আসসালামুয়ালাইকুম
আশা করি সবাই ভালই আছেন।
আজ আমি আপনাদের কাছে কোন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক টিউন না বরং একটি সচেতন মূলক ও বাংলাদেশের নেটিজেনদের অধিকার বিষয়ক কিছু কথা শেয়ার করতে লিখছি। আশা করি সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন ও মূল্যবান মতামত জানাবেন।
আমরা বাংলাদেশী সবাই ফ্রী কথা শুনতে যেমন ভালবাসি তেমনি ফ্রী জিনিস পেতে ও ব্যবহার করতে আরো বেশি ভালবাসি। আর সেই ফ্রী টা যদি হয় ইন্টারনেট তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। টেক টিউনে আমি যখন থেকে যুক্ত তখন থেকেই লক্ষ্য করছি যে ফ্রী ইন্টারনেট বিষয়ক যত গুলি টিউন হয় তার প্রত্যেকটিই সর্বাধিক বার পঠিত হয় ও হট টিউনে জায়গা করে নেয়। এই ফ্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা নানা রকমের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হই বার বার এটি অপারেটরগ্ণ বন্ধ করে দেয় আবার নতুন কোন উপায় আবিষ্কৃত হলে আমরা সবাই তার মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ি।
এখন কথা হল কেন? আমরা এই ফ্রী ইন্টারনেটের প্রতি এত আগ্রহ। আমি ব্যাক্তিগত যে কারন গুলি প্রধান মনে করি তাই আমি আপনাদের কাছে বলছি।
১. মসিক লিমিটেড প্যাকেজ গুলোর দাম অনেক চড়া।
২. বেশির ভাগ অপারেটর দের ইন্টারনেট স্পিড অনেক কম।
৩. আনলিমিটেড প্যাকেজ গুলো অনেকের ক্রয় সীমার বাইরে।
৪. বেশির ভাগ লিমিটেড প্যাকেজের ইউজেস্ মাস শেষ হয়ার অনেক আগেই ফুরিয়ে যায়।
৫. নিয়মিত গ্রাহকদের তেমন কোন সুবিধা দেয়া হয় না।
৬. যারা মডেম বা ওয়াইম্যাক্স কানেশন ব্যবহার করি তারা আবার মোবাইলের জন্যও প্যাকেজ ব্যবহার করতে হয়।
এগুলো আমার দেখা প্রধান কারন এগুলো ছাড়াও অনেক কারন রয়েছে যেগুলো আপনারাও কম বেশি জানেন ও ভুক্তভুগি।
এখন একটু ভেবে দেখুন এই সমস্যা গুলো না থাকত তাহলে আমদের ৯৫% লোকেরাই ফ্রী ইন্টারনেট ব্যবহারের কথা চিন্তাই করত না।
বিভিন্ন মোবাইল ও ওয়াইম্যাক্স অপারেট যারা আছে তাদের চিন্তা ভাবনাটাই একটুকু দেখুন। আমরা যারা নিয়মিত তাদের কানেকশন ব্যবহার করি বিল পরিশোধ করি তাদের কোন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা তারা একটুও ভাবে না। আর যারা ১ মাস সংযোগ ব্যবহার করে ফেলে রাখে তাদের কত রকমের সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমনঃ বন্ধ সংযোগ চালু করলে পূর্বের সব বিল মাফ সাথে প্রথম তিন মাস পাচ্ছেন ১০%, ২০%, ৫০% ছাড়, আবার কেউ কেউ বলে বন্ধ সংযোগ চালু করলেই বিল মাফের সাথে পাবেন একই দামে পূর্বের চেয়ে দ্বিগুন ইউজেস্, মোবাইল ফোন অপারেটরা দিয়ে থাকে বন্ধ সংযোগ চালু করে ১০ টা রিচার্জে পাবেন ১০০মিনিট, ১০০ এম,এম,এস, ১০০ মেসেজ, ১০০টি ভিডিও কল ১০০এম,বি ইত্যাদি। তাছাড়াও থাকে প্রথম তিন মাস ১০০ টাকায় দুই জিবি নানা রকমের চটকদার অফার।
আর অন্যদিকে আমাদের টাকায় যে অন্যদের সুযোগ সুবিধা করে দিচ্ছে আমরা তাতে করে কি পাচ্ছি? আমাদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে অন্য দের খায়ানোর মানে কি?
এখন কথা হল আমরা তো অপারেটরদের কাছে একদম ফ্রী কিছুই চাই না। বরং আমাদেরকে যদি একটু সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টেরনেট সংযোগ ব্যবহার করার সুযোগ দিত তাহলে আমাদের কষ্ট করে ফ্রী ইন্টারনেট ব্যবহারের ফন্দি ফিকির করতে হত না আর অপারেটর দেরকেও এগুলো বন্ধ করার জন্য দেশি-বিদেশি আই.টি এক্সপার্ট রাখতে হত না।
এখন আমার কাছে মনে হয় যদি কমপক্ষে ১০০টাকা ১ জিবি এবং ২৫৬ কেবিপিএস স্পিড দিয়ে হলেও ৩০০-৩৫০ টাকার মধ্যে আনলিমিটেড প্যাকেজ দিত তাহলে আমাদের আজ চুরির রাস্তা খোজা লাগত না।
হয়তবা অনেকেই আমার কথা গুলো পড়ে হাসাহাসি শুরো করছেন যে মগের মুল্লুক পাইছে নাকি এত কম দামে ইন্টারনেট সেবা দিবে। এবারের কথা গুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন কিভাবে তা সম্ভব।
আমরা মোটামোটি সাবাই জানি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর হাতে আছে সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন 4G ২৬০০ মেগাহার্টস্ ব্যান্ডের তরঙ্গ এর মধ্য থেকে বাংলালায়ন ও কিউবির কাছে নাম মাত্র মূল্যে লাইসেন্স বিক্রি করার পর বাকী ছিল ২৬০০ ব্যান্ডের ৬০মেগাহার্টস্ তরঙ্গ। এই ৬০ মেগাহার্তস্ থেকে গত নভেম্বর ২০১৩ সালে ওলো নামের ওয়াইম্যাক্স প্রতিষ্ঠানের কাছে বিনা নিলামে ২০মেগাহার্টস্ তরঙ্গ বিক্রি করে। আর বাকী ছিল ৪০ মেগাহার্টস্ তরঙ্গ।
গতকাল ভারতের কাছে সেই ২৬০০ ব্যান্ডের ৪০ মেগাহার্টস্ তরঙ্গ বছরে মাত্র ৬০ কোটি টাকা নামের পানির দামে বিক্রি করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪ হাজার কোটি টাকা।
গত কয়েক মাস আগে ২১০০ মেগাহার্টস্ তরঙ্গ 3G মোবাইল প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে এটা নিশ্চই সবার মনে আছে। এজন্য প্রতি ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গে অপারেটরদের পরিশোধ করতে হয়েছিল ৮১৬ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ২০ মেগাহার্টজের দাম আসে তিন হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে মেগাহার্টজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২৬০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড। আর ওয়াইম্যাক্স অপারেটর ওলো এই মেগাহার্টজে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ পেয়েছে মাত্র ২৪৬ কোটি টাকায়।
তাছাড়া বিটিআরসি কিছু দিন আগে ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য হ্রাসের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বলেছে ১২৮ কেবিপিএস স্পিড বাদ দিয়ে দ্বিগুন করে ২৫৬ কেবিপিএস সহ সকল প্যাকেজকে আগের চেয়ে দ্বিগুন স্পিডে রুপান্তর করতে বলে হয়েছে মূল্য বৃদ্ধি না করে। এতে করে অপারেটরা ক্ষতি গ্রস্থ হবেন না বরং আগের চেয়ে বেশি লাভবান হবেন।
কিন্তু এত কিছুর পরও ইন্টারনেটের মূল্য কমছে না কারন যে সরিষা দিয়ে ভুত তাড়াবেন সেই সরিষাই যে ভুতে ধরে আছে (বিটিআরসি)।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল কারো কোন দোষ নেই সবচেয়ে বড় দোষ হল আমাদের দেশে নেটিজেনদের। কারন আমরা যদি আমাদের অধিকারের ব্যাপারে একটু সচেতন হতাম এবং প্রতিবাদ করে আমদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে পারতাম। তাহলে সরকার ও বিভিন্ন সেবা দান করী প্রতিষ্ঠান আমাদের অচেতন করে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খেতে পারত না।
তাই আমি আজ আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট টেক টিউনের সাথে যুক্ত সকলের কাছে আবেদন করছি আসুন আমাদের যার যতটুক ক্ষমতা আছে তা দিয়ে প্রতিবাদ করে আমদের ন্যায্য অধীকার ফিরিয়ে আনি। ফ্রী ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা হ্রাস করি।
এতক্ষন কষ্ট করে ও ধৈর্য ধরে আমার দীর্ঘ্য টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং সেই সাথে সবার মূল্যবান মতামত কামনা করছি।
আল্লাহ হাফেজ।
আমি মোঃ মমিনুল ইসলাম খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 114 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি একজন সাধারণ মানুষ। অর্থনীতিতে সম্মান কোর্স শেষ করে বর্তমানে অর্থনীতিতে স্নাতোকোত্তর করছি। কিন্তু কম্পিউটার হল আমার প্রথম প্রেম শেষ ভালবাসা।
তা হলে এখন কি করব