সঙ্গীতাঙ্গনে পাইরেসিঃ প্রেক্ষাপট যখন বাংলাদেশ এবং করনীয়[পাইরেসি রোধে সচেতনতা তৈরিতে সবার পড়া উচিত]

কেমন আছেন সবাই? আমি আজকে এমন একটি ব্যাপারে টিউন করতে যাচ্ছি যেটি বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। মানে পাইরেসির কথা বলছি।

পাইরেসি কথাটার মানে বুঝে এমন মানুষ এর সংখ্যা যত, তারচেয়ে অনেক বেশী মানুষ পাইরেসি এর সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত । আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে এর সাথে জড়িত। যেমন আমরা বাজার থেকে কম্পিউটার থেকে গান,ভিডিও,ছবি লোড করাচ্ছি অথবা নেট থেকে বড় ছোট ওয়েবসাইট থেকে গান,ভিডিও,ছবি ডাউনলো্ড করি।আমরা যখন আরেক পিসি অথবা ওয়েবসাইট থেকে গান,ভিডিও,ছবি ইত্যাদি সংগ্রহ করে নিজেদের মুঠুফোন এর মেমরী এবং কম্পিউটার এর হার্ডডিস্ক ভরাট করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি তখন কি আমরা গান,ভিডিও,ছবি গুলু তৈ্রির পেছনে যাদের অবদান তাদের কথা স্মরন করি? আমরা কখনো কি চিন্তা করি এই সব কন্টেন্ট তৈ্রির কারিগররা কি ভাবে জীবনযাপন করেন?

পাইরেসি কী?

পাইরেসি বলতে কোন জিনিস তার প্রকৃ্ত মালিকের অনুমতি ছাড়া তার প্রাপ্য সম্মানী থেকে বঞ্চিত করে কোন কিছু অবৈধ ভাবে বিক্রি করা এবং ক্রয় করা। সফটওয়্যার,গান,ছবি,মিউজিক ভিডিও ইত্ত্যাদি পাইরেসি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন পাইরেসির সবচেয়ে বড় স্বীকার।

অভাব না স্বভাব?

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সংগীতাঙ্গনে পাইরেসির সাথে জড়িত । এক্ষেত্রে অনেকেই “দারিদ্র্যের খোড়া অজুহাত” দিয়ে থাকেন।তবে আমি মনে করি দারিদ্র্য নয় বাংলাদেশিদের “সস্তা পেলে বস্তা বাধা”স্বভাব ই এটির জন্য দায়ী। একটা কথা আছে “বিয়ে করার পর মানুষ ঠিক বুঝতে পারে বৌ কিভাবে পালতে হয়” এই কথাটা বলার কারন হল আমাদের দেশে পাইরেসি রোধে তেমন কোন আইন নেই যার ফলে মানুষ সহজেই টাকা খরচ না করে অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন করে গান সংগ্রহ করে। মানুষ এটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যদি আইন এবং আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ থাকত তবে বেশিরভাগ মানুষই টাকা খরচ করে গান শোনার প্রতি আগ্রহী হত। অনেক মানুষ ই ৪০০০০/৫০০০০ টাকা দিয়ে কম্পিউটার কিনতে পারে অথচ ত্রিশ পঞ্ছাশ টাকা দিয়ে একটা গানের সিডি কিনতে পারে না যা সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক । অনেকে আবার দরিদ্র,নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের কথা বলতে পারেন। কারন অনেকেরই মনে হয় বাংলাদেশের বিশাল পাইরেসির বাজার গড়ে উঠেছে দরিদ্র,নিম্নমধ্যবিত্তদের কারনে। কিন্তু কয়জন মধ্য,মধ্যউচ্চ এনং উচ্চবিত্ত মানুষ বলতে পারবে সে পাইরেটেড কপি ব্যবহার করে না? আমি মনে করি দরিদ্র,নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের কোন দোষ নেই । তারা শুধুমাত্র তা ই গ্রহন করে যা তারা পায়। যদি তারা পাইরেটেড গান না পেত তবে আমার মনে হয় না তারা কখনো পাইরেটেড গান এর প্রতি আগ্রহী হত। তাছাড়া নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যাদের তাদের কথা এ ব্যাপারে না তোলাটাই যুক্তিসংগত।

পাইরেসির কেন্দ্রস্থলঃ

বাংলাদেশের পাইরেসির কেন্দ্রস্থল হচ্ছে ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট,গুলিস্তান,পটুয়াটুলী,মৌচাক মার্কেট,বসুন্ধ্রা সিটি,রাজলক্ষী কম্পলেক্স,লন্ডন প্লাজা,খিলগাও,শাহজাহান রোড,গুলশান মার্কেট,নিউ মার্কেট,রাপা প্লাজা,এলিফ্যান্ট রোড ইত্ত্যাদি। তাছাড়া সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবৈ্ধভাবে চলছে পাইরেসির রমরমা দুনিয়া।

বাংলাদেশে পাইরেসির প্রভাবঃ

বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন হুমকিতেঃ

পাইরেসি বর্তমানে বাংলাদেশ এর সঙ্গীত জগতের অন্যতম সমস্যা । পাইরেসির কারনে বহু প্রযোজক নিঃস্ব হয়ে পরেছেন , পুরনো প্রযোজক আর প্রযোজনা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। অভিজ্ঞ প্রযোজকদের এই পরিনতি দেখে নতুন প্রযোজক তৈ্রি হচ্ছেনা। যার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। প্রযোজকের অভাবে নতুন এবং পুরাতন শিল্পীরা শুধু টাকা খরচ না করে কনসার্ট করার প্রতি ই মনযোগ দিচ্ছে যার ফলে সঙ্গীতের মৌলিক অনেক উপাদানের চর্চা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে নতুন অ্যালবাম হয় হাতেগো্না যার ফলে নতুন গানের সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটছে। সর্বপো্রি বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন তার মৌ্লিকতা হারাচ্ছে ।

অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ প্রত্যেক বছর বাংলাদেশের সঙ্গীত্তাঙ্গনের প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে । এই ১৮০ মিলিয়ন ডলার থেকে সরকার মোটা অঙ্কের টাকা পেত রাজস্ব হিসেবে। এক্ষেত্রে অনেকেই বলতে পারেন যে এত টাকার ব্যবসা বাংলাদেশে হতে পারে না কারন বাংলাদেশে মাত্র অল্প কিছু অ্যালবাম রিলিজ হয় । কিন্তু আমাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে বাংলাদেশে এত অল্প অ্যালবাম রিলি্জ হওয়ার একমাত্র কারন এই পাইরেসি। বাংলাদেশের মাত্র ৫-১০% মানুষ মিউজিক অ্যালবাম কিনে গান শুনে।

করনীয়ঃ

চাই প্রয়োজনীয় আইন এবং আইনের প্রয়োগঃ

বাংলাদেশে সংগীতাঙ্গনে পাইরেসি রোধে নেই তেমন কোন আইন। তবে যে আইনটি আছে কপিরাইট এর সেটিতেও আছে নানা রকম ফাকফোকর ,যার ফলে অপরাধীরা সহজে আইনের ফাক গলে বের হয়ে আসতে পারছে । তাই সংগীতাঙ্গনে পাইরেসি রোধে বিশেষ আইন প্রয়োজন এবং আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগে নিরপেক্ষভাবে বিচার করে সাজার ব্যাবস্থা করা প্রয়োজন।

চাই আমাদের সচেতনতাঃ বাংলাদেশের ৯০% মানুষ পাইরেসির সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত । তাই সংগীতাঙ্গনে পাইরেসির ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোথাও পাইরেসির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের সন্ধান পেলে আমাদের উচিত হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কে জানানো। আমাদেরকে সর্বদা মনে রাখতে হবে, যেসব শিল্পীরা রাত দিন পরিশ্রম করে বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন তারাও আমদের মত মানুষ এবং তাদের ব্যক্তি জীবনেও ভিবিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চাহিদা রয়েছে।

পরিশেষঃ

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এবং সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের উচিত সঙ্গীতাঙ্গনের পাইরেসি রোধে সবার সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে বাচিঁয়ে রাখার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসা ।

আমার এই পোষ্টটি এতক্ষন ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এটি পরে সংগীতাঙ্গনের পাইরেসির ব্যাপারে যদি একটুও সচেতন হন,তবেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। ধন্যবাদ।

Level 0

আমি জিএমশুভ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি জিএমশুভ। পড়ালেখার পাশাপাশি লেখা লেখি করছি। ভালবাসি টেকনোলজিকে। নেট ব্রাউজ করা আর বই পড়া আমার প্রধান সখ।আর ভালবাসি নতুন কিছু জানতে এবং অন্যকে জানাতে। ফেসবুকে আমি: http://facebook.com/gms.me


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Comments are closed.