রাতভর কাজ করে সকালে ঘুমাতে যান অনেক অপ্রাপ্তি নিয়ে, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। দিনের একটা বড় সময় ঘুমিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম, আবার রাতভর কাজ আর অপ্রাপ্তি নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া। বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের দৈনন্দিন রুটিনটা আসলে এমনই। এই রুটিন থেকে কে কি পায়?
হিসাব টা খুব সোজা, আমদানী নির্ভর আমাদের এই দেশে যে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দরকার পড়ে তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের যোগান দেন আমাদের এই তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা। মাস শেষে একেকজন দেশে আনেন হাজার ডলার কিংবা তাঁরও বেশি পরিমাণ অর্থ। যাঁরা নতুন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং শুরু করেছেন তাঁদের আয়ও ৫০০ ডলারের কম নয়। একাধিক হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন দেড়লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। সুতরাং কি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে তা সহজেই অনুমেয়।
প্রথমেই বলছিলাম যে অপ্রাপ্তিগুলোর কথা, সেগুলো নিয়েই আলোচনা করি। তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা দেশের জন্য যা করছেন তার বিনিময়ে কি পাচ্ছেন? কি কি সমস্যার সমাধান করলে এই ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং সেক্টরের আরও বড় অংশ আমরা আমাদের দখলে আনতে পারি? প্রশ্নগুলোর যত উত্তর পেয়েছি তাঁর অধিকাংশ ইন্টারনেট সংযোগ সমস্যা, পেমেন্ট প্রসেসর নিয়ে ঝামেলা।
এই সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের জন্য একটি বড় প্লাটফর্ম আমাদের জন্য আসতে যাচ্ছে, ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানে বিশেষ এ সম্মেলনটি আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই অনুষ্ঠানটি আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলতে গেলে।
ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে সরকারি নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের লোকজন থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রি লিডার, সবাই থাকছেন। আর তাই এটিই মোক্ষম সুযোগ, সম্মিলিতভাবে আমাদের পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা, কিংবা ইন্টারনেট নিয়ে আমাদের যে নিত্য ভোগান্তি নিয়ে কথা বলতে পারি। অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি ফ্রিল্যান্সিংয়ের বর্তমান সমস্যাগুলো নিয়ে, কেউ কেউ হতাশা জানিয়েছেন এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে। নতুন যারা এ ক্ষেত্রে আসতে চায় তাঁরা ভালো প্রশিক্ষণ পায় না। এই অভিযোগটি ঢাকার বাইরের যারা ফ্রিল্যান্সার তাঁদের। ঢাকায় আমাদের ডেভসটিম ইনস্টিটিউট ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে শুরু থেকেই, আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে যারা ঢাকায় এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন, তবে ঢাকার বাইরে এখনও কেউ কোন উদ্যোগ নেননি। আর তাই নতুনরা এক্ষেত্রে আসবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁরা তেমন কোন গাইডলাইন পাচ্ছেন না বলতে গেলে। এবারের ফ্রিল্যান্সিং সম্মেলনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং শুরুর একটি বেসিক গাইডলাইনও রাখা হয়েছে। নতুনরা একটি ভালো গাইডলাইন এ সম্মেলন থেকে পাবে বলে প্রত্যাশা করছি।
গতবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ইভেন্টে দু'জন অতিথি!
বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলার জন্য একটি ট্রেড বডি আছে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আবার কম্পিউটার যন্ত্রাংশ যারা আমদানী এবং বিক্রি করেন তাঁদের সমস্যা সম্ভাবনা তুলে ধরার জন্যও একটি ট্রেড বডি আছে, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কথা বলার কোন সংগঠন নেই, কোন বডি নেই। আবার স্পেসিফিক কোন সংগঠনও ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ করছে না যাঁরা তাঁদের ভয়েসকে দেশের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরবেন। এখন ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যাগুলো সম্মিলিতভাবে উঠে আসতে পারে এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানে, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং সম্মেলনে। সম্মেলনটিতে প্রায় ৫০০ ফ্রিল্যান্সার উপস্থিত হবেন। এখনই আমাদের সময়- সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম এটা, সবার দাবী দাওয়াকে একত্রে তুলে ধরার এবং আমাদের সমস্যাগুলোকে সমাধানের আহ্বান জানানোর। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ইভেন্টে আমরা সবাই মিলে আমাদের দাবী সম্মিলিতভাবে তুলে ধরতে পারি নীতি নির্ধারণী মহলে।
আপনারা নিশ্চয়ই গতবছরের ই-এশিয়া সম্মেলনের কথা ভুলে যাননি। সেখানেও ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে ফ্রিল্যান্সাররা দাবী জানিয়েছিলেন পেপ্যালের কার্যক্রম বাংলাদেশে চালুর বিষয়ে, সেবার সেই দাবী সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেছিল।সম্মেলনে উপস্থিত ওডেস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট কুপার বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে পেপ্যাল-এর প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছিলেন বাংলাদেশে পেপ্যাল চালুর কথা বলেন। তাঁর কথায়ই আমাদের দেশে কার্যক্রম শুরুর আগ্রহ দেখিয়েছিল পেপ্যাল। শুধু তাই নয়, ওডেস্ক থেকে যাতে সরাসরি বাংলাদেশের ব্যাংকে টাকা আনা যায় তার ব্যবস্থাও ম্যাট কুপার করেছেন।
আমাদের সেদিনের সে একটা জায়গা পর্যন্ত পৌছেছে, পর্যন্তই আমরা জেনেছি। তবে দু:খজনক যে পেপ্যালের কার্যক্রম এখনও দেশে শুরু হয়নি। এবার আমরা বিষয়টিকে আবারও তুলে ধরতে পারি। এবার একটা সমাধান আসবে বলেই প্রত্যাশা।
আর ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং নিয়ে অনেকের এখনও ভুল ধারণা আছে। এটিকে অনেকে এমএলএম টাইপ মনে করেন অনেক সাধারণ মানুষ। যখন সরকারই উদ্যোগেই ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংকে প্রমোট করা হচ্ছে তখন এইসব মানুষের মধ্যে ভুল ধারণাগুলো আর থাকবে না, সর্বত্র প্রকৃত ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং নিয়ে একটি সচেতনতা তৈরি হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আর এবারের সম্মেলনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অংশ যেটি, সেটি হলো ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের কাছ থেকে শোনা। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ইভেন্টের সিনিয়র কনসালটেন্ট মুনির হাসান ভাইয়ের মাধ্যমে জানা গেল, সেইসব ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের তালিকা। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস ওডেস্কের ভিপি অব অপারেশনস ম্যাট কুপার, ফ্রিল্যান্সার ডট কমের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভিড হ্যারিসন, ই-ল্যান্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেটসি ওলসেন এবং নাইনটিনাইন ডিজাইনের সিওও জেসন যোগ দিচ্ছেন সম্মেলনে। ফ্রিল্যান্সিং-এর ভবিষ্যৎ, মার্কেট প্লেসগুলোর ভেতরের খবরও জানা যাবে মার্কেটপ্লেস লিডারদের কাছ থেকে। এরচেয়ে ভালো খবর আর কি হতে পারে!
প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ফ্রিল্যান্সাররা আরও নানাভাবেই উপকৃত হবেন এ সম্মেলনের মাধ্যমে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মতো এতবড় আয়োজনে ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনটি যুক্ত করায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে একটি বিশেষ ধন্যবাদ দিতেই হয়! ফ্রিল্যান্সাররাও দিন গুনতে শুরু করুন, আমাদের সম্মিলিত দাবী দাওয়া তো সংশ্লিষ্ঠ মহলে পৌছে দিতে হবে, নাকি?
আমি আল-আমিন কবির। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 119 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
পেশা সাংবাদিকতা, কাজের ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি। বর্তমানে দৈনিক কালের কন্ঠে কাজ করছি। ব্লগিংয়েও নিয়মিত।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ইন্টারনেট। সুলভমূল্যে ইন্টারনেট সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে। সরকার সজাগ দৃষ্টি দিলে পোশাক খাতের চেয়েও বেশি উন্নতি করা সম্ভব এই ক্ষেত্র থেকে।
অফটপিক: আগামীকাল দেখা হচ্ছে মিটআপে?