সিগারেটের ধোঁয়া এবং মশার কয়েলের ধোঁয়া দুটোই ক্ষতিকারক, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এ দেশে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে শুরু করে নামে বেনামে বহু কোম্পানিই এখন অস্বাভাবিকভাবে মশার কয়েল বাজারজাত করছে একেবারেই ।
ইনসেক্ট কিলার নাম ব্যবহার করে যেসব পণ্য বাজারে আছে তারতো কোন জাত বিচার কেউ করছে না। অবশ্য একটু বলতে হয় যে, পরিবেশ দূষণে মশা-মাছির হাত থেকে রেহাই পেতে মানুষ এক অসুবিধা কাটিয়ে অন্যরকম আর এক কঠিন অসুবিধার ভেতরে ডুবে যাচ্ছে। যেটা টের পাওয়ার আগেই পুঁজির মালিকরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। কারণ এদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই মানুষ একটু ঘুমানোর আশায় মশার কয়েল কিনছে। এ যেন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার একান্ত সঙ্গী হিসেবে। সুতরাং প্রতিদিন যদি কমপক্ষে এক কোটি মশার কয়েল থেকে কোটি টাকার মুনাফা আয় করে নিয়ে যায় কোম্পানিগুলো। আর মশার কয়েলের ধোঁয়ায় পরিবারের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, এমনকি পরিবারের ছোট্ট শিশুটিও রেহাই পাচ্ছে না তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে মশার কয়েলের বিষাক্ত ছোবল থেকে। এর পরও সবাই যেন আশ্চর্যজনকভাবেই নির্বিকার।
আমার মতে (যদিও আমি তেমন কিছু জানি না) 'একটা মশা যদি মারা যায়, তাহলে আমি মারা যাচ্ছি না কেন? হ্যাঁ আমি মারা যাচ্ছি। তবে সেটা ধীরে ধীরে । যাকে ইংরেজিতে বলে slow poisoning। অর্থাৎ আমি ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি। অথচ শুনেছি পৃথিবীর অনেক নেতা, সরকার প্রধান কে নাকি slow poisoning এর সাহায্যে মারা হয়েছিল। যাদের খাবারের সাথে সামান্য পরিমান বিষ দেয়া হতো।এভাবে তাদের ধীরে ধীরে মারা হতো। ঠিক আমরা এখন সেই slow poisoning এ আক্রান্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ফার্মেসির ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক এ বি এম ফারুক বলেন, বাজারে আসা চিনের তৈরি এসব মশার কয়েলের সঙ্গে বাজারের অন্য সাধারণ মশার কয়েলের সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই। মোড়কে লেখা এলেথ্রিন ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে। তবে আর কোনো উপাদান আছে কি না, এর কোনো উল্লেখ নেই। তিনি আরো বলেন, এলেথ্রিন মশার কয়েলে ব্যবহার করা হয়। তবে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত কয়েলের সঙ্গে এলেথ্রিনের ব্যবহার পারমিটেড। এ কয়েলগুলোয় সর্বনিম্ন ০.৩ শতাংশ ব্যবহারে কথা বলা হয়েছে। অথচ সর্বোচ্চ কী পরিমাণ এলেথ্রিন ব্যবহার করা হয়েছে, এর উল্লেখ নেই। এখানে সর্বনিম্ন বলেছে, এটা ঠিক হয়নি। ভুল আছে। অথবা ইচ্ছা করেই তারা গোপন করছে। আমার ধারণা, এখানে এলেথ্রিন ছাড়াও অন্য কিছু আছে। এলেথ্রিন থাকলেও তা সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। বৃদ্ধদের জন্যও এটা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা ক্ষতিকর। সাধারণভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দীর্ঘক্ষণ কয়েল ব্যবহার করা ঠিক নয়। এর ফলে হাঁপানি, শ্বাস-প্রশ্বাস, কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া কয়েলের ক্ষতিকর প্রভাবে গলা শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ঘুরানো, বমিবমি ভাব, শ্বাস নিতে কষ্ট, ধম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি হতে পারে।
এই মশার কয়েলের উৎপত্তি কোথায়? এতে কী কী আছে? উপাদানগুলো শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর? যদি ক্ষতিকর হয় তবে কেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না?
মশার কয়েলের উদ্ভাবক দেশ হলো চীন। প্রাচীন চীনে চন্দ মলিস্নকা ফুল থেকে প্রাপ্ত গুঁড়ো পাইরোগ্রাম, গাছের বাকল থেকে পাওয়া আঠা জাতীয় পদার্থের গুঁড়োর সঙ্গে মিলিয়ে মশা বিতাড়ক ধূপ তৈরি হতো। বর্তমানে কাঠের গুঁড়ো ও নারকেলের মালার গুঁড়োর সঙ্গে অ্যারারুটের মাড় মেশানো হয়। এক্ষেত্রে কাঠের গুঁড়ো ও নারকেলের মালার গুঁড়ো জ্বালানি হিসাবে এবং মিশ্রণকে জমাট করতে অ্যারারুটের মাড় ব্যবহার করা হয়। সবুজ রঙ হয় ম্যালাকাইট গ্রিন বা ক্রিস্টাল গ্রিন রঙ মেশানোর জন্য। মশার কয়েলের প্রধান উপাদান হলো পাইরোফ্রয়েড। এটি প্রাকৃতিক যৌগ পাইরোগ্রাম থেকে পাওয়া যায়। অ্যালেট্রিন-এর মতো সমধমর্ী যৌগ থেকেও পাওয়া যায়। ম্যাটেও অনুরূপ পাইরোফ্রয়েড থাকে, তবে তাতে অনবরত নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োগ করতে হয়। তাপ পেলে ম্যাটের পাইরোফ্রয়েড বাষ্পীভূত হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োগের জন্য ম্যাটকে ম্যাটহিটারের হিটপেস্নটে রাখতে হয়। এর আসল সক্রিয় উপাদান হলো কীটনাশক ডিডিটি বা পিণ্ডেনের মতো ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন, প্যারাফিনের মতো আরপ্যানো ফসফরাস যৌগ এবং কার্বন।
প্রায় সমস্ত মশার কয়েলেই থাকে অ্যালেট্রিন। এর সঙ্গে ফেনল ও ক্রেসল- দু'টি জৈবযৌগ ব্যবহার করা হয়। কয়েলে উলিস্নখিত উপাদানগুলোর পরিমাণ মানুষের সহনীয় মাত্রার মধ্যেই থাকে বলে দাবি করে ব্যবসা করছে কয়েল প্রস্তুতকারক কোম্পানি। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কতকগুলো কীটনাশককে মশার কয়েলে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ বলে চিহ্নিত করলেও আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো মান নির্ধারিত হয়নি। কেবলমাত্র তৃতীয় বিশ্বে মশা নিধনে ব্যবহূত এই কয়েলের ভালোমন্দ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো মাথাব্যথাও নেই। আর তাই ব্যবহারকারীদের ওপর মশার কয়েলে উপস্থিত কীটনাশক ও অন্যান্য উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাবের দিকে সাধারণ মানুষ ততোটা গুরুত্ব দেয় না।
জার্মানির লু্যরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা জানান, কয়েল তৈরিতে যে কাঠের গুঁড়ো ও নারকেলের মালার গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়, তার ধোঁয়া এতোই সূক্ষ্ম যে তা সহজেই আমাদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসের বায়ুথলির মধ্যে পৌঁছে সেখানে জমা হতে পারে। আর খুব সূক্ষ্ম হওয়ার জন্য কণাগুলো বাতাসেও কয়েকদিন ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে। অর্থাৎ মশার কয়েল নেভার বহুক্ষণ পরেও ঘরে অবস্থানকারী মানুষের শ্বাসনালীতে কয়েলের ধোঁয়ার কণা ঢুকতে পারে। এর ফলে ফুসফুসের বায়ুথলির কণায় রক্ত জমে যাওয়া থেকে নানা ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া অ্যালেট্রিন মস্তিষ্ক ও রক্তের ভেদ্যতা বাড়িয়ে দেয় বলেও তাঁরা জানান। কয়েলের ধোঁয়া কমবয়সীদের স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর । বিশেষত শিশুদের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক।
এই রকম আরো অনেক ঘটনা আছে। যে সকল ক্ষতির কারণ এই মশার কয়েল। অবশ্য অনেকে বলবেন , মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলবেন নাকি। না ভাই কেটে ফেলার দরকার নাই ।অর্থাৎ আপনি মশারি ব্যবহার করেন।
এখন দেখি নিই মশার কয়েল আর কি ক্ষতি করতে পারে। সরাসরি সংবাদ থেকে...............
১।
২।
৩।
৫।
৬।
টেকি যেহেতু কিছু দিতে হবে ।তাই আমার নয়। শাওন ভাইয়ের টিউন টা দেখুন।
আশা করি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
আমি Monir Hossen। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 49 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
তাহলে তো এতো বছর হাজার খানেক সিগারেট খাওয়াই ভালো ছিল । কয়েলের ধোঁয়ায় যখন এখনও ভালো আছি তাহলে সিগারেট খেতে দোষ কী ???