প্লে-স্টেশন ফোর (Play Station 4) বা সংক্ষেপে PS4 হচ্ছে সনির তৈরি একটি আধুনিক গেমিং কনসোল। এটি সনির তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের গেমিং কনসোল। অর্থাৎ সনি এটির পুর্বেও আরো তিনটি কনসোল তৈরি করেছিল। সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে Play Station Portable (PSP), Play Station 2 (PS2), Play Station 3 (PS3)। PS4 এর সবচাইতে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে মাইক্রোসফট এর তৈরি Xbox One. এটি ২০১৩ সালে বাজারে আসে। বাংলাদেশে Sony-Rangs এটি অফিশিয়াল ভাবেই বিক্রি করে। এর বাজার দাম বা খুচরা ক্রয়মূল্য ৪০,০০০ টাকা। তবে অন্যান্য থার্ডপার্টি খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আরও কিছুটা কমদামে কেনা যেতে পারে।
এই গেমিং কনসোলটিতে উন্নত গেমিং অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য পিসি গ্রেডেড হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। কনসোলটিতে গেম খেলার জন্য প্রায় সব গেমই কিনে খেলতে হয়। বাজারে গেমের ব্লু-রে ডিভিডি ডিস্ক কিনতে পাওয়া যায়। গেমভেদে ডিভিডিগুলোর দাম ৩০০০-৬০০০ টাকা।
PS4 কনসোলটি আকৃতিতে বেশ ছোটখাটো। দুইটা বড় আকারের বই পাশাপাশি রাখলে যেমন হয়, এই কনসোলটির আকৃতিও অনেকটা সেইরকম। কনসোলটি খাড়া কিংবা শুইয়ে রাখা যায়। কনসোলটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন লিভিং রুমের অন্যান্য আসবাবপত্রের সাথে এটিও দেখতে সুন্দর লাগে এবং এর পোর্ট গুলো দেখা না যায়। কনসোলটি ব্যবহার করার জন্য একে এইচডি টিভি অথবা কম্পিউটার মনিটর এর সাথে HDMI ক্যাবল দিয়ে সংযোগ দিতে হবে। এছাড়া উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ এর ও দরকার হবে।
PS4 এর স্পেসিফিকেশন বলতে এতে আছে এএমডির কাস্টম অ্যাক্সিলারেটেড অক্টাকোর প্রসেসর। এএমডি রেডিয়ন ১.৮৪ টেরাফ্লপ জিপিইউ। GDDR5 8GB RAM. ৫১২ জিবি কিংবা ১ টেরাবাইট হার্ডডিস্ক। এবং সনির নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম। ব্লু-রে ডিস্ক ড্রাইভ, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ এবং ইথারনেট।
PS4 কনসোলটি কিনলে এর সাথে একটি DualShok 4 ওয়্যারলেস ব্লুটুথ কন্ট্রোলার ফ্রি দেয়। যেটি সনির State of Art ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্যতম নিদর্শন। বিশেষ এই ব্লুটুথ গেমপ্যাডটিতে আটটি ডিপ্যাড বাটন, দুইটি জয়স্টিক, L1-L2, R1-R2 ট্রিগার ছাড়াও একটি মাল্টিটাচ টাচপ্যাড রয়েছে। এছাড়া আকনসাছে ডুয়াল ভাইব্রেশন মোটর এবং হেডফোন পোর্ট। সফট গ্রিপ সম্পন্ন এই কন্ট্রোলার টির সামনের দিকে আছে নীল রংয়ের বিশেষ লাইটবার। যা কন্ট্রোলার টির সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি ইউএসবি ক্যাবলের মাধ্যমে কন্ট্রোলারটি PS4 থেকেই চার্য করতে হয়। এছাড়া একাধিক কন্ট্রোলার সংযুক্ত করে মাল্টিপ্লেয়ার মোডে খেলার সুযোগ ও আছে।
Microsoft Xbox One এর বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় গেমিং কনসোল PS4 এর রয়েছে কিছু আলাদা বিশেষত্ব যা একে অনন্য করেছে। PS4 এ গেমস খেলার সিস্টেম হচ্ছে আপনি যেই গেমটি খেলতে চাচ্ছেন বাজার থেকে সেটির ডিস্ক কিনে আনতে হবে এবং ডিস্কটি PS4 এ ইনসার্ট করেই গেমস খেলা যাবে। প্রতিটি ডিস্কে একটি গেমস থাকে এবং প্রতিটি ব্লু-রে ডিস্কের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ৫০ গিগাবাইট। আপনি একটি ডিস্ক কিনলেন মানেই যে আপনার টাকাটা একেবারেই খরচ হয়ে গেল সেরকম নয়। আপনি চাইলে গেমটি আপনার বন্ধুকে ধার দিতে পারেন। অথবা ভাড়া দিতে পারেন কিংবা বিক্রিও করে দিতে পারেন। যার ফলে ৩০০০ টাকা কিংবা ৬০০০ টাকার পুরোটাই জলে যাবেনা। সবাই সাধারণত PS4 কেনার পর এভাবেই BigTitle গেমস গুলো খেলে থাকেন। অনেক উন্নত হার্ডওয়্যার, গ্রাফিক্স এবং গেমস ডেভেলপমেন্ট এর কারনে PS4 এ গেমস খেলার অভিজ্ঞতা অনেক মজার হয়। গেমস ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা লাগেনা বলে যাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেই তারাও PS4 ব্যবহার করতে পারে। আর গেমস ভাড়া কিংবা ধার নেওয়ার সুযোগ থাকায় সবসময়ই বড় অংকের টাকা খরচ করতে হয়না।
PS4 এ গেমস খেলার জন্য মোটামুটি তিনটি উপায় আছে। প্রথমটি হচ্ছে বাজার থেকে ডিস্ক কেনা। অপরটি হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে গেমস কেনা ও ডাউনলোড করে। আরেকটি উপায় হচ্ছে প্লে-স্টেশন স্টোর থেকে ফ্রি গেমস গুলো অনলাইনে ডাউনলোড করে খেলা। খুবই উন্নত গ্রাফিক্স এর গেম গুলোর দাম সাধারণত বেশী হয়। যেমন ৬০০০ টাকার মত। BigTitle নয় এমন অন্যান্য সাধারণ গেমস গুলোর দাম সাধারণত অনেক কম হয়। PS4 এর জন্য সাধারণত ৪ ধরনের গেমস পাওয়া যায়। প্রথমত সনির ডেভেলপ করা এক্সক্লুসিভ গেমস যেগুলো PS4 ছাড়া অন্য প্লাটফর্ম গুলোতে খেলা যায়না। দ্বিতীয়ত থার্ডপার্টি ডেভেলপারদের তৈরি PS4 এক্সক্লুসিভ গেমস। এগুলোও PS4 ছাড়া অন্য প্লাটফর্ম গুলোতে খেলা যায়না। এরকম কয়েকটি BigTitle গেমস হচ্ছে "আনচার্টেড ফোর", "দ্য লাস্ট গার্ডিয়ান", "গোল্ড ওয়্যার", "ফলআউট শ্যাডো", "আনটিল ডাউন", "ডেসটিনি" ইত্যাদি।
তৃতীয়ত প্রায় সব পিসি গেমস ডেভেলপাররাই পিসি গেমসের PS4 সংস্করণ বাজারে ছাড়ে। অর্থাৎ প্রায় সকল পিসি গেমসই PS4 কনসোলেও খেলা যায়। আর চতুর্থ ধরনটি হচ্ছে সনি নিয়মিত ভাবেই PS2 এবং PS3 এর BigTitle গেমস গুলোর PS4 সংস্করণ বের করছে। এটাকে অনেকটা ব্যাকওয়ার্ড কম্প্যাটিবিলিটি ও বলা যায়। যদিও PS2 এবং PS3 এর গেমস গুলো PS4 এ সরাসরি খেলা যাবেনা। তারপরও সনি যেসব গেমসের PS4 ভার্সন বের করেছে সেইগুলো খেলা যাবে।
বিশ্বব্যাপী সনি ৩২ মিলিয়ন এরও বেশী PS4 বিক্রি করেছে। PS4 এর এই তুমুল জনপ্রিয়তার মূল কারণ গুলো হচ্ছে PS4 এর জন্য অনেক ভাল মানের গেমস থাকা। গেম ডিস্ক ভাড়া এবং বিক্রি করে দেওয়ার সুবিধা থাকা। তাছাড়া PS4 কনসোলটির ডিজাইন ও অনেক সুন্দর। কনসোলটির কেসিং এর মাঝে থাকা খাজ এর মধ্যেই ব্লু-রে ড্রাইভ এবং ইউএসবি পোর্ট গুলো থাকার কারনে সেগুলোকে প্রায় দেখাই যায়না। তাছাড়া কনসোলটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী Microsoft Xbox One এর চাইতে PS4 অনেক ছোট এবং হালকা। তাছাড়া এর পাওয়ার সাপ্লাই ইন্টারনাল হওয়াতে আলাদা কোন পাওয়ার ব্রিক এর প্রয়োজন হয়না। যা কনসোলটির অ্যাপেয়ারেন্স কে আরও সুন্দর করে। এসব নানা কারনেই। PS4 গেমিং কনসোলটির জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশী।
PS4 দিয়ে শুধু গেমস ই খেলা যায়না। বরং মুভি দেখা, নেট চালানো ইত্যাদি সব এন্টারটেইনমেন্ট এর কাজও এর মাধ্যমে করা যায়। PS4 এর জন্য আরও আছে মোশন কন্ট্রোলার, ক্যামেরা, প্লে-স্টেশন নেটওয়ার্ক, প্লে-স্টেশন প্লাস ইত্যাদি। এছাড়া ২০১৬ সালেই সনি PS4 এর জন্য "প্লে-স্টেশন ভিআর" নামে নতুন একটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ও আনবে। সব মিলিয়ে সময়ের সেরা গেমিং কনসোল PS4.
আপনার বাসায় যদি একটা এইচডি টিভি কিংবা হাই-রেজুলেশন কম্পিউটার মনিটর এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ থাকে, তাহলে আপনিও একটা Play Station 4 কেনার চিন্তাভাবনা করতে পারেন।
আমি tufantamim। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 23 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Thanks brother