আপনাদের সবার দোয়া ও শুভেচ্ছা নিয়ে আমি শুরু করছি আমার ৫ম টিউন। আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন। আপনাদের যখন কোন উপকারে আসতে পারি তখন খুব ভাল লাগে। আর মনে পড়ে যায় ভূপেন হাজারিকার সেই কালজয়ী গানটি-------
"মানুষ মানুষের জন্যে
জীবন জীবনের জন্যে।"
আসলেই মানুষ মানুষেরই জন্যে। যাই হোক কাজের কথায় আসি। আজ আমি একটু ধরাবাঁধা গন্ডির বাইরে আসবো। অর্থাৎ, প্রায়ই তো Android মামুরে ডিস্টার্ব করি আজকে সে একটু রেস্টে থাক। আজ যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তা জানিনা টেকটিউনসের নীতিমালাতে পড়ে কিনা। কিন্তু এটা করা জরুরী বিধায় আমি লিখতে চাইছি।
এটা মার্চ মাস। স্বাধীনতার মাস। আমরা স্বাধীনতার মাস শুনলে যে জিনিসটাকে স্মরণ করি তা হল ২৬ মার্চ। আমরা ২৬ মার্চ সম্পর্কে জানি যে, ২৫ মার্চ সেই ভয়াল রাতে যখন পাক হানাদার বাহিনীরা অপারেশন সার্চলাইট নামের সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালালো তখন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান নিম্নোক্ত ভাষণ দেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা করেন,
"This is Swadhin Bangla Betar Kendra. I, Major Ziaur Rahman, at the direction of Bango Bondhu Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People's Republic of Bangladesh has been established. At his direction, I have taken command as the temporary head of the republic. In the name of Sheikh Mujibur Rahman, I call upon all Bengalis to rise against the attck by the west Pakistani Army. WE shall fight to the last to free our motherland. By the grace of Allah, victory is ours. Joy Bangla."
এরপর সবাই যুদ্ধে নেমে পড়ে। আসলে আমরা এতটুকুর বেশি অনেকেই জানিনা। আমরা আমাদের দেশের ইতিহাস ভালো করে জানিনা এর চেয়ে লজ্জার আর কি আছে? কিছুদিন আগে আমি আমার এক ভাতিজাকে (৪র্থ শ্রেনীতে পড়ে) জিজ্ঞেস করেছিলাম," বলতো ২১শে ফেব্রুয়ারী কিসের জন্য স্মরনীয়?"
- বইমেলার জন্য।
আমিঃ- আর কিছু না? অনেক আগে সেইদিন কি হয়েছিল জানো না?
- হ্যাঁ, সেইদিন অনেক যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে আমার নানু মারা যায়।
আমিঃ- আর কেউ মারা যায়নি?
-না।
আমিঃ- আচ্ছা, ২৬শে মার্চ কি এটা জানো?
-হ্যাঁ, বিজয় দিবস।
আমিঃ- কিভাবে বিজয় দিবস?
- ওইদিন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছিল।
আমিঃ- আর?
- আমি জানিনা। আব্বু জানে।
আমিও আর তাকে ঘাটালাম না। আপনারা ভাববেন পিচ্চি পোলা, কইতে যে পারছে হেইডাই তো বহুত। ৪র্থ শ্রেনীতে পড়া বালককে যদি আপনি পিচ্চি বলেন তাহলে আমি আর কি করতে পারি বলেন? এর পর ভেবে দেখলাম আসলে সমস্যা তো পিচ্চির না। আসল কালপ্রিট তার বাপ মা। তার আত্মীয়রা। আমরা, আপনারা সবাই। আমরা হয়তো নিজেরাই ভাল করে ইতিহাস জানিনা। আমাদের আগামী প্রজন্মকে আমরা কি শিখাবো বলেন? আমরা তো হয়তো অনেকে দেশের জারি গান আর সারি গানের পার্থক্যই বুঝিনা। অথচ What is HIP-HOP, What is RAP, Justin Bieber, Pitbull, Chris Brown এর Full Biography জানি। তো পোলাপাইন কোনটা নিব? আসমান থেকে তো আর পড়বেনা যে তারা ওগুলা আপনাআপনি বুঝে যাবে। তাদের কিছু জানাতে হলে নিজের আগে কিছু জানতে হবে। আমি কোনদিন এটা বলতে পারবোনা আমি সব জানি। ইহা অসম্ভব। আমিও তেমন কিছু জানিনা ইতিহাস। কিন্তু জানার চেষ্টা করি। মাকে প্রায়ই তার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। বাবা বেঁচে থাকতে তাকেও করতাম। আজ বাবা নেই। আমার অনেক কাছের মানুষ আমার থেকে দূরে চলে গেছেন। তাই তাদের কথামত সব ভাবে নিজেকে গোছানোর চেষ্টা করি। যাতে আগামী প্রজন্মকে তাদের কথা তাদের জীবন, সময়, পরিবেশ এগুলো সম্পর্কে ভাল ধারণা দিয়ে যেতে পারি।
যাই হোক, আপনাদের ফাও কিছু টাইম নষ্ট করলাম, আমাকে গালিগালাজ কইরেন না। কাজের কথায় আসছি। আমরা এটাই জানবো আসলে কি হয়েছিল সেই সময়ে।
২৫শে মার্চ ৬৯ সারা দেশে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর হলেও সামরিক সরকার গণ-দাবিকে উপেক্ষা করার মত শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। তাই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান সারা দেশে এক ব্যক্তি এক ভোটের নীতিতে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। ৭ই ডিসেম্বর '৭০ থেকে ১৯শে ডিসেম্বর' ৭০ এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তফসিল ঘোষণা করা হয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে দেশব্যাপী এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ৬ দফা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে রায় প্রদান করে। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ৩১০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ম্যান্ডেট লাভ করে।
নির্বাচনে জয়লাভের পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকার গঠনে মত দিতে অস্বীকার করেন। একটি রাজনৈতিক দল জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের ম্যান্ডেট পেয়েছে। তারা সরকার গঠন করবে, এটাই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু সামরিক শাসকগণ সরকার গঠন বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে এক আলোচনা শুরু করে। কিসের জন্য আলোচনা, এটা বুঝতে বাঙালি নেতৃবৃন্দের খুব একটা সময় লাগেনি। জাতীয় সংসদের নির্ধারিত অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ১লা মার্চ ১৯৭১ দেশব্যাপী অসহযোগের আহবান জানান। সর্বস্তরের জনগণ একবাক্যে বঙ্গবন্ধুর এই আহবানে সাড়া দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অচল করে তোলে। ২রা মার্চ ৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা প্রদর্শিত হয়। ৩রা মার্চ '৭১ এ রমনা রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) 'স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' এর পক্ষ থেকে 'স্বাধীনতার ইসতেহার' পাঠ করা হয়। এই ইসতেহারে 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনী পরিচালিত সরকার জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কোন সমাধান না দেওয়ায়, ৭ই মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমগ্র বাঙালি জাতিকে এক দিকনির্দেশনী ভাষণে সর্বপ্রকার পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্ত্তত হতে আহবান জানান। পুরো ভাষণটা দিয়ে এখানে দিয়ে দিলাম। এখানে পুরোটা দিয়ে আপনার সময় নিলাম না।
এই ভাষণে তিনি ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগেই বাস্তবায়নের জন্য চার দফা দাবি পেশ করেন:
শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। তাঁর এই ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল করে তোলে।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ।
৭ই মার্চের এই ভাষণে বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ কোন দলীয় নেতার নির্দেশ ছিল না। ছিল একজন জাতীয় নেতার নির্দেশ। এই নির্দেশ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র, জনতা ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে বাঙালি সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী সকলকেই সচেতন করে তোলে। ২রা মার্চ ৭১ থেকে পূর্ব বাংলার সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।
২৩শে মার্চ ৭১ সকালে পল্টন ময়দানে জয় বাংলা বাহিনীর এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে এই বাহিনীর নেতৃবৃন্দ মিছিল সহকারে বাংলাদেশের পতাকাসহ বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িতে এই পতাকা উত্তোলন করেন। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর গাড়িতে এই পতাকা লাগান হয়। ২৩শে মার্চ পূর্ব বাংলার প্রতিটি শহরে পাকিস্তান দিবসের অনুষ্ঠান বর্জিত হয় এবং পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়।
অন্যদিকে ক্ষমতার হস্তান্তরের নামে এই আলোচনা চলা অবস্থায় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো সৃষ্ট সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে নতুন করে সংকটের সৃষ্টি করে। অযৌক্তিক দাবি উপস্থাপনের ফলে সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধানের পথ এক সময় রুদ্ধ হয়ে পড়ে। পাকিস্তান সামরিক শাসকগণ স্বার্থান্বেষী মহলের সাথে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের জন্য রাজনৈতিক আলোচনার আড়ালে সামরিক বাহিনী মাত্র ২২ দিনে দুই ডিভিশন অবাঙালি সৈন্য পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলায় স্থানান্তরে সক্ষম হয়। বাস্তবতায় এটিই ছিল তাদের আলোচনার নামে কালক্ষেপণের মূল উদ্দেশ্য। ২৪শে মার্চ ৭১ সামরিক শাসকগণ হেলিকপ্টার যোগে সমস্ত সেনানিবাসে এই আক্রমণের পরিকল্পনা হস্তান্তর করে। বাঙালি জাতির উপর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর এই কুখ্যাত হত্যাযজ্ঞের নির্দেশ নামা ''অপারেশন সার্চ লাইট'' নামে পরিচিতি।
২৫শে মার্চ ৭১ রাত্র ১১টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিত আক্রমণের প্রস্ত্ততি নিয়ে সেনানিবাস অথবা আক্রমণ প্রস্ত্ততিস্থানগুলি ত্যাগ করে। একই সাথে ঢাকাসহ দেশের সমস্ত বড় শহর ও সেনানিবাসের বাঙালি রেজিমেন্টসমূহ আক্রান্ত হয়। সেনাবাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধু রাত ১২টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডি বাসভবন থেকে বন্দী হবার পূর্বে তিনি দলীয় নেতৃবন্দেকে করণীয় বিষয়ে যথাযথ নির্দেশ দিয়ে অবস্থান পরিবর্তনের কথা বলেন। একই সাথে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বড় শহরগুলোতে গণহত্যা শুরু করে। তাদের পূর্বপরিকল্পিত এই গণহত্যাটি ''অপারেশন সার্চলাইট'' নামে পরিচিত। এ গণহত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগে থেকেই পাকিস্তান আর্মিতে কর্মরত সকল বাঙালি অফিসারদের হত্যা কিংবা গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হয়। ঢাকার পিলখানায়, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ই বি আর সিসহ সারাদেশের সামরিক আধাসামরিক সৈন্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের কথা যেন বহির্বিশব না জানতে পারে সে জন্য আগেই সকল বিদেশি সাংবাদিকদের গতিবিধির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় এবং অনেককে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের বিখ্যাত সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব এই গণহত্যা সম্পর্কে অবগত হয়। আলোচনার নামে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কালক্ষেপণও এই গণহত্যা পরিকল্পনারই অংশ ছিল।
২৫ মার্চ রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পাকিস্তানিদের অপারেশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং জগন্নাথ হলের ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশববিদ্যালয় ও আশেপাশের বহু সংখ্যক শিক্ষক ও সাধারণ কর্মচারিদেরও হত্যা করা হয়। পুরোনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও চালানো হয় ব্যাপক গণহত্যা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করে হত্যা করা হয় পুলিশ বাহিনীর বহু সদস্যকে। পিলখানার ইপিআর-এর কেন্দ্রে আচমকা আক্রমণ চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয় নিরস্ত্র সদস্যদের। কয়েকটি পত্রিকা অফিস ভস্মীভূত করা হয়। দেশময় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বিচারে হত্যা করা হয় বিভিন্ন এলাকায় ঘুমন্ত নর-নারীকে। হত্যা করা হয় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদেরও। ধারণা করা হয়, সেই রাত্রিতে একমাত্র ঢাকা ও তার আশে পাশের এলাকাতে প্রায় এক লক্ষ নিরীহ নর-নারীর জীবনাবসান ঘটে।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য বাংলার জনগণকে আহবান জানান। চট্ট্রগ্রামে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে প্রচারের জন্য পাঠানো হয়। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষণাকে অবলম্বন করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ঘোষণাটি ছিল এইরকম,
"পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অতর্কিত পিলখানায় ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশলাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোষ নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতা প্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।
শেখ মুজিবর রহমান
২৫শে মার্চ,১৯৭১ সাল।"
২৭ মার্চ অপরাহ্নে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার আরেকটি ঘোষণা পাঠ করেন। এই ঘোষণাটিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, নবগঠিত এই রাষ্ট্রের সরকার জোটবদ্ধ না হয়ে বিশেবর অপর রাষ্ট্রগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে আগ্রহী। এছাড়াও এ ঘোষণায় সারা বিশেবর সরকারগুলোকে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলারও আহ্বান জানানো হয়।
এরপর আমাদের লক্ষ লক্ষ বাঙালি দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।
আশা করি যতটুকু তথ্য দিতে পেরেছি তাতে আপনি উপকৃত হবেন। আমি জানি আমি যা লিখেছি তা সম্পূর্ণ সঠিক নাও হতে পারে। তাই এখানে কোন ভুল-ত্রুটি দেখলে আমাকে ক্ষমা করবেন এবং আমাকে অভিহিত করবেন।
আচ্ছা ২৬শে মার্চ কথাটা কি শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই ভেবে দেখবো? আপনাদের কি জানতে মনে চায় না এই দিন টায় বিশ্বে আর কোথায় কি হয়েছে? হ্যাঁ, এবার তাই আমরা দেখবো। ইতিহাসের বিবর্তনে স্মরনীয় ঘটনাগুলো কতবার ২৬শে মার্চের দোরগোড়ায় এসেছে। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
১. ১০২৬ সাল (২৬শে মার্চ)- রোমান সাম্রাজ্যের পোপ জন ১৯তম কনরাড ২য় কে সম্রাট হিসেবে ভূষিত করেন ও মুকুট পড়ান।
২. ১১৪৭ সাল (২৬শে মার্চ)- জার্মানির কোলুনে ইহুদী সম্প্রদায় বিরোদী ইহুদী সহিংসতাকে রদ করতে অনশন করেছিল।
৩. ১১৫০ সাল (২৬শে মার্চ)- হ্যাম্পশায়ার ইংল্যান্ডে টিচবোর্ন পরিবার মৃত্যুশয্যায় প্রতিশ্রুতি রাখতে প্রত্যেক বাসিন্দাকে এক গ্যালন ময়দা দেয়ার প্রথা চালু করেছিল।
৪. ১৪৮৪ সাল (২৬শে মার্চ)- উইলিয়াম ক্যাক্সটন ঈশপের গল্পের ইংরেজি অনুবাদ ছাপান।
৫. ১৫৩৪ সাল (২৬শে মার্চ)- লুইবেক ডাচ জাহাজগুলোকে সমূদ্রের পূর্ব দিকে যাবার অনুমতি দেন।
৬. ১৫৫২ সাল (২৬শে মার্চ)- গুরু অমর দাস তৃতীয় শিখ গুরু হন।
৭. ১৬৩৬ সাল (২৬শে মার্চ)- উত্রেখত বিশ্ববিদ্যালয় (নেদারল্যান্ডস) এর শুভ উদ্বোধন হয়।
৮. ১৬৬৮ সাল (২৬শে মার্চ)- ইংল্যান্ড ভারতের 'বোম্বের' উপর দখলদারি লাভ করে।
৯. ১৬৯২ সাল (২৬শে মার্চ)- রাজা "ম্যাক্সিমিলান" দক্ষিণ নেদারল্যান্ডসের জমিদার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১০. ১৭৮০ সাল (২৬শে মার্চ)- সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ রবিবারের পত্রিকা প্রকাশিত হয়। (ব্রিটিশ গেজেট এবং সানডে মনিটর)
১১. ১৭৯০ সাল (২৬শে মার্চ)- কংগ্রেস সাধারণীকরণ আইন পাস করে। এর জন্য সে স্থানের ২ বছরের বাসিন্দা হতে হত।
১২.১৭৯৯ সাল (২৬শে মার্চ)- নেপোলিয়ন জাফা প্যালেস্টাইন জয় করেন।
১৩. ১৮০৪ সাল (২৬শে মার্চ)- পশ্চিম মিসিসিপি থেকে লুসিয়ানা পর্যন্ত ভারতীয়দের উতখাতের আদেশ দেয় কংগ্রেস।
১৪. ১৮০৮ সাল (২৬শে মার্চ)- স্পেন এর রাজা চার্লস ৪র্থ তার পুত্র ফার্ডিনেন্ড ৭ম কে গ্রহন করতে অস্বীকার করেন।
১৫. ১৮১২ সাল (২৬শে মার্চ)- তুমুল ভূমিকম্পে ভেনিজুয়েলার কারকাসের ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে প্রায় ২০০০০ লোক মারা যায়।
১৬. ১৮৪৫ সাল (২৬শে মার্চ)- জোসেফ ফ্রান্সিস, নিউ ইয়র্কে তার ঢেউতোলা লোহার পাতের লাইফবোটের অনুমোদন পান।
১৭. ১৮৪৫ সাল (২৬শে মার্চ)- ব্যান্ড-এইডের পূর্বে, আঠালো প্লাস্টার অনুমোদন পায়।
১৮. ১৮৫৬ সাল (২৬শে মার্চ)- নিউ সাউথ ওয়েলসে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস গেম হয়, ভিক্টোরিয়া বনাম মেলবোর্ন। নিউ সাউথ ওয়েলস জয়লাভ করে।
১৯. ১৮৭২ সাল (২৬শে মার্চ)- থমাস যে মার্টিন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র অনুমোদিত করেন।
২০. ১৮৭৮ সাল (২৬শে মার্চ)- হাস্টিংসে আইন কলেজ স্থাপিত হয়।
২১. ১৮৮১ সাল (২৬শে মার্চ)- থেসালি মুক্ত হয় এবং পুনরায় গ্রীসের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়।
২২. ১৮৯২ সাল (২৬শে মার্চ)- ওয়াল্ট হুইটম্যান ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।তিনি আমেরিকার কবি, সাংবাদিক,রচনাবিদ এবং মানবতাবিদ ছিলেন। তাকে মানুষ চিনত "মুক্ত গদ্যের জনক" হিসেবে।
২৩. ১৯০৩ সাল (২৬শে মার্চ)- অ্যামস্টারডামে আমেরিকান হোটেল চালু হয়।
২৪. ১৯১০ সাল (২৬শে মার্চ)- যুক্তরাষ্ট্র অপরাধী, নৈরাজ্যবাদীদের এবং অসুস্থদের প্রবাস অনুমোদন বন্ধ করে দেয়।
২৫. ১৯৩১ সাল (২৬শে মার্চ)- নয়া দিল্লীকে কলকাতার পরিবর্তে রাজধানী করে ব্রিটিশ-ভারতীয়রা।
২৬. ১৯৩১ সাল (২৬শে মার্চ)- সমগ্র যুক্তরাজ্যে পরীক্ষায় পাশ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার প্রথা চালু হয়।
২৭. ১৯৪৩ সাল (২৬শে মার্চ)- প্রশান্ত মহাসাগরে কোমান্দরস্কী দ্বীপের যুদ্ধ হয়।
২৮. ১৯৪৫ সাল (২৬শে মার্চ)- ২য় বিশ্বযুদ্ধে ইয়ো জিমাকে জোরপূর্বক নিরাপদ বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রীয় সৈনিক।
২৯. ১৯৬৯ সাল (২৬শে মার্চ)- সোভিয়েত আবহাওয়া স্যাটেলাইট "মিটিওর ১" পাঠানো হয়।
৩০. ১৯৭১ সাল (২৬শে মার্চ)- বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
৩১. ১৯৭৬ সাল (২৬শে মার্চ)- রানী ২য় এলিজাবেথ প্রথম রাজকীয় ই-মেইল প্রেরণ করেন, রাজকীয় সঙ্কেত এবং রাডার স্থাপনা দ্বারা।
৩২. ১৯৮৭ সাল (২৬শে মার্চ)- রাঞ্জি ট্রফি জিততে হায়দ্রাবাদ দিল্লিকে প্রথম ইনিংসে হারায়।
৩৩. ২০১৪ সাল (২৬শে মার্চ)- জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে আমরা বিশ্বরেকর্ড করবো। আমিও যাবো, আপ্নারাও আসবেন।
এখানে আমি শুধু মাত্র ইতিহাসের কথা তুলে ধরেছি। কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা লেখা নয়। আমি কাউকে কটাক্ষ করছিনা। কাউকে উপরে তুলছিনা। তাই আমার টিউনটি পড়ে আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমার বিশ্বাস আমরা সবাই আমাদের দেশকে অনেক ভালবাসি। এবং এর ইতিহাস অনেকেই জানি। তাই আমরা সবাই চেষ্টা করবো আমাদের আগামী প্রজন্মকে আমাদের সুন্দর দেশের সুন্দর ইতিহাস ব্যক্ত করে তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলবো।
আপনাদের জন্য টিউনটি করা। অনেক কষ্ট করে তথ্য জোগাড় করেছি। তাই আশা করি সকলে পড়বেন এবং আপনার মুল্যবান মতামত জানাবেন। যদি ভুল কিছু হয়ে থাকে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।
আপনাদের সবার সুসাস্থ্য কামনা করে শেষ করছি। ভালো থাকবেন।
ফেসবুকে আমিঃ-এখানে আমাকে পাবেন
আমি উদীয়মান লেখক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 117 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
I am a learner. I have some addiction in technology. I love when I use to think about IT. Although people understand me as a fool or something like that. But it is alright to me. I am what I am. And I think I am a good person.
Bhai, dharon lekhechen
Kinto, Bhai, sadindesh-e kota poddoti, VIP-der jonno alada road ar amora janjote suffering etc. Dekhle ar desh niye…..(jodio desh niye na bhebe parina)