আজ একটু অদ্ভুত কিছু নিয়ে আলোচনা করা যাক(হাইব্রিড ড্রাইভ)……..

টাইটেল শুনে অবাক হয়েছেন? ভাবছেন, ‘ হার্ড ড্রাইভ শুনেছি, এসএসডি শুনেছি! কিন্তু এই হাইব্রিড ড্রাইভ-টা আবার কী?!’ আমিও কিছুটা অবাক হয়েছিলাম যেদিন প্রথম এই বিষয়টা সম্পর্কে জানলাম। তবে পড়ার পর বিষয়টা যেমন খুব সহজে মাথায় ঢুকলো তেমনি আবার মজাও পেলাম। আজকে আপনাদের সাথে এই ‘হাইব্রিড হার্ড ড্রাইভ’ নিয়েই আলোচনা করব। আশা করি আপনারা মজাও পাবেন, এবং আপনার জ্ঞানের পরিধিও কিছুটা বাড়বে।

আয়োজন করে বিস্তার আলোচনা শুরু করার আগে সংক্ষেপে বলি। হাইব্রিড হার্ড ড্রাইভ ডিভাইসটি হচ্ছে এসএসডি এবং মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভের একটি মিশ্রণ। অর্থাৎ, আপনি এই ডিভাইসটি ব্যবহারের ফলে যেমন এসএসডি’র গতি পাবেন তেমনি মেক্যানিকাল হার্ড ড্রাইভের বিশাল স্পেসও পাবেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই ডিভাইসটিকে ‘SSHDs’ বলা হয়ে থাকে, যার ফুল ফর্ম হচ্ছে ‘সলিড-স্টেট হাইব্রিড ডিভাইসেস’। এই ড্রাইভটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার সলিড-স্টেট স্টোরেজে আপনার প্রয়োজনীয় এবং বেশি ব্যবহারিত ফাইল গুলো ক্যাশ করে যা আপনাকে বেশি স্পিড পেতে সাহায্য করে থাকে।

মেক্যানিকাল ড্রাইভ এবং এসএসডি

মেক্যানিকাল ড্রাইভ এবং এসএসডির মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সলিড স্টেট ড্রাইভ মেক্যানিকাল হার্ড ড্রাইভের তুলনায় অনেক বেশি ফাস্ট ডাটা ট্র্যান্সফার করতে সক্ষম। কিন্তু, এটি দ্রুত ফাইল ট্র্যান্সফার করতে পারলেও এই ড্রাইভগুলোর স্টোরেজ ক্যাপাসিটি খুবই কম কিন্তু ড্রাইভ গুলো বেশ এক্সপেন্সিভ। যদিও বর্তমানে সলিড স্টেট ড্রাইভ গুলোর দাম কিছুটা কমেছে তবুও সেই দামটাও এগুলোর স্টোরেজের তুলনায় অনেক বেশিই বলা চলে। কেননা, একটি সলিড স্টেট ড্রাইভের ক্ষেত্রে প্রতি গিগাবাইটে আপনাকে যেখানে খরচ করতে হবে ০.৫৮ ডলার তখন মেকানিক্যাল ড্রাইভে প্রতি গিগাবাইটের জন্য আপনার খরচ পরবে মাত্র ০.০৬ ডলার। এই হিসেবে, আপনি ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ সমৃদ্ধ্য একটি সলিড স্টেট ড্রাইভ কেনার টাকা দিয়ে ২ টেরাবাইট এবং কিছুক্ষেত্রে হয়তো ৩ টেরাবাইট হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ কিনতে পারবেন। বুঝতেই পারছেন, মেকানিক্যাল ড্রাইভ সলিড স্টেট ড্রাইভের চাইতে স্লোয়ার হলেও স্টোরেজের দিক দিয়ে অনেক গুণ এগিয়ে রয়েছে। আর এজন্য, মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ এবং সলিড স্টেট ড্রাইভ – দুটি ডিভাইসেরই ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে।

যেহেতু, দু প্রকারের ড্রাইভেরই রয়েছে নিজস্ব ভিন্ন সুবিধা তাই অনেক পাওয়ার ইউজার বা হার্ড-কোর গেমাররা তাদের কম্পিউটারে দুধরণের ড্রাইভই ব্যবহার করে থাকে। ধরুন, অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য অ্যাপলিকেশনের ক্ষেত্রে সলিড স্টেট ড্রাইভ এবং অন্যান্য ডাটা স্টোরেজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ। এতে করে স্পিড এবং স্টোরেজ দুটিই ব্যবহারকারীরা পেয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে নির্ধারন করে দিতে হবে যে আপনি ঠিক কোন কোন ফাইল গুলোকে কোন কোন ড্রাইভে রাখতে চান।

হাইব্রিড ড্রাইভ

হাইব্রিড ড্রাইভ ডিভাইস বিস্তারিত

একটি হাইব্রিড ড্রাইভের মধ্যে রয়েছে মেকানিক্যাল ড্রাইভ এবং সলিড স্টেট ড্রাইভ। তবে, আপনি কিন্তু এই হাইব্রিড ড্রাইভকে একটি ড্রাইভ হিসেবেই আপনার কম্পিউটারে দেখতে পারবেন এবং সুবিধার কথা হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে ঠিক কোন কোন ফাইল গুলো কোন কোন অংশে যাবে সেটা আপনাকে নির্ধারন করতে হবেনা। এটি আপনার জন্য ড্রাইভের ফার্মওয়্যারই করে দেবে।

এই ডিভাইসটির এসএসডি অংশটি কাজ করে ‘ক্যাশ’ এর মত, অর্থাৎ – যে ফাইল গুলো আপনি সচরাচর ব্যবহার করে থাকেন (যেমন ধরুন, অপারেটিং সিস্টেমের ফাইল সমূহ বা অ্যাপলিকেশন) সেগুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে এসএসডি অংশের মধ্যে জমা হয়ে যায়। যেন, আপনার প্রয়োজনের সময় সেই ফাইলটি আপনি খুব দ্রুতই এক্সেস করতে পারেন। আপনারা যারা ‘ক্যাশ মেমরি’ সম্পর্কে জানেন আশা করি তারা ব্যাপারটি খুব সহজেই বুঝতে পারছেন।

এখন আসি মেকানিক্যাল অংশটির কাছে। অনেকেই আছেন যারা তাদের কম্পিউটারে অনেক বেশি তথ্য জমা করে রাখেন বা তাদের রাখতে হয়। যেমন ধরুন, একজন ফটোগ্রাফারের স্বাভাবিক ভাবেই অনেক ইমেইজ ফাইল জমা রাখতে হয়। অথবা, একজন মুভি কালেকটর অনেক মুভি কালেকশন করে থাকেন। সহজ কথায়, সিস্টেম ফাইল এবং অ্যাপলিকেশন ছাড়া মিডিয়া ফাইল বা ডকুমেন্ট সমূহ যা আপনার কম্পিউটারে বেশ কিছু সময় ধরে থাকবে সেগুলোর জন্য মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই, এই হাইব্রিড ড্রাইভে এই অংশটি রাখা হয়েছে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, একটি হাইব্রিড ড্রাইভের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একজন ব্যবহারকারীকে স্পিড এবং সাফিসিয়েন্ট স্টোরেজ দেয়া যাতে করে একজন ব্যবহারকারী শুধু স্পিডই নয়, সাথে সাথে যথেষ্ট স্টোরেজ পান।

হাইব্রিড ডিভাইসে খুবই স্বল্প পরিমাণে এসএসডি স্টোরেজ থাকে

স্বাভাবিক ভাবেই বেশির ভাগ হাইব্রিড ড্রাইভে স্বল্প পরিমাণে এসএসডি স্টোরেজ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যামাজনে যে সকল হাইব্রিড ড্রাইভ কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে টপ ডিভাইসটিতে রয়েছে ১ টেরাবাইট মেকানিক্যাল স্টোরেজ স্পেস এবং মাত্র ৮ গিগাবাইট সলিড-স্টেট মেমরি। যদিও, ৮ গিগাবাইট সিস্টেম ফাইল বা কিছু প্রয়োজনীয় অ্যাপলিকেশনের জন্য ডিসেন্ট স্টোরেজ কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই ১২৮ গিগাবাইট বা ২৫৬ গিগাবাইটের এসএসডি ডিভাইসের সাথে আপনি তুলনা করতে যাবেন না।

অ্যাপলের ‘ফিউশন ড্রাইভ’ও একটি হাইব্রিড ড্রাইভ যেখানে ১২৮ গিগাবাইট সলিড-স্টেট মেমরির পাশাপাশি ১ অথবা ৩ টেরাবাইট মেকানিক্যাল স্টোরেজের সুবিধা দেয়া হয়।

কেন হাইব্রিড ড্রাইভ ব্যবহার করবেন

আমার মনে হয়না, এখনো আপনাকে বেশি কিছু বোঝানোরা আছে। অনেক গুলো বিষয়ইতো আলোচনা করলাম। তবুও বলছি, শুনুন। যেহেতু, হাইব্রিড ড্রাইভে খুবই স্বল্প পরিমাণের সলিড-স্টেট ফ্ল্যাশ স্টোরেজ মেমরি থাকে তাই স্বাভাবিক ভাবেই এটি এসএসডি’র চাইতে কম মূল্যের। যেমন ধরুন, একটি রেগুলার হাইব্রিড ডিভাইসের ( ২ গিগাবাইট মেকানিক্যাল স্টোরেজ এবং ৮ গিগাবাইট সলিড স্টেট মেমরি) মূল্য একটি ২ টেরাবাইট মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভের চাইতে বেশি হলেও তা ২৫৬ গিগাবাইটের একটি এসএসডি’র চাইতে কম। এজন্যেই, কম্পিউটার নির্মাতারা বর্তমানে ব্যবহারকারীদের স্বল্প মূল্যে স্পিড এবং স্টোরেজ দেয়ার জন্য এই ড্রাইভ গুলো ব্যবহার করছেন।

এছাড়াও, একটি হাইব্রিড ডিভাইস একটি সিঙ্গেল ফিজিক্যাল ডিভাইস যা একটি চমৎকার এডভান্টেজ হতে পারে। যেমন ধরুন, আপনার একটি ল্যাপটপ আছে যাতে শুধু মাত্র একটি ড্রাইভেরই বে আছে (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটা স্লটই থাকে) এবং আপনি স্পিড+স্টোরেজ চাচ্ছেন তবে আপনার জন্য এটি একটি আদর্শ ডিভাইস হতে পারে।

মূলত পুরোটাই টাকার সাথে স্টোরেজ এবং স্পিডের খেলা। এসএসডি ড্রাইভ গুলো যদি মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভের মত হত তবে হয়তো হাইব্রিড ড্রাইভ নামের কিছু এক্সিস্টই করতো না। এখন, আসলে আপনার উপরেই নির্ভর করছে, ‘আপনার একটি হাইব্রিড ড্রাইভ দরকার কি না।’

 

আসলেই কি হাইব্রিড ড্রাইভ দ্রুত কাজ করে?

অবশ্যই! অন্তত, একটি মেকানিক্যাল ড্রাইভের চাইতে একটি হাইব্রিড ড্রাইভ অনেক বেশি দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। কেননা, পূর্বে আলোচিত সেই ক্যাশিং অ্যালগরিদম আপনার অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রোগ্রাম ফাইলগুলো যেহেতু সলিড স্টেট মেমরির মধ্যে রাখছে তাই আপনি হাইব্রিড এবং মেকানিক্যাল ড্রাইভের পার্থক্য খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

তবে মনে রাখবেন, আপনি যখন প্রথম দিকে এটি ব্যবহার শুরু করবেন তখন কিন্তু এটি স্লো কাজ করবে। ধীরে ধীরে এর ফার্মওয়্যার যখন বুঝতে আরম্ভ করবে যে ঠিক কোন কোন ফাইল গুলো বেশি ব্যবহারিত হয় তখন এটি ক্যাশ ক্রিয়েট করতে থাকবে এবং তখন আপনি এই ড্রাইভের রিয়েল পারফর্মেন্স বুঝতে পারবেন।

শেষ কথাঃ

মাত্রতো শুরু! আর শুরুর দিকে ব্যাপারগুলো এরকমই থাকে। মূলত একজন ডেস্কটপ ব্যবহারকারীর ২ টেরাবাইট পরিমাণ স্টোরেজ স্পেস দরকার হয়না, আর এখনতো আমাদের দেশেও ইন্টারনেট স্পিড বেশ ভালো! তাই আমার মতে, মেকানিক্যাল স্টোরেজ কিছুটা কমিয়ে যদি অন্তত ১২৮ গিগাবাইট সলিড স্টেট মেমরি ব্যবহার হয় হাইব্রিড ড্রাইভে তাহলে সেটা চমৎকার হবে। আশা করছি সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন হয়তো আমার এই কথাটাই ফলে যাবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

পরে আবার দেখা হবে অন্য এক টিউন এ ।

Post টি ভাল লাগলে আমার ব্লগে ঘুরে আসবেন ।

আর আমার Blog এ post করার দাওয়াত থাকলো ।

 


একই সাথে Techolopo.com এ প্রকাশীত ।

Level 0

আমি ইসতিয়াক আহমেদ নাঈম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 88 টি টিউন ও 115 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আপনার এই টিউনটি অনেক ভালো লাগলো।
নতুন কিছু জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।

তথ্যবহুল টিউনের জন্য ধন্যবাদ….জিনিসটা সম্বন্ধে জানা ছিল না- তবে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসতে অনেকদিন লেগে যাবে….লেখায় ছবি দিলে টিউনটা আরো উপভোগ্য হত 🙂

একটা নতুন বিষয়ে জানলাম । থ্যাংকস ।