আসসালামু আলাইকুম
আমার মনে হয় লেখাটা অনেক আগেই লেখা উচিত ছিল। কিন্তু লেখার সাহস হারিয়ে ফেলেছিলাম। ইউটিউব বন্ধ হওয়ার পরে অনেক টিউনারই তা ব্যবহার করার বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে টিউন করেন। আর সেই টিউনগুলোর কমেন্টে উনাদেরকে যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল, তা দেখে কার সাহস থাকবে বলুন? বিশেষ করে, উনাদের অনেকেই হচ্ছেন অভিজ্ঞ ব্লগার। তাই আমার মত নবাগত দশম শ্রেণীর ছাত্র যদি এই বিষয়টি নিয়ে লেখে, ভয় পেয়ে গেছিলাম হয়ত আপনারা সবাই দেশছাড়া করে ছাড়বেন।
আমি কয়েক সপ্তাহ আগে আমার বিদেশী বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। আমি আবার রাত্রে স্কাইপে কথা বলতে শুরু করলে ফজরের আজানের আগে শেষ করিনা। এমনভাবে, সেদিন রাত্রে একটি গ্রুপ কলে ছিলাম। আর কলটিতে আমরা ৮ দেশের ৮ জন ছিলাম Deniz (Germany), Fatima (Morocco), Siddique (Pakistan), Fasasi (Nigeria), Akbar (Kenya), Irfan (Saudi Arab), Iqbal (India) & Me (Bangladesh)। WWE, ফুটবল, আমেরিকার নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে বলতেই আমি ইউটিউবের এই ভিডিওটির প্রসঙ্গটি চালু করে সবার মতামত চাই। এবং তাদের প্রত্যেকেই আমার মত একই মতামত প্রকাশ করে যে এই ভিডিওটি নিয়ে মিশরে যুক্তিহীন বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। আর আমি লজ্জার সাথে প্রকাশ করলাম যে, আমাদের দেশেও মিশরের নকল করার পরিপ্রেক্ষিতে ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে। শুনে সকলেই হাসল, আমিও হাসলাম কারণ আমিও মনে করি এটি একটি যুক্তিহীন পদক্ষেপ। আল্লাহর রহমতে তাঁরা সকলেই ভাল মুসলমান, তাই আশা করি তাদের মতামত উড়িয়ে দেওয়ার মত করে ভাববেন না।
যাই হোক, এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথে আলোচনা, মতামত ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আমি এতটুকু নিশ্চিত যে আমার মনে যেসব চিন্তা ভাবনা এবং প্রতিক্রিয়া কাজ করছে, তা শুধু আমার একার নয়। বরং আপনারা সকলেই একটু ভেবে চিন্তে দেখলে আমার সাথে সম্মত হবেন। আজকে যখন মোবাইলে ব্রাউজ করতে করতে Nokia Asha 311 লিখে গুগল করলাম, দেখাল যে “Content blocked by operator upon request from Government Authority”! নাহ! আমারও সহ্যের একটি সীমারেখা আছে। এমন যুক্তিহীনভাবে ইউটিউব ব্যানের পরে এখন যদি Nokia Asha 311 কেও ব্ল্যাক-লিস্টে যোগ করে, তাহলে কারই বা ভাল লাগে বলুন?
এবার আসি মুল কথায়...
আমার মনে হয় ইউটিউব ব্যানের কারণটি আপনারা সকলেই খুব ভালভাবে জানেন। যারা এখনও স্পষ্ট জানেন না তাদের অবগতির জন্য সংক্ষেপে জানাই:
মহানবী (সা:) এর অবমাননা করে ইউটিউবে “Innocence Of Muslim” নামক একটি ইসলাম বিরোধী চলচ্চিত্রের Trailer এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ভিডিও চিত্রটি প্রকাশের ফলে, সারা বিশ্বের বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ ঘটে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। বেশ কিছুদিন রাস্তায় নেমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পুড়িয়ে এদেশের মুসলিম জনতা ইউটিউবের সেই চলচ্চিত্র নির্মাতার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে (!)। এরই ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশ সরকার ইউটিউব ব্যান করে দেন।
মিশরেই মূলত বিক্ষোভের শুরু হয়। যদিও ভিডিওটি অনেক কয় মাস আগেই প্রকাশ পায়, কিন্তু সেটা নিয়ে কারই তেমন কারও মাথা ব্যথা হয়নি। মাথা ব্যথা শুরু হয় যখন মিশরের একটি চ্যানেল এর আরবি অনুবাদটি টিভিতে দেখায়। ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে মিশরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে এবং অফিসে হামলা চালানো হয়, এতে রাষ্ট্রদূত এবং তাঁর কয়েকজন সহযোগী নিহত হন। পরে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একে একটি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করে যারা মুসলিমদের বিক্ষোভের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হামলাটি চালায়।
এর কিছুদিন পরে টেকটিউনসেই দেখলাম যে গুগল নাকি ভিডিওটি ডিলিট করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাঠান আবেদন নাকচ করেছে। শুনে খুব রাগ হল। একটা ভিডিও যারই জের ধরে এত বিক্ষোভ সমাবেশ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত নিহত হলেন; সেই ভিডিও ডিলিট করতে ওরা কিভাবে নাকচ প্রকাশ করে?
কিন্তু কিছুদিন পরে গুগলের কথা না ভেবে নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, আমরা নিজেরা কতটা যুক্তিযুক্ত আচরণ করছি?
এত বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ মিছিলের ফলে “Innocence Of Muslim” যতটুকু প্রচার পেয়েছে, বাস্তবে এটি তার ১% এরও যোগ্য নয়। আপনি কি মনে করেন যে, এটিই ইউটিউবে একমাত্র ইসলাম বিরোধী ভিডিও? আমার মনে হয়, যারা এই ভিডিওর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছিল তাদের অধিকাংশ এমনটিই মনে করে।
কিন্তু বাস্তবতা হল, ইউটিউবে এমন ভিডিওর কোন অভাব নেই। আপনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শুধু ইসলাম বিরোধী ভিডিওই খুঁজে খুঁজে দেখতে থাকেন, তবুও শেষ করতে পারবেন না। কারণ এমন প্রচুর ইউটিউব চ্যানেল এবং ইউজার আছে যারা কেবল ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যার প্রচার করাকেই নিজেদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই আপনি একটি ভিডিও দেখা শেষ করতে করতে আর একটি প্রকাশ পেয়ে যাবে!
এখন, ধরলাম আপনার চোখে এই একটি ভিডিওই পরেছে। আর আপনি এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেনই তুলবেন। কিন্তু সেটা কি ইউটিউব বর্জন করে বা রাস্তায় নেমে সম্ভব?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলি: আমাদের দেশের ইন্টারনেট স্পীড এবং বহুমুল্যতার কারণে ইউটিউবে হাতেগোনা কয়েকজনই ভিডিও দেখে থাকেন। আমিই ইউটিউব নিয়ে প্রচুর ঘাটাঘাটি করি এবং অনেক সময় ব্যয় করি। এছাড়া নিয়মিত বেশ কিছু ওয়েব শো, সাম্প্রতিক ভাইরাল ভিডিও ইত্যাদি দেখে থাকি। কিন্তু কোনটাই ব্রাউজারে নয়, IDM দিয়ে ডাউনলোড করে তারপর দেখি। কারণ যেটা বললাম, ইন্টারনেট স্পীড। আমি Zoom Ultra 256 kbps ব্যবহার করি এবং এতে ১৮-২০ kbps ডাউনলোড স্পীড পাওয়া যায়। তাই অনলাইনে দেখার প্রশ্নই আসে না!
সেজন্যই, আমি নিশ্চয় বলতে পারি বাংলাদেশে যারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিল তাদের ৭৫% ই আজ পর্যন্ত ইউটিউব ব্যবহার করেনি। অনেকে হয়ত বা ইন্টারনেটই ব্যবহার করেনা। তাহলে কোন হিসেবে তাঁরা দেশে ইউটিউব ব্যান করার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে?
আচ্ছা ধরে নিলাম আপনি উনাদের অন্তর্ভুক্ত নন বরং আপনি ইউটিউবের নিয়মিত একজন ব্যবহারকারী। আর এত কিছু শোনার পরেও আপনি ওই ভিডিওটির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চান। কিভাবে তুলবেন? রাস্তায় নেমে, নাকি ইউটিউব ব্যান করে? ঘরের দরজায় খিল মেরে যুদ্ধ জয় করতে চান? বাহ!
ইউটিউবে ওই ভিডিওটিকে মাথায় তুলে মিশরের মুসলমানেরা যেই অহেতুক প্রচার ঘটিয়েছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই তার দর্শক সংখ্যা অনেক গুনে বেড়েছে। আর কেনইবা বাড়বে না, একটি ভিডিওর জন্য যখন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের হত্যা হয়ে যাচ্ছে তখন যেকোনো আমেরিকান বা ইউরোপ বাসীই কৌতূহলী হয়ে ভিডিওটি দেখতে যাবে। আমি নিজেই ওই ভিডিওর পেজটিতে বেশ কয়েকবার গিয়েছি, কিন্তু ভিডিওটি দেখিনি। ভিডিওর কমেন্টে ইসলাম বিরোধী অনেক কমেন্ট আছে, যা ভিডিওটির ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার আরও বেশি জোরদার করে তুলছে। কিন্তু হায়, কেউ যে তাদের উদ্ধৃতি গুলোকে ভুল প্রমাণ করে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দিবে, তেমন কোন মুসলমান সেখানে নাই। কোথায় আছেন আমাদের রাস্তায় নামা বাংলাদেশি মুসলমান ভাইয়েরা? তাঁরা এখন শান্তিতে বিছানায় শায়িত এই ভেবে, কেউ একজন ইসলাম বিরোধী ভিডিও পোস্ট করেছিল, আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ইউটিউব ই বন্ধ করে দিছি বাংলাদেশে! Problem SOLVED!!!
হয়তবা আমার পোস্টটি একটু বেশিই দীর্ঘ করে ফেললাম, কিন্তু আমার মনে হয় সবকিছুই বলার প্রয়োজন ছিল। ইসলাম নিয়ে যারা ইন্টারনেটে এমন ভুল প্রচার করে, তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা কেবল ইন্টারনেটেই কার্যকরী হবে।
আর যদি রাস্তায় নামেতেই হয়, নামুন সেই সব নিরীহ মুসলমানদের জন্য আজও পশ্চিমা বিশ্বের কাল থাবার তলায় নিষ্পেষিত। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চাইলে, তুলেন যখন তাদের সহযোগিতায় ইসরায়েল হামলা চালায় আফগানিস্তানে; যাতে নিহিত হয় একটি নিষ্পাপ শিশু। কোথায় ছিলেন আপনারা যখন যুক্তরাষ্ট্র ৯/১১’র জের ধরে দখল করল ইরাক, আর একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশকে ১০ বছরে বিধ্বস্ত মরুভূমি করে থুয়ে গেল। কতবার রাস্তায় নেমেছিলেন? কতগুলো আর্টিকেল লিখেছেন জনসচেতনতা তৈরি করতে? মুসলমান হিসেবে কোনই কি দায়িত্ব ছিল না আপনার? নিরীহ মানুষ নির্বিচারে মরলেও খবর নাই, আর এক ভিডিও নিয়ে এত তোলপাড়!
আমি কারও মনোভাবে আঘাত করতে লেখিনি, তাই কেউ আঘাত পেলে দয়া করে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আশা করি আমার লেখা এবং এর যুক্তিগুলোর সাথে সকলেরই সম্মতি থাকবে। এও আশা করি যে কর্তৃপক্ষ অতি শীঘ্রয়ই ইউটিউব থেকে ব্যান তুলে নিবেন। যাতে করে আমাদের প্রতিবাদী মুসলিম ভাইয়েরা সেই সব অমানুষদের মুখোমুখি জবাব দিতে সক্ষম হন। প্রতিজন মুসলিম দর্শক = আরও একটি ডিসলাইক, আরও একটি রিপোর্ট, আরও একটি জুতোর বাড়ি সেই অমানুষগুলোর মুখে যারা ইসলাম নিয়ে ভুল ধারণার সৃষ্টি করে।
সকলকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা এবং দাওয়াত জানিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ 🙂
[আর্টিকেলটি ভাল লাগলে কমেন্ট এবং শেয়ার করুন। আপনার ব্লগেও প্রকাশ করতে পারেন 🙂 ]
আমি Howard Robles। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 125 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাই, আমি একজন মনেপ্রানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী…………আপনার পোষ্ট পড়ে ভালো লাগলো……………Youtube বন্ধ করে সরকার যে কাজ করেছে সেটা হয়ত ঠিক করেনি সেটা বললে অনেকেই ভাববে হিন্দু বলে এই কথা বলতেছি……………আর ওই ভিডিও টা আপলোড করে যে অন্যায় করেছে তাও ঠিক………ওই ভিডিওটার কথা ভেবে খারাপ লাগে………আমার ধর্মকে নিয়ে কিছু বললে আমারও খারাপ লাগতো…………আমাদের উচিত সকল ধর্মকে সম্মান জানানো এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করা………।