ড্রাগন ট্রাইএঙ্গেল, বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল এবং ফ্লায়িং সোসার্স (পর্ব-২)

গত পর্বে আপনাদের ড্রাগন ট্রাইএঙ্গেল সম্পর্কে জানিয়েছি আজকে আপনাদের জানাবো বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল সম্পর্কে তবে এর কার্জকলাপ এতই বেশি যে তা এক পর্বে শেষ হবে না জাই হোক চলুন দেখি কি কি জানা জায় এর সম্পর্কে।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল সম্পর্কে জানতে হলে আগে অবশ্যই এর অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল

বারমুডা অ্যাটলান্টিক সাগরের সর্বমোট ৩০০ টি দ্বীপ নিয়ে বিস্তৃত এলাকার নাম। জার মদ্ধে বেশির ভাগেই অনাবাদী। শুধুমাত্র ২০ টি দ্বীপের মধ্যে মানুষের অবস্থান পাওয়া যায়। আর যে এলাকাকে আশংকাজনক মনে করা হয়, তাকে বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল জানাজায়। এ এঙ্গেলের আয়তন চারপাশ থেকে ১১৪০০০০ বর্গ কিঃ মিঃ । উত্তরে বারমুডার বিভিন্ন দ্বীপ দক্ষিন-পূর্বে পোরটোরিকো এবং দক্ষিন-পশ্চিমে মার্কিন সরকার শাসিত প্রসিদ্ধ ফ্লোরিডা শহর। অর্থাৎ এই এঙ্গেলের মূল অবস্থান ফ্লোরিডায়। (ফ্লোরিডা অর্থঃ- ওই খোদার শহর যার অপেক্ষা করা হচ্ছে বা ওই খোদা যার অপেক্ষা করা হচ্ছে)।

প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে থেকেই এই এলাকায় কোন মানুষ বসবাস করেনি। এমনকি জাহাজ এর ক্যাপ্টেন পর্যন্ত ভয়ে ওই এলাকা থেকে দূরে থাকে। ওখানে একটি কথা খুবই প্রসিদ্ধ যে, ''ওখানকার পানির গভীরে ভয়ংকর সব শয়তানী রহস্য লুকিয়ে আছে।'' এমনকি ওখানকার আকাশপথের ভ্রমণকারীরা এয়ারহোস্টেসকে পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে- আমাদের বিমান কি বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের উপর দিয়ে যাবে?? যদি ও তারা নেতিবাচক উত্তর দিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেয়।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের আকৃতি

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের পুরো এরিয়াটাই সমুদ্রে। যা অ্যাটলান্টিক সাগরে অবস্থিত। সুতরাং মনে প্রশ্ন আসে যে চারদিকে শুধু পানি আর পানি, এখানে এঙ্গেল বা ত্রিভুজের আকৃতি কিভাবে সম্ভব?? সুতরাং আগেই জানতে হবে যে, এই এঙ্গেল বাস্তব না বরং এটি একটি বিশেষ এলাকার নাম যেখানে অবিশ্বাস্য ও রহস্যময় ঘটনার জন্ম দেয়। ঐ এলাকাকে ট্রাইএঙ্গেল হিসাবে সাধারন নাম দেয়া হয়েছে। এ নামের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ আছে যে, ১৯৪৫ সালে ঐ এলাকায় একসাথে কয়েকটি বিমান গায়েব হওয়ার পর এক প্রেস কনফারেন্সে সর্বপ্রথম এই নাম ব্যাবহার করে। কিন্তু এটা খুবই রহস্য পূর্ণ যে, নামটি ট্রাইএঙ্গেল কেন রাখা হয়।

ঐ দুর্ঘটনার পূর্বেও ওখানে বহু ঘটনার প্রমান পাওয়া যায়। কিন্তু তখন ঐ এলাকাকে বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের নামে জানতো না সবাই এটাকে শয়তানের দ্বীপ হিসেবে চিনতো। ক্রেস্টেফার কোলাম্বিস (১৪৫১-১৫০৬) সামুদ্রিক ভ্রমণের সময় যখন ঐ এলাকা দিয়ে জাচ্ছিল, তখন সেও ওখানে কিছু অচীন ও আশ্চর্য বিষয় প্রতক্ষ করে। যেমন- আগুনের গোলা সমুদ্রে প্রবেশ করা, ঐ সীমানায় প্রবেশ করলেই কোন প্রকার যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কম্পাস খারাপ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

কোলাম্বিসের আমেরিকা ভ্রমন পাঁচ শতাব্দী গেল। কিন্তু আজও মনে প্রশ্ন থেকে যায় যে ওখানকার পানির গভীরে বা পানির উপরে আকাশপথে এমন কি বিষয় গোপন আছে যা বরতমান অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট এর যুগেও খুজে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৮৫৪ সালের পূর্বে আরব বনিকেরাও ঐ এলাকা দিয়ে যাতায়াত করত, কিন্তু তাদের জাহাজ কখনো দুর্ঘটনা বা কোন অস্বাভাবিক রহস্যের কবলে পড়েনি। অথচ এরকম ঘটনা ১৮৫৪ সালের পূর্বেও বহুবার ঘটেছে বলে প্রমান পাওয়া যায়।

বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল- জাহাজের কবরস্থান

১৮১৩ সালে আমেরিকার তৃতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এরন বার (Aaron Burr) এর কন্যা থিউডোসিয়া (Theodosia) (দক্ষিন কেরলিনা রাজ্যের গভর্নর জোসেফ এস্টনের স্ত্রী, খুবই বুদ্ধিমতি এবং সুন্দরী কন্যা হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল) বারমুডার অই এলাকায় হঠাৎ একদিন গায়েব হয়ে যায়।থিউডোসিয়া তার পিতার সাক্ষাতের জন্য তখনকার সর্বাধুনিক জাহাজ পেট্রিয়াটে করে নিউইয়র্ক এর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পেট্রিয়াটের ক্যাপ্টেন তখনকার সুদক্ষ নাবিক হিসেবে অ্যামেরিকায় প্রসিদ্ধ ছিল। সাথে তার ব্যক্তিগত ডাক্তার এবং আরো কিছু পরিচিতজন ছিল। কিন্তু তারা কখনোই নিউইয়র্ক এ পৌছাতে পারেনি। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরন বার তার কন্যাকে খুজে পওয়ার জন্য তখন তার সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু দুঃখের বিষয় না পাওয়া গেছে কন্যার খবর, না পাওয়া গেছে জাহাজের কোন হদিস।

১৮১৪ সালে অ্যামেরিকার প্রসিদ্ধ সামুদ্রিক জাহাজ WASP কেও বারমুডা গিলে ফেলেছে। জাহাজের ক্যাপ্টেন কোন সাধারন মানের ক্যাপ্টেন ছিলনা, মার্কিন  জনগনের কাছে নায়ক হিসেবে পরিচিতি ছিল ঐ নাবিক জনস্টন ব্লেকেলে। সে ব্রিটিশ শক্তিশালী সামুদ্রিক জাহাজ Reindeer কে স্বীয় দক্ষতা দিয়ে মাত্র ২৭ মিনিটেই পরাজিত করেছিল। এরপর আর কেউ জানতে পারেনি যে ব্লেকলে তার স্টাফ এবং জাহাজ নিয়ে কোন জগতে গিয়ে পৌঁছেছে। না মার্কিন সরকার, না মার্কিন সামুদ্রিক গবেষক তিম। অথচ তখনকার মার্কিন সামুদ্রিক গবেষক টিম পানির গভীর পর্যন্ত এত ভাল করে চিন্ত। কিন্তু অত্যাধিক খোঁজাখুঁজির পরও কোন নাম নিশানা পায়নি তারা। তাহলে কি ট্রাইএঙ্গেল তাদের গিলে ফেলেছে? নাকি ব্লেকেলের অত্যাধিক যোগ্যতার দেখে ''গোপন শক্তি'' তাকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সময় মারচ ১৯১৮ তে মার্কিন সামুদ্রিক জাহাজ সাইক্লপিস (Cyclops U.S.A) ঐ এলাকায় গায়েব হয়েছে।

সাইক্লপিস 

জাতে যুদ্ধকালীন সময়ে ব্যাবহারের জন্য সাড়ে চৌদ্দ হাজার টন মাল মজুদ ছিল। তাছাড়া তিনশত কর্মীও তাতে কর্মরত ছিল। এরও কোন নাম-নিশানা পাওয়া যায়নি।

জাশোয়াস্লোকোম (Jashua Slocum) এমন এক ক্যাপ্টেন। শুধু মার্কিন ইতিহাসেই নয়, সামুদ্রিক বিশয়ে সে সারাবিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছিল। বাল্যকাল থেকেই পানির সাথে খেলে করে বেড়ে উঠে সে। সেই সর্বপ্রথম সমুদ্র পথে সারা বিশ্ব ভ্রমন করেছিল। সর্বদা সামুদ্রিক ঝর আর তুফান মোকাবেলা করাই জার অভ্যাস ছিল। ১৯০৯ সালে Spray নামক নিজস্ব জাহাজে করে রওয়ানা হয়েছিল। অতঃপর বারমুডার ঐ ভয়ানক এলাকায় সে তার জাহাজ সহ চিরদিনের জন্য গায়েব হয়ে যায়।

জাশোয়াস্লোকোম

গায়েব হয়ে যাওয়া জাহাজের তালিকায় নাম যোগ হওয়া ছাড়া আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি তার।

যাত্রী গায়েব...... জাহাজ উপকূলে

এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য ? যদি আপনাকে বলা হয়- একটি জাহাজ বারমুডার সমুদ্র সীমানায় দাঁড়ানো, কিন্তু যাত্রী এবং ক্যাপ্টেন গায়েব!! খানার তেবিলে এমনভাবে খানা গুছিয়া রাখা দেখলে মনে হবে হাথ ধোয়ার জন্য তারা উঠে গেছে। না আছে দুর্ঘটনার নিদর্শন, আর না আছে কোন লুটপাটের নিদর্শন। নিরব সমুদ্রের মাঝে হঠাৎ খানা পিনা রেখে তারা কার মেহমান হয়ে গেছে?!! ঘটনাটি ঘটেছে ''কেরল ডীরিং'' (Caroll Deering) নামক জাহাজের সাথে।

তীরে জাহাজের সম্মুখভাগ বালুতে গাড়া ছিল আর পেছনের অংশ পানিতে ছিল। খাবার টেবিলে খাবার রাখা ছিল। চেয়ার গুলি কিছু পেছনের দিকে ঝুকা অবস্থায় ছিল। মনে হবে, যাত্রীরা কোন অলৌকিক কিছু দেখে আপন আপন চেয়ার ছেড়ে উঠে এসেছিল এবং পরে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা আর পারেনি। চেয়ার টেবিলে খাবার আর ফল দেখে কোন হাঙ্গামা বা দুর্ঘটনার নিদর্শন উপলব্দি হয়নি। জাহাজের অবস্থা দেখেও এ কথা মনে হয়না যে, এখানে লুটপাট বা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আশ্চর্যের বিষয়- এতবড় জাহাজকে তীরে কে আনল?? আর যাত্রীরাই বা কিরূপ দুর্ঘটনায় স্বীকার হল??

জাহাজের ক্যাপ্টেন- Captain Wormell

কেননা এত বড় জাহাজ এত অল্প পানিতে আসা অসম্ভব। জাহাজ টি ছিল ''জি জি ডেয়ারিং কোম্পানী অফ পোর্টল্যান্ড'' এর মালিকানায় ।

হেরি কোনোভার (Herrey Conover) প্রসিদ্ধ মার্কিন কোটিপতি, সুদক্ষ জঙ্গি পাইলট, সামুদ্রিক জাহাজ প্রতিজগীতায় বিজয়ী ক্যাপ্টেন ১৯৫৮ সালে তার সাথিদের নিয়ে বারমুডার গভীরে গায়েব হয়ে যান। কিন্তু এইবার শুধু যাত্রীরাই নিখজ হয়েছে কেননা পরবর্তীতে তাদের জাহাজ ফ্লোরিডার সী-বিচ থেকে ৮০ মেইল উত্তরে এক কিনারায় যাত্রীবিহীন অবস্থায় পাওয়া যায়।

অতএব এ থেকে কি রহস্য থেকে যায় না যে এখন কেন শুধু অভিজ্ঞ মানুষ ই গায়েব হচ্ছে।

না এখানে শেষ না বারমুডা ট্রাই এঙ্গেলের প্রকোপ এতটাই গভীর যে এক পর্বে শেষ করা সম্ভব না তাই আগামী পর্বের বাকি রহস্য নিয়ে আসবো আপনাদের সামনে আর দেখার চেষ্টা করবো আসল রহস্য জানার।

আজ এটুকুই সবাই ভাল থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

Level 0

আমি জুবায়ের আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 634 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Ei Topic ta nie blog e onek poresi. tobu o thx eto sundor kore tule dhorer jonno

সত্যি খুব রহস্য জনক… আগামি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

sundor copy

Level 0

মাওলানা আসেম উমর এর ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ও দাজ্জাল’ বইয়ের লেখা।

    Level 2

    @m.farjan: Yes. I have read that book.

    @m.farjan: ধন্যবাদ কিন্তু এখানে আরও অনেক কিছু মিশিয়ে আরও অনেক ছবি সহ লেখা আছে যেটা মিস্ট্রিয়াস ট্রাইএঙ্গেল বই থেকে ও নেয়া আছে।

next topic er jonno wait korbo 😀

wating for next topic…..