যাত্রা শুরুর কিছু আগে টাইটানিক
আমরা সবাই টাইটানিকের নাম অনেক শুনেছি কিণ্তু প্রকৃত সত্য জানি খুব কম জনেই। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ছোট কাল থেকেই টাইটানিক বিষয়ে এতটাই আগ্রহী ছিলাম যে টাইটানিক সম্পর্কিত কোন লিখাই আমার মন জুড়াতো পারতো না। তাই আমার আজকের টিউনের বিষয় টাইটানিক।
এ শিপইয়ার্ডেই টাইটানিক তৈরি হয়েছিল
ব্রিটিশ সিপিং কোম্পানি White Star Line এর মালিকানাধিন টাইটানিকের পূর্ণনাম RMS TITANIC (RMS – Royal Mail Ship)। তখনকার সবচেয়ে বিশাল এবং বিলাসবহুল এ জাহাজটি ইউনাইটেড কিংডম এর বেলফাস্টের হারল্যান্ড & ওলফ্ শিপইয়ার্ডে তৈরী করা হয়।
টাইটানিকের এক পার্শ্ব
জন পীয়ারপন্ট মরগান নামক একজন আমেরিকান ধনকুবের এবং ইন্টারন্যাশনাল মার্কেন্টাইল মেরিন কোং এর অর্থায়নে ১৯০৯ সালের ৩১ই মার্চ সর্বপ্রথম টাইটানিকের নির্মান কাজ শুরু হয় এবং তখনকার প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন (বর্তমান প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন) ডলার ব্যয়ে এর নির্মান কাজ সম্পন্ন হয় ৩১ মার্চ ১৯১২ সালে। এর দৈঘ্য ছিল প্রায় ৮৮২ ফিট দুই ইঞ্চি(প্রায় ২৬৯.১ মিটার)এবং প্রস্থ ছিল প্রায় ৯২ ফিট (২৮ম মিটার)। এ জাহাজটি ওজন ছিল প্রায় ৪৬৩২৮ লং টন।
[বি.দ্র. – ১ লং টন = ১০১৬.০৪৭ কে.জি (UK তে ব্যবহৃত হয়), ১ সর্ট টন = ৯০৭.১৮৫ কে.জি(USA তে ব্যবহৃত হয়), ১ মেট্রিক টন = ১০০০ কে.জি.]।
টাইটানিকের প্রপেলার
পানি থেকে জাহাজটির ডেকের উচ্চতা ছিল ৫৯ ফিট(১৮মিটার)। এতে চার সিলিন্ডারের দুটি রিসিপ্রোকল ইঞ্জিন(এক ধরনের পিস্টন ইঞ্জিন), ট্রিপল এক্সপ্যানশান স্টীম ইঞ্জিন এবং তিনটি প্রোপেলারকে চালানের জন্য একটি লো পেসার টারবাইন ছিল। এর ২৯টি বয়লার সক্রিয় রাখার জন্য ছিল ১৫৯ টি কয়লা পোড়ানো চুলো, যা সর্বোচ্চ ২৩ নট(৪৩কি.মি./ঘণ্টা) গতিতে জাহাজটিকে চালাতে পারতো।
টাইটানিকের চিমনিগুলো এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছিল
এ জাহাজের চারটি বিশাল চিমনির তিনটি ছিল সক্রিয় চতুর্থটি ব্যবহার করা হত বায়ু চলাচলের জন্য বা ভেন্টিলেশনের জন্যে। প্রকৃত পক্ষে জাহাজটিতে এর চতুর্থ চিমনিটি লাগানো হয়েছিল এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। এ জাহাজটি একই সাথে সর্বোচ্চ ৩৫৪৭ জন প্যাসেঞ্জার ও ক্রু বহন করতে পারতো।
টাইটানিকের বিলাসবহুল একটি সিড়ি
টাইটানিকের ফার্স্টক্লাস যাত্রীদের জন্য বিলাসবহুল ডাইনিং যেখানে একই সাথে ৫৫০ জন খাবার খেতে পারতো
টাইটানিক ব্যয়বহুলতা এবং চাকচিক্যের দিক থেকে তখনকার সকল জাহাজকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল। টাইটানিকের অভ্যন্তরে ছিল সুদৃশ্য সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, স্কোয়াস খেলার কোর্ট(একধরনের রেকেট খেলা), ব্যয়বুহল তুর্কিস বাথ, বিশাল এবং ব্যয়বহুল ক্যাফে এবং ফার্স্ট ক্লাস ও সেকেন্ড ক্লাস উভয় যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশাল লাইব্রেরী। তখনকার সকল আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছিল এ জাহাজটিতে। এ জাহাজের ফার্স্ট ক্লাসের জন্য তিনটি এবং সেকেন্ড ক্লাসের জন্য একটি সহ মোট চারটি লিপ্টের ব্যবস্থা ছিল। এর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও ছিল খুবই উন্নত ধরনের। আর এ বিলাসবহুল জাহাজটিতে চড়তে ফার্স্টক্লাস যাত্রীদেরকে প্রচুর টাকা গুনতে হয়েছিল। ফার্স্টক্লাস যাত্রীদের জন্যে সবচেয় ব্যয়বহুল প্যাকেজটিতে আটলান্টিক একবার অতিক্রম করতেই ব্যয় করতে হত তখনকার প্রায় ৪৩৫০ ডলার [যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৯৫৮৬০ ডলার বা বর্তমান বাংলাদেশী টাকায় ৬৭ লাখ টাকারও বেশি]।
এ লাইফবোটগুলোই টাইটানিক থেকে ফিরে এসেছিল
টাইটানিক প্রায় ৬৪ টি লাইফবোট বহন করতে সক্ষম ছিল যা প্রায় ৪০০০ লোক বহন করতে পারতো। কিন্তু তখনকার ব্রিটিশ নীতিমালা অনুসারে ১০০০০ হাজার টনের চেয়ে বেশি ভারী জাহাজকে কমপক্ষে ১৬টি লাইফবোট নিতে হতো। তাই টাইটানিক আইনগতভাবে যত লাইফবোর্ড নেয়া দরকার তারচেয়ে বেশি ২০টি লাইফবোর্ড নিয়ে যাত্রা করেছিল যা টাইটানিকের মোট যাত্রীর ৩৩% বা মাত্র ১১৭৮ জন যাত্রী বহন করতে পারতো।
টাইটানিকের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ
টাইটানিকের করুন পরিনতি: “নিরাপদ ক্যাপ্টেন”, “মিলিয়নিয়ার ক্যাপ্টেন” ইত্যাদি বিভিন্ন নামে খ্যাত এবং ১৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তখনকার পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংল্যান্ডের রাজকীয় কমান্ডার এডওয়ার্ড জন স্মিথের নেতৃত্বে টাইটানিক ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাইদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
টাইটানিকের যাত্রা পথ
১৪ই এপ্রিল ১৯১২ তারিখ রাত্রে নিস্তব্দ সমুদ্রের তাপমাত্রা শূণ্য ডিগ্রীরও কাছাকাছি নেমে যায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলেও চাঁদ দেখা যাচ্ছিল না। সামনে আইসবার্গ(বিশাল ভাসমান বরফখন্ড) আছে এ সংকেত পেয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজের গতি সামান্য দক্ষিন দিকে ফিরিয়ে দেন। সেদিনই দুপুর ১:৪৫ এর দিকে Amerika নামক একটি জাহাজ রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ করে টাইটানিকের সামনে বড় একটি আইসবার্গ আছে বলে সর্তক করে দেয় কিন্তু টাইটানিকের রেডিও যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা জ্যাক পিলিপস্ এবং হ্যারল্ড ব্রীজ এ তথ্যটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে টাইটানিকের মূল্য নিয়ন্ত্রনকেন্দ্রে এ তথ্য প্রেরন করেনি। একই দিনেই পরবর্তিতে Mesaba নামক আরেকটি জাহাজ টাইটানিকের পথে অবস্থিত ঐ বিশাল আইসবার্গটির ব্যাপারে আবারো সতর্ক করে দেয় কিন্তু দূভার্গ তথ্যটি এবারো রেডিও অপারেটরদের কারনে টাইটানিকের মূল যোগাযোগ কেন্দ্রে পৌছায়নি।
এভাবেই টাইটানিকের সাথে আইসবার্গের সংঘর্ষে টাইটানিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়
সেদিনই রাত ১১:৪০ এর সময় টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষন কারীরা সরাসরি টাইটানিকের সামনে সেই আইসবার্গটি দেখতে পায় কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মুর্ডক আকস্মিকভাবে বামে মোড় নেওয়ার অর্ডার দেন এবং জাহাজটিকে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে চালনা করতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন। টাইটানিককে আর বাঁচানো সম্ভব হয় নি। এর ডানদিক আইসবার্গের সাথে প্রচন্ড ঘষা খেয়ে চলতে থাকে। ফলে টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে চিড় দেখা দেয়।
এভাবেই পানি ঢোকার ফলে জাহাজের সামনের অংশ প্রথমে ডুবতে থাকে
জাহাজটি সর্বোচ্চ চারটি পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে ভেসে থাকতে পারতো কিন্তু পানিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ৫ টি কম্পার্টমেন্ট। এ পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্টগুলো ওজনের কারনেই জাহাজটির সামনের দিক আস্তে আস্তে পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। এ আকস্মিকতায় ক্যাপ্টেন স্মিথ মূল নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রে আসেন এবং জাহাজটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেন। ১৫ তারিখ মধ্যরাত্রির দিকে লাইফবোটগুলো নামানো শুরু হয়।
টাইটানিক বিভিন্ন দিকে জরুরী বিপদ সংকেত পাঠিয়েছিল। যেসকল সিপগুলো সাড়া দিয়েছিল তার অন্যতম হল মাউন্ট ট্যাম্পল, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং টাইটানিকের সহোদর অলেম্পিক। সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত Carpathia জাহাজটি টাইটানিকের প্রায় ৯৩ কি.মি. দূরে ছিল। সেখান থেকে টাইটানিক পর্যন্ত পৌছাতে জাহাজটির সময় লাগতো প্রায় ৪ ঘণ্টা। কেইপ রেইসের, নিউফাউন্ডল্যান্ডের ওয়ার্লেস স্টেশনটিই একমাত্র ভূমিভিত্তিক ওয়ার্লেস স্টেশন যেটি টাইটানিকের বিপদ সংকেত পেয়েছিল।
এভাবেই টাইটানিকর সামনের অংশ প্রায় সম্পূর্ণ ডুবে যাওযার সময় জরুরী রকেট ছোড়া হয়েছিল
টাইটানিকের নিয়ন্ত্রনকেন্দ্র হতে দূরবর্তী একটি জাহজের আলো দেখা যাচ্ছিল যার পরিচয় এখনো রহস্যে ঘেরা। কেউ কেউ বলে সেটি ছিল Californian আবার কেউ কেউ বলে সেটি ছিল Sampson। টাইটানিক থেকে ওয়ারলেস মাধ্যমে যোগাযোগে কোন সাড়া না পেয়ে পরবর্তিতে মর্স ল্যাম্প এবং শেষে জরুরী রকেট ছোড়ার মাধ্যমেও জাহাজটির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু জাহাজটি একবারও সাড়া দেয়নি।
টাইটানিক দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট আগে Californian সিপের রেডিও অপারেটর টাইটানিকের সাথে যোগাযোগ করে আইসবার্গটি সম্পর্কে বলতে চেয়েছিল কিন্তু টাইটানিকের রেডিও অপারেটর ক্লান্ত জ্যাক পিলিপস্ রাগান্বিত ভাবে বলে "আমি কেইপ রেসের সাথে কাজে ব্যস্থ এবং লাইন কেটে দেয়। " ফলে Californian সিপের রেডিও অপারেটর তার ওয়ার্লেস বন্ধ করে ঘুমাতে চলে যায়। ডুবার পূর্ব-মূহুর্ত্য পর্যন্ত টাইটানিকের রেডিও অপারেটররা মর্স কোডের মাধ্যমে CQD মেসেজ এবং শেষমূহুর্ত্যের দিকে কারো কারো মতে টাইটানিক থেকে মর্স কোডের মাধ্যমে SOS ম্যাসেজও প্রেরন করা হয়। (ব্রিটিশ নাবিকরা CQD বেশি পছন্দ করতো)
রাত ০২:০৫ দিকে জাহাজের সম্পূর্ণ মাথাই প্রায় পানির কাছাকাছি চলে আসে। ০২:১০ এর দিকে প্রপেলারকে দৃশ্যমান করে দিয়ে জাহাজের পেছনের দিক উপরের দিকে উপরে উঠতে থাকে। ০২:১৭ এর দিকে জাহাজের সামনের দিকের ডেক পর্যন্ত পানি উঠে যায়। এ মূহুর্তেই শেষ দুটি লাইফবোট টাইটানিক ছেড়ে যায় বলে এত বিস্তারিত ভাবে জানা গেছে। জাহাজের পেছনের দিক ধীর ধীর আরো উপরের দিকে উঠতে থাকে এসময় জাহাজের বিদ্যুতিক সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায় এবং চারদিকে অন্ধকার হয়ে যায়। এর কিছুক্ষন পরেই ভারের কারনে টাইটানিকের পেছনের অংশ সামনের অংশ থেকে ভেঙ্গে যায় এবং জাহাজের সম্মূখভাগ সম্পূর্ণরুপে পানির নিচে চলে যায়। ফলে জাহাজের পেছনের অংশ ধীরে ধীরে খাড়া হতে হতে একেবারে লম্বভাবে খাড়া হয়ে যায়। বায়ুজনিত কারনে এ অংশটি কিছুক্ষন ভেসে থাকার পর রাত ০২:২০ এর দিকে ধীরে ধীরে জাহাজের এ বাকী অংশটিও সমূদ্রের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়।
মাএ দুটি লাইফবোট আবার উদ্ধার কাজে ফিরে এসেছিল। এর মধ্যে লাইফবোট-৪ পাঁচজন যাত্রীকে উদ্ধার করেছিল যার মধ্যে দুজন পরবর্তিতে মারা যায়। একঘণ্টার মধ্যে লাইফবোট-১৪ ফিরে আসে এবং আরো ৪ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে যাদের একজন পরে মারা যায়। সকাল ০৪:১০ এর দিকে Carpathia জাহাজটি এসে পৌছায় এবং বেঁচে থাকাদের উদ্ধার করা শুরু করে। সকল ০৮:৩০ মিনিটে জাহাজটি নিউ ইয়র্কের দিকে রওনা দেয়।
যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা:
Category | Number aboard | Number of survivors | Percentage survived | Number lost | Percentage lost |
First class | 329 | 199 | 60.5 % | 130 | 39.5 % |
Second class | 285 | 119 | 41.7 % | 166 | 58.3 % |
Third class | 710 | 174 | 24.5 % | 536 | 75.5 % |
Crew | 899 | 214 | 23.8 % | 685 | 76.2 % |
Total | 2, 223 | 706 | 31.8 % | 1, 517 | 68.2 % |
টাইটানিক দূর্ঘটানায় অসংখ্যা পরিবার তাদের একমাত্র উপার্জন কারীকে হারিয়েছিল। বিশেষ করে তৃতীয় শ্রেণীর ক্ষেত্রে, তারা সবই হারিয়েছিল। হ্যামশায়ার ক্রোনিকল পত্রিকার মতে টাইটানিক দূর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল সাউদাম্পটনের অধিবাসীরা। এ পত্রিকাটির মত্যে টাইটানিক দূর্ঘটনায় সাউদাম্পটনের প্রায় ১০০০ পরিবার সরাসরিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় যার মধ্যে ৫০০ পরিবার কমপক্ষে নিজেদের পরিবারের একজনকে হারিয়েছিল। এ দূর্গতদের সাহায্যের জন্য অনেক চ্যারিটিও তখন গড়ে উঠেছিল।
সমুদ্রের বুকে শায়িত টাইটানিক
টাইটানিকের পুনরাবিষ্কার: ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া এ জাহাজটি Side-scan sonar পদ্ধতিতে ১৯৮৫ সালে পূনরায় আবিষ্কার করা হয়। এর আগে টাইটানিককে পুনরাবিষ্কারের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। বর্তমান 41°43′55″ উত্তর অক্ষাংশ এবং 49°56′45″পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে সমুদ্রের পৃষ্ঠ হতে প্রায় ১২৪৬৭ ফুট বা ৩৮০০ মিটার নিচে নীরবে সমায়িত হয়ে আছে টাইটানিক, হয়ত থাকবেও চিরদিন। সেখানে টাইটানিক ডুবার পর থেকেই প্রচন্ড পানির চাপ ও প্রচন্ড ঠান্ডায় বেঁচে থাকা বিভিন্ন অনুজীব বা জীবানুগুলো টাইটানিকের স্টীল সাভার করা শুরু করেছে এবং তা এখনো অব্যহত আছে। তাছাড়া বিভিন্ন বৈজ্ঞানীক গবেষনা এবং মূল্যবান শিল্পসাম্রগ্রী উদ্ধারে রত সাবমেরিনগুলোর কারনেও টাইটানিকের এ ক্ষয়ে যাওয়ার গতি বেড়ে গেছে বহুগুন। National Oceanic and Atmospheric Administration এর মতে ক্ষয়ে যাওয়ার এ গতি অব্যাহত থাকলে পরবর্তি ৫০ বছরেই টাইটানিক সমুদ্রের গর্ভে চিরতরে নিশ্চীহ্ন হয়ে যাবে।
টাইটানিক ব্যান্ড
টাইটানিকের অন্যতম আশ্চর্যজনক ব্যপার হল টাইটানিক ব্যান্ড। ওয়ালিস হার্টলির নেতৃত্বে এ ব্যান্ডটি প্রথমদিকে ফার্স্টক্লাস লাউঞ্জে, পরবর্তিতে ডেকের সামনের অর্ধেকের কোথাও চলে আসে এবং মানুষকে ভয়শূণ্য, উদ্দমী ও সাহসী করে তুলতে জাহাজটি ডুবার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত বাদ্য বাজিয়ে গিয়েছিল। টাইটানিকের সাথে ব্যান্ডটির সকল সদস্যও চিরতরে সমূদ্রে বিলীন হয়ে যায়।
অনেকেরই ধারনা ছিল টাইটানিক জাহাজে কোন অভিশাপ ছিল। এ যুক্তি প্রমান করার অন্যতম একটি কারন হিসেবে তারা দেখিয়েছিল টাইটানিকের নম্বর ৩৯০৯০৪। পানিতে এর প্রতিবিম্বের পাশ পরিবর্তন করলে হয় no pope।
সমুদ্রে শায়িত টাইটানিকের সামনের অংশ
টাইটানিক সারা বিশ্বে এতটাই পরিচিতি পেয়েছিল যে, এর উপর ভিত্তি করে অসংখ্য প্রতিবেদন চিত্র এবং ছায়াছবি তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনটিই মানুষের চাওয়াকে পূরন করতে পারেনি। টাইটানিকের প্রতি মানুষের এ টান খুব ভালো ভাবেই অনুভব করেছিলেন একজন, তিনি হলেন চলচিত্র পরিচালক জ্যামস্ ক্যামেরুন। সেকারনেই প্রচন্ড রিস্ক থাকা সত্ত্বেও তিনি তখন পর্যন্ত যেকোন চলচিত্র তৈরীতে সবচেয়ে বেশি ২০০ মিলিয়নেরও অধিক টাকা ব্যয় করে টাইটানিক ছবিটি নির্মান করেন। বেশির ভাগ সমালোচকই বলেছিল ছবিটি এত টাকা ব্যবসা করতে পারবে না। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সমস্ত সমালোচকরা তাদের ধারনা পাল্টে যায় এবং তারা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল যে টাইটানিক ডোবার ৮৫ বছর পরও এর প্রতি মানুষের আগ্রহ একটুও কমেনি ববং বহুগুনে বেড়েছে। ছবিটি্ এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যে সারা বিশ্বথেকে প্রায় ১.৮৩৫ বিলিয়ন (১৮৩৫ মিলিয়ন) ডলার আয় করে এবং পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়ে ১১টি অস্কারসহ আরো অন্যান্য ৭৬টি পুরস্কার জিতে নেয়।
টাইটানিক হয়ত একদিন ঠিকই সমুদ্রের গর্ভ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কিন্তু মানুষের মনে টাইটানিক বেঁচে থাকবে চিরদিন।
যুগ যুগ ধরে অসংখ্য বিশেষজ্ঞরা টাইটানিককে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করে আসছে কিন্তু তারা যত ব্যাখ্যাই দেয়ার চেষ্ট করুক না কেন : টাইটানিক চিরকালই থাকবে রহস্যের আড়ালে ঘেরা, সব জানার পরও যেন জানার আরও বহুকিছু রয়ে যায়।
টাইটানিকের খুবই দুর্লভ কিছু ছবি পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করতে পারেন.
http://www.maritimequest.com/liners/titanic_page_1.htm
samehood ভাইয়ের দেয়া নিচের লিংকটিতে গিয়ে টাইটানিক সম্পর্কিত আরো রহস্যময় একটি লিখা পড়তে পারেন।
http://kangalikothon.blogspot.com/search/label/Princess%20of%20Amen-Ra
আমার এ টিউনটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে দয়া করে মন্তব্য করে জানান।
আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: ইউকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট।
আমি TareqMahbub। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 47 টি টিউন ও 464 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Programmer at Business Innovation & Incubation Center, Banani. Worked @ Harry & Michael IT Center as a Web Developer. Worked @ Kazi IT Center as a Web Developer, Graphic Designer, Virtual Assistant. Worked @ IQRA MODEL SCHOOL & COLLEGE as a full time teacher & typist. Student at American International...
চমৎকার একটি টিউন।ভাই আপনের এই লিখাটির অনেক কিছুই জানতাম আবার অনেক কিছুই জানতাম না।এই অসাধারন টিউনটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।