মিগ ২১ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি ষাটের দশকের একটি যুগপৎ যুদ্ধবিমান। এটি পৃথিবীর সর্বাধিক উৎপাদিত এবং বিক্রিত বিমান গুলোর একটি।
মিকোয়ান গুরেভিচ কোম্পানির নকশাকৃত এই বিমান এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর বহু দেশ ব্যবহার করে। এর
ন্যাটো কোডনেম ছিল Fishbed। মিগ২১ একটি সুপারসনিক জেট ফাইটার। এটি আকাশ থেকে মাটিতে এবং আকাশ থেকে আকাশে শত্রু বিমানের সাথে যুদ্ধ করতে বিশেষ পারদর্শী। সুপারসনিক গতি এবং উন্নত ম্যানুভ্যারিটি ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিমান শত্রুর উপর নিমেষে আঘাত হেনে উড়ে জেতে পারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনাম এই বিমান ব্যবহার করে আমেরিকানদের বাঘা বাঘা বিমানকে ভুপাতিত করেছিল। কারগিল যুদ্ধে ভারতীয় পাইলটরা মিগ২১ বিমান দিয়ে পাকিস্তানি
এফ-১৬বিমানকে তাড়া করেছিল। একজন দক্ষ পাইলটের পরিচালনায় এই বিমান এক ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী মারনাস্র। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও অতীতে এই বিমান ব্যবহার করেছে। বর্তমানে আমাদের বিমান বাহিনী মিগ ২১ এর চাইনিজ ভার্সন
এফ-৭ এয়ারগার্ড বিমান ব্যবহার করে।
মিগ২৯ বর্তমান সময়ের অন্যতম ভয়ঙ্কর একটি যুদ্ধবিমান । এটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি ৪র্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যা ১৯৮৩ সালে প্রথম সোভিয়েত বিমানবহরে অন্তর্ভুক্ত হয়।এর ন্যাটো কোডনেম হল ফুল্ক্রাম। মিগ২৯ একটি
মাল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার যা একইসাথে আকাশে ও ভূমিতে হামলার জন্য অত্যন্ত পারদর্শী। এর শক্তিশালী
Klimov RD-33 আফটার বার্নিং টার্বো ফ্যান ইঞ্জিন নিমেষেই বিমানকে সাবসনিক থেকে সুপারসনিক গতিতে নিয়ে যেতে পারে। অত্যাধুনিক কোবরা ম্যানুভ্যারিটি ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিমান শত্রুবিমানের মিসাইলকে ফাঁকি দিয়ে পুনরায় পাল্টা আক্রমন চালাতে পারে। সোভিয়েতরা এই বিমানকে তাদের স্টেট ওফ আর্ট হিসেবে পরিচয় দেয়। এটি দীর্ঘদিন পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ান দেশ গুলোর ফিয়ার ফ্যাক্টর ছিল। মিগ২৯ বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিমান যা পৃথিবীর বিভিন্ন বিমানবাহিনীতে অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে বর্তমানে ৮টি মিগ২৯ বিমান আছে।
F-16এফ ১৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি
৪র্থ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার। মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেনারেল ডাইনামিকস এই বিমানের নকশা করে। বর্তমানে লকহিড মারটিন কোম্পানি এই বিমান উৎপাদন করছে। মিগ-২৯ বিমানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মূলত এই বিমান নির্মাণ করা হয়। অফিসিয়ালি এই বিমানকে ফাইটিং ফ্যালকন বলা হলেও এর ভয়ঙ্কর ধ্বংস ক্ষমতার জন্য পাইলটরা একে ভাইপার বলে থাকে। ১৯৭৮ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে এই বিমান পৃথিবীর বহু দেশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পরিচালন খরচ অন্যান্য বিমান থেকে কম হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিমান বাহিনীর কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। বর্তমানে তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশে এই বিমানের লাইসেন্সড ভার্সন তৈরি করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,পাকিস্তান,তুরস্ক,ইসরায়েল,গ্রীস,ভেনেজুয়েলা,আরব আমিরাত সহ পৃথিবীর আরও অনেক দেশের বিমানবাহিনী এই বিমান ব্যবহার করে।
F-15 Eagle
এফ ১৫ ঈগল আমেরিকার বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান
McDonnell Douglas এবং
Boeing নির্মিত একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। এটি মূলত একটি
এয়ার সুপেরিয়রিটি ফাইটার। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আমেরিকা
F-X program হাতে নেয়। যার উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত মিগ সিরিজের বিমানগুলোকে আকাশযুদ্ধে পরাজিত করার জন্য দক্ষ এবং ক্ষিপ্র বিমান নির্মাণ করা। এরই ফলশ্রুতিতে হেভিওয়েট ফাইটার হিসেবে জন্মলাভ করে এফ১৫ ঈগল এবং লাইটওয়েট ফাইটার হিসেবে এফ-১৬ ফ্যালকন। পাশাপাশি ইউএস নেভির জন্য তৈরি করা হয়
এফ-১৪ টমক্যাট। এফ-১৫ দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট সুপার সনিক বিমান যার সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ২৬৬৫ কিলোমিটার।
উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকা অত্যন্ত সফলভাবে এই বিমান ব্যবহার করে। বর্তমানে আমেরিকা ছাড়াও ইসরায়েল,জাপান ও সৌদি আরবের বিমানবাহিনীতে এই বিমান ব্যবহৃত হয়।
Eurofighter Typhoonইউরোফাইটার টাইফুন একটি অত্যাধুনিক
ডেল্টাউইং মাল্টিরোল ফাইটার। এটি মূলত ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি ও স্পেনের চারটি বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ প্রকল্প। ১৯৮৩ সালে ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি ও স্পেনের অংশগ্রহনে Future European Fighter Aircraft (FEFA) programme গ্রহন করা হয়। কিন্তু পরে ফ্রান্স এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে তারা
Rafale নামে একটি নতুন ফাইটার তৈরি করে। ফ্রান্স এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাকি দেশগুলো তাদের এই প্রকল্প অব্যাহত রাখে। ফলশ্রুতিতে ২০০৩ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে ইউরোফাইটার টাইফুন। এটি দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি অসম্ভব দ্রুতগতির সুপারসনিক সেমি- স্টিলথ ফাইটার।টাইফুনকে
এফ-২২ র্যাপটর এর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাবি করে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।বর্তমানে ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি, স্পেন ছাড়াও সৌদি আরব,অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশের বিমান বাহিনীতে এই বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে।
Saab JAS 39 Gripen
গ্রিপেন সুইডেনের তৈরি ডেল্টা উইং লাইটওয়েট মাল্টিরোল ফাইটার। ১৯৭৯ সালে সুইডেন সরকার একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী বিমান নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করে যা একইসাথে আকাশ যুদ্ধ, ভূমিতে বোমাবর্ষণ ও গোয়েন্দাগিরি করার জন্য বিশেষভাবে পারদর্শী।এটি প্রথম সার্ভিসে আসে ১৯৯৭ সালের পহেলা নভেম্বর।
সুইডিশ এরোস্পেস কোম্পানি (SAAB) নির্মিত সুপারসনিক এই বিমানটির সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২ (২২০৪ কিঃমিঃ/ ঘণ্টা)/ইউরোপিয়ান এবং ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি এই বিমানের পরিচালন ব্যয় তুলনামুলকভাবে কম।বর্তমানে সুইডেন ছাড়াও দক্ষিন আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্রের বিমান বাহিনীতে এই বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে।
Sukhoi Su-27
সুখোই এসইউ-২৭ সোভিয়েত রাশিয়া নির্মিত একটি সুপারসনিক যুদ্ধবিমান। এর
ন্যাটো রিপোরটিং নাম হল
Flanker । ১৯৬৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার
"F-X" program সম্পর্কে জানতে পারে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারা TPFI program গ্রহন করে যার উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার এফ-১৫ এবং এফ-১৬ বিমানগুলোকে আকাশযুদ্ধে প্রতিহত করার জন্য দ্রুতগামী ও শক্তিশালী বিমান নির্মাণ করা। ফলশ্রুতিতে সার্ভিসে আসে মিগ-২৯ এবং এসইউ-২৭ বিমানগুলো। এসইউ-২৭ একটি সুপার ম্যানুভারেবল ডেল্টাউইং বিমান যা অত্যাধুনিক রাডার,সেন্সর এবং ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত। দুটি শক্তিশালী
Saturn/Lyulka AL-31Fturbofans ইঞ্জিনবিশিষ্ট এই বিমানের সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২.৩৫ বা ২৫০০ কিমি./ঘণ্টা। ১৯৮৪ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিমানবাহিনী এই বিমান ব্যবহার করে। বর্তমানে রাশিয়া,গণচীন, এঙ্গোলা, বেলারুশ,ইথিওপিয়া, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ইউক্রেনসহ পৃথিবীর বহু দেশের বিমানবাহিনী এই বিমান ব্যবহার করছে।
Dassault Rafale
রাফালে ফ্রান্সের
Dassault Aviation নির্মিত একটি ডেল্টাউইং মাল্টিরোল ফাইটার। ১৯৭০ সালে ফ্রান্স সরকার তাদের বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহন করে। তারা ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি ও স্পেনের সাথে ১৯৮৩ সালে ইউরোফাইটার প্রকল্পে যোগ দেয়। কিন্তু এই প্রকল্প আশানুরূপ না হওয়ায় পরবর্তীতে ফ্রান্স প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসে এবং নিজস্ব প্রযুক্তি ও ডিজাইনে একটি কার্যকর মাল্টিরোল ফাইটার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করে। ফলশ্রুতিতে ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর সার্ভিসে আসে রাফালে বিমানটি। রাফালে বিমানটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রাডার,সেন্সর সিস্টেম, কম্পিউটার সংযোজিত হয়েছে । দুটি
Snecma M88 ইঞ্জিনসংবলিত এই বিমানটি অত্যন্ত দ্রুতগামী। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ম্যাক ১.৮ বা ২১৩০ কিমি./ ঘণ্টা। এটি দিবারাত্রি যুদ্ধের উপযোগী একটি অত্যন্ত কার্যকর বিমান। ফ্রান্সের নৌ ও বিমান বাহিনীতে বর্তমানে এই বিমান ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ভারতীয় বিমান বহরে এই বিমান যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Chengdu J-10
চেংডু জে-১০ গণচীনের তৈরি একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। চীনের
Chengdu Aircraft Industry Group (CAC) নির্মিত এই বিমানটি সকল আবহাওয়ায় ব্যবহার উপযোগী একটি সুপারসনিক বিমান। পশ্চিমা বিশ্বে এই বিমানটি Vigorous Dragon নামে পরিচিত। বর্তমানে রাশিয়ান
Saturn AL-31 ইঞ্জিনে পরিচালিত এই ফাইটারের পরবর্তীতে ভার্সন গুলোতে চীনের নিজস্ব
WS-10A (WoShan-10A) Taihang ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। চীনা বিমানবাহিনীর অন্যতম একটি স্তম্ভ হিসেবে এই বিমানটি পরিচিত। এর সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২.২ যার ফলে এটি নিমেষেই সুপারসনিক স্পিডে শত্রুবিমানকে ধাওয়া করতে পারে। চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির রাডার, সেন্সর, ককপিট ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংযোজিত এই বিমানটি অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী। বর্তমানে চীনের বিমানবাহিনীতে ২৬০টির বেশি জে-১০ বিমান আছে। শীঘ্রই পাকিস্তান বিমানবাহিনীতেও (২০১৪-১৫) এই বিমান সংযোজিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Dassault Mirage 2000
মিরেজ ২০০০ ফ্রান্সের
ডাসাল্ট এভিয়েশননির্মিত একটি ৪র্থ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার। এটি একটি হালকা ধরনের বিমান যা ৭০ এর দশকের বিমান
মিরেজ III এর উন্নত সংস্করন হিসেবে সার্ভিসে আসে । ডাসাল্ট এভিয়েশন প্রস্তাবিত মিরেজ২০০০ প্রজেক্টটিকে ফ্রান্স সরকার ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে অনুমোদন করে এবং ১৯৮২ সালে মিরেজ ২০০০ প্রথম সার্ভিসে আসে। মিরেজ২০০০ এর অনেকগুলো আপগ্রেড ভার্সন নির্মিত হয়েছে যেমনঃ
মিরেজ২০০০N এবং মিরেজ২০০০D,
মিরেজ২০০০-৫ ইত্যাদি। একটি
SNECMA-M53 Turbofan ইঞ্জিন সংবলিত এই বিমানটির সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২.২ অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ২৫৩০ কিমি.।এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রাডার,এভিয়নিক, ককপিট ও ক্ষেপনাস্র সজ্জিত একটি বিমান যা একইসাথে এয়ার টু এয়ার কমব্যাট এবং ভূমিতে বোমাবর্ষণের জন্য অত্যন্ত পারদর্শী। বর্তমানে ফ্রান্সের বিমান বাহিনী ছাড়াও ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তাইওয়ান, গ্রীস, মিশর, কাতার, পেরু, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশের বিমান বাহিনী মিরেজ২০০০ বিমানটি সাফল্যের সাথে ব্যবহার করে আসছে।
Joss….post.