মুদ্রণ শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করতে বাজারে এসেছে ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি প্রিন্টার। প্রথাগত কালি দিয়ে মুদ্রণ নয়। মুদ্রণ জগৎকে আমূল বদলে দিতে আস্ত ঘর-বাড়ি, নৈমিত্তিক ব্যবহারের যন্ত্রপাতি, খাবার এমনকি মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রিন্ট করা যাবে। খেলনা নয়, বাস্তব জীবনের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হবে এসব।
গত কয়েক বছর ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার ব্যবহার করে মুদ্রণ ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই বাজারে নানা ধরনের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার আসতে শুরু করেছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, ত্রিমাত্রিক মুদ্রণে ঠিক কী করা যাবে এ নিয়ে অনেকের কৌতুহল রয়েছে। কী হবে এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার দিয়ে?
সরাসরি ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে মুদ্রিত হয়ে বের হবে আপনার বাড়ি। ব্যাপারটি কাল্পনিক মনে হলেও অদূর ভবিষ্যতে আপনি চাইলে দরকারি আসবাবপত্রসহ আপনার পছন্দমাফিক বাড়িটি প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। তবে এজন্য প্রচলিত কালির বদলে ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপাদান ব্যবহার করা হবে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের সাহায্যে কাঠামো তৈরির সঠিক পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনই একজন গবেষক হল্যান্ডভিত্তিক স্থাপত্যবিদ জানজ্যাপ রুইজসিনারস। যার অনুপ্রেরণার মূলে পৃথিবীর প্রাকৃতিক কাঠামো। বিশ্বের প্রথম ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে মুদ্রিত বিল্ডিং তৈরির কাছাকাছি পেঁৗছে গেছেন তিনি। তিনি এখন ১২ হাজার বর্গফুটের মোবিয়াস স্ট্রিপের মতো প্যাঁচবিশিষ্ট ভবন প্রিন্টিংয়ে কাজ করছেন। আর এই বিল্ডিং মুদ্রণে ব্যবহার করা হবে আরেক গবেষক এরিখো ডিনি তৈরিকৃত দৈত্যাকার একটি ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার। এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে কালির বদলে থাকবে বালি এবং সিমেন্ট। এই দুটি উপকরণ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ২০x২০ ফুটের মার্বেলসদৃশ কাঠামো তৈরি করা যাবে। পুরো বাড়িটি মুদ্রণ করতে সময়ে লাগবে কম করে হলেও আরও ছয় মাস। আর মুদ্রণে ব্যয় হবে আনুমানিক ৬৪ লাখ ডলার। ধারণা করা হচ্ছে এই বিল্ডিংটি ব্রাজিলের কোনো এক স্থানে নির্মাণ করা হতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন 'ওয়েস্ট-ফ্যাব' নামের বিশেষ ধরনের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার। এই প্রিন্টারের সাহায্যে এমন কিছু টিস্যু তৈরি করা সম্ভব, যা মানুষের মস্তিষ্কের খুলির ক্ষয়ে যাওয়া কিংবা ভেঙে যাওয়া অংশ পুনরায় নির্মাণে সাহায্য করতে পারবে। মস্তিষ্কের ৭৫ শতাংশ জায়গায় এই ধরনের ত্রিমাত্রিক টিস্যু ব্যবহার উপযোগী। সম্প্রতি হুবহু এই পদ্ধতিতেই নির্মিত টিস্যু ব্যবহার করে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুতর আহত রোগীকে। মূলত এই রোগীর খুলির অনুরূপ খুলি বানানোর জন্য প্রথমে তার খুলির আঘাত লাগেনি এমন অংশ স্ক্যান করা হয়। এরপর একটি ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার হুবহু এই আকৃতির খুলি তৈরি করে দেয়। তবে প্রিন্টারের কালির বদলে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে থার্মোপ্লাস্টিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পলিমার পলি ইথার কিটোন কিটোন। এর আগে ২০১১ সালের জুনে ৮৩ বছর বয়স্ক একজন মহিলার চোয়াল মেরামত করার জন্যও ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। এই চোয়াল প্রতিস্থাপনের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেই মহিলা স্বাভাবিক মানুষের মতো চোয়াল ফিরে পান।
প্রিন্টার আপনাকে পছন্দের খাবার মুদ্রণ করে দিতে পারবে। এভাবে চাইলে আপনি নিজেই আপনার দরকারি পুষ্টিগুণ সঠিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন ধরনের ফ্যাক্টরি। যেখানে প্রস্তুত করা যাবে চকোলেট থেকে শুরু করে তরল চকোলেট, তরল চিজ এবং বিস্কুট, কেক এবং হ্যাম বার্গারের মতো কয়েক রকমের খাবার। মূলত খাবার তৈরির জন্য প্রতিটি খাবারের উচ্চতা, ওজন, ক্যালরিফিক মূল্যমান যাচাই করে নেওয়া হবে। এরপর এসব বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার রকমারি চকোলেটজাতীয় খাবার মুদ্রণ করতে পারবে।
পোশাক বানাতে দর্জির দোকানে যাওয়ার দিন হয়তো দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। নিউইয়র্কভিত্তিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিটনিটি স্টুডিও তৈরি করেছে বিশ্বের প্রথম ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির প্রিন্টারে মুদ্রিত পোশাক ডিটা'স গাউন। ডিজাইনার মাইকেল স্মিডিটের নকশা করা এসব পোশাক সম্প্রতি এক ফ্যাশন শোতে দারুণ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। আসল পোশাকের সঙ্গে এই পোশাকের মূল পার্থক্য এর বিভিন্ন জোড়া লাগানো অংশ। এই পোশাকে সাবলীলভাবে পরিধান যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য এতে রাখা হয়েছে কম করে হলেও তিন হাজার জোড়া অংশ। আর সুতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নাইলন পলিমার।
আমি একাকী নির্জন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 25 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভালো লাগে প্রযুক্তিকে জানতে। প্রযুক্তি ভাবনা জানাতে। পড়াশুনা টেক্সলাইল ইঞ্জিণিয়ারিং নামের এক মাথা নষ্ট সাবজেক্টে।
nice