“ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমেই আমরা আসল ঘটনা জানতে পারবো”- এটা হল কমন কথা। কিন্তু এই ডিএনএ আসলে কী???

একটা মজার সত্য ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক-

হাত বা পায়ের ছাপ, ফেলে যাওয়া ছোরা, এমনকি আধখাওয়া সিগারেটের টুকরোর সূত্র ধরে অপরাধী শনাক্ত করার ঢের নজির রয়েছে। কিন্তু একটি জোঁক থেকে অপরাধীকে ধরা! সে কি যে সে কথা! সাত বছর আগে ডাকাতি হওয়া তাসমানিয়ার একটি গ্রাম থেকে পুলিশ জোঁকটি সংগ্রহ করে। নাদুসনুদুস জোঁকটির পেট চিরে বের করা হয় রক্ত, তারপর করা হয় ডিএনএ পরীক্ষা। ব্যস, মিলে যায় একজনের সঙ্গে। সেই লোকও ছিল জেলেই। পরে অবশ্য সে স্বীকার করেছে, ডাকাতির সময় একটি জোঁক তাকে কামড়েছিলো!!!! 

এত সুন্দর এই মহা বিশ্বের একটি বস্তু মলিকিউল বা পার্টিকেল হল ডিএনএ। আমরা প্রায়ই সংবাদপত্রে ডিএনএ নিয়ে নানা সংবাদ শিরোনাম দেখি। কিন্তু খুব বেশি মানুষই ডিএনএ কী তা জানার জন্য মাথা ঘামাই না। অথচ মাথা থেকে পা পর্যন্ত আমাদের শরীরের সর্বত্র রয়েছে ডিএনএর সদর্প কারসাজি। কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি কী করে আমরা পেলাম আমাদের নাক, চোখ, কান, আঙুল ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ? কীভাবে ডিএনএ এসব এনে দিল? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের আগে জানা দরকার ডিএনএ সম্পর্কে কিছু সরল তথ্য। চলুন সামান্য কিছু জেনে নেয়া যাক-

ডিএনএ হচ্ছে জেনেটিক কোডের সংক্ষিপ্ত নাম। এর পুরো পুরো নাম deoxyriboneucleic acid. এটি মূলত অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, এবং হাইড্রোজেন এর দ্বারা গঠিত মাইক্রোমলিকিউল। এটি রাসায়নিক তথ্যের অনুবর্তী ফিতার মতো বস্তু। আমাদের দেহকোষ বা সেলের নিউক্লিয়াসে এর অবস্থান। নিউক্লিক এসিড নামে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু বা মলিকিউল দিয়ে ডিএনএ তৈরি। আমাদের ডিএনএর এসব ক্ষুদ্রতর অণু একটি সুনির্দিষ্ট ধারাক্রমে সাজানো থাকে, ঠিক যেমনটি সাজানো থাকে একটি বাক্যে একের পর এক অক্ষর।

যখন আমাদের শরীরে নতুন কোষের জন্ম হয়, পুরনো কোষের ডিএনএ নতুন কোষের ডিএনএ গঠন নির্দেশ করে। এমনকি একটি সরলতম প্রাণীতেও ডিএনএর নিউক্লিক এসিডগুলো এলোমেলো অনুক্রমে থাকে। একটি বানরকে কম্পিউটারের কি বোর্ডে বসিয়ে দিলে যেমন এলোমেলোভাবে কি চেপে অক্ষর বসাবে ঠিক তেমনি।

কেউই এমনটি দেখাতে পারেননি যে হঠাৎ করেই ডিএনএ অস্তিত্ব পেয়েছে। ডিএনএ পেতে প্রয়োজন ডিএনএ। অন্য কথায়, আরো ডিএনএ তৈরির জন্য আগে থেকেই ডিএনএর উপস্থিতি থাকতে হবে। হ্যাঁ, এ কথা সত্যি, ডিএনএ যে বিশেষ কোনো অণুর জন্ম দেয় তা হঠাৎ করেই জন্ম হতে পারে। কিন্তু কখনোই এটা দেখানো সম্ভব হয়নি এই অণুবিশেষ যে ডিএনএ তৈরি করে তা হঠাৎ করে অস্তিত্ব পায়নি অণুগুলো পাশাপাশি এসে। এই ডিএনএই হচ্ছে জেনেটিক কোড।

যখন বাবা মায়ের ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর সংমিশ্রণ হয় , তখন দুটোর মিশ্রণে বাচ্চার প্রথম ডি এন এ তৈরি হয়, যা থেকে ধীরে ধীরে কোষ বিভাজনের সময় আরও ডি এন এ তৈরি হতে থাকে, ডি এন এ যে কোন সেল এর নিউক্লিয়াস এর মাঝে কন্ডেন্সেড এবং সামান্য পরিমাণে মাইটোকন্ড্রিয়া এবং ক্লোরোপ্লাস্ট এর মাঝে থাকে। যে কোন জীবের প্রায় সকল ডি এন এ একই হয়ে থাকে। যেমন যেকোনো পদার্থের সব এটম এক হয়ে থাকে। আমরা যখন মায়ের পেটে বেড়ে উঠতে শুরু করি, তার শুরু এক আউন্সেরও কম ওজনের একটি কোষ থেকে। পরে ক্রমান্বয়ে গঠিত হয় আমাদের বাহু, হাত, পা, পায়ের পাতা, মগজ, গুর্দা, ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী-যতক্ষণ না আমরা পরিপূর্ণ দেহরূপ পাই। একটি একক কোষ থেকে বেড়ে বহু কোষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এ কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু একটি কোষ থেকে কোটি কোটি কোষ তৈরির মালমসলা আসে কোত্থেকে, যেখানে নতুন কোষের আকার শুরুর কোষটির মতোই। শুরুতে যেখানে দেহের ওজন ছিল এক আউন্সেরও কম, সেখানে পূর্ণদেহী মানুষ হয় এর চেয়ে বহু গুণ বেশি ওজনের। নতুন কোষের মালমসলা আসে গর্ভবতী মা যা খান তা থেকে। খাবার হজম হওয়ার পর তা ভেঙে জন্ম নেয় মৌলিক কিছু অ্যামাইনো এসিড। বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড তখন নতুন করে একটি অনুক্রমে পাশাপাশি বসে তৈরি করে বিভিন্ন টিস্যু বা অর্গান। এই অ্যামাইনো এসিডের অনুক্রম কী হবে তা নির্ধারিত হয় ডিএনএর অনুক্রমের মাধ্যমে।

একটি মুরগির ডিমের ডিএনএতে অণুর অনুক্রম মুরগির ডিমের খাদ্যবস্তুকে পরিণত করে গাঢ় ছোট ছোট গুটিতে। এক ব্যক্তি থেকে আরেক বক্তির ডিএনএর অনুক্রম ভিন্ন। এক প্রজাতির থেকে আরেক প্রজাতির ডিএনএ ভিন্ন। বিষয়টি  বোঝার জন্য একটি লাইব্রেরির কথা ভাবুন, যে লাইব্রেরিতে সব বই-ই একই ভাষার। কিন্তু বিভিন্ন বই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। সব বইয়ে আছে একই বর্ণমালা। কিন্তু অক্ষরগুলো সাজানো বিভিন্ন অনুক্রমে বিভিন্ন বইয়ে। এই অনুক্রমই একটি বইকে করেছে অন্যটি থেকে আলাদা, সে জন্য একটা উপন্যাসকে আমরা আলাদা করতে পারছি একটি বিজ্ঞানের বই থেকে। তা সত্ত্বেও জীববিজ্ঞানের একটা মজার বিষয় হচ্ছে প্রজনন কোষগুলো বাদে আমাদের দেহের সব কোষে রয়েছে গোটা দেহে পূর্ণ তথ্য।

ডি এন এ কে বংশ বিস্তারের ব্লু প্রিন্ট বলা যেতে পারে, ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিশ্রণের সময় শুক্রাণুর  মাইটোকন্ড্রিয়াল ডি এন এ বাদ যায়, এবং শুধু মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডি এন এ  স্থান পায়। তবে নিউক্লিয়ার ডি এন এ অপরিবর্তিত থাকে। আর এভাবে পরীক্ষা করেই পূর্ব পুরুষের সাথে আপনার পরিচয় মেলাতে পারেন!!!!

একেকটি ডি এন এ যেন একটি একটি ছোট অন্তর, যা সবকিছু পরিচালনা করে, ধরুন আপনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। আপনার একটি রক্তকণিকায় ২৮০ মিলিওন হিমোগ্লোবিন এটম রয়েছে জাত প্রত্যেকটি আট টি অক্সিজেন এর সাথে রি-একশন করে। এভাবে আপনার শরীরে প্রতিটি নিঃশ্বাসে ১১ ০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ (১০^২১) অক্সিজেন প্রবেশ করছে!!!!!  আর এর সবকিছুই পরিচালিত হচ্ছে ডি এন এর মাধ্যমে, এমনকি আপনার চিন্তাশক্তি ও আপনার ডি এন এ দ্বারা পরিচালিত।

আরো অনেক কিছু আছে এই DNA সম্পর্কে। বিস্তারিত বললে আপনার ও মাথা নস্ট হবে, আর আমারতো হবেই!!!

যাইহোক, আজকের মতো এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ!

ফেসবুকেতো আমি আছিই. আপনার দাওয়াত রইলো ফেসবুকে!

http://www.facebook.com/thelimonkhan

Level 0

আমি LIMON। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 17 টি টিউন ও 81 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

একজন মেডিকাল কলেজের স্টুডেন্টের লেখা মনে হচ্ছে! 😉

    Level 0

    @Iron maiden: মেডিকেলের ছাত্ররাই যদি সব জেনে ফেলে তাহলে আমরা কী জানবো!!!!!
    ডি এন এ সম্পর্কে জানার অনেক ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছার উৎপত্তি ঘটে- যখনই টিভিতে বলতে শুনি ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এই করবে, সেই করবে….. তাই বিগত কয়েকদিন ধরে নেট থেকে এই ব্যপারে অনেক ডাটা সংগ্রহ করি। তারপর একটু জানার চেস্টা করি। যতগুলো ডাটা সংগ্রহ করেছি, তার summary বলা যেতে পারে- আমার এই পোস্টটাকে!

যাদের ম্যাট্রিক বা ইন্টারে বায়োলজী ছিল, তারাও এই সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারে।

    @জাকারিয়া বাবু:হায় হায় তাহলে তো আমারো জানার কথা,কি হবে? :-C

      Level 0

      @Iron maiden: আর জানা লাগবে না। অপারেশনে নেমে যান। জেনে যাবেন :p

    Level 0

    @জাকারিয়া বাবু: তা অবশ্য ঠিক। আমার SSC তে বায়োলজী ছিল। কিন্তু HSC তে একটা বিশেষ কারনে গ্রুপ পরিবর্তন করে ফেলতে হয়, যদিও আমার সাইন্সের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল এমনকি SSC এর রেজাল্ট ও খুব ভালো ছিল। যাই হোক বায়োলজী এখন নাই দেখে, তাই বলে জানার ইচ্ছাতো আর বন্ধ করে রাখা যায় না। টিচার হিসেবে ইন্টারনেট তো আছেই! আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।

      @LIMON: আমারও ভাই আপনার মত অবস্থা। এস এস সি-তে তো biology ছিলোই, কিন্তু ইন্টারে সায়েন্স নেয়া স্বত্ত্বেও চতুর্থ সাবজেক্ট বায়োলজি না নিয়ে statistics নিই। মেইন সাবজেক্ট ছিল ফিজিক্স ও হাইয়ার ম্যাথ। প্রথম তিন মাস বায়োলজি ক্লাস করেছি, ভালই লাগছিল, কিন্তু যেহেতু মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা নেই তাছাড়া অন্যান্য আরো বেশ কিছু কারণে সাবজেক্ট পরিবর্তন করতে বাধ্য হই। কিন্তু বাস্তব কথা বলতে কি ভাই, এখনোও সায়েন্সের প্রতি যে তীব্র আকর্ষন বোধ করি, তা অন্য কোন বিষয়ে করি না। যেখানেই সায়েন্স সম্পর্কে লিখা পাই গোগ্রাসে গিলতে থাকি। আমার কালেকশনের বেশীর ভাগ বই-ই সায়েন্সের উপর।

      আপনার লিখা ভাল লেগেছে। আমার মতে, প্রত্যেকেরই সায়েন্স জানা উচিত, অন্ততঃ সকলের এ ব্যাপার আগ্রহ থাকা উচিত। আপনি চালিয়ে যান। ধন্যবাদ।

DNA সম্পর্কে অনেক তথ্য পেলাম। বিশেষ করে DNA যে অক্সিজেন, নাইট্টোজেন, হাইড্রোজেন ও কার্বন দিয়ে গঠিত সেটা। ধন্যবাদ লেখককে। কিন্তু একট বিষয় কিন্তু অজানাই রয়ে গেল। আর সেটা হল কিভাবে চিন্হিত করে। আমার DNA টেষ্ট করলে আমার বাবা বা মায়ের DNA সাথে কি মিল পাওয়া যাবে? যা দ্বারা আমাকে চিনা জাবে। লেখককে অনুরোধ করবো, যাতে তিনি বিষয়টা আরেকটু ব্যাখ্যা করেন।