কীভাবে হবেন ডাটা সাইন্টিস্ট? [পর্ব-০২] :: ১০ টি সফট স্কিল

Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে।

ডাটা সাইন্টিস্ট হতে যেমন আপনার কিছু হার্ড স্কিল প্রয়োজন তেমনি কিছু সফট স্কিলও লাগবে। সফট স্কিল হল আপনার অন্তর্নিহিত গুণাবলির সমষ্টি যেগুলো আপনাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবেলা কর‍তে সাহায্য করবে। চলুন ডাটা সাইন্টিস্ট হতে যে সফট স্কিল গুলো প্রয়োজন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।

১. কমিউনিকেশন

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল হল কমিউনিকেশন স্কিল। আপনি যদি টেকনিক্যাল ফিল্ডে কাজ করেন তাহলে নন-টেকনিক্যাল স্টেকহোল্ডারদের সাথে সঠিক ভাবে কমিউনিকেশন করাটা জরুরি। সবাই টেকনিক্যাল বিষয় বুঝে না, তাদেরকে সহজ ভাষায় বুঝাতে হয়, ডাটার ইনসাইট, ফাইন্ডিং, এনালাইসিস বিষয়ে ধারণা দিতে হয়৷ আর তাই ডাটা সাইন্টিস্টদের কমিউনিকেশন স্কিল থাকা জরুরী।

২. প্রবলেম সলভিং

ডাটা সাইন্টিস্টদের প্রতিদিন জটিল জটিল সব সমস্যা সমাধান করা লাগতে পারে এজন্য তাদের প্রবলেম সলভিং স্কিলটা থাকা দরকার। ডাটা সাইন্টিস্টদের টাস্ক গুলো এক করতে হয়, সেগুলো ভাঙ্গতে হয় এবং ইস্যু খুঁজে বের করা সমাধান দিতে হয়। আপনি যেকোনো ডাটার দিকে তাকিয়েই ইস্যু ধরতে পারবেন না আর জন্যই প্রবলেম সলভিং স্কিল প্রয়োজন।

৩. ক্রিটিক্যাল থিংকিং

আপনাকে প্রবলেম সলভিং স্কিলের সাথে সাথে ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কিলও অর্জন করতে হবে। সমাধান বের করার আগে সমস্যার কারণটা জানতে হবে, কি কারণে এমনটি হল সেটা বের করতে হবে৷ সমাধান বের করার পর ভবিষ্যতে এমন সমস্যা হবে কিনা বা একই সমাধান কাজ করবে কিনা যাচাই করে দেখতে হবে।

ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর মধ্যে আরও পড়ে, ডাটার কোয়ালিটি মূল্যায়ন করতে পারা এবং ডাটা ড্রাইভেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে ফলাফল ব্যাখ্যা করতে পারা।

৪. বিজনেস বুঝা

আপনাকে ডাটা সাইন্টিস্ট হতে বিজনেস মডেল বুঝতে হবে এবং বিজনেস স্কিল প্রয়োগ করা জানতে হবে৷ আপনাকে বুঝতে নির্দিষ্ট এনালিটিক্স এর প্রেক্ষিতে কোম্পানি কীভাবে চালাতে হবে। যখন আপনি বুঝতে পারবেন কীভাবে এনালিটিক্স ডাটা গুলো কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় এবং এপ্লিকেশন বা রিপোর্ট তৈরি করা যায় তখন আপনি হতে পারবেন সফল ডাটা সাইন্টিস্ট।

৫. টাইম ম্যানেজমেন্ট

ডাটা সাইন্টিস্ট হিসেবে একজনকে একদিন মাল্টিপল টাস্ক নিয়ে কাজ করতে হয়। যদি আপনার উপযুক্ত টাইম ম্যানেজমেন্ট না থাকে তাহলে প্রোডাক্টিভিটি যেমন ব্যহত হবে তেমনি খুব তারাতাড়ি আপনি হতাশ হয়ে যেতে পারেন। এজন্য আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিলটি থাকতে হবে।

ট্রায়েলে কাজ করে আগে ধারণা নিন কাজ গুলোতে কেমন সময় ব্যয় হয়। এরপর ডাটা ক্লিনিং, এনালাইসিস, এর মত কাজ গুলো নিজের সুবিধা মত টাইমে করার চেষ্টা করুন।

৬. টিমওয়ার্ক

ডাটা সাইন্টিস্ট হিসেবে আপনাকে টিমওয়ার্ক করতে হবে। আপনি যখন ডাটা সাইন্স শিখছেন তখন হয়তো একা প্রজেক্ট ম্যানেজ করছেন কিন্তু যখন কোন কোম্পানির হয়ে কাজ করবেন তখন আপনাকে টিমওয়ার্ক করতে হবে। কয়েকজন এক সাথে কাজ করতে হবে।

টিমওয়ার্কিং এ আবার কমিউনিকেশন স্কিল গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে টিম মেম্বারদের সাথে সঠিক কমিউনিকেশন মেইনটেইন করতে হবে, সময় সময় খোঁজ নিতে হবে তারা কি করছে, কাজের অগ্রগতি কি রকম ইত্যাদি। আপনি নিজেও কোন সমস্যায় পড়ে গেলে টিমের কাজ থেকে সাহায্য চাইতে পারেন।

আপনি একই সাথে অন্যান্য এক্সপার্টদের সাথেও কোলাব করে কাজ করবেন যেমন, বিজনেস এনালিটিক্স, প্রোডাক্ট ম্যানেজার ইত্যাদি।

৭. প্রেজেন্টেশন

ডাটা সাইন্টিস্ট হতে আপনার প্রেজেন্টেশন স্কিল থাকতে হবে। আপনি ডাটা এনালাইসিস করে কী কী পেয়েছেন, সেগুলোর ব্যাখ্যা সঠিক ভাবে করার উপর আপনার প্রেজেন্টেশন স্কিল নির্ভর করে। যে পক্ষ গুলোর কাছে ডাটা উপস্থাপন করছেন তারা আপনার কথা বুঝতে পারছে কিনা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে একজন ভাল স্টোরি টেলার হতে হবে।

বিভিন্ন ডাটা প্রেজেন্টেশন টুলেও আপনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন যেমন, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন ইত্যাদি৷ প্রেজেন্টেশনের ব্যাপারটা মূলত প্র্যাকটিসের ব্যাপার, যতই প্র্যাকটিস করবেন ততই এই স্কিল আপনার মধ্যে সমৃদ্ধ হবে।

৮. এরিয়া এক্সপার্টাইজ

কোন কোম্পানির সাথে যখন আপনি কাজ করবেন তখন প্রতিনিয়ত কাজ করার মাধ্যমে আপনার মধ্যে নির্দিষ্ট কাজের স্কিল তৈরি হবে। যদি আপনার ফিল্ডটি উদ্ভাবনী হয় তাহলে নিজেকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করুন, নিজেকে সেই ফিল্ডে এক্সপার্ট হিসেবে গড়ে তুলুন। ডাটা ডাটা সাইন্টিস্ট হিসেবে এটি আপনাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করবে।

৯. সেলফ ডেভেলপমেন্ট

যে ফিল্ড গুলো প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে সেই ফিল্ড গুলোতে নিজেকে সব সময় এগিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। ডাটা সাইন্টিস্ট হিসেবে আপনার শেখা কখনো শেষ হবে না, প্রতিনিয়ত আপনাকে নতুন কিছু শিখতে হবে। কাজের পাশাপাশি নিজের সেলফ ডেভেলপমেন্ট করতে হবে।

ফুল টাইম ট্রেনিং নিতে হবে এমন নয় আপনি আর্টিকেল পড়তে পারেন, নতুন টুল এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন এবং টিউটোরিয়াল দেখতে পারেন। ছোট ছোট বিষয় গুলো আপনাকে ডে টু ডে টাস্কে দারুণ সাহায্য করবে।

১০. নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা

একজন ডাটা সাইন্টিস্টকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়। সেই সব তথ্যের গোপনীয়তা ধরে রাখার মত যোগ্যতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে। ডাটা কালেকশন, এটি ব্যবহার করা এবং শেয়ার করায় আপনাকে কিছু ইথ্যিক্যাল গাইডলাইন ফলো করতে হবে। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে কিছু তথ্য প্রাইভেট এবং সেগুলোর গোপনীয়তা বজায় রাখা জরুরী। এজন্য কোম্পানি টার্ম কন্ডিশন এবং পলিসি ভাল করে জেনে রাখা উচিৎ।

শেষ কথা

ডাটা সাইন্টিস্ট হতে হার্ড স্কিল সফট স্কিল উভয় থাকা উচিৎ। আশা করছি ডাটা সাইন্টিস্ট হতে যে স্কিল গুলো প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে ভাল একটা ধারণা আপনি পেয়েছেন।

তো আজকে এ পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী টিউনে সেই পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস