সহজ ভাষায় ব্লকচেইন প্রযুক্তির সুস্পষ্ট ধারনা

টিউন বিভাগ প্রোগ্রামিং
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

 

 

ব্লকচেইন সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় চেইন অফ ব্লক যা ভাঙ্গলে হয়, ব্লকচেইন = ব্লক + চেইন। প্রতিটি ব্লকে আগের ব্লকের ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ভ্যালু থাকে যা টাইমস্ট্যাম্প ও লেনদেনের ডেটার সমন্বয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি ব্লক হ্যাশিং (অ্যালগরিদম) এর মাধ্যমে উচ্চ মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যার ফলে কেউই এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সহজ ভাষাই বলতে গেলে সম্পূর্ণ অটোমেটেড এবং তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই নিরাপদ উপায়ে A থেকে B এ তথ্য প্রেরণ করার একটি সহজ পদ্ধতি।

একটু মনোযোগ দিয়ে টার্মটি বোঝার চেস্টা করুন

ব্লকচেইন মানে বলা হচ্ছে ব্লক দিয়ে তৈরি চেইন বা ব্লকের চেইন। চেইন অর্থ আমরা সবাই জানি.।
অনেকগুলো একই বস্তু বা ম্যাটেরিয়াল পাশাপাশি একটির সাথে আরেকটি কানেক্ট করে সেগুলোকে একটি শিকলের মত করাকেই আমরা চেইন বুঝি। ব্লকচেইনের ক্ষেত্রে যে ব্লকগুলোর দ্বারা এই চেইনটি তৈরি করা হয় সেই ব্লকগুলো মূলত ইনফরমেশন বা ডাটা স্টোর রাখে।
ব্লকচেইন টেকনোলজিটি অনেক আগে থেকেই আছে এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারও হয়ে আসছে। কিন্তু সাধারন মানুষের এই টেকনোলজিটির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় মূলত ২০০৯ সালে বিটকয়েন নামের ক্রিপটোকারেন্সিটি উদ্ভাবন হওয়ার পরে।

টেকনিক্যালি বলতে হলে ব্লকচেইন হচ্ছে একটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার যেটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। ব্লকচেইনের ব্লকগুলোর মধ্যে যখন একটি ডেটা ইন্টার করা হয়, তখন ওই ডেটাটিকে ডিলিট করা বা ডেটাটির কোন ধরনের পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব।

কেনো অসম্ভব?
এটা জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে যে এই ব্লকগুলোর মধ্যে কি থাকে। সম্পূর্ণ ব্লকচেইনের প্রত্যেকটি সিঙ্গেল ব্লকে মূলত তিনটি জিনিস থাকে- ডেটা, হ্যাশ এবং সেইম চেইনের আগের ব্লকটির হ্যাশ। অর্থাৎ, ব্লকচেইনের থাকা প্রত্যেকটি ব্লকে পার্সোনাল ডেটা এবং হ্যাশ থাকার পাশাপাশি আগের ব্লকের হ্যাশ স্টোর থাকে।

এবার দেখি হ্যাশ কি?
হ্যাশ হচ্ছে মূলত একটি আইডেন্টিফায়ার। প্রত্যেকটি ব্লকের হ্যাশ তার একেবারেই নিজস্ব এবং প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট। অর্থাৎ, দুটি ব্লকের হ্যাশ কখনোই একই হতে পারবে না।
এই বিষয়টি অনেকটা মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মত। দুটি মানুষের চেহারা অনেক সময় মিলে গেলেও যেমন একই ফিঙ্গারপ্রিন্ট হবেনা, ঠিক তেমন দুটি ব্লকে ডেটা অনেক সময় মিলে গেলেও হ্যাশ কখনো মিলবে না। আর এই হ্যাশগুলো জেনারেট হয় প্রত্যেকটি ব্লকের স্টোর করা ডেটা অনুযায়ী। যার মানে, একটি ব্লকের ডেটা যদি কোনরকম পরিবর্তন করা হয়, তাহলে ওই ব্লকটির হ্যাশও চেঞ্জ হয়ে যাবে।
এতটুকু ক্লিয়ার?

এবার একটু ভাবুন, প্রত্যেকটি ব্লকে কেন তার আগের ব্লকের হ্যাশও থাকে?

প্রত্যেকটি ব্লক যদি তার আগের ব্লকে যুক্ত থাকা হ্যাশটিও রাখে, তাহলে কোন ব্লকের ডেটা কেউ ইচ্ছামত চেঞ্জ করে ফেলতে পারবে না। তাই ব্লকচেইনে ইন্টার করা প্রত্যেকটি ডেটা ডিলিট করা বা চেঞ্জ করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, এক্ষেত্রে আপনি যদি একটি ব্লকে থাকা ডেটা চেঞ্জ কর‍তে চান, তাহলে আপনাকে ওই ব্লকটির সাথে তার আগের সবগুলো ব্লকের ডেটা চেঞ্জ করতে হবে, কেননা, ডেটা চেঞ্জ করার সাথে সাথে ডেটার হ্যাশ ভ্যালু পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর যখন দুটি ব্লকের স্টোর থাকা হ্যাশ ভ্যালু মিলবেনা ঠিক তখনই ঐ ব্লকটি তার আগের ব্লকে কানেক্ট থাকার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে এবং টোটাল সিস্টেমটি ইনভ্যালিড হয়ে যাবে। আশাকরি এতক্ষনে বুঝে গিয়েছেন ব্লকচেইন টেকনোলজি কিভাবে ডেটা সিকিউরিটি নিশ্চিত করে।

ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে?
ব্লকচেইন সিকিওর হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এটির নেটওয়ার্ক ডিসট্রিবিউটেড। ব্লকচেইন মূলত একটি Peer-to-peer(P2P) নেটওয়ার্ক তৈরি করে। যেখানে ব্লকচেইনের প্রত্যেকটি ব্লকের ডেটা ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকা যেকোনো ব্যক্তি ব্লকগুলোকে ভেরিফাই করতে পারে।
যখন কোন নতুন একজন এই ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে রেজিস্টার করে, তখন তার সামনের এবং তার আগের সব ব্লকগুলির কপি সে পেয়ে যায় এবং সে প্রত্যেকটি ব্লককে ভেরিফাই করে এবং নিশ্চিত করে যে ব্লকচেইনে থাকা প্রত্যেকটি ডেটা এখনও ঠিক আছে। এভাবে সে ব্লকচেইন নেটয়ার্কের আওতায় প্রবেশ করে। ব্লকচেইনের প্রত্যেকটি ব্লক যত বেশি বার ভেরিফাই করা হয়, ডেটাগুলো ততই বেশি অপরিবর্তনীয় হয়ে ওঠে। মুলত এভাবেই ব্লকচেইন টেকনোলজি এগিয়ে যেতে থাকে।
ব্লকচেইনের তিনটি মেইন ভিত্তি হল, তথ্য বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization), স্বচ্ছতা (Transparency) আর তথ্য অপরিবর্তনীয়তা (Immutability)।

আমরা সবাই জানি যে বিটকয়েন ট্র্যানজেকশনগুলো ব্লকচেইন টেকনোলজির ওপরে ভিত্তি করে কাজ করে।
চলুন দেখি এটি কিভাবে কাজ করে?

ধরুন, আপনার কাছে ২টি বিটকয়েন আছে এবং আপনি সেখান থেকে ১টি বিটকয়েন আমাকে সেন্ড করতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এই অ্যামাউন্টটি আপনার ওয়ালেট থেকে আমার ওয়ালেটে ট্রান্সফার হবে।

এখন দেখবো কিভাবে ব্লকচেইন আমদের এই লেনদেন সম্পন্ন করবে।

যখন আপনি আমার ওয়ালেট অ্যাড্রেসে বিটকয়েনটি পাঠিয়ে দেবেন, ঠিক তখন এই লেনদেনের ডিটেইলস নিয়ে ব্লকচেইনে একটি নতুন ব্লক তৈরি হবে। এই ব্লকটির ডেটা হিসেবে থাকবে সেন্ডার অর্থাৎ আপনার ওয়ালেট অ্যাড্রেস, রিসিভার অর্থাৎ আমার ওয়ালেট অ্যাড্রেস এবং আপনি যতটুকু বিটকয়েন সেন্ড করবেন তার অ্যামাউন্ট।
এবার এই নতুন ব্লকটি ব্লকচেইনে কানেক্টেড থাকা সবার সামনে আসবে ভেরিফাই করার জন্য। তারা সবাই যখন এই ব্লকটিকে ভেরিফাই বা নিশ্চিত করবে যে সব ঠিক আছে, তখন এই লেনদেন রেকর্ডটি ব্লকচেইনে স্থায়ীভাবে স্থান পাবে এবং ট্র্যানজেকশনটি কমপ্লিট হবে।

বিটকয়েনের ক্ষেত্রে এই ব্লক ভেরিফাই করার কাজটি যারা করে থাকে তাদেরকেই বলা হয় বিটকয়েন মাইনার। আর, এই ট্র্যানজেকশনটি প্রোসেস করার জন্য আপনাকে যতটুকু ফি হিসেবে দিতে হবে, তার অধিকাংশই পাবে বিটকয়েন মাইনাররা, যারা তাদের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে বিটকয়েন ব্লক ভেরিফাই করার কাজটি করেছেন।
আশাকরি কিছুটা পরিষ্কার ধারণা দিতে পেরেছি ব্লকচেইন কি, কিভাবে কাজ করে এবং বিটকয়েন মাইনিং করলে কেনো মাইনাররা বিটকয়েন আয় করতে পারেন।

Level 2

আমি মোঃ আশারিয়া আন্না। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অসাধারন একটি টিউন । Thanks

অনেক সুন্দর একটা পোস্ট । প্রিয়তে নিলাম । আপনাকে আমার ব্লগে স্বাগতম Tutorials For Beginner

ধন্যবাদ ভাই। শুভকামনা রইলো।