এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উত্তির্ণ সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টিউন শুরু করছি এবং প্রথমেই বলে রাখি, কোন ভার্সিটির মার্কেটিং কিংবা নেগেটিভ মার্কেটিং এর জন্যে টিউনটি করা হয় নি। এখানে আমার সম্পুর্ণ ব্যাক্তিগত অভিমত তোলে ধরা হয়েছে।
যারা পাবলিক ভার্সিটির জন্যে কোচিং করছেন তাদের ক্ষেত্রে এই টিউনটি কাজে লাগবে, যখন কোন ভার্সিটিতে চান্স পাবেন না এবং প্রাইভেটে ভর্তির চিন্তা করবেন। যারা পাবলিকে চান্স পাবেন তাদের ব্যাপার আলাদা কিন্তু যখন আপনি প্রাইভেট ভার্সিটিতে অনেকগুলো টাকা খরচ করে ৪ বছর মেয়াদী কেরিয়ার গড়ার কোর্সে ভর্তি হবেন তাখন অনেক কিছু যাচাই করে নেওয়াটা উচিত। কেননা পরবর্তিতে চাইলেও আপনার কেরিয়ারকে অন্যদিকে সফলভাবে পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে ফ্রীলেন্সিং করতে পারলেও, ৪ বছর মেয়াদী শিক্ষা সেই ক্ষেত্রে তেমন একটা কাজে দিবে না।
কম্পিউটার সাইন্সে ভর্তি হবার পূর্বে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কী সত্যি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন? আপনার কী কম্পিউটারের সাথে উঠা বসা কিংবা পরিচিতি আজও আছে? আমি জানি, এমন অনেকই রয়েছেন যারা স্কুল জীবন থেকেই নিজেকে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে দেখার সপ্ন দেখেন। সত্যিকার অর্থে কম্পিউটার সাইন্স মূলত তাদের জন্যেই। তবে যাদের এই বিষয়ে মুটেও ধারণা নেই তারাও চাইলে সফল হতে পারবেন। এ জন্যে তাদের অতিরিক্ত শ্রম দিতে হবে। তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন? যদি উত্তরে না সূচক কিছু খুজে পান তাহলে অন্য দিকে চলে যান। কেননা, কম্পিউটার সাইন্স আপনার জন্যে না। কথাটা খারাপ লাগতে পারে তবে এটাই বাস্তব। বর্তমানে আমার এমন অনেক সহপাঠী আছে যারা ৫ টা সেমিস্টার অতিবাহিত করার পরেও এখনো ভাল্ভাবে কম্পিউটার চালাতে পারে না। যদিও তাদের সি.জি.পি. বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত অনেক ভাল। ভাল একটা সিজিপি নিয়ে পাস করে কী করতে পারবে তারা? মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে বাংলাদেশের প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে ভাল সিজিপি পাওয়াটা খুবই সহজ কিন্তু বাস্তব জীবনে এই সিজিপি কোন কাজে দেয় না যদি আপনি কাজ না পারেন।
অনেকেই ভাবতে পারেন, কম্পিউটার সম্পর্কে আইডিয়া না থাকার কারণে কী তার সপ্ন পূরণ হবে না? প্রথমে বুঝতে হবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখা সপ্ন খুব কম সময়ই বাস্তবতা পায়। আর যেই সপ্ন রাতার ঘুমকে হারাম করে, তাই হল সত্যিকার সপ্ন। যে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবার সপ্ন দেখে তার অবশ্যই কিম্পিউটার সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান থাকবে।
যারা প্রথম প্রশ্নে নিজেকে উন্নীত করতে পেরেছেন তারা পরবর্তি লিখাটুকু পড়েন। আপনি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন কিন্তু এখন আরো গভীরে চিন্তা করতে হবে। একটি কম্পিউটারে যেমন অনেকগুলো পার্ট রয়েছে তেমনি কম্পিউটারে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক উপায় রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,
চিন্তা করেন, যদি ৪ বছর এই মোলিক বিষয়গুলোর যেকোন একটি নিয়ে সাধনা করেন তাহলে কেরিয়ারে আপনার অবস্থান মজবুত হবে নাকি সবগুলো বিষয় নিয়ে সাধনা করলে অবস্থান মজবুত হবে। উত্তর হল যে ৪ বছর একটি বিষয় নিয়ে সাধনা করবে তার অবস্থান মজবুত হবে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্যে যেমন কিছু রিকোয়ারমেন্ট ছিল তেমনি প্রতিটি বিষয়েও কিছু সংখ্যক রিকুয়ারমেন্ট রয়েছে।
অনেকের কাছে এই নামটা নতুন মনে হতে পারে। সত্যিকার অর্থে আপনার প্রফেশনাল লাইফে কেউ আপনাকে কোন গানীতিক প্রবলেম সলভ করতে বলবে না। তবে শুধুমাত্র প্রবলেম সলভিং এ দক্ষতা অর্জন করতে পারলে গুগল, ফেইসবুক কিংবা মাইক্রোসফটের উর্ধতন টিউনে জব পেতে পারেন। প্রবলেম সলভিং মানে, আপনাকে কিছু সংখ্যক গাণিতিক সমস্যা দেওয়া হবে যা আপনাকে যেকোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে সময়াধান করতে হবে। প্রোবলেম সলভিং সবার জন্যে না। যাদের গণিতে দক্ষতা খুব বেশী এবং যাদের যতেষ্ট পরিমাণ ধর্য রয়েছে একমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই প্রবলেম সলভিং ক্যারিয়ারে অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে। যদি আপনার গণিতে যতেষ্ট দক্ষতা এবং যতেষ্ট পরিমাণ ধর্য থাকে তাহলে এ.সি.এম এ ভাল করছে এমন যেকোন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যান।
২০১৪ সালের বাংলাদেশে ACM-ICPC'র রেজাল্ট থেকে প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে,
অর্থাৎ আপনি এই ভার্সিটিগুলোর মধ্যে যেকোন একটির সি.এস.ই তে ভর্তি হতে পারেন।
রোবটিক্স যদিও ইলেক্ট্রিকালের একটি সাবজেক্ট কিন্তু এতে প্রোগ্রামিং এর অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। এর জন্যে আপনাকে মেসিন ল্যাংগুয়েজ সম্পর্কে ভালভাবে ধারণা নিতে হবে। যদি রোবটিক্স যাবারই ইচ্ছে থাকে তাহলে EEE ই বেস্ট হবে। তবে মনে রাখতে হবে আপনাকে ফিজিক্স এবং গণিতে অসম্ভব রকমের পারদর্শী হতে হবে এবং ভার্সিটি নির্ধারণ করার পূর্বে খুজ নিয়ে দেখুন সেই ভার্সিটিতে রোবটিক্সের জন্যে ক্লাব আছে কিনা।
শতকরা ৮০ ভাগ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র কিংবা ছাত্রি গেইমে ইন্টারেস্টেড। তার মধ্যে অনেকেই সপ্ন দেখেন, নিজের তৈরী গেইম বিশ্ববাসী খেলবে। যদিও বাংলাদেশে স্পেসিফিকভাবে গেইমের জন্যে কোন ৪ বছর মেয়াদী কোর্স নেই। তবে আপনি চাইলে মাল্টিমিডিয়ার কোর্স্ করেও গেইম নিয়ে কাজ করতে পারেন। একটি গেইমের অনেকগুলো পার্ট রয়েছে। গেইম শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং এ সীমাবদ্ধ নয়। এতে রয়েছে ৩ডি, ২ডি আর্ট, সাউন্ডের কাজ, পিজিক্স ইঞ্জিনের সমহার এবং সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয় প্রোগ্রামিং এর মধ্যমে। আপনি সি.এস.ই তে পড়লে প্রোগ্রামিং এর পার্টটুকু শিখতে পারবেন তবে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা আপনার জন্যে অনেকটা জটিল হয়ে যাবে। এই জন্যে মাল্টিমিডিয়ার কোন কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। ড্যাফডিল এবং শান্তা মরিওম মাল্টিমিডিয়ার উপর ৪ বছর মেয়াদী কোর্স অফার করছে।
এই ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই, যাদের মধ্যে ভাল ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে এবং যারা ভাল আর্ট করতে পারেন তারা গ্রাফিক্স ডিজাইনকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন এবং এর জন্যে পুর্বে উল্লেখ্য ভার্সিটিগুলোর মাল্টিমিডিয়াতে ভর্তি হতে পারেন। তবে আপনার মধ্যে ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা না থাকলে এই ক্ষেত্রে ভাল সাফল্য পেতে সক্ষম হবেন না।
যদি নেটওয়ার্কিং নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে খুজ নিয়ে দেখুন যে ভার্সিটিতে ভর্তি হতে চাচ্ছেন সেই ভার্সিটি কী CISCO সার্টিফাইড কিনা। বাংলাদেশে অন্যতম CISCO সার্টিফাইড ভার্সিটি হল ড্যাফডিল এবং AIUB।
মুটামুটি ৫০ শতাংশ সি.এস.ই পড়ুয়া ছেলে মেয়ের ইচ্ছে একজন সফটওয়ার ডেভলাপার হওয়া। হয়ত আপনিও সফটওয়ার ডেভলাপার হতে চান। সবাই চাইলেই প্রবলেম সলভার হতে পারে না কিন্তু আপনি চাইলেই সফটওয়ার ডেভলাপার হতে পারবেন। তবে এর জন্যে আপনাকে আরো গভীরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে। আপনি কী নিয়ে সফটওয়ার ডেভলাপ করবেন? আপনি কী মোবাইলের জন্যে সফটওয়ার বানাবেন নাকি বিভিন্ন কম্পানির জন্যে সফটওয়ার বানাবেন। এই সফটওয়ার ডেভলাপমেন্টের রয়েছে অসংখ্য প্লেটফর্ম। রয়েছে ওয়েব প্লাটফর্ম রয়েছে ডেক্সটপ কিংবা মোবাইল। প্রথমে প্লাটফর্ম নির্বাচন করুন। অতঃপর আরো গভীরে গিয়ে চিন্তা করেন। আপনি কিসের সাথে কাজ করতে চান?
আপনার সপ্ন কী গুগলে কাজ করা নাকি মাইক্রোসফট? যদি গুগলএ কাজ করতে চান তাহলে খুজ নিয়ে দেখুন কোন ভার্সিটিগুলোর সাথে গুগলের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। কোন ভার্সিটিগুলো জাভা তে প্রাধান্ন সব চেয়ে বেশী দিচ্ছে। আরো দেখুন কোন ভার্সিটি এন্ড্র্যয়েডে প্রাধান্য বেশী দিতেছে। অতঃপর নিজের ডিসিশন নিন।
আর যদি মাইক্রোসফটে কাজ করতে ইচ্ছুক হন তাহলে আপনাকে খুজে বার করতে হবে কোন ভার্সিটি গুলোতে এম.এস.পি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এই বিষয়টা অনেক বেশী গুরত্বপূর্ন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এটি নিয়ে সাফার করতেছি। আপনার ভার্সিটি যদি এম.এস.পির অন্তভূক্ত না হয় তাহলে আপনার যথেষ্ট পরিমাণ মেধা থাকা সর্তেও মাইক্রোসফটের সাথে কাজ করতে পারবেন না। বর্তমানে এম.এস.পির অন্তভূক্ত NSU, AIUB, IUB, EWU, AUST এছাড়াও আরো কিছু ভার্সিটি রয়েছে আপনি খুজ নিয়ে দেখতে পারেন।
এই বিষয়গুলোর পাশাপাশি আপনি খুজ নিয়ে দেখেন, ভার্সিটির অফারকৃত কোর্সটি ডেভেলাপমেন্ট বিষয়ক কতগুলো কোর্স অফার করতেছে। এই ক্ষেত্রে সি.এস.ই এর চেয়ে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়াটা অধিকতর ভাল হবে। বর্তমানে ড্যাফডিল এবং আমেরিকান ইন্টারনেশনাল উনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এই কোর্সটি অফার করতেছে। কোর্সটিতে মুলত প্রেকটিকাল টপিকগুলো অধিকতর গুরত্ব পায়।
যারা এখনও নিজের ক্যারিয়ার কোন দিখে নিয়ে যাবেন তা ঠিক করতে পারছেন না কিন্তু কম্পিউটার নিয়েই ক্যারিয়ার গড়তে চান তারা চেষ্টা করেন A ক্যাটাগরির কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হতে। এছাড়া যদি বিদেশী ভার্সিটির অধিনস্ত কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চান তাহলে DIIT তে যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের অফারকৃত BSc in IT কোর্সটি অনেক সুনাম অর্জন করতে পেরেছে। যদিও A ক্যাটাগরির ভার্সিটি তে খরচ একটু বেশী হয়ে পড়ে তবুও কেরিয়ারা গড়ার জন্যে সব চেয়ে ভাল পন্তা হবে কোন A ক্যাটাগরির ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া। যদি A ক্যাটাগরিতে সক্ষম না হন তাহলে সব কিছু যাচাই করে B ক্যাটাগরির কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যান। সরকার কিছুদিন আগে যুকিপুর্ণ ২০ টি ভার্সিটির তালিকা প্রদান করেছে। ভর্তির আগে নিশ্চিত করুন আপনার ভার্সিটি নিরাপদ কিনা।
ভাল একটা ভার্সিটিতে ভর্তির মানে এই নয় আপনার কেরিয়ার তৈরী হতে চলেছে বরং ভাল ভার্সিটিতে ভর্তির মানে, আপনি ভাল একটা কমিউনিটির সাথে যুক্ত হতে পেরেছেন। এখন ভাল কমিউনিটি সাথে থাকার সুফল আপনাকে নিজ দায়িত্বে নিতে হবে। অন্যতায় হলে এই ১২০০+ ওয়ার্ডের টিউন আপনার ক্যারিয়ারে কোন কাজে লাগবে না। অবশেষে বলব আপনার মধ্যে জানার অনেক বেশী আগ্রহ থাকতে হবে, থাকতে হবে রাত জেগে কাজ করার অভ্যাস এবং ভয় নামক জিনিসটিকে গুড বাই বলতে পারলেই আপনি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখতে পারেন।
সবাই ভাল থাকবেন। আপনার পরিচিত এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উন্নিত ভাই-বোনের নিকট টিউনটি পৌছে দেওয়া আপনার দায়িত্ব।
-ধন্যবাদ।
আমি ফাগুন রেইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 401 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তির সাথে আপডেটেড থাকতে চাই। কখনও সফল আর কখনো...। বেসিকালী ওয়েব ডেভলাপমেন্ট এবং উইন্ডোজ ফোন এপস নিয়ে কাজ করা হয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই / আমি কম্পিউটার সাইন্স এ নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই । সেই ক্ষেত্রে আমি Daffodil International University টিকে বেছে নিয়েছি ।। আগামি ০৭।০৯ তারিখে আমার admission . আমার শিধান্তু টি ভাল হয়েছে কিনা না ? আর ভাল না হলে কি করা যায়?