একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে জীবন ও জগতের উন্নতি হওয়া সত্বেও রক্তের কোন বিকল্প আবিস্কার হয়নি। রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত যা টাকার পরিমাপে মূল্যায়ন অসম্ভব। প্রতিনিয়ত রক্তের অভাবে ঝরে যায় হাজারো প্রাণ। কিন্তু সামাজিকভাবে পশ্চাদপদ বাংলাদেশের সমাজে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। এর কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা রক্তদান সম্পর্কে সচেতন নই, রক্তদানের কথা শুনলে আমরা ভয় পাই। কিন্তু আমরা যদি রক্তদান সম্পর্কে জানতে পারি, নিজেকে সচেতন করতে পারি তাহলে রক্তদান সম্পর্কে ভয়টাকেও আমরা জয় করতে পারি। কারণ ১৮-৫৭ বছরের সকল নারী ও পুরুষ শারিরীকভাবে সুস্থ্য থাকলে ১২০ দিন পর পর এক ব্যাগ রক্ত দান করতে পারে। এক্ষেত্রে ছেলেদের ওজন হতে হয় ৪৮ কেজি আর মেয়েদের ৪৫। রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি এবং রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের ছাত্র শাহিদুল ইসলাম রিপন ভাইয়ের হাত ধরে বাঁধন নামের একটি সংগঠন যাত্রা শুরু করে।
ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য, রক্তদানে সক্ষম প্রতিটি মানুষকে রক্তদানে উৎসাহ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ।
এক নজরে বাঁধন:
সংগঠনের নাম : বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন)।
প্রতিষ্ঠাকাল : ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৭
রেজি নং : ঢ-০৬১৫২
মূলমন্ত্র : একের রক্ত অন্যের জীবন রক্তই হোক আত্মার বাঁধন।
বৈশিষ্ট্য : ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ক্ষেত্র : বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সমূহ
আর্থিক যোগান : বাঁধন কর্মীদের চাঁদা ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা।
কেন স্বেচ্ছায় রক্তদান করবেন:
আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১০/১২ লক্ষ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। আর এই প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ হয় খুবই সামান্য। আর যতটুকু সরবরাহের ব্যাবস্থা হয় তার ৬০ ভাগই পুরণ হয় পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে তেমনি অস্বাস্থ্যকর। কারণ পেশাদার রক্তদাতারা গ্রহণ করে বিভিন্ন ড্রাগ এবং শরীরে বহন করে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডস, সিফিলিস এর মত জীবন ধ্বংশকারী বিভিন্ন রোগের জীবাণু। যে কারণে আমাদের দেশে রক্তের অভাবে প্রতিনিয়ত অসংখ্য রোগী মৃত্যুবরণ করে। একবার ভেবে দেখুন আজ যে রোগীটা মারা যাচ্ছে সে যদি আমার মা হত বা বাবা হত তাহলে
রক্তদানের যোগ্যতা:
১. বয়স ১৮ থেকে ৫৭ বছরের মধ্যে হতে হবে (নারী ও পুরুষ)।
২. ওজন ৪৮ কেজি (পুরুষ) ৪৫ কেজি (নারী)।
৩. সময় ১২০ দিন পর পর অর্থ্যাৎ ৪ মাস পর পর।
৪. শারিরীকভাবে সুস্থ্য থাকতে হবে।
রক্তদান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত কিছু ভূল ধারণা:
রক্তদান করলে শারিরীকভাবে অসুস্থ্য হওয়া, শরীর মুটিয়ে যাওয়া, শরীর
শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ভূল ধারণা মানুষের মধ্যে কাজ করে, যার পুরোটাই আমাদের রক্তদান সম্পর্কে অসচেতনতা ও ভয় থেকে সৃষ্টি। রক্তদান করলে শারিরীকভাবে কোন সমস্যার সৃষ্টি বা অসুস্থ্য হওয়া এর কোনটাই হয় না। বরং রক্তদান করলে শারিরীকভাবে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়, মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায় যা অন্য কোন ভাবে মানুষের উপকারের মাধ্যমে অর্জণ সম্ভব নয়।
রক্তদানের উপকারিতা:
১. প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে রক্ত কণিকা সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
২. নিয়মিত রক্তদানে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়।
৩. নিয়মিত রক্তদানে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
(বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতামত ১-৩)
৪. রক্তদানে কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই।
৫. রক্তদানের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের রিপোর্ট পেতে পারেন (হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া) যা আপনাকে শারিরীক সুস্থ্যতার ব্যাপারে সচেতন রাখবে।
বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন) আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে সেই ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মোট ৪৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছে। মুমূর্ষের জন্য সরবরাহ করছে বছরের প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদার সিংহভাগ, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে সকল ধরণের মানুষকে তার নিজ রক্তের গ্রুপ। দীর্ঘ ১৮ বছরের এই স্বপ্নযাত্রায় বাঁধন ৮৮৬৯২৭ জন মানুষকে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ জানিয়ে দিয়েছে ও রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং ৫০৫৮৬০ ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে (১৯৯৭-২০১৪)।
ফেসবুকে বাঁধন (Online Blood Bank):
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি কাজের পাশাপাশি বাঁধন একটি অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে Online এ রক্তের চাহিদা পূরণের প্রয়াস চালাচ্ছে। আপনি আপনার প্রয়োজনে এখানে জানাতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় রক্তের গ্রুপ অথবা এগিয়ে আসতে পরেন একজন মুমূর্ষের প্রয়োজনে একব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমে। আসুন আমরা সকলে মিলে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের এমন একটা পেজ গড়ে তুলি যেখান থেকে আমরা দেশের যেকোন স্থানে যে কোন গ্রুপের রক্তের চাহিদা পুরন করতে পারি। রক্তের অভাবে যেন হারাতে না হয় কোন মা, বাবা, ভাই, বোন বা সন্তানকে। বাঁধন এর এই মহৎ প্রয়াসকে সফল করার জন্য সকল বাঁধন বন্ধু, সম্মানিত রক্তদাতা এবং শুভানুধ্যায়ীদের নিকট বিনীত আবেদন, এ পেজের সাথে যুক্ত থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করতে সহায়তা করুন।
"আমাদের অনুভূতিতে মানুষের ভালোবাসা
আমরা অনুভব করি এদেশের মাটির ঋণ
আমরা কাজ করি আমেদের দায়বদ্ধতায়"
আমি আবু রায়হান জিহাদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 18 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Make love to all. Share life, give blood.