ব্যক্তিগত দুটো কথা বলেই শুরু করি--
আমার আব্বু সৌদি আরব থাকতেন। প্রায় ১ বছর আগে তিনি হার্ট এ্যাটাক করেন, চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনার প্রায় ১০ দিন পরেই হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করেন। এখন অবশ্য বাংলাদেশেই আছেন। মোটামুটি ভালোই আছেন। চিকিৎসা চলছে।
আজ সকালে আমার এক আন্টি ব্রেইন স্ট্রোক করে। (আমার আব্বু আর আন্টির জন্য সকলে দোয়া করবেন)। সেখানে গিয়ে দেখলাম হাজার জনের হাজার রকম মন্তব্য। তখন আমি উপলব্ধি করলাম- স্ট্রোক সম্পর্কে আমাদের দেশের লোক্জন এখনো পুরোপুরি সচেতন নয়, আর তেমন কোন ধারনাও নেই।
-----------------------------------------------------------------------------
তাই আজকে "ব্রেইন স্ট্রোক" নিয়ে এই টিউনটি লিখতে বসলাম।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ঈষর্ণীয় উন্নতির ফলেও কিছু কিছু রোগ আজ ও বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে যাচ্ছে। সেই সমস্ত ভয়বহ রোগের মধে্য একটি হল স্ট্রোক (stroke)।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় স্ট্রোক এর অর্থ হল *প্রকট স্নায়ুরোগ*। স্ট্রোক বলতে অনেকেই হার্ট এ্যাটাক মনে করে থাকেন। কিন্তু আসলে তা নয়। স্ট্রোক মানে ব্রেইন স্ট্রোক। এটা মস্তিস্কের এক ভয়াবহ সমস্যা।
মস্তিষ্কের কোষগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মস্তিষ্কই পুরো দেহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং গ্লুকোজের সরবরাহ পায়। কোন কারণে এই সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে সে অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটিই ব্রেইন স্ট্রোক নামে পরিচিত।
স্ট্রোকের কারণে শরীরের কোন একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঐ অংশ শরীরের যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে চালিত করত তা অবশ হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কের ডান অংশ শরীরের বাম অংশকে পরিচালিত করে, আর বাম অংশ শরীরের ডান অংশকে পরিচালিত করে। কাজেই স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরের বিপরীত অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। যদি শরীরের এক অংশ অচল হয়ে যায় তখন তাকে হেমিপ্লেজিয়া(hemiplegia) বলে। আর যখন এক অংশ অবশ হয়ে যায় তখন তাকে হেমিপেরেসিস(hemiparesis) বলে।
প্রকারঃ
স্ট্রোক মোটামুটি দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
১। ইসচেমিক(ischemic):
এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোন এক অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
২। হেমোরোজিক(hemorragic):
এক্ষেত্রে রক্তনালি ফেটে গিয়ে রক্ত মস্তিস্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং মস্তিস্কের উপরে চাপ সৃষ্টি করে। এতে মস্তিস্ক তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
উভয় ধরনের স্ট্রোকই মারত্তক। তবে তুলনামূলকভাবে হেমোরোজিক স্ট্রোকে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশী।
স্ট্রোক কাদের হয় ঃ
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো বিশ্বাস করে ব্রেইন স্ট্রোক সাধারন বয়স্কদের হয়ে থাকে, আর মহিলাদের তুলনায় পুরুষের বেশী হয়ে থাকে।
কিন্তু তাদের এই ধারনা সম্পূর্ণ ভূল। স্ট্রোক নারী-পুরুষ যে কারোই হতে পারে। আরে অল্প বয়সে স্ট্রোক হওয়া ও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কিছুদিন আগে আব্বুকে যে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম সেখানে দেখলাম প্রায় ১৫-১৬ বছরের একটা ছেলে বেডে শুয়ে আছে। তার চিকিৎসা চলছে। পরে ডাক্তারের কাছ থেকে জানতে পারলাম তার ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে।
লক্ষণসমূহঃ
দু’ধরনের স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। মস্তিষ্কের কোন এলাকায় রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলো, কতটা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হল ইত্যাদি বিষয়ের ওপর লক্ষণগুলো পরিবর্তিত হয়। যে কোন ধরনের স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই দ্রুত চিকিৎসককে দেখানো উচিত। দেরি করলে নতুন নতুন লক্ষণ দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে সেটি সারিয়ে তোলা কঠিন হতে পারে।
স্ট্রোকের কারণঃ
এই ব্যপারটায় আমাদের সবচাইতে বেশী সচেতন হওয়া জরুরী। স্ট্রোক ও হৃদরোগ(heart attack) দুটো আলাদা হলেও কারনগুলো প্রায়ই একই।
করণীয়ঃ
স্ট্রোক হয়েছে কিনা বোঝার সাধারণত জন্য যেসব পরীক্ষা করা হয়:
চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা:
চিকিৎসা শেষ করে রোগীকে বাসায় নিয়ে আসার সময় ডাক্তারকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করা জরুরী।
১। কোন ধরনের খাবার-দাবার রোগীর জন্য উপযোগী?
২। ওষুধপত্র কতদিন খেতে হবে?
৩. কী ধরনের কাজ করা যাবে অথবা যাবে না।
৪. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে কি?
৫. অন্য কোনো চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন আছে কি?
৬. কোনো কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে কী করা উচিত?
৭. রাতে ঘুম না এলে ঘুমের ওষুধ খাওয়া যাবে কি না?
৮. দ্বিতীয়বার স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বা ঝুঁকি কতটুকু?
৯। স্বাভাবিক জীবনযাপন কি করা যাবে?
১০। স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কি কি করতে হবে?
১১। কতদিন পর আবার যোগাযোগ করতে হবে?
আমাদের সকলকে অন্তত এই সাধারন জিনিসগুলো মাথায় রাখতে হবে। তাতে অন্তত একটু সচেতনার সাথে রোগির পরিচর্যা কিংবা রোগিকে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে সহযোগিতা করতে পারবো।
আরেকটা কথা, টেকটিউনস প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট। তাই প্রযুক্তি ব্যতিত অন্য কোন আলোচনা এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। ফেসবুকে মোটামুটি সমসাময়িক ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার চেস্টা করি। আপনি চাইলে আসতে পারেন। এই যে এখানে আমি
-----ধন্যবাদ----
আমি LIMON। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 17 টি টিউন ও 81 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভালো বলেছেন । পরে কিছু জানতে পারলাম ।