আমাদের এই পৃথীবিতে কিছু ভয়ংকর সুন্দরর্য আছে যা ভাবলে গা শিউরে উঠে চলুন একটু জানার চেষ্টা করি সেই ভয়ংকর সুন্দরর্যটি কি......
ভলকানো মানে আগ্নেয়গিরি।এই আগ্নেয়গিরি আবার কি? পৃথিবীতে কিছু পাহাড় আছে যা থেকে উত্তপ্ত গলিত পাথর, ছাই, আর গ্যাস বের হয়। সেই গলিত পাথর, ছাইগুলোর তাপমাত্রা এতোটাই বেশি থাকে যে ওগুলো টকটকে আগুনের মতোই হয়ে থাকে। সেই আগুন বের করা পাহাড়গুলোকেই বলা হয় আগ্নেয়গিরি।
রোমান পৌরাণিক কাহিনীর আগুনের দেবতার নাম ভালকান (Vulcan), আর তাই বাংলায় যা আগ্নেয়গিরি তা আবার ইংরেজিতে ভলকানো (Volcano)। পৃথিবীর ভেতরের দিকে যে গ্যাসগুলো জমা হয়, সেগুলো আবার অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত চাপের ফলে পৃথিবীর ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাড়িতে রান্নার সময় প্রেসার কুকারের সিটি দেয়া তো অবশ্যই দেখেছেন ! ঐযে হঠাৎ করে জোরে শিস দিয়ে ওঠে! এই সিটি কিন্তু প্রেসার কুকারের ভিতরে চাপ বাড়তে থাকে বলেই হয়। আগ্নেয়গিরিতেও কিন্তু প্রায় একই ঘটনাই ঘটে।
আর বের হওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসে ভেতরে জমে থাকা গলিত লাভা (Lava)। এই লাভা-টা আবার কি, তাই তো? সেই যে মাটির নিচে গলিত যেসব পাথর, ছাই থাকে সেগুলোকে বলে ম্যাগমা (Magma)। সেই ম্যাগমাই যখন মাটির ভেতর থেকে বাইরে খোলা বাতাসে আসে, তখন তার নাম হয়ে যায় লাভা। প্রশ্ন করতে পারেন যে, পাথর গলে কিভাবে? লাভার তাপমাত্রা থাকে ৭০০-১২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কাজেই বুঝতেই পারছেন যে এই তাপমাত্রায় পাথর গলে যাওয়া খুব একটা কঠিন কিছু না।
এ পর্যন্ত দুনিয়াজুড়ে প্রায় ১৫১০ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মধ্যে ৮০ টি বা তার বেশি আবার সমুদ্রের নিচে। সত্যিকথা হচ্ছে- পৃথিবীতে প্রতি দশ জনের এক জন বাস করে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির আওতায়। যদিও এটা বিপজ্জনক, তার পরেও মানুষ আগ্নেয়গিরির কাছেই থাকে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ২,০০,০০০ লোক মৃত্যুবরণ করেছে এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে। অথচ তারপরেও মানুষ থাকতে চায় আগ্নেয়গিরির কাছে, কারণ আগ্নেয়গিরির ঢালে থাকে, উন্নত এবং উর্বর মাটি, যাতে ফসল ভালো হয় খুব। আর অনেক পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টিই হয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে। এই যেমন মার্কিন মুলুকের হাওয়াই দ্বীপের কথাই ধরো না, এটা তো তৈরী হয়েছে পাঁচ পাঁচটি পর্বত নিয়ে; যার ২ টিই কিনা আগ্নেয়গিরি!
আগ্নেয়গিরিগুলোকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়, সক্রিয়, সুপ্ত এবং বিলুপ্ত। সক্রিয় আগ্নেয়গিরি প্রায়ই অগ্ন্যুৎপাত করে এবং যে কোনো সময় করতে পারে। সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হলো যে আগ্নেয়গিরিটা বেশ আগে অগ্ন্যুৎপাত করেছে আবার যে কোনো সময় করতে পারে। আর বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরি হলো যেটা অনেক, অনেকদিন আগে অগ্ন্যুৎপাত করেছে তাই আর করার কোনো সম্ভাবনাও নেই।
এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হলো মাওনা লোয়া (Mouna Loa)। হাওয়াই ভাষায় মাওনা লোয়া মানে হলো লম্বা পর্বত। এটি প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপে। মাওনা লোয়া ৪,১৭০ মিটার লম্বা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, এটি মাউন্ট এভারেস্ট এর চেয়েও বড়। অবশ্য তা সমুদ্রের নিচের এই পর্বতের গোড়া থেকে চূড়া পর্যন্তের হিসেবে। যতোদূর জানা গেছে, ১৮৭৩ সাল থেকে এই আগ্নেয়গিরিটি ৩৩ বার অগ্ন্যুৎপাত করেছে।
এটা তো গেলো পৃথিবীর হিসাব, আমাদের সৌরজগতের সবচে বড় আগ্নেয়গিরি কোনটি জানেন? এটা হলো মাউন্ট অলিম্পাস। বলুন তো এটা কোথায় অবস্থিত? না জানলেও সমস্যা নেই। এটা বুধ গ্রহে অবস্থিত। এই আগ্নেয়গিরিটা কতো বড় আন্দাজ করতে পা্রেন ? জানা গেছে, মাউন্ট অলিম্পাস লম্বায় ২৭ কিলোমিটার আর প্রস্থে ৫২০ কিলোমিটার। সাধে কি আর সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি হয়েছে!
পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলো নিয়ে একটা মজার জিনিস আছে, তা হলো- অগ্নিবলয় (Ring of Fire)। প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিগুলোকেই বলে অগ্নিবলয় (Ring of Fire)। কারণ হচ্ছে- প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে এই আগ্নেয়গিরিগুলো বৃত্তের মতোই ঘিরে আছে। একারণেই একেই বলে অগ্নিবলয়।
আগ্নেয়গিরির এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সবচে বিধ্বংসী ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৮১৫ সালে। ইন্দোনেশিয়ার তামবোরা পর্বতে। এর ফলে শুধু না খেয়েই মারা গিয়েছিলো ৯২,০০০ লোক। এর পরের ঘটনাটাও ঘটেছে ইন্দোনেশিয়াতেই। ১৮৮৩ সালে ক্রাকাতাও পর্বতে। এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সুনামি হয়েছিলো। সেই সুনামিতেই মারা গিয়েছিলো ৩৬,৪১৭ জন। ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত ‘পেলে’ পর্বতে ঘটে যাওয়া ১৯০২ সালের অগ্ন্যুৎপাতের ছাই এর কারণেই মারা গিয়েছিলো ২৯,০২৫ জন। আর ইতালির ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতে লাভা প্রবাহে আর উত্তপ্ত কাদার প্রবাহে মারা গিয়েছিলো ৩,৫০০ জনের মতো। এটা অবশ্য অনেকদিন আগের কথা, সেই ১৬৩১ সালের।
এবারে তাহলে শোনো সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি অগ্ন্যুৎপাতের খবর। আইসল্যান্ডের এজাফালাজোকুল (Eyjafjallajökull) পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতে কি হুলস্থুলই না বেঁধে গিয়েছিলো। যেমন খটকা তার নাম, কাজও তেমনই।
২০১০ সালেই ঘটেছে এটা। ২০ মার্চ, ২০১০ তারিখে শুরু হয়ে ২৩ মে পর্যন্ত চলেছিলো তার অনবরত আগুনে ছাই বের করা। আর সেই আগুনে ছাই এর জন্যই তো ছয় দিন ধরে ওই এলাকার উপর দিয়ে সব উড়োজাহাজের চলাচলই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। প্রায় ৮০০ লোককে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছিলো।
তারপর এই তো ২ জানুয়ারি, ২০১০ ফ্রান্সের পিটন দে লা ফোরনেইজ (Piton de la Fournaise) পর্বতেই হয়ে গেলো অগ্ন্যুৎপাত। ১০ দিন স্থায়ী ছিলো সেটা। আর অদ্ভূত একটা ব্যাপার হচ্ছে, অগ্ন্যুৎপাত তো ভয়ানক ব্যাপার। কিন্তু তারপরেও অসংখ্য পর্যটক সেখানে বেড়াতে যায়।
এছাড়াও জাপানের ফুকুটোকু-ওকানোবা (Fukutoku-Okanoba) ও কিরিশিমা (Kirishima), কঙ্গোর নায়ামুরাগিরা (Nyamuragira) আর কোস্টারিকার তুরিএলবা (Turrialba) ও আছে সম্প্রতি অগ্ন্যুৎপাত ঘটানো আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে। আর এগুলো হয়েছে ২০১০ সালেই। এদের মধ্যে ফুকুটোকু-ওকানোবা হচ্ছে সমুদ্রের নিচের আগ্নেয়গিরি।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। ছাই, কাদা, গলিত পাথরের স্রোত তো আছেই। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গ্যাসের নিঃসরণও আছে। যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড আরও অনেক ধরণের গ্যাস।
এই গ্যাসগুলো যখন বায়ুমন্ডলে জমা হতে থাকে। এদের সাথে বায়ুমন্ডলের মেঘের পানি যুক্ত হয়ে এসিড তৈরী করে। আর এ কারণেই তো এসিড বৃষ্টি হয়। এসিড বৃষ্টির ঝুঁকি ছাড়াও এসব গ্যাস তো এমনিতেও ভালো নয়। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও খারাপ এগুলো। ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী এসব গ্যাস আর আগ্নেয়গিরির ছাই। বিশেষ করে আগ্নেয়গিরির ছাই উড়োজাহাজ চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি করে। আর উড়োজাহাজ চলাচলে সমস্যা মানে হলো
সাধারণ মানুষের তো সমস্যাই, ব্যবসা-বাণিজ্যেরও ক্ষতি। আবার সেই গলিত লাভার কথা ভাবলে তো গা শিউরে ওঠে। ঠিক বন্যার পানির মতো তেড়ে আসছে কিন্তু পানি নয়, অনেক বেশি তাপমাত্রার গলিত মাটি ও পাথরের স্রোত! ভাগ্যিস অগ্ন্যুৎপাতের আগেই এখন জানা যায় তার খবর, নইলে কি যে হতো! কোন আগ্নেয়গিরি হঠাৎ অস্থির হতে শুরু করলেই ওই এলাকার সবাইকে সচেতন করে দেয়া হয়, যেন তারা সরে যায় খুব দ্রুত।
আগ্নেয়গিরি কি শুধু ক্ষতিই করে? না, ঠিক তা নয়। অগ্ন্যুৎপাতের সময় যে ছাইটা বের হয় সেটায় কিন্তু অনেক ধরণের খনিজ পদার্থ থাকে। যখন সেগুলো মাটির সাথে মিশে যায়, মাটির গুণগত মান অনেক বেড়ে যায়। সেই মাটিতে ফসলের উৎপাদনও হয় অনেক ভালো।
আগ্নেয়গিরি ভয়ংকর হলেও সুন্দর। একটা পাহাড়, দেখতে খুবই শান্ত। কেনো যে সেটা হঠাৎ করেই এতোসব কান্ড করে বসে! তাই দেখতেই বুঝি মানুষ ছুটে চলে সেই ভয়ংকরের কাছে। পর্যটকদের কাছেও তাই এসব আগ্নেয়গিরির মূল্য অনেক। অনেক টাকা খরচ করেই তারা ছুটে আসে এই চিরন্তন ভয়ংকর সুন্দরের কাছে।
ধন্যবাদ অসংখ্য সবাইকে...
আমি সাইফুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 33 টি টিউন ও 469 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনে চলার পথে আনেক বাধা আসবে, সেই বাধাকে অতিক্রম করে বাঘের মত এক দিন বাচ, আর পৃথিবীর বুকে দাগ কেটে যাও নাম লিখে যাও স্বন্রাক্ষরে http://idmfordownload.blogspot.com
ওহ সত্যই কি ভয়ঙ্কর সুন্দর।