মনটা ভাল নেই। ভাবলাম কম্পিউটারে বসে কিছু কাজ করে সময়টা পার করি। কিন্তু এরমধ্যে ইলেকট্রিসিটি ও চলে গেছে। ধুর কি করি এখন !!! বারান্দায় এসে বসলাম। বাইরে অন্ধকার দেখতে ভালই লাগছিল। কিন্তু অন্ধকারের বুক ছিড়ে একটা দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। একটা ফুটফুটে বাচ্চা বারবার তার বাবাকে জড়িয়ে ধরছে, যেন কিছু আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা। বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে আগলে ধরে। তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটার বড় ভাই, চাহনিতে বেঁচে থাকার আকুল আবেদন। যাদের কিনা আজ অনেক আনন্দে খেলাধুলা করার কথা ছিল, পড়াশোনা করার কথা ছিল তারা কিনা বেঁচে থাকাটা নিশ্চিত করতে মরিয়া আজ। অনেক খারাপ লাগল দেখে । ঠিক এই দৃশ্যটাই আমি দেখেছিলাম রেডক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের বাইরে।
শুরুটা একটা ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখে। কোন একটা ব্লাড ডোনার গ্রুপে একটা স্ট্যাটাস দেখেছিলাম “দুইজন শিশুর জন্য বি পজেটিভ রক্ত দরকার, তারা দুইজনেই থ্যালাসেমিয়াতে আক্রন্ত।” দেখে একটু খারাপ লেগেছিল। ইচ্ছা হচ্ছিল রক্ত দেয়ার কিন্তু আগেরবার রক্ত দিয়েছি দুইমাসের বেশি হবেনা। তাই অনেকটা এড়িয়ে গেলাম। শুক্রবার কি জানি মনে হল আবার দেখলাম স্ট্যাটাসটা। আসলে বাচ্চাদের প্রতি অন্যরকম একটা দুর্বলতা কাজ করে। ভাবলাম এর আগে তো ১০ বার রক্ত দিয়েছি তেমন কিছুতো মনে হয়নি। এবার না হয় একটু আগেই রক্তটা দিব। অথবা অন্য কোন ব্যবস্থা করা যাবে। চিন্তা করতেই ফোন করলাম বাচ্চার বাবাকে। ফোন নাম্বারটা ওখানেই দেয়া ছিল। উদ্দেশ্য ছিল বাচ্চাগুলোর খবর নেয়া। ওপাশে কিছুক্ষণ রিং হতেই ফোনটা ধরল ভদ্রলোক। বাচ্চাদের খোঁজখবর নিলাম। রক্তের ব্যবস্থাও করে দিব জানালাম। কিন্তু লোকটা এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করল, আমরা কনসার্ট করি কিনা। কথাটা শুনে আমি একটু আগ্রহী হলাম। লোকটা একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গেল। এটা দেখে আমার একটু সন্দেহ হল, লোকটা ধান্দাবাজ না তো আবার। তাই সরাসরি দেখা করতে চাইলাম। বললাম পরদিন সকাল ১০টায় যেন আমাকে ফোন করে আমি রক্ত দিব। লোকটা একটু দেরীতে ফোন করল। জানাল উনি একটু ইসলামিক ইউনিভার্সিটি যাবেন। আমি তাই সময়টা পিছিয়ে ৩টায় ঠিক করলাম। আমি গেলাম একটু দেরী করে, একটা ডোনার বন্ধুকে নিয়ে গেলাম সাথে। ওখানে গিয়েই উপরের দৃশ্যটা দেখেছিলাম।
এরপর পরিচিত হলাম ভদ্রলোকের সাথে। তাদের বাড়ী চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার দক্ষিণ কলাউজানে। কথা শুনে আর একটু অবাক হলাম। যাদের এতক্ষণ বাচ্চা বলছিলাম, তাদের মধ্যে বড়জনের বয়স নাকি ২১ বছর ৬ মাস। নাম কায়সার হামিদ। দেখে বুঝতেই পারিনি বয়স এত হয়ে গিয়েছে। অসুস্থতার কারণে আকৃতি বেশি একটা পরিবর্তন হয়নি। আর ছোট বাচ্চাটার বয়স ৫ বছর। তাদের বাবা জাহাঙ্গীর আলমের সাখে কধা বলে জানলাম তার বড় ছেলে ৬ মাস বয়স থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘ এই সময়টা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করেছেন। আর ছেট বাচ্চাটার নাম রকিবুল হাসান। তার বয়স যখন ৪ বছর তখন থেকেই তার শরীরে থ্যালাসেমিয়া রোগটি ধরা পড়ে। এর মধ্যে তাদের আরেক ভাই একই রোগে আক্রন্ত হয়ে ১৪ বছর বয়সে মারা যায়। এখন বাকী দুই জনের চিকিৎসা করতে করতে বাবা জাহাঙ্গীর আলম নি:স্ব প্রায়। তার আগে কাপড়ের ব্যবসা ছিল। কিন্তু পরিবার আর সন্তানদের চিকিৎসার পিছনে সময় দিতে গিয়ে ব্যবসা আর টিকিয়ে রাখতে পারেন নি। এখন সন্তানদের চিকিৎসা আর রক্ত যোগাড় করতে বেশিরভাগ সময় চলে যায়। কারণ কায়সারের প্রতি ১৫ দিনে ২ ব্যাগ আর রকিবুলের প্রতিমাসে ১ ব্যাগ রক্তের দরকার হয়। অর্থাৎ প্রতিমাসে রক্ত লাগে ৫ ব্যাগ। এই রক্ত যোগাড় করতে বেশ বেগ পেতে হয়। এর মধ্যে ছুটতে হয় সংসারের খরচ যোগাড় করতে। মাঝে মধ্যে ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করে কিছু টাকা যোগাড় করতে পারেন। এই টাকা দিয়ে সঙসারের খরচ আর বাচ্চাদের চিকিৎসার খরচ মেটাতে হয়। কিন্তু যে পরিমাণ টাকা তিনি রোজগার করেন তা দিয়ে সংসার কিংবা চিকিৎসা কোনটাই ঠিকমত চালানো সম্ভব নয়। এরমধ্যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে তেমন সাড়া পান নি। হাসপাতালগুলো ও তেমন ছাড় দিতে চায়না। তবে রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রক্ত নেয়া এবং রক্ত রওগীর দেহে প্রবেশ করানো বাবদ কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাতেই কিছুটা খুশি অসহায় জাহাঙ্গীর আলম। আত্মীয়স্বজন এর প্রসঙ্গ আসতেই তিনি জানালেন, আত্মীয়রা আগে কিছুটা করুণার দৃষ্টিতে তাকালে ও এখন আর আগের মত ভাল চোখে দেখেনা। বরং তারা আসলে বিরক্তই হন। ঢলে রক্তের জন্য চট্টগ্রাম আসা হলেও থাকতে হয় কোন হোটেল বা বোর্ডিং এ। ঔদিন ওনার ২ব্যাগ রক্ত দরকার ছিল। কিন্তু নিলেন ১ব্যাগ। কারণ জানতে চাইলে জানালেন রক্ত নেয়ার পর ক্রসম্যাচ করতে যে টাকা দরকার সেটা তার কাছে নেই। খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন। এখন এভাবে রক্ত বদল করেই তাদের চলছে। তাদের অন্যকোন চিকিৎসা চলছেনা বললেই চলে।
রক্তদিয়ে চলে এলেও চিন্তা করলাম কিছু একটা করতে এদের জন্য। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করা যায়। এ বিষয়ে সাতকানিয়া ব্লগ এর সিইও এর সাথে কথা বলেছি। আমরা একটি ফান্ড গঠন করার চিন্তা করছি। একইসাথে তাদের আর কোন উন্নত চিকিৎসা করানে যায় কিনা সেটাও চিন্তা করছি। তবে এজন্য দরকার সবার সহযোগিতা । হয়তো সবার সহযোগিতা পেলে ভাল কিছু করা সম্ভব। ব্লগে কোন ডাক্তার সাহেব থাকলে একটু চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। আর ফান্ড গঠন এবং অন্য কোন বিষয়ে কোন পরামর্শ থাকলে তা জানাতে পারেন ০১৭১২৫৫১৭৮৬ এবং ০১৭৩০০৮১৮৯৭ নাম্বারে। যারা রক্ত দিতে চান তারাও যোগাযোগ করবেন প্লিজ। রক্তের গ্রুপ B+ ( বি পজেটিভ )। আমরা আপাতত মুক্তধারা ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত সংগ্রহ করছি। আগ্রহীরা এখানেও নিবন্ধন করে রাখতে পারেন। আর্থিক সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : মো: জাহাঙ্গীর আলম, সঞ্চয়ী হিসাব নং-১২৮৬৮/০, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, লোহাগাড়া শাখা, চট্টগ্রাম।
আসুন এই অসহায় পরিবারের পাশে দাড়াই সবাই। আপনার সামান্য সাহায্য হয়তো বদলে দিতে পারে অনেক কিছুই…….
আমি মহসিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 17 টি টিউন ও 89 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অতি সাধারন একজন মানুষ আমি। অন্যের মাঝে সুখ খুঁজি......
kano parbo na eder pase daraty? asun amra sobai mile hat tuli oder pase daranor jonno… 😀