ভয় পাবেন না! এই কথা আমি বলি নাই। ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে কথাটা দেখলাম ফরেক্স এর সাথে দীর্ঘদিন যাবত জড়িত একজন ব্যক্তির ফেসবুক স্ট্যাটাসে। এবং শুনে বেশ অবাক হলাম আমি। কারন আমার জানা মতে সে একজন বিখ্যাত আইবি পার্টনার। চার পাঁচটা ব্রোকারে আইবি লিঙ্ক আছে তার। বেশ কয়েকবার সেরা আইবি এর পুরস্কার পেয়েছে। ট্রেড বুঝেনা এমন লোকরে সে ধরে বেঁধে নিয়ে ডিপোজিট করায়। আবার ট্রেড ছেড়ে দিছে এমন অনেককে সে লোভ দেখিয়ে ট্রেডিং এ এনেছে। লোকে পয়সা লস করে আর সে কমিশন গেলে! তার কোন কোন লস নাই!
তাই তো এই ব্যক্তির মুখে এমন কথা শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল। আরে, বিশ্বের সব ট্রেডাররাও যদি ফরেক্সকে ভাঁওতাবাজি বলে, খারাপ বলে, তারপরও এই ব্যক্তির মুখে ফরেক্সের শুধু প্রশংসাই শুনার কথা! কারন ফরেক্স তাকে অনেক কিছু দিয়েছে। শুনেছি দামী গাড়ি কিনেছে। নিজে ড্রাইভিং জানে অথচ ড্রাইভার রেখেছে গাড়ি চালানোর জন্য! দামী ফ্ল্যাট কিনেছে আজিমপুর এলাকায়! বলিহারি কান্ড! মারাত্মক ব্যাপার! অথচ সেই ভাওতাবাজ আজ নিজেই ফরেক্সকে ভাওতাবাজ বলছে! কাহিনী কি?
অনেক চিন্তা করলাম আমি বিষয়টা নিয়ে। তারপর দুইয়ে দুইয়ে চার মিলালাম! গত কয়েক মাসে মার্কেটের অবস্থা আর এখনকার অবস্থা, বাংলাদেশে ট্রেডিং এর হালচাল, ফেসবুক-ব্লগে আইবি দের কার্যক্রম, দেশে বিজনেস করা ব্রোকার গুলোর অফার- সব মিলিয়ে পুরো দৃশ্যটা আমার চোখের সামনে স্পষ্ট হল! কেন সৌরভ সাখাওয়াত এর মত ফরেক্সের দরবেশরা এখন কেন ফরেক্সকে ভাঁওতাবাজি বলতেছে তা বুঝতে আমার আর বাকি থাকল না! কাহিনী তাহলে এই দিকে গেছে!
যাই হোক, চিন্তা যখন মাথায় এসেছে তখন ব্যাপারগুলা আপনাদের সাথে শেয়ার করে ফেলি। আমার মাথায় একবার কোন কাহিনী ঢুকলে যতক্ষণে লিখে টিউন না করব ততক্ষন শান্তি পাই না!
বাংলাদেশে ফরেক্সে চরম অবস্থা গিয়েছে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। বুমিং মার্কেট বাংলাদেশ! সব বিখ্যাত- কুখ্যাত ব্রোকারের নজর ছিল আমাদের মার্কেটে। তারা এই দেশের ট্রেডারদের ধরে বাংলাদেশে বিজনেস সম্প্রসারিত করে ফেলল। কিভাবে তারা বিজনেস বাড়াল আমাদের দেশে? আসুন বুঝে দেখি-
২০০৮ সাল থেকে ২০১০ এর দিকে বাংলাদেশে ফরেক্সের প্রথম প্রজন্মের আবির্ভাব হল! এখানে যারা ফরেক্সের সাথে শুরুতে জড়িয়ে গিয়েছিল, তাদের একটা অংশ ছিল শেয়ার বাজারে বিজনেস করে ধরা খাওয়া মানুষ জন। আর একটা অংশ ছিল ডেসটিনি ও অন্যান্য MLM বিজনেস করা এজেন্ট রা। নরমাল ট্রেডারও ছিল, কিন্তু তাদের সংখ্যা নগন্য। এরা সবাই ফরেক্সে ট্রেডিং শুরু করল কারন এদের চাকরি বাকরি বা সাধারণ ব্যবসা ভাল লাগে না। তার চেয়ে যে সব ব্যবসা করলে অল্প দিনে অধিক আয় করা যাবে, সেসবের প্রতি আগ্রহ বেশি। তাই তারা ফরেক্সে ঝুঁকল। কিন্তু ভাই! কোন বিজনেস করেই অল্প দিনে বেশি আয় করা যায় না! আপনি যে বিজনেসে যাবেন, প্রচুর পরিশ্রম লাগবে, সেই সাথে লাগবে লাভ করার আপ্রান চেষ্টা ও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে সুযোগের জন্য।
কিন্তু এই প্রথম প্রজন্মের সবারই স্বভাবত ধৈর্য কম। তারা অল্প কদিন ট্রেডিং শিখে, না বুঝে ফরেক্স করতে গিয়ে ধরা খেল। সব টাকা জলে! কিন্তু এরা নাছোড়বান্দা! লস খেয়ে তারা অন্য বিজনেসের ধান্দা ধরল! আইবি বিজনেস! আইবি বিজনেস করে মানুষকে নিজেদের লিংকে ডিপোজিট করালে অনেক কমিশন খাওয়া যাবে। তাদের কেউ কেউ একটু ভাল মানের ব্রোকার, বাকিরা আজে বাজে ব্রোকারের আইবি পার্টনার হল। ভাল ব্রোকারের আইবি সংখ্যা কম কারন তারা আইবি কমিশন কম দেয়! তাই বাজে ব্রোকারের দিকেই আইবিদের নজর ছিল বেশি! তাদের চিন্তা হল নিজেদের কমিশন, ট্রেডার লাভ করল নাকি লস করল, ব্রোকার দুই নাম্বারি করল কি না- এইসব আইবিদের মাথা ব্যাথা না!
২০১১ থেকে ২০১২ সালের দিকে আইবিদের দ্বারা যেসব লোকেরা এসে প্রথমবার ফরেক্সে যোগ দিলেন, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন শিক্ষিত ব্যক্তি এবং সেই সাথে বিচক্ষণ। তারা ভাল ভাবে শিখে বুঝে বিজনেস করলেন। এবং বেশ লাভবান হলেন। প্রথমে তারা আইবিদের দ্বারা আজে বাজে ব্রোকারে একাউন্ট করলেও, পরে সেই একাউন্ট ক্লোজ করে দিয়ে তারা বড় বড় ভাল ভাল ব্রোকারে একাউন্ট খুলে ট্রেডিং করতে আরম্ভ করলেন। এরা ২০১২ সালের পর থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেলেন। প্রত্যেকেই ফরেক্স করে অনেক পয়সা উপার্জন করেছেন, এখনও করছেন। কিন্তু কারো সাথে এই সব শেয়ার করেন না।
আমার অভিজ্ঞতা বলে- আসলে সফল ব্যক্তি মানেই খানিকটা স্বার্থপর হয়। নিজের সফলতা সবার সাথে শেয়ার করে না তারা। ফরেক্স ট্রেডিং করে লাখ ডলার কামিয়েছেন এমন অনেকেই আছেন। কিন্তু তারা অন্য ট্রেডারদের সাথে যোগাযোগ করেন না। কোথাও ফরেক্স নিয়ে কথা বলেন না। ফরেক্স নিয়ে আসলে হই চই করে যারা ফরেক্সে নতুন, হয়ত কোন ব্রোকারের আইবি পার্টনার অথবা যারা অনেক দিন ট্রেড করলেও লাভের মুখ দেখেন নি। আসল সফলেরা থাকেন আড়ালে।
আমার পরিচিত এক ট্রেডার বিজয় নামে এক ছেলের গল্প লিখেছিলাম আমি এর আগে। তার ট্রেডিং করে সফল হওয়ার গল্প। তাকেও দেখেছি বেশ আড়ালে আবডালে থাকতে। খুব একটা ফরেক্স নিয়ে কথাই বলে না। আমি নিজে টুক টাক লাভ করেছি ফরেক্স থেকে। তাই হয়ত ফরেক্স নিয়ে অনেক লেখালেখি করি। বিশাল অংকের লাভ করতে পারলে হয়ত আমিও চুপ করে যেতাম!
যাই হোক, আইবিদের খুব একটা লাভ হলো না এদের কাছ থেকে। কিন্তু যা লাভ হল, তা একে বারে খারাপ না! তারা এবার নতুন চিন্তা করল। তারা টার্গেট করল হয় বেকার, অনলাইনে কাজ খুঁজে এমন লোক জন আর স্টুডেন্ট লেভেলের ছেলেদের যাদের এভাইলেবল ইন্টারনেট কানেকশন আছে।
আইবিদের দ্বারা প্রথম বার আনা লোকেরা অন্য ভাল ভাল ব্রোকার দেখে সরে গেলেও আইবিরা কিন্তু থামেনি। তারা বিপুল উৎসাহে কাজ করেছে। নিত্য নতুন লোককে কোন মতে বাই-সেল শিখিয়ে দিয়ে ডিপোজিট করিয়ে দিল। এবার তারা বিপুল লাভের মুখ দেখল।
একটা নামকরা বড় ফরেক্স ব্রোকারে ইসিএন একাউন্ট করতে গেলে আপনাকে ৫০০ ডলার থেকে ১০০০ ডলার ফার্স্ট ডিপোজিট করতে হবে! নরমাল ষ্ট্যাণ্ডার্ড একাউন্ট করতে গেলেও লাগবে ১০০ ডলার এর বেশি। চাকুরীজীবী, টাকা পয়সা আছে এমন ব্যক্তিদের ব্রোকারে একাউন্ট করালে তারা বেশিদিন থাকবে না। কারন তাদের ৫০০ ডলার ডিপোজিট করে ট্রেড করার ক্ষমতা আছে। তারা ঠিকই ফরেক্স শেখা হয়ে গেলে ভাল ব্রোকার খুঁজে চলে যাবে। তাই আইবি পার্টনাররা এমন লোকদের ট্রেড করতে উৎসাহী করল যাদের খুব বেশি ডিপোজিটের অবস্থা নেই। কোন ব্রোকারে ৫-১০ ডলার ডিপোজিট করা যায় সেই সুযোগ খুঁজবে!
এই তৃতীয় প্রজন্মের ট্রেডাররা বেশিরভাগ ছিল স্টুডেন্ট। এরা সংখ্যায়ও অনেক বেশি! শুরুতে ৫-১০ ডলার দিয়ে একাউন্ট করে এরা ২০-৫০ ডলার লাভ করে ফেলল। লোভ গেল বেড়ে। লোভের বশে সবই গেল। কিন্তু তাদের হয়ে গেছে নেশা! তারা বাপের মানিব্যাগ থেকে টাকা সরিয়ে, মোবাইল বিক্রি করে, বন্ধুদের কাছ থেকে ধার হাওলাদ করে টাকা এনে ডিপোজিট দিল! কিন্তু বিধিবাম! সব গেল! ফরেক্স না শিখে ফরেক্স থেকে মুনাফা! অসম্ভবের উপরে অসম্ভব! শুরতে ঝড়ে বক মরলেও, পরে কালবৈশাখী ঝড়ে নিজেই উড়ে গেল সব নতুন ট্রেডাররা।
এই সময়ে বাংলাদেশে ট্রেডার সংখ্যা লাখের বেশি হয়ে গেল। কিন্তু ট্রেডিং শুরা করা ৯৫ ভাগ ট্রেডার লস করেছে। অনেকে লাখ লাখ টাকা লস করেছে। অনেকের তো বাড়ি, জায়গা জমি সব গিয়েছে- এমন অবস্থা! এদের বেশিরভাগই সব হারিয়ে ট্রেডিং ছেড়ে দিল। আর কিছু অংশ গিয়ে যোগ দিল আইবি দের সাথে। আইবিদের দল ভারি হল। যেদিকেই যাই, সেদিকেই ফরেক্সের আইবি পার্টনার! এই ব্রোকার- ঐ ব্রোকার- আম ব্রোকার- জাম ব্রোকার- কাঁঠাল ব্রোকার- সব বাংলাদেশে সার্ভিস খুলতে থাকল। আইবিদের লাভের অংকও কমে যেতে থাকল। কারণ আইবি ভরে গেছে বাজারে।
২০১৪ সালের দিকে বাংলাদেশে ফরেক্সে চতুর্থ প্রজন্মের আসা শুরু হয়ে গেল। এর মধ্যে প্রচুর মার্কেট মেকার ব্রোকাররা বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হল। তারা স্থানীয় ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশে তাদের বিজ্ঞাপন করতে থাকল। কারনটা বোঝা খুব একটা কষ্টকর নয়!
আপনারা জানেন মার্কেট ব্রোকার এর কাজ হচ্ছে ট্রেডারের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া। অর্থাৎ ট্রেডার লস করলে ব্রোকার লাভ করে, আর ট্রেডার লাভ করলে ব্রোকার লস করে। যেহেতু বাংলাদেশে তৃতীয় প্রজন্মের ট্রেডাররা বিশাল লস করল, তাই মার্কেট মেকার ব্রোকারগুলোর লোভে জিহবা আধ হাত বেরিয়ে এল। তারা আইবি পার্টনার খুঁজে খুঁজে নিয়ে বাংলাদেশে কাস্টমার সার্ভিস দিল। কিছু কিছু ব্রোকার ঢাকা, চিটাগং, সিলেটে অফিস দিল! যদিও বাংলাদেশে কোন ব্রোকারের অফিস দেওয়াটা আইনে সম্পূর্ণ নিষেধ!
তারপর শুরু হল ট্রেডার খোঁজা। আইবিরা মাঠে ঘাটে বনে বাদাড়ে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। গরুর খোঁজার মত করে ট্রেডারদের খুজতে থাকল। নিজে ফরেক্স ট্রেডিং এর কোন আইডিয়া রাখেনা, অথচ কি না তারা ট্রেনিং সেন্টার খুলে বসল বিভিন্ন স্থানে! এই ধাক্কায়ও অনেক ট্রেডার বাড়ল। তবে আগের তুলনায় কম। মার্কেট মেকার ব্রোকারগুলো ২০১৪ সালের দিকে বেশ লাভ করল। দেশের বড় অংকের টাকা বাইরে চলে গেল। লসের খেলায় মেতে থাকল ট্রেডারগন।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই নতুন ট্রেডারদের তেল ফুরিয়ে গেল! বাতি তো আর জ্বলে না! আইবিদের ইনকাম কমে গেল মারাত্মক ভাবে। দামী গাড়ি কিনেছে অনেকে, কিন্তু গাড়ির গ্যাস ভরার টাকা নাই পকেটে! গাড়ি পরে রইল গ্যারেজে, পায়ে হেঁটে যাতায়াত হল ভরসা!
এই প্রজন্ম শুরু হল ২০১৫ সালের শেষ থেকে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে। এরা হচ্ছে সব টাকা পয়সা নাই এমন টাইপের লোক জন। এদের ফরেক্সে লাখ লাখ ডলার ডিপোজিটের ক্ষমতা নাই। তারা সব ব্রোকার ঘুরে ঘুরে খালি ডেমো একাউন্ট খুলে, কিন্তু লাইভ ট্রেডিং এর খবর নাই। কয়েকজন আবার ফরেক্স শেখার জন্য এখানে ওখানে যায়, কিন্তু টাকা পয়সা লাগবে শুনলেই সটকে পড়ে।
আইবিরা অনেক ট্রেডারকে একাউন্ট খুলিয়ে দিলেও তারা কেউ পকেটের পয়সা খরচ করে ট্রেডিং করে না! অনেকেই নো ডিপোজিট বোনাস খোঁজে, যেখানে নো ডিপোজিট বোনাস পায় তারা সেখানেই একাউন্ট খুলে ট্রেড করে। বোনাস শেষ তো ট্রেডিং শেষ। এদের অনেকেই আবার আইবি বিজনেসে আগ্রহী হল। রিস্ক ফ্রি ইনকাম। নিজে কদিন ফরেক্স শিখে, এখন অন্যকে ফরেক্স শিখায়। কিন্তু ট্রেডিং কেউ করে না!
এর মধ্যে আরও এক সমস্যা দাঁড়াল তৃতীয় – চতুর্থ প্রজন্মের লোকেরা। এরা তো ট্রেডিং করে বিরাট লস করেছে। এরা ফেসবুকে, ব্লগে- সব খানে ফরেক্স বিজনেসের বদনাম করে বেড়াতে থাকল। সবাইকে ফরেক্স করতে নিরুৎসাহিত করতে থাকল। ফলে ফরেক্স ট্রেডার বৃদ্ধি তো হচ্ছে না, সাথে এক্সিটিং ট্রেডাররাও মার্কেট ছেড়ে সরে যাচ্ছে! যারা ট্রেডিং করছে তারা নিজেরাও সাবধান হচ্ছে। জেনে শুনে ভাল ব্রোকার খুঁজে একাউন্ট করে, আইবিদের লিংক এ ক্লিক করে একাউন্ট করে না। আস্তে আস্তে মার্কেট মেকার ব্রোকারগুলি মার্কেট ছেড়ে আউট হতে থাকল। নিজেদের বিজনেস সার্ভিস গুটিয়ে ভাগল।
ওয়েস্টার্ন এফএক্স নামে একটা ব্রোকারের উদাহারন দিতে পারি। বেশ নাম করেছিল। বাংলাদেশে বিশাল অফিস দিয়ে তাদের এলাহি কান্ড! কিন্তু ট্রেডারদের সাথে দুই নাম্বারি করে কতদিন টেকা যায়? একসময় ট্রেডাররা সব বুঝে সরে এজতে থাকল। ফলে সেই ব্রোকারও চাট্টি বাট্টি গুটিয়ে পগার পার! আইবিরাও হায় হায় অবস্থা!
ইনকাম করতে না পেরে অনেক আইবিরা ফরেক্স ছেড়ে ভাগল। তারা দুই চার পয়সা যা জমিয়েছে, তা দিয়ে পানের দোকান, সিগারেটের দোকান খুলে স্বাধীন ব্যবসা করতে থাকল। কিন্তু যাদের ধ্যান জ্ঞান সাধনা ছিল ফরেক্স ট্রেডিং, তাদের তো মাথায় হাত! মাসে মাসে লাখ টাকা ইনকাম দেখিয়ে বড় বাড়ির হুরপরির মত সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে এনেছি। এখন তো পকেট ফাঁকা, সুন্দরী বউয়ের মাসিক হাত খরচ ২০ হাজার টাকা! কোত্থেকে আসবে?
এই জন্যই আজ সৌরভ সাখাওয়াত এর মত পাবলিকরা বলে বেড়াচ্ছে- এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে ফরেক্স ট্রেডিং এর মত ভাঁওতাবাজি বিজনেস আর একটাও নাই!
তাহলে কি দাঁড়াল? আমাদের কি তাহলে ফরেক্স করে কোন লাভই হবে না? ফরেক্স কি তাহলে আসলেই ভাঁওতাবাজি? আমি জানি এই প্রশ্ন এখন অনেকেই করছেন। ভাবছেন আযহার ভাই তো ব্যাপক সমস্যার কথা বলল, কিন্তু এই সব সমস্যার সমাধানের কোন উপায় আছে কি না তা তো বলল না। না ভাই, সমস্যা যখন তুলে এনেছি, কিছু সমাধানের কথাও বলব আজ।
বাংলাদেশ থেকে সহজ পথে ফরেক্স ট্রেডিং করে একটা দীর্ঘ সময় ধরে সফলতা বজায় রাখা শুধু কঠিন না, প্রায় অসম্ভব ব্যাপার! নিজের ঘরে খেয়ে পড়ে অন্তত এক বছর ট্রেডিং শিখে, প্র্যাকটিস করে তারপর নামতে হবে। তাহলে আপনিও ঐ সফল ট্রেডারদের মত লাভ করে লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে রাজার হালে থাকতে পারবেন।
কিন্তু আপনার আমার মত যারা ইতিমধ্যে ফরেক্স বিজনেস শুরু করেছে, বা করার অপেক্ষায় আছে তারা কি করবে বলেন? তাদের পক্ষে কি এতটা সময় অপেক্ষা করা সম্ভব? এক বছর যে ফরেক্স শিখব আমরা, সেই সময়টা আমাদের খাওয়া পড়ার খরচ কে দেবে ভাই? পড়াশুনার পাশাপাশি ফরেক্স শেখার মত সময় কি পাবেন আপনি? আর পড়া লেখা শেষ করার পর এক বছর বসে শেখা সম্ভব? তারচেয়ে তো চাকরি খোঁজাখুঁজি করলে এতদিনে চাকরি মিলে যাওয়ার কথা! আর চাকরি কিংবা সাধারণ বিজনেসের পাশে ট্রেড করাটা যে কি মুশকিল সেটা আমি সবচেয়ে ভাল বুঝি!
তাহলে আমরা কি করব? তাদের জন্য একটা সহজ সমাধানের কথা বলতে পারি।
একটু আগেই বলছিলাম আমার পরিচিত ইয়ং ছেলে বিজয়ের কথা। ২৪-২৫ বছর বয়স। এই বয়সে ফরেক্স বিজনেস করে কয়েক লাখ ডলার ইনকাম করে ফেলেছে সে। বিজয় একদিন তার লাইফের ফরেক্স নিয়ে কথা গুলো শেয়ার করল আমার সাথে। অন্য একটা আর্টিকেলে আমি বিজয়ের সেই সফল হওয়ার গল্প শেয়ার করেছি। তার কথায় জানলাম যে সে ব্রসন্যান নামের এস্তোনিয়ার এর ট্রেডার এর সিগন্যাল ওয়েবসাইট ফরেক্সপ্রফিটা ডট কম এর সাহায্য নিয়ে ভাল করছে প্রতি মাসে। চাকরি বাকরি করেনা, ফুল টাইম ট্রেডিং এ আছে। তার কথায় উতসাহিত হয়ে আমি বিশ্বের ভাল ভাল বিদেশি সিগন্যাল ওয়েবসাইট ঘুরে ঘুরে আমার মতে সেরা গুলি খুঁজে বের করেছি। এই সব সাইটে অল্প কিছু ডলার খরচ করে সাবস্ক্রাইব করে মাসে ভাল প্রফিট থাকে।
আসেন সাইটগুলি সম্পরকে জানি। তবে ভয় পেয়েন না, এই খানে কোন অ্যাফিলিয়েট সাইটের লিংক নাই। সব নরমাল লিংক ভাই। আমি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করি না। আপনাদের উপকারের প্রচেষ্টা বলতে পারেন। আসুন দেখে নেইঃ
ভ্লাদিমির নামে একজন অভিজ্ঞ ট্রেডার এই সাইটে সিগন্যাল দেন। সাইটটি তে মুলত আমেরিকান ট্রেডাররা সাবস্ক্রাইব করে। তবে ওভারল রেজাল্ট ভাল। এদের ৭ দিনের ট্রায়াল প্যাকেজ আছে। কিন্তু তার পর থেকে ৯৭ ডলার দিতে হবে প্রতি মাসে। ট্রাই করে দেখতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশি ট্রেডারদের জন্য সাইটটির ব্যবহার খুব বেশি ভাল হবে কি না সেটা ঠিক বুঝতে পারি নি। যেহেতু আমেরিকান সাইট এবং আমেরিকান টাইমে দিনের বেলা সিগন্যাল দেয় বলছে, তাহলে বাংলাদেশের সময়ে গভির রাতে সিগন্যাল দেবে। তখন কে জেগে থাকবে সিগন্যাল ধরতে? আমার আরও ঘাটাঘাটি করতে হবে। আপনারা বুঝে দেখতে পারেন। তবে ওদের সিগন্যাল ভাল, এটা নিশ্চিত।
সাইট লিংকঃ http://www.vladimirforexsignals.com/
এদের সিগন্যাল প্রতি মাসে ৯৯ ডলার, প্রথম মাসে ৪৯ ডলার দিতে হবে। এদেরও সিগন্যাল ভাল, বেশ ভাল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সিগন্যাল খুব কম দেয়। মানি ম্যানেজমেন্ট বেশি। সিগন্যাল কখন দেবে আগে থেকে জানা যায় না। কিন্তু সিগন্যাল যা দেয় খুবই একিউরেট। প্রায় ১০০%। বাট সাবস্কাইব করতে অনেক ঝামেলা, পেপাল লাগে।
সাইটের লিংকঃ https://www.forexsignal.com/
এই সাইটের কথাই আমাকে বিজয় বলেছিল। এস্তোনিয়ার ট্রেডার ব্রসন্যান এর সাইট। বেশ ভাল সিগন্যাল দেয় তারা। ৮০ ভাগ একিউরেসি থাকে। এই সাইটে অনেক সুবিধা আছে বাংলাদেশিদের জন্য। সারা দিন রাত সিগন্যাল দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের টাইমে অনেক সিগন্যাল ধরার সুযোগ হয়। তাছাড়া স্ক্রিল, নেটেলারের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়। বাংলাদেশে অনেকেই নিচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে এদের প্রাইস একটু হাই। ১০০ ডলার মাসিক পেমেন্ট না হলে ভাল সিগন্যাল পাবেন না। একটা সুবিধা হচ্ছে এরা হাই মার্কেটস (বর্তমান নামঃ HYCM) ব্রোকার এর সাথে জড়িত। বেশ ভাল ব্রোকার। যারা HYCM ব্রোকারে ট্রেডিং করে, তারা ফ্রি মেম্বারশিপ পায় এবং ফ্রি সিগন্যাল নিতে পারে।
সাইটের লিংকঃ http://www.forexprofita.com/
ফরেক্স ফাংশন অনেক ভাল একটি সিগন্যাল সাইট। কিন্তু এদের প্রাইস যেমন অনেক বেশি, তেমন সিগন্যালও কম দেয়। তবে সাইটের সিগন্যাল বেশ ভাল। অনেক অভিজ্ঞ, দীর্ঘ দিন যাবত এরা ফরেক্স মার্কেটে জড়িত। আপনারা চাইলে এদের সিগন্যাল ফলো করতে পারেন।
সাইটের লিংকঃ http://www.forexfunction.com/
এরা নতুন সিগন্যাল প্রভাইডার। কিন্তু সার্ভিসের মান ভাল। অনেক একিউরেট সার্ভিস দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত খারাপ করেনি। কিন্তু যেহেতু নতুন, তাই একটু ভরসা কম করছি ওদের উপরে। আপনারা চাইলে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন। কিন্তু করেন নিজ দায়িত্বে।
সাইটের লিঙ্কঃ https://duxforex.com/
এদের ওখানে সিগন্যালের জন্য পেমেন্ট করা একটু ঝামেলা বেশি। তাছাড়া সব ঠিক ঠাক। আগে থেকে জানা যায় কখন সিগন্যাল দেবে। সিগন্যাল এর একিউরেসি একটু কম। ৬০ পারসেন্ট এর মত। অনেক ট্রেড লেস ক্লোজ হয়। তবে মানি ম্যানেজমেন্ট ভাল থাকে তাদের খুব। আপনারা চাইলে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
সাইটের লিংকঃ http://forexpipssignal.com/
যাই হোক, অনেক অনেক অনেক কথা বললাম। আশা করি অন্তত দুই একজন ফরেক্স ট্রেডারের বা ফরেক্সে আগ্রহী ব্যক্তির উপকার হবে। ভাল থাকুন সবাই। কোন প্রশ্ন থাকলে টিউমেন্টে করেন। বা আমার সাথে মেইলে যোগাযোগ করতে পারেনঃ [email protected] এ।
আমি মীর আযহার আলি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 13 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নাম মীর আযহার আলি। পেশায় একজন ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট। পাশাপাশি অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে ব্লগে লেখালেখি করছেন। সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি বিষয়ে তিনি আপডেট থাকতে পছন্দ করেন। তার বিভিন্ন লেখাগুলো পড়ার জন্য ঘুরে আসতে পারেনঃ http://www.forexing24.com/ ব্লগ থেকে।