রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী আমের পরিচিতি ও বিবরণ সহ ছবিব্লগ।

ওয়েলকাম টু দ্যা হেভেন অফ ম্যাংগোজ। আমের রাজ্য রাজশাহীতে স্বাগতম। আম খেতে কার না ভাল লাগে কিন্তু আমটা যদি রাজশাহীর হয় তাহলে তো আর কোন কথায় থাকেনা। অনেকে আম খান কিন্তু আমের প্রকৃত নাম জানেন না আবার নাম জানলেও দেখতে কেমন সেটা জানেন না ফলে বিক্রেতা আপনাকে যা ধরিয়ে দেয় সেটাই নিয়ে বাড়ি আসেন। দোকানী বলে অনেক মিষ্টি হবে কিন্তু খাবার সময় আর মুখে তুলতে পারেন না। আমি চেষ্টা করব কিছু জনপ্রিয় এবং কিছু দুর্লভ আমের ছবি ও সামান্য বর্ণনা দিতে। তাই আমার এই পোষ্টের অবতারণা।

১। গোপাল ভোগঃ
মধুমাসের শুরুতেই যে আমটি আপনারা খেতে পাবেন সেটা হল গোপাল ভোগ। এর আর কি বিবরণ দিব আসলে গাছপাকা যে খেয়েছে সেই জানে এই আমের কি স্বাদ। তারপরেও বলি, খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, আঁশ বিহীন, আটি ছোট। সাইজ মাঝারি, কেজিতে ৫টা থেকে ৬টা ধরবে। চোখ বন্ধ করে এই আম কিনতে পারেন (যদি অরিজিনাল হয়) অমৃতের স্বাদ পাবেন গ্যারান্টি!

২। ক্ষীরশাপাতিঃ

এই আমটিও প্রায় গোপাল ভোগের মতই তবে সাইজে বড়। অত্যন্ত মিষ্টি আঁশহীন। যখন আমটি পাকার কাছাকাছি(ডাকর) থাকবে তখন এটি কাঁচা খেতে দারুন।

৩। মিয়ার চারাঃ

আমটির নাম মিয়ার চারা কেন জানিনা। তবে নিশ্চয় কন মিয়াঁ সাহেবের অনেক পছন্দের আম ছিল। এটি পাকে প্রায় গোপাল ভোগের সাথে সাথেই। সাইজে মাঝারি। খুবই মিস্টি, একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করবে। এটি আমার পছন্দের একটি আম।

৪। লখনাঃ

লখনা একটি হাইব্রিড জাতীয় আম। অনেক বড় হয়। গাছে প্রচুর ধরে। দেখতে অনেক সুন্দর, পাকলে ঈষৎ সোনালী বর্ণ ধারন করে কিন্তু স্বাদ পেপের মত। দাম তুলনামুলক কিছুটা কম। ছোট গাছের আম কম মিস্টি, বয়স্ক গাছের আম দারুন । এর কিছু গুন আছে এই আম পাকার পরেও ৭-৯ দিন ভাল থাকে, বিদেশিরা এই জাতের আম খুব পছন্দ করে ।

৫। ফজলিঃ

রাজশাহীর গর্ব! বহুল আলোচিত আম। যেমন তার সাইজ তেমন তার স্বাদ। আমটা একটু নামলা (দীর্ঘও সময়ের) এটি কাঁচা খেতে যেমন মজা তেমনি পাকা খেতেও। কাঁচা আম কেটে লবন মরিচ (বাদ দেন রাঁধুনি কাসুন্দি) দিয়ে মেখে কলা পাতার উপর রেখে বাগানে বসে না খেলে কোন মজাই পাওয়া যায় না।

৬। আশ্বিনাঃ

এই আম আশ্বিন মাস পর্যন্ত গাছে থাকে তাই এর নাম আশ্বিনা। আকারে বেশ বড়, অনেক সময় ফজলির কাছাকাছি চলে যায়। এই আম নিয়ে স্থানীয় একটা ছড়া আছে,
আশ্বিনা রে আশ্বিনা গাছ তলাতে যাস ন্যা,
কাঁচাতে খাইস ন্যা, পাকাতে পাইস ন্যা।
এই আম কাঁচাতে ভয়ংকর টক, কিন্তু পাকলে সেরকমই মিষ্টি ও সুস্বাদু।

৭। দুধসরঃ

এই আম দেখতে অনেক ফর্শা ( অনেকটা বিদেশীদের মত) তাই এর নাম দুধসর। খেতে বেশ ভালই। তবে কাঁচাতে খুব টক কিন্তু পাকলে ব্যপক মিষ্টি।

৮। ফনিয়ার চারাঃ

এই আমটা লম্বাটে গড়নের। খুব সুন্দর সুগন্ধ যুক্ত। খেতে অত্যন্ত মিষ্টি। খোসা পাতলা।

 

৯। জালিবান্ধাঃ

এই আম সাইজে বড়। খোসা পাতলা, অতিরিক্ত মিষ্টি না। তবে স্বাদটা ভাল।

১০। কাঁচামিঠাঃ

নামটা পড়েই বুঝতে পারছেন আমটা কেমন হতে পারে। কাঁচা অবস্থায় খেতে মিষ্টি। কাঁচাতে মিষ্টি তার মানে এই নয় যে পাকলে এটা টক হবে, পাকলেও বেশ সুস্বাদু। আপনার ঘরওয়ালি যদি একবার কাঁচা এই আম খায় তাহলে রোজ আপনাকে কিনতে বলবে এ ব্যপারে নিশ্চিত থাকুন। কিন্তু আপনাদের দুর্ভাগ্য এই আম ফরমালিন ছাড়া ঢাকাতে পাওয়ার সম্ভবনা খুব কম।

১১। কুয়া পাহাড়িঃ

এই আম নিশ্চয় আবিষ্কার হয়েছে কুয়ার পাড় হতে। আমটা লম্বা নিচের দিকে ঈষৎ বাঁকা। খেতে মিষ্টি, সামান্য আঁশযুক্ত।

১২। কুমড়া জালিঃ

ছোট কুমড়ার(তাই বলে আবার মিষ্টি কুমড়া না) মত এর সাইজ বলে এর নাম কুমড়াজালি। দেখে বুঝতেই পারবেন না যে, এটি আম না কুমড়া । খেতে অনেকটা জেলির মত। মনে হয় দানাদার টাইপের। স্বাদটা আলাদা ধরনের। খুব দুর্লভ।

১৩। মোহন ভোগঃ

এটা ভোগ সিরিজের আরও একটি আম। আটি ছোট, বেশ বড় সাইজের, খেতে মিষ্টি, অনেকটা গোপালভোগের মত।

১৪। পাটনায় গোপালভোগঃ

এটি হাইব্রিড টাইপের গোপালভোগ। সাইজটা গোপালভোগের চেয়ে বড়। কোয়ালিটির দিক দিয়ে গোপালভোগের চেয়ে কিছুটা কম। কেনার সময় গোলমাল পাকানোর সম্ভবনা আছে এই দুই আমের মধ্যে। যেটা আসল গোপালভোগ সেটা আকারে পাটনায়ের চেয়ে ছোট।

১৫। রানী প্রসাদীঃ

এই আমের লোকাল নাম 'রানীপছন্দ', জানিনা কোন রানীর পছন্দের আম ছিল এটা! যেহেতু আমটি রানীর প্রিয় তালিকায় ছিল সুতরাং আমটি যেমন তেমন আম নয়। অনেক মিষ্টি, সাইজে লম্বা, খোসা পাতলা। অনায়াসে আপনার অন্দর মহলের রানীকে নিয়ে যেয়ে খাওয়াতে পারেন।

১৬। ভাদ্রিঃ

এই আমটা অনেক লম্বা অনেক! ঈষৎ কৃষ্ণ বর্ণের, খোসা মোটা, খেতে গতানুগতিক ভাবে মিষ্টি।

১৭। রাজভোগঃ

রানীর ট্রেডমার্ক আম যদি থাকে তাহলে রাজা কি দোষ করল! হ্যাঁ এটা রাজার আম। রানীর আম যেমন কোমল তেমনি রাজার আম রাজার মতই শক্তিশালী। সাইজে গোল, বেশ বড় বড় হয়, খেতে প্রচণ্ড মিষ্টি কিন্তু শক্ত দাঁত থাকা আবশ্যক। বুজছেন তার মানে খাওয়ার পার দাঁত খেলান করা লাগবে, বেশ আঁশ যুক্ত।

১৮। ল্যাংড়াঃ

দ্যা কিং অফ ম্যাংগোজ। একজন সফল রাজার যে সব গুণাবলী থাকা দরকার তার সবগুলিই আছে এর। স্বাদে ঘ্রাণে অনন্য। যে আমের তুলনা আর কোন আমের সাথে করাই যায় না। নাম ল্যাংড়া হলেও আমটা মানুষের মত ল্যাংড়া নয়। আটি ছোট ও পাতলা, খোসা খুব পাতলা, রসালো, গায়ে শুধুই মাংস। স্বাদ অসাধারন।

উপরের সকল ছবির কপিরাইট আমার। আমার কমা মোবাইলে অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করেছি।

পূর্বে এখানে প্রকাশিত।

Level 2

আমি সজীব আমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 95 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি সজীব আহমেদ। পেশায় বর্তমানে বিদ্যুৎ শ্রমিক। ডুয়েট থেকে ইইই তে গ্রাজুয়েশন করেছিলাম।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

সুন্দর পোস্ট। অন্য জেলার মানুষের জন্য বেশ কাজের।
আমি মেড ইন রাজশাহী….মোটামুটি সবগুলাই টেস্ট করা হয়েছে।

আমি ও রাজশাহী বাসী । সব আম খেয়েসি

লোভ লাগিয়ে দিলেন তো! 😛 😀

Level 0

আম গুলো খুব লোভনীয়।আমার জন্য ২/৪ পিচ পাঠাই দিয়েন ভাই ঃপি

Thank you very much for picture and discribtion of Mango.

Level 0

রাজশাহীর ভাইরা খালি আমের ছবি দেখাইলেই হবে আম খাওয়াতে হবে না?

Level 0

@writter. Ammer bari mor daoat. Moi kinto beraite jaimo. Bossso Monu? Amar barite Kadal pakse. Amme Vabire Loiya Aiya poren. Rasta fok-foikka. Rajshahi to Momisingh Direct Bus service.

খুব ভাল একটা পোস্ট। বিশেষ করে এই আমের সময় এ আমের পোস্ট।