েছে।
৫. দৈনিক আমার দেশ -রোববার ২৬ ডিসেম্বর ২০১০
এয়ারটেল ভাগ্যবানই বটে। দেশের পুরনো ও প্রধান প্রধান মোবাইল অপারেটর যে সুযোগ পায়নি, সে দুর্লভ সুযোগ পেয়েছে তারা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিটিসিএল ও টেলিটকের অবকাঠামো ব্যবহার করে দেশজুড়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুযোগ পেয়েছে ওয়ারিদের নতুন মালিক এয়ারটেল। এ সুবিধা আদায়ে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। চুক্তির ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা রাষ্ট্রীয় কোম্পানি দুটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তেমন কিছুই জানেন না। বিটিসিএল ও টেলিটকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এয়ারটেল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি দুটির অবকাঠামো শেয়ার করবে। অন্য কোনো মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠান দুটির এজাতীয় চুক্তি নেই। অভিযোগ রয়েছে, ভারতকে টেলিট্রানজিট দেয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশাল অবকাঠামোতে অংশীদারিত্ব চুক্তি করা হয়েছে।
অন্য অপারেটরদের সঙ্গে বিটিসিএল ও টেলিটকের যে চুক্তি নেই, তা কেবল এয়ারটেলের সঙ্গে করার যৌক্তিকতা ও কারণ জানতে চাইলে বিটিসিএল কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ মোরশেদ গতকাল আমার দেশকে বলেন, এ চুক্তির ব্যাপারে আমার কোনোই ধারণা নেই।
তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে এজাতীয় চুক্তি সম্পন্ন করতে এয়ারটেলের পক্ষ থেকে চাপ ছিল। চুক্তিটি অতি সংগোপনে সম্পাদন করায় কোন কোন শর্তে এ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, তা বলতে পারব না। তাদের মতে, এজাতীয় কৌশলগত চুক্তি অন্য কোনো অপারেটরের সঙ্গে নেই। বলা যায়, ভাগ্যবান বলেই এয়ারটেল এক্ষেত্রে বিরাট সুবিধা নিয়ে এগিয়ে থাকল।
উল্লেখ্য, দেশের ছয়টি মোবাইল অপারেটর বিটিআরসির নীতিমালার আলোকে একে অন্যের সঙ্গে অবকাঠামোগত সুবিধা বিনিময় করতে পারে। এরই মধ্যে প্রতিটি মোবাইল অপারেটর এক বা একাধিক মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট সম্পন্ন করেছে। মূল্যবান ভূমির অপচয় রোধ এবং অবকাঠামো নির্মাণ খাতে খরচ কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই বিটিআরসি এ সাশ্রয়ী নীতিমালা তৈরি করে। কিন্তু সে সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোম্পানির সঙ্গে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো পায়নি। এয়ারটেলই প্রথম সে সুবিধা পেল।
এ চুক্তির ব্যাপারে এয়ারটেল, বিটিসিএল ও টেলিটক শুরু থেকেই কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। এমনকি অবকাঠামো সুবিধা বিনিময়ের লক্ষ্যে চলতি বছরের মাঝামাঝি নগরীর সোনারগাঁও হোটেলে পৃথক দুটি চুক্তির ঘোষণা নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সংবাদ সম্মেলনে চুক্তির শর্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, এ বিষয়ে কিছু জানানো যাবে না। বেসরকারি কোনো মোবাইল টেলিকম অপারেটরের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের এটাই ছিল প্রথম চুক্তি। তখন বলা হয়েছিল, এ সমঝোতা চুক্তির আওতায় চূড়ান্ত সমঝোতা চুক্তি হওয়ার পর এ তিনটি প্রতিষ্ঠান পারস্পরিক স্বার্থে অবকাঠামো বিনিময়ের সুযোগ পাবে। অনুষ্ঠানে এয়ারটেল, বিটিসিএল ও টেলিটকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি।
সে সময় তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এ সমঝোতা স্মারক চুক্তির আওতায় অপারেটররা তাদের বিটিএস ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি, ব্যান্ডউইডথসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো বিনিময় করতে পারবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস। তিনি বলেছিলেন, দেশের ভূমি বাঁচানো ও মোবাইল অপারেটিং ব্যয় কমিয়ে আনতে সাইট শেয়ারিং বাধ্যতামূলক করার পক্ষে বলে আসছি। বিটিআরসিকে এ ব্যাপারে গাইডলাইন তৈরি করতেও বলেছি। তারই ফসল আজকের এ সমঝোতা স্মারক চুক্তি।
অন্যদিকে এ ধরনের চুক্তির কারণ ব্যাখ্যা করে এয়ারটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি ক্রিস টেবিট বলেছিলেন, নগর ও গ্রামীণ জনপদে মোবাইল টেলিকম সেবা পৌঁছে দিতে হলে এ ধরনের চুক্তি জরুরি। আমরা এ চুক্তির অপেক্ষায় ছিলাম। অনুষ্ঠানে বিটিসিএলের তত্কালীন এমডি এসএম খাবিরুজ্জামান ভারতের সঙ্গে শিগগির অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগের তথ্য দিয়ে বলেছিলেন, বিটিসিএল এখন দেশজুড়ে অপটিক্যাল ফাইবার লাইন স্থাপন করছে। অনুষ্ঠানে টেলিটকের এমডি ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
ভারতকে টেলিট্রানজিট পাইয়ে দিতে এয়ারটেলের সংশ্লিষ্টতা বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পেছনের কাহিনী এটাই।
==============================================================================
এখানে কোম্পানী টির প্রতি কোন রূপ বিদ্দেশ করা হচ্ছে না। শুধু বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে, একটি বাইরের কোম্পানী কে অবৈধ সুযোগ দিয়ে দেশের ক্ষতি করার কোন মানে হয় না। এতে দেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। যা আমাদের সবার জন্য ই ক্ষতির কারণ। এতে করে শুরু হবে একটি নতুন আগ্রাসন। এখন প্রশ্ন হল দেশের কতিপয় নেত্বত স্থানীয় লোক কি দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে না? এতে করে কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের উদিয়মান টেকনোলজি খাত চলে যাবে আরেকটি দেশের কাছে। যা কখনোই আমাদের জন্য মঙ্গল কর নয়। এটি কোন রাজনৈতিক সমস্যা কিনবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রসুত প্রতিবেদন না। আমরা এমনই এক দেশে বাস করি যে দেশে প্রবীন শিল্পীরা টাকার অভাবে বিনা সেবায় মারা যায়, আর সেখানে মোবাইলে টাকা রিচার্জ করলে অন্য দেশের শিল্পীদের সাথে ডিনার করার সুযোগে তৈরী হবে। যেটা নিতান্তই আমাদের জন্য দূরভাগ্য্।
টিউনটি টেকটিউনের বিষয়ের সাথে পুরাপুরি সামজস্য বিধান করে না , তার পর ও যেহেতু বিষয়টি আমাদের টেকনোলজি খাতের সাথে অতপ্রোত ভাবে জড়িত তাই এই টিউন করা। এতে আশা করি পাঠকরা সচেতন হবেন এবং এবং দেশের টেকনোলজি খাতের রক্ষায় অবদান রাখেবন।
টিউনটি সাইজ অনেক বড় হয়ে গেল। তার পর ও বিষয় টি ধৈর্যের সাথে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
ভালো থাকুন।
রাসেল।
সমস্যা হলো সবগুলো লেখা আমার দেশের। এজন্য এটাকে নিরপেক্ষ ভাবতে পারছি না।