ব্লগ লেখার সময়ে আমরা অনেক সময়ে অমনোযোগী হয়ে পড়ি, নানা কারনে এটা হতে পারে; দেখা যায় ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে অথচ লেখা এগোয়নি তেমন। ব্লগ লেখার সময়ে সঠিক মনোযোগ এবং বিষয়ের উপরে সম্পুর্ণ চিন্তাধারার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। আজকে অল্প কিছু আলোচনা করবো এই ব্যাপারেই। এ সবই জানা জিনিস এবং নতুন কিছুই নয়, তবুও লিখিত আকারে এটা আমার সামান্য প্রচেষ্টা যদি আপনাদেরকে সঠিক দিশায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই লেখা। original post at bn.ria8.me.uk
আমার অভ্যাস আছে অফিসে, চলার পথে গাড়িতে আমি ল্যাপটপ নিয়ে লেখালেখি করি। আপনাদেরও যদি এই অভ্যাস থাকে তাহলে এর পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজন। নিজের বাড়িতে যেভাবে মনোযোগ দিয়ে লেখা যায়, বাড়ির বাইরে অন্য কোথাও সেটা সম্ভব নয়। এই ব্যাপারে একেবারেই সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। কারন বাড়ির বাইরে আমাদের অনেক রকমের মনোযোগ ভঙ্গকারী উপাদান থাকে যেদিকে মন চালিত হয় সহজেই। এমন হলে ব্লগের লেখাতেও তার প্রভাব পড়বে, লেখার মান যাবে কমে। লেখার মূল বিষয়টা মাথায় থাকলেও ভাষার গঠনে পার্থক্য দেখা দেবে। সুতরাং নিজের বাড়িতে বসেই ব্লগিং করুন, নিজের ঘরে নিশ্চুপে নির্জনে একান্তে বসে লেখাটি লিখে ফেলুন। দেখবেন অনেক ভাল হবে লেখা।
প্রথমেই ভেবে নিন আপনি যা লিখছেন সেটা সামনে বসা কাউকে বলছেন, মনে মনে বলতে থাকুন এবং সেইমতো তাড়াতাড়ি টাইপ করে চলুন। এতে মন অন্যদিকে চালিত হওয়ার অবকাশ কমে যাবে। যেহেতু একটি কথোপকথনের মতো করেই লিখছেন এবং তাড়াতাড়ি টাইপ করছেন, তাই লেখার মধ্যে বাক্যগঠনেও অনেক সুন্দর পরিবর্তন আসবে, পাঠকের কাছে তা আকর্ষনীয় হবে, তারও মনে হবে যে ব্লগার তাকেই কথাগুলি বলছেন। লেখার সময়ে বানানের দিকে নজর দেবেন না। লিখে চলুন। মন থেকে যেভাবে কথা বের হয়ে আসবে সেইভাবেই লিখে চলুন। মনে রাখবেন, বানান শুধরানোর পরেও সময় পাবেন অনেক, কিন্তু লেখার মাঝে মনোযোগের অভাব হলে সুন্দর একটি লেখা হারিয়ে ফেলতে পারেন। সেটা যেন নাহয়।
যদি মনে করেন যে আপনার মন অশান্ত হয়ে আছে, মন বসাতে পারছেন না লেখায়, তাহলে এর সহজ সমাধান হচ্ছে রেডিও কিম্বা সিডিতে প্রিয় গানের সুর বাজানো। মানুষের মনের তারের সাথে সুরের ঝঙ্কারের একটা কাছাকাছির সম্পর্ক আছে; হাল্কা সঙ্গীতে আপনার মনের অনেকটা চাপ কমে আসবে এবং সাবলীল ভঙ্গিতে লিখে চলতে পারবেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, হেডফোনে না শোনাই ভালো। কারন হেডফোনে শুনলে অন্যান্য স্বাভাবিক শব্দের থেকে আপনি দূরে সরে যাবেন, কানে শুধুই সঙ্গীতের সুর বেশি করে ঢোকার ফলে মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তিতেও প্রভাব পড়তে পারে, আবারও মনোযোগের অভাব হবে। তাই, স্বাভাবিক অবস্থায় নিজের লেখার টেবিলের থেকে সামান্য দূরে রেডিও বা সিডি চালান।
আপনি যতোই ভিআইপি হন না কেন, ব্লগিং করতে চাইলে লেখার মাঝে ইমেইল একাউন্ট খুলবেন না। একটিও ইমেইল মিস যাবেনা, সব থাকবে, পরে পড়বেন আর উত্তর দেবেন। ইমেইল পড়ার অর্থই হচ্ছে অন্য অনেকগুলি প্রসঙ্গ আপনার মাথায় ঢুকে যাবে এবং মনোযোগ সেদিকে চালিত হবে। শুধু ইমেইল নয়, সেইসঙ্গে ফেসবুক আর ট্যুইটারেও লগ-ইন করবেন না। দ্রুত আপডেট আসে অনেকের কাছে থেকে, সুতরাং এইসবের মধ্যে না যাওয়াই ভালো, ব্লগ আপনার জরুরী মনে হলে লেখার সময়ে শুধুই লিখুন, অন্যদিকে মন দেবেন না।
অস্বীকার করা যাবেনা যে আজকের দিনে আমাদের প্রধান অমনোযোগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল ফোনের কারনে। ইনকামিং কল আর এসএমএস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন লেখার সময়ে। আমি মোবাইল বন্ধ করে ফেলতে বলিনি, সাইলেন্ট করলেও আপনি মিস হওয়া কলের নম্বর পাবেন, এসএমএস ইনবক্সে ডেলিভারি হয়েই থাকবে। এইসব যোগাযোগগুলি পরেও করতে পারবেন, তাতে আকাশ ভেঙে পড়বেনা মাথায়। লেখাটাই জরুরী লেখার সময়ে।
বাড়িতে কমপিউটার আছে, ইন্টারনেট আছে, সুতরাং চ্যাট মেসেঞ্জারও আছে। লেখার সময়ে মেসেঞ্জারে লগ-ইন থাকলে মাঝে মাঝেই বন্ধুদের মেসেজ আসতে থাকবে - আজকে সান্ধ্যকালীন আড্ডায় কে কি বললো, কাল লাঞ্চে কোথায় যাওয়া হবে... এইসবের মধ্যেও যাবেন না লেখার সময়ে। সব মেসেঞ্জার থেকে লগ-আউট করে তবেই লিখতে শুরু করবেন।
দিনের সব সময় সমান নয়। লক্ষ্য করবেন যে রাতের দিকে যখন বাইরের কর্মকাণ্ড কমে আসে, সবাই যখন দিনের কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে যায় তখন এক শান্তির পরিবেশ বিরাজ করে। সকালে আবার সেই কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া পর্যন্ত থাকে সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ - লেখার পক্ষে অতি উত্তম এই সময়টা। এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা একেবারেই হাতছাড়া হতে দেবেন না। এই সময়ে কেউ আপনাকে ডাকবেনা, কেউ ফোন করবেনা, আর মেসেঞ্জার থেকে লগ-আউট থাকতে আগেই বলেছি।
এটা আরেকটা স্বাভাবিক মনস্তত্বের ব্যাপার, লেখার টেবিলে যদি কীবোর্ড আর মনিটারের আসেপাশে বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখেন তবে সেদিকে মন চলে যেতেই পারে। কোন জিনিসের দিকে যে মন যাবে তা আগে থেকে বলা যায়না। স্বাভাবিক ভাবে যেদিকে হয়তো মন যায়না, গভীর মনোযোগ দেওয়ার সময়ে সেইসব অপ্রাসঙ্গিক দিকেই দেখবেন মন চালিত হয়ে যাচ্ছে।
ব্লগিং করাকে অনেকেই শখের ব্যাপার মনে করেন, সেইসাথে আয়ের সহজ পথ। একেবারেই তা নয়। শখ থেকে ব্লগিংয়ে উৎসাহী হতে পারেন, তবে ব্লগিং শুরু করলে সেটাকে সফল করতে চাইলে তাতে কঠিন পরিশ্রম এবং মনোযোগের প্রয়োজন। ছাত্রজীবনে লেখাপড়া করে বোর্ড পরীক্ষায় বসার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় এটা। টাকা খুব সহজে আসবেনা, চাই ভাবলেই পাওয়া যায়না। সফলভাবে ব্লগিং করতে হলে এবং সফল ব্লগার হতে চাইলে যথেষ্ট উপযুক্ত কর্ম করে যেতে হবে, তবেই তার সুফল মিলবে একদিন। স্বপ্ন দেখুন, একইসঙ্গে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কর্ম করে চলুন, এইভাবেই একদিন সাফল্যের হাতছানি নিশ্চয় দেখতে পাবেন।
--------------------------------------------- original post at bn.ria8.me.uk
মূল লেখাটি: সাফল্যের সঙ্গে ব্লগিং করতে চাইলে
আজকে কোলকাতা বিমানবন্দরে কি হয়েছে পড়ে দেখুন
আমি রিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 362 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনের সব ভুল, যদি ফুল হয়ে যায়... জীবনের সব কালো, যদি আলো হয়ে যায়...
অনেক অনেক ধন্যবাদ তথবহুল টিউন করার জন্য। যেগুলো নিষেধ করেছেন আমি তার সবগুলোই একাধারে করি। আগে Microsoft Office এ লিখে তারপর ব্লগে কপি পেষ্ট করতাম। এখন আর সেই সময় হয়ে উঠে না।