আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ এর এই দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিএ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে নিজের জায়গা করে নেয়। আজ মহান বিজয় দিবস এ আমি আপনাদের বাংলাদেশ সেনা বাহিনী সর্ম্পকে এ কিছু তথ্য তুলে ধরার চেস্টা করবো।
বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি শাখা। এই বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর বাঙালি সেনা ও মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে এই বাহিনীর সামর্থ্য প্রায় ২০০,০০০ সদস্য, যাদের ৫০,০০০ প্রাক-অবসরে (LPR) গিয়েছেন।
সাত ডিভিশনে বিভক্ত এই বাহিনী, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য সেনাবাহিনীর মতো বৃটিশ সেনাবাহিনীর আদলে গঠিত। অবশ্য এই বাহিনী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বাহিনীর কৈশলগত পরিকল্পনা কার্যপ্রনালী, প্রশিক্ষণ ব্যবষ্থপনা পদ্ধতি এবং ননকমিশন অফিসার প্রশিক্ষন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে৷ এটি গোলন্দাজ, সাজোয়া ও পদাতিক ইউনিট দ্বারা সজ্জিত ৷ অধিকন্তু এই বাহিনী, শান্তি-রক্ষী বাহিনী হিসাবে তার সামর্থ উন্নত করতে উত্সাহী এবং সেই লক্ষে মার্কিন বাহিনীর সাথে একযোগে কাজ করছে ৷
বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর প্রতিষ্ঠা :
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলা কালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমিকভাবে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এর বাঙালি সৈন্য ও অফিসার এবং পাকিস্তান সেনা বাহিনীর অন্যান্য অংশ হতে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তাদের সমন্নয়ে এই বাহিনী গঠিন হয়। এই নতুন বাহিনী তিনটি ব্রিগেডে বিভক্ত ছিল।
- জেড ফোর্স- অধিনায়ক ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং এটি গঠিত হয়েছিল ১ম, ৩য় এবং ৮ম ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট নিয়ে।
- এস ফোর্স- অধিনায়ক ছিলেন মেজর শফিউল্লাহ এবং এটি গঠিত হয়েছিল ২য় এবং ১১শ ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ সালের অক্টবর মাসে।
- কে ফোর্স - অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ এবং এটি গঠিত হয়েছিল ৪থ, ৯ম এবং ১০ম ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট নিয়ে।
সংগঠন
বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সারা দেশে ছড়ানো ২৩টি ব্রিগেড সহ ৭টি পদাতিক ডিভিসনে বিভক্ত। এতে একটি আরমার্ড (সাজোয়া) ব্রিগেড (২টি সাজোয়া রেজিমেন্ট), সাতটি গোলন্দাজ ব্রিগেড, একটি সয়ংসম্পূর্ণ এয়ার-ডিফেন্স গোলন্দাজ ব্রিগেড, একটি ইঞ্জিনিয়ার্স ব্রিগেড, একটি কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন এবং দুটি এভিয়েশন স্কোয়াড্রন আছে। এই বাহিনী নিম্নক্ত আর্মস্ ও সারভিস কোর সমূহে
আর্মস্ :
- আরমার্ড কোর
- বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট (বিআইআর)
- আর্মি এভিয়েশন
- রেজিমেন্ট অফ আর্টিলারি
- কোর অফ ইঞ্জিনিয়ারস্
- কোর অফ সিগনালস্
- ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্ট (ইবি)
সারভিসেস্ :
- আর্মি সারভিসেস্ কোর
- আর্মি মেডিকেল কোর
- আর্মি অরডিনেন্স কোর
- কোর অফ ইলেক্ট্রিকাল এন্ড মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারস্
- রিমাউন্টস্ ভ্যাটেনারী এন্ড ফার্ম কোর
- আর্মি ডেন্টাল কোর
- কোর অফ মিলিটারী পুলিশ
- আর্মি এডুকেশন কোর
- আর্মি কোর অফ ক্লার্ক
- আর্মড ফোর্সেস্ নার্সিং সারভিসেস্
বাংলাদেশ সেনাবাহিনি ব্যাচ :
কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল
- চীফ অফ আর্মি স্টাফ : জেনারেল আব্দুল মুবীন, পিএসসি
- চীফ অফ জেনারেল স্টাফ : লেফটেনেন্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ,এনডিসি, পিএসসি
- এডজুটেন্ট জেনারেল : মেজর জেনারেল এ কে এম মুজাহিদ উদ্দিন, এনডিইউ,afwc, পিএসসি
- কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল : লেফটেনেন্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী, এনডিসি, পিএসসি
- মাস্টার জেনারেল অফ অর্ডিনেন্স : মেজর জেনারেল আব্দুল মতিন, afwc, পিএসসি, পিটিএসসি
- ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদ-আল-হাসান, এনডিসি
- মিলিটারী সেক্রেটারী : মেজর জেনারেল মুহাম্মদ মাহবুব হায়দার খান, এনডিসি, পিএসসি
এরিয়া কমান্ড
- সাভার এরিয়া (৯ পদাতিক ডিভিসন)
- বগুড়া এরিয়া (১১ পদাতিক ডিভিসন)
- ঘাটাইল এরিয়া (১৯ পদাতিক ডিভিসন)
- চট্টগ্রাম এরিয়া (২৪ পদাতিক ডিভিসন)
- কুমিল্লা এরিয়া (৩৩ পদাতিক ডিভিসন)
- যশোর এরিয়া (৫৫ পদাতিক ডিভিসন)
- রংপুর এরিয়া (৬৬ পদাতিক ডিভিসন)
- ৬ এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারী ব্রিগেড
- ১৪ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স ব্রিগেড
- আর্মি সিগন্যাল ব্রিগেড
- ৪৬ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনফেন্ট্রি ব্রিগেড
- লজিষ্টিক এরিয়া
ব্যবহৃত অস্ত্র সামগ্রী :
- এফএস ৩৫ পিস্তল
- স্টারলিং এল২ সাবমেশিন গান
- এমপি৫ সাবমেশিন গান
- এফএন এফএএল এ্যাসাল্ট রাইফেল
- জি৩ এ্যাসাল্ট রাইফেল
- একে-৪৭ এ্যাসাল্ট রাইফেল
- এসকেএস রাইফেল
- বিডি-০৮ এ্যাসাল্ট রাইফেল
- টাইপ ৫৬ এ্যাসাল্ট রাইফেল
- টাইপ ৮১ এ্যাসাল্ট রাইফেল
- একে-১০৩ এ্যাসাল্ট রাইফেল
- একেএম এ্যাসাল্ট রাইফেল
- এম৪ কার্বিন
- এইচকে১১এ১/২১এ১ মেশিন গান
- আরপিডি মেশিন গান
- DShk 1938 হেভি মেশিন গান
- ব্র্যান এল৪ হালকা মেশিন গান
- এমজি৩ মেশিন গান
- এমএসজি৯০ স্নাইপার রাইফেল
- কার্ল গুস্তাভ এম২ এন্টি-ট্যাংক উইপন
মেইন ব্যাটেল ট্যাংক:
- টাইপ ৫৪/৫৫ - রাশিয়ার তৈরী এমবিটি, বর্তমানে এগুলোকে এপিসি, আইএফভি ও এসপিএইচ-এ পরিবর্তীত ও উন্নীত করা হচ্ছে যাতে সামনে আরো অনেক বছর এগুলো কাজে লাগানো যায়। উপসাগরীয় যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেন ও তার সৈণ্য বাহিনীর বিরুদ্ধে বৃহত্তর আর্ন্তজাতিক সহযোগীতার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ তার সৈণ্য সৌদি আরবে মোতায়েন করায় সৌদি সরকার প্রায় শ’খানেক এজাতীয় ট্যাংক বাংলাদেশকে দান করেছে।
- টাইপ ৫৯ II- রাশিয়ান টাইপ ৫৪এ মেইন ব্যাটেল ট্যাংকের চীনা সংস্করন। ১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশ টাইপ ৫৪এ এমবিটি সহ ১২০টা ট্যাংক চীন থেকে কিনেছে।
- টাইপ ৯৬- বাংলাদেশে এ জাতীয় ট্যাংক ৪৮টি আছে। আরও ১০০টি শীঘ্রই অন্তর্ভূক্ত হবে।
- টাইপ ৭৯ - চীনের তৈরী টাইপ ৬৯ এমবিটি-এর উন্নত সংস্করন। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় শ’খানেক টাইপ ৭৯ এমবিটি ব্যবহার করছে।
লাইট ব্যাটেল ট্যাংক:
- টাইপ ৬২ - চীনের তৈরী এই ট্যাংক জলাভূমি, জঙ্গলাকীর্ণ এবং পাহাড়ী এলাকায় চলাচল উপযোগী। বাংলাদেশের কাছে মোট ১৪২টি এই ধরনের ট্যাংক আছে। পরবর্তীতে এতে লেজার রেন্ঞ্জ ফাইন্ডার যুক্ত করা হয়েছে এবং উচ্চ বিস্ফোরক ট্যাংক বিদ্ধ্বংশী (HEAT) গোলার ঘাতসহ করা হয়েছে।
ট্র্যাক্ট আর্মার্ড ফাইটিং ভ্যাইকেলস্:
- বিটিআর-টি - এটি বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা টি-৫৪/৫৫ এমবিটি হতে রূপান্তরিত আর্মড ফাইটিং ভ্যাইকেলস্ (এএফভি)। আর্মি প্রায় শ’খানেক এমবিটি-কে আধুনিক সুরক্ষিত হেভি এপিসি-তে রূপান্তরিত করেছে। এপিসির প্রযোজনীয় যন্ত্রংশ রাশিয়া হতে সংগ্রহীত এবং স্থানীয় ভাবে সংযোজিত।
- এম ১১৩ - এটি যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তনের তৈরী। বাংলাদেশ শুধুমাত্র শান্তি রক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য লিজ নিয়েছে।
- এমটি-এলবি - এটি রাশিয়ার তৈরী হালকা অস্ত্রে সজ্জিত এপিসি। বাংলাদেশ আর্মির কাছে ২০টি এমটি-এলবি আছে।
- ওয়াইডাব্লিউ-৫৩১ (টাইপ ৮৫) - চীনের তৈরী এই এপিসিতে একটি ১২.৭ মিমি ভারী মেশিনগান ও ১০ জনের বসার জায়গা আছে। বাংলাদেশের কাছে এই এপিসি ৫০টি আছে।
এন্টি এয়ারক্রাফ্ট আর্টিলারী :
- এম-৫৩/১
- এম-৫৩/২
- টাইপ ৫৫
- টাইপ ৫৬
- টাইপ ৫৮
- টাইপ ৫৯
- টাইপ ৯০
- জেডপিইউ-১
- জেডপিইউ-২৩
- এইচএন-৫
- কিউডাব্লিউ-২ - স্থানীয়ভাবে তৈরী
- আরবিএস-৭০ - অসমর্থিত
এ পযন্ত যারা সেনা প্রধান হয়েছে তাদের তালিকা :
- কর্ণেল এম. এ. রব (জুলাই ১৯৭১-এপ্রিল ১৯৭২)
- মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ (এপ্রিল ১৯৭২-আগস্ট ১৯৭৫)
- মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (আগস্ট-নভেম্বর ১৯৭৫) (৩রা নভেম্বরের অভ্যুত্থানে চাকুরিচূত)
- মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (পুনঃনিয়োগ) (৭ই নভেম্বর ১৯৭৫-ডিসেম্বর ১৯৭৮)
- লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ (ডিসেম্বর ১৯৭৮-অক্টোবর ১৯৮৬)
- লেফটেনেন্ট জেনারেল আতিকুর রহমান (১লা সেপ্টেম্বর ১৯৮৬-নভেম্বর ১৯৯০)
- লেফটেনেন্ট জেনারেল নুরুদ্দিন খান (নভেম্বর ১৯৯০-১৯৯৪)
- লেফটেনেন্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (২০শে মে ১৯৯৪-১৯৯৬)
- লেফটেনেন্ট জেনারেল আবু সালেম মুহাম্মদ নাসিম (১৯৯৬)
- জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান (২৪শে ডিসেম্বর ১৯৯৭-২৩শে ডিসেম্বর ২০০০)
- লেফটেনেন্ট জেনারেল এম হারুনার রশিদ (২৪শে ডিসেম্বর ২০০০-১৬ই জুন ২০০২)
- লেফটেনেন্ট জেনারেল হাসান মাশহুদ চৌধুরী (১৬ই জুন ২০০২-১৫ই জুন ২০০৫)
- জেনারেল মইন উ আহমেদ (১৫ই জুন ২০০৫-১৪ জুন ২০০৯)
- জেনারেল আব্দুল মুবীন (১৫ই জুন ২০০৯ - বর্তমান)
প্রধান যুদ্ধ সমূহ :
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
- পার্বত্য চট্টগ্রাম
শান্তিকালীন কর্মকান্ড :
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ-র UNPSO (United Nation Peace Support Operation) এর সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। ১৯৯১ সালের ১ম উপসাগরীয় যুদ্ধ চলাকালে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২,১৯৩ জন সদস্য বিশিষ্ঠ একটি দল সৌদি আরব এবং কুয়েত-এর শান্তি রক্ষা কাজের পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি রক্ষা কাজে অংশ গ্রহন করে নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালি, উগান্ডা/রুযান্ডা, মোজাম্বিক, প্রাক্তন ইয়োগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিয়ন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরি কোষ্ট ও ইথিওপিয়া। ২০০৬ এর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রায় ৯,৫০০ সৈন্য সারা বিশ্বে জাতিসঙ্ঘ শান্তি-রক্ষী বাহিনীতে কর্মরত আছে, যা অন্য যেকোন দেশ হতে বেশি। এই বাহিনী আবার ১৯৭৫ সালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের সাথে জরিত, যার ফলে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন এবং দেশে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
সুএঃ
Good information.
(Thanks brother)