“কোন ক্যামেরা কিনবো” কিংবা “কোন ক্যামেরা ভাল হবে” - এমন কেউ নেই যে ক্যামেরা কেনার আগে এই প্রশ্নটি করেন না। শুধু ক্যামেরা না, যে কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটা খুবই কমন।
এই প্রশ্নের আসলে স্পেসিফিক কোন উত্তর নেই। শুধু ক্যামেরা সিলেকশনের রাস্তা কিংবা সিলেকশনের জন্য কি কি বিষয় মূল্যায়ন করতে হবে, তা বলে বলে দেয়া যায়। তাই আমি আমার এ লেখায় সরাসরি কোন ক্যামেরা সাজেস্ট করবো না। শুধু ক্যামেরা সিলেকশনের রাস্তা দেখিয়ে দিব।
০১. Purpose:
ক্যামেরা কেন কিনবেন সেটা আগে ঠিক করুন। মানে, ক্যামেরা দিয়ে কি কাজ করবেন, ফটোগ্রাফি নাকি ভিডিওগ্রাফি নাকি দুইটাই। বাজারে কিছু ক্যামেরা আছে যেগুলো ফটোগ্রাফির জন্য বেটার, কিছু ক্যামেরা আছে যেগুলো ভিডিওগ্রাফির জন্য বেটা, আবার কিছু ক্যামেরা আছে দুইটাই করা যায়।
ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ক্যামেরা সিলেকশনের সময় মাথায় রাখতে হবে, আপনি কি ধরনের ফটোগ্রাফি করবেন। Landscape, Portrait, Wildlife নাকি অন্যকিছু।
ব্যাপারটা এমন না যে, আপনি যে ক্যামেরা দিয়ে ল্যান্ডস্কপ ফটোগ্রাফি করবেন, তা দিয়ে পোর্ট্টেইট ফটোগ্রাফি করতে পারবেন না। সেটা পারবেন, কিন্তু কিছু ফ্যাক্টর আছে যেগুলো স্পেসিফিক ফটোগ্রাফি সেক্টরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন ধরুন - Wildlife, Sports কিংবা Action ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ক্যামেরাতে খুব ভালো অটোফোকাস ক্যাপাবিলিটি এবং অন্তত 10+ FPS (Frame per Second) থাকা জরুরি।
আবার, Landscape, Portrait কিংবা Architecture ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে Dynamic Range, Low Light Performance এবং ভাল কালার ডেপথ থাকা উচিত। এমনকি Landscape এর ক্ষেত্রে ক্যামেরা মেগাপিক্সেলটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
০২. ফুল ফ্রেম/ক্রপ সেন্সর বডি:
ফুল ফ্রেম এবং ক্রপ সেন্সর ক্যামেরার মূল পার্থক্য এর সেন্সর সাইজে। ফুল ফ্রেম সেন্সর আকারে বড় এবং ফুল ফ্রেম সেন্সরের Dynamic Range এবং লো লাইট পারফর্ম্যান্স অপেক্ষাকৃত ভাল। যে কারণে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফাররা Landscape ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে সাধারণত ফুল ফ্রেম ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকেন।
তবে ক্রপ সেন্সর ক্যামেরা দিয়ে যে Landscape ফটোগ্রাফি করা যায় না, ব্যাপারটা মোটেও এমন না। ইনস্টাগ্রামে আমি এমন কিছু ফটোগ্রাফারকে ফলো করি যারা Fujifilm এর ক্রপ সেন্সর ক্যামেরা দিয়ে অসাধারণ সব ছবি তুলেন।
০৩. ব্র্যান্ড:
কোন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কিনবেন সেটা ক্লিয়ার উত্তর দেয়া সম্ভব না। বাজারে Sony, Nikon, Canon, Fujifilm, Panasonic ও Olympus ব্র্যান্ডের অসংখ্য ক্যামেরা রয়েছে। এবং আধুনিক যুগের প্রায় সব ক্যামেরাই যথেষ্ট ক্যাপাবল। শুধু আপনার কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে ক্যামেরা সিলেক্ট করলেই হবে।
মজার কথা কি জানেন? ভাল ফটোগ্রাফি করার জন্য ব্র্যান্ড আসলে কোন ফ্যাক্টরই না। এমন কি ডিভাইস আসলে কোন ফ্যাক্টর না। অসংখ্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি আছে যেগুলো মোবাইলে তোলা। তবে মিররলেস ক্যামেরা কিনতে গেলে লেন্সের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়ে কেনা উচিত। যে ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব লেন্সের পাশাপাশি থার্ড পার্টি লেন্স যথেষ্ট পরিমাণে আছে, সে সব ব্র্যান্ড সিলেক্ট করলে লেন্সের অভাব হবে না, আশাকরি।
০৪. DSLR/Mirrorless:
DSLR কিনবেন নাকি মিররলেস? এই প্রশ্নেরও আসলে সহজ সরল কোন উত্তর নেই। ঘুরিয়ে পেঁচিয়েই উত্তর দিতে হবে।
ব্যাটারি ব্যাকআপ, লেন্সের সহজপ্রাপ্যতা, দাম, অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডারের দিক বিবেচনা করলে DSLR এগিয়ে থাকবে।
আবার, কমপ্যাক্ট সাইজ, তুলনামূলক ভাল শুটিং স্পিড, লো শাটার সাউন্ড এবং ভাল ভিডিও কোয়ালিটির ভিডিও বিবেচনায় এগিয়ে থাকবে মিররলেস।
শুধু সুবিধার দিক দেখে ক্যামেরা কিনে ফেলবেন, তা কিন্তু না। অবশ্যই আপনাকে অসুবিধার দিকটাও বিবেচনায় রাখা উচিত। এরপর আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোন ক্যামেরা আপনার জন্য।
DSLR সাইজে বেশ বড় এবং ওজনে ভারি হয়, শুটিং স্পিড কম হয়, শাটার সাউন্ড কিছুটা বেশি এবং একটু কমদামি ক্যামেরাগুলোতে HD বা 4K অপশন থাকে না।
অন্যদিকে, মিররলেসের ব্যাটারি লাইফ কম থাকে এবং দামেও তুলনামূলক অনেকটা বেশি।
বলে রাখা ভাল, বর্তমানে সব ক্যামেরা ম্যানুফেকচারিং কোম্পানিই মিররলেসের দিকে বেশি ফোকাস করার কারণে DSLR উৎপাদন বন্ধ কিংবা সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতের বিবেচনায় মিররলেস প্রযুক্তি অনেকটাই এগিয়ে থাকবে।
০৫. বাজেট:
এত এত গ্রাউন্ডওয়ার্কের আসলে কোন মূল্যই নেই, যদি ক্যামেরা কেনার মত যথেষ্ট বাজেট আপনার কাছে না থাকে। আবার বাজেট থাকলে কীভাবে খরচ করবেন সেটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে মনে রাখা উচিত, ক্যামেরা বডির চাইতেও লেন্স অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দামি ক্যামেরা বডির সাথে লো কোয়ালিটির লেন্স ব্যবহার করলে ছবির আউটপুট ভাল পাবেন না। তার চেয়ে বরং মোটামুটি মানের বডির সাথে ভাল লেন্সে ব্যবহার করলে অনেক ভাল আউটপুট পাবেন। যেটাকে বলা যায় near perfection।
আজ এ পর্যন্তই।
ইন শা আল্লাহ, আবারও আসছি ফটোগ্রাফি বিষয়ক নতুন কোন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত বিদায়। সবাই ভাল থাকবেন।
আমি সাইফুল্লাহ সাকিব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 5 টিউনারকে ফলো করি।
I am a Mechanical Engineer. Besides my profession, I like writings and do photography.