-------------------------- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ --------------------------
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন ।
আগে গুরুজনরা বলতো পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানার্জন। কিন্তু বর্তমানে অভিভাবকগন সব সময় বলে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্য হলো ভালো একটা চাকরী। কিন্তু চাকরী তো আর গাছের পাতা না যে ছিড়লাম আর পকেটে পুরে নিলাম। এর জন্য অনেক পরিশ্রম এবং যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয়। অনেকের আবার যোগ্যতা থাকলেও চাকরী হয়না নিজেকে ভালো ভাবে প্রেজেন্ট না করতে পারার জন্য। ধারনা করা হয় কোন চাকরী যতোটা কঠিন থাকে তার চেয়ে চাকরীর জন্য যে ইন্টারভিউ নেয়া হয় তার প্রশ্নে উত্তর দেওয়া অধিক কঠিন বিষয়। আজ আমি এরকম কিছু প্রশ্ন সম্পর্কে আলোচনা করবো যেগুলো শুনতে সহজ মনে হলেও উত্তরগুলো সহজ নয়। এবং একটু অসর্তকতার জন্য হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে আপনার চাকরীর স্বপ্ন। তাহলে আর দেরী না করে চলুন শুরু করি।
উত্তর পড়ার আগে নিজেকে একবার যাচাই করে নিন যে আপনি নিজ থেকে আসলে কী উত্তর দিতেন
আমার জানা মতে এটাই আপনাকে সব চাইতে বেশি বিভ্রান্ত করতে পারবে যদি আপনি সঠিক ভাবে বিষয়টা বুঝতে না পারেন। অধিকাংশ মানুষ খুব চিন্তায় পড়ে যায় কী বলবে এই মুহূর্তে। তার মাথায় শুধু এতোটুকু মনে হয় যে নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে তো আজ সারাদিনেও শেষ হবেনা। সারাজীবনে কতোকিছুইতো করলাম। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে উত্তরদাতা কিছুই বলতে পারেনা!
এই ক্ষেত্রে আপনার একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যারা আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছে তারা আপনার ব্যাক্তিগত জীবনের প্রতি আগ্রহী না। তারা সব সময় তাদের কাজের জন্য উপযুক্ত ব্যাক্তি খুঁজবে। সুতরাং এ ধরনের প্রশ্নে উত্তর দেওয়ার সময় আপনাকে এমন সব বিষয় বলতে হবে যা কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আপনার দক্ষতা বিষয়ে সংক্ষেপে বলুন, অবশ্যই বিস্তারিত কিছু বলবেন না। তারা যে ধরনের কাজের লোক খুঁজছে সে অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করুন। এবং বুঝানোর চেষ্টা করুন যে, আপনারা যে ধরনের লোক খুঁজছেন সে ধরনের লোক আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনার সাম্প্রতিক কাজ সম্পর্কে বলতে পারেন। এবং অবশ্যই আপনি সম্প্রতি অন্য কোন কোম্পানিতে যদি ভালো পোস্টে চাকরী করে থাকেন তাহলে সেটা উল্লেখ করতে ভুলে যাবেন না। কারন সব কোম্পানি তাদের কাজের জন্য অভিজ্ঞদের বেশি প্রাধান্য দেয়।
এই ধরনের প্রশ্ন খুব জটিল। আপনাকে অনেক ভেবে উত্তর দিতে হবে। আমরা অনেকেই নিজের গুনগান করতে পছন্দ করি না আর যারা করে তারা ভিন্ন। তবে এ ক্ষেত্রে আমার নিজের দক্ষতার ব্যাপারে একটু বাড়িয়েই বলতে হতে পারে। সাথে আপনার নিজের সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পর্কিত কোন বিশেষ অর্জন থাকলে সেটা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। সংকোচ বোধ করা চলবে না। আর একটা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন নিজেকে হাইলাইট করতে গিয়ে কাউকে ছোট করবেন না। এটা আপনার প্রতি তাদের খারাপ ধারনা তৈরী করবে।
এ ধরনের প্রশ্নে এমন কিছু বলবেন না যাতে তাদের মনে হতে পারে যে আপনি তাদের চাকরীটিও ছাড়তে পারেন। সব সময় পজিটিভ কিছু বলার চেষ্টা করুন। যেমন আপনি অনেক দায়িত্ববান এবং কাজের প্রতি আপনার অগাধ ভালোবাসা। সব সময় অধিক দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে ভালোলাগে আপনার। আপনি মনে করেন আগের কোম্পানির কাজের চাইতে বর্তমান কাজটি অনেক দায়িত্বপূর্ণ তাই আপনি এই কাজটি করতে আগ্রহী। অথবা বলতে পারেন যে আপনি আপনার দক্ষতাকে আরো শাণিত করতে এই কাজটি করতে চান। অথবা বলতে পারেন এ কোম্পানির সাথে করা আপনার একটা স্বপ্ন ছিলো তাই এখানে কাজ করতে চান (এটা তোষামোদ পর্যায়ের কিছু- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেজায় খুশি হতে পারে)। তাহলে দেখুন অন্য কোম্পানিকে ছোট না করেও আপনি সঠিক ভাবে উত্তর দিতে পারছেন।
এ ধরনের প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হলো অফিশিয়াল কাজের বায়রে আপনার মানুষিকতা কোনদিকে সেটা যাচাই করা। আপনি কী কী জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট সেটা নির্ণয় করতেই এই ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এই ক্ষেত্রে আপনার মনের গোপন অভিলাসটিকে একটু গোপনেই রাখতে হবে। অবশ্যই মনের কথাটি বলে ফেলবেন না যে আপনার একটি বিশাল বাড়ি, চার চাকা গাড়ি, বাড়ির ছাদে সুইমিং পুল ইত্যাদি দরকার। আর টাকা পেলেই কাজ সেরে ফেলবেন। আপনি বলতে পারেন এটা দিয়ে কিছু স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন, নিজের কিছু স্পেশাল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবেন এবং সব কাজে অধিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। সর্বোপরি কোম্পানির কাজে সার্বক্ষণিক মনোযোগ দিবেন।
আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি হয়তো মুখ ফসকে বলে দিতে পারি যে, ঘুম ভাঙ্গলেই প্রথম মনে হয় আমার খুব ক্ষধা লাগছে তাই তাড়াতাড়ি খাবার দরকার। তারপর মনে হয় কোন কাজে অধিক টাকা আসবে ইত্যাদি। এভাবে বলছেন তো মরছেন। নিজের মনের কথা সব সময় বলতে হয়না। চলুন জেনে নেই কী বলবেন। আমাকে আদর্শলিপির সেই ছড়াটির কথা মনে করতে হবে, “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি” যদিও এটা বলতে হবেনা। আপনি আপনার এমবিশন এর কথা বলুন। আপনার কাজ সম্পর্কিত পরিকল্পনার কথা বলুন। অবশ্যই বলতে ভুলে যাবেন না যে সকালে উঠে আপনার প্রথম মনে হয় সারাদিন আমার যে কাজগুলো আছে সেগুলো আমি সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারবো তো। তারপর সারাদিন শুধু চিন্তার বাস্তবায়ন করেন। নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তাড়না আপনাকে সারাদিন ব্যস্ত রাখে।
এই ধরনের প্রশ্নে বিবৃত হবেনা এরকম লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা। একবার ভেবে দেখুনতো আপনি এখানে কী উত্তর দিবেন? আপনার দুর্বলতা যদি বলে দেন তাহলে চাকরী পাবার সম্ভবনা কতো অঙক কষে বলুন? আসলে এ ধরনের প্রশ্নগুলোকে সাবধানে ডাইভার্ট করতে হবে। গতানুগতিক উত্তর দেওয়া আপনার বিপদের কারন হতে পারে। আপনার দুর্বলতা এখানে প্রকাশ না করে আপনাকে বলতে হবে কোন ধরনের কাজে অগ্রগতির জন্য আপনি অনেক বেশি সময় ব্যায় করছেন। আপনি কোন ধরনের কাজে মনে করেন যে আরো উন্নতি করা দরকার। নিজের দুর্বলতা প্রকাশ না করে বিভিন্ন কাজে আপনার উন্নতি করার আগ্রহের কথা ব্যাক্ত করুন। আর সব সময় নিজেকে পজিটিভ ভাবে উপস্থাপন করুন।
প্রত্যেক ইন্টারভিউ এর পূর্বে আপনার দায়িত্ব হলো উক্ত কোম্পানি সম্পর্কে সঠিক খোঁজ খবর নেওয়া। কোম্পানির সুযোগ সুবিধা বিষয়ে শতভাগ জ্ঞান রাখা। এবং সর্বোপরি আপনার কাজের সাথে কোম্পানের যোগসূত্র স্থাপন করা। আপনাকে তাদের বুঝাতে হবে আপনার কাজের জন্য তারায় সব চেয়ে বেশি সুযোগ দিচ্ছে। তাদের কোম্পানিতে কাজ করতে পারলেই আপনি কাজে উন্নতি করতে পারবেন। তাছাড়া তারা যে ধরনের লোক খুঁজছে তার জন্য আপনিই সব দিক থেকে উপযোক্ত ব্যক্তি।
এগুলো ছাড়াও আপনাকে আরো প্রশ্ন করতে পারে। আপনি নিজের পজিটিভ মনন থেকে সুন্দর ভাবে উত্তর দিন। তাড়াহুড়া করবেন না এবং হাসিমুখে কথা বলুন। আপনার মুখ দেখে যেন আপনার আত্ববিশ্বাস সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। টিউনটি করার সময় অনেক চিন্তা করে আপনার সবার বুঝার উপযোগী করার চেষ্টা করেছি। তবে কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে, আপনারা এটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর যেকোন সমস্যা টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আর আপনাদের যাদের টেকটিউনসে একাউন্ট নেই তারা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ লিংক থেকে আমার টিউনে কমেন্ট করতে পারবেন। পেজে লাইক দিয়ে আমার সকল টিউন বিষয়ে আপডেট থাকুন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আছি........
ফেসবুক | টুইটার | গুগল-প্লাস
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
খুবই ভাল এবং একটি দরকারি লেখা। প্রিয়তে রাখলাম, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।