ছোটবেলায় যখন নানা বাড়িতে বেড়াতে যেতাম, সবাই একত্রিত হওয়ার সুবাদে মাঝে মাঝে ছবি তুলে রাখা হতো স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য। তখন দেখতাম আম্মুর এক মামা সাইকেলে করে উনার ক্যামেরা নিয়ে আসতেন। সে সময়টা ছিল ফিল্ম ক্যামেরার যুগ। ক্যামেরায় রোল ঢুকিয়ে ছবি তুলে নিয়ে যেতেন উনি। ছবি পেতাম অনেকদিন পর। এখন ছবি তুলেই যেভাবে সবাই হুড়মুড় করে ক্যামেরা বা মোবাইলের স্ক্রিনে ছবি দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায় তখন তেমনটা ছিল না।
এরপর পর্যায়ক্রমে এলো SLR (Single-lens reflex) ক্যামেরা আর DSLR (Digital Single-lens reflex) ক্যামেরার যুগ। Nikon, Canon, Sony ব্র্যান্ডের DSLR গুলো রাজত্ব করেছে বহুদিন। ফটোগ্রাফি ব্যাপারটাকে নিয়ে গিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।
DSLR দিয়ে যখন মার্কেট জয়জয়কার, তখনই আগমন ঘটে Mirrorless প্রযুক্তির। বর্তমান সময়ে মার্কেট থেকে DSLR অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। Nikon কিংবা Canon এর মত নামিদামি ব্র্যান্ডগুলো পুরোনো মডেলের ক্যামেরা আর তৈরি করছে না। এমনকি নতুন মডেল তৈরির ক্ষেত্রেও এনেছে সীমাবদ্ধতা। ঠিক এই সময়ে এসে আপনি কোন ক্যামেরা কিনবেন, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চলুন জেনে নেই DSLR এবং Mirrorless প্রযুক্তির মূল পার্থক্যগুলো।
০১. মিরর বা আয়না:
DSLR এর ভিউ ফাইন্ডার দিয়ে তাকালে আমরা যে সাবজেক্ট দেখতে পাই, তা লেন্সের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে একটি Mirror বা আয়নাতে প্রতিফলিত হয়ে ভিউ ফাইন্ডারের মাধ্যমের আমাদের চোখে প্রবেশ করে। যখন ছবি তোলা হয়, তখন আয়নাটি ফ্লিপ আপ হয়ে যায় যাতে সাবজেক্ট থেকে আসা আলোকরশ্মি ক্যামেরা সেন্সরের সংস্পর্শে এসে ছবি তৈরি করে।
সাবজেক্ট থেকে আসা আলো প্রতিফলিত হওয়ার জন্য মিররলেস ক্যামেরাতে কোন মিরর থাকে না। এটি মূলত ক্যামেরা সেন্সর দিয়ে ক্যাপচার করা 'লাইভ ভিউ' ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক ইমেজ তৈরি করে যা ডিসপ্লে বা ভিউ ফাইন্ডারে দেখা যায়।
০২. আকৃতি ও ওজন:
মিররলেস ক্যামেরাগুলো আকৃতিও ওজনে তুলনামূলক ছোট ও হালকা হয়। DSLR বড় আর ভারি হয় কিছুটা। এ কারণে মিররলেস ক্যামেরার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
০৩. Image Quality:
উভয় ধরনের ক্যামেরাই ভাল মানের ছবি তুলতে পারে। ছবির রেজোলিউশনও দুই ধরনের ক্যামেরার ক্ষেত্রে একই ধরনের হয়।
০৪. View Finder:
DSLR ক্যামেরায় অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার থাকে। আর, মিররলেসে থাকে ইলেকট্রনিক ভিউ ফাইন্ডার। ইলেকট্রনিক ভিউ ফাইন্ডারের রেজোলিউশন তুলনামূলক কম থাকে। তবে, ক্যামেরা কোম্পানিগুলো এ নিয়ে কাজ করছে এবং যথেষ্ট উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে।
এই পয়েন্টটা আসলে ব্যক্তিগত রুচির উপর নির্ভর করে। ব্যক্তিবিশেষে কেউ অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার পছন্দ করেন, কেউ বা ইলেকট্রনিক।
০৫. অটোফোকাস
একটা সময় DSLR-এর ফেজ ডিটেকশন অটোফোকাসের সুবিধা থাকলেও মিররলেস ক্যামেরাগুলো কন্ট্রাস্ট ডিটেকশন প্রযুক্তির ভিতর সীমাবদ্ধ করেছিল। কিন্তু, এখন প্রায় সব Mirrorless ক্যামেরায়, এমনকি স্মার্টফোন ক্যামেরাতেও ইমেজ সেন্সরের মধ্যে ফেজ- এবং কনট্রাস্ট-ডিটেকশন সেন্সর রয়েছে।
যেমন আমি পার্সোনালি Sony a6400 ক্যামেরাটি ব্যবহার করি যাতে সর্বমোট ৪২৫ টি দ্রুতগতির ফেজ ডিটেকশন অটোফোকাস পয়েন্ট রয়েছে।
০৬. ব্যাটারি লাইফ:
সাধারণত, DSLR দীর্ঘতর ব্যাটারি লাইফ অফার করে। এলসিডিভ স্ক্রিন এবং অপটিক্যাল ভিউ ফাইন্ডার থাকার কারণে এই ক্যামেরায় চার্জ খরচ হয় খুবই কম।
অন্যদিকে ইলেকট্রনিক ভিউ ফাইন্ডার ব্যবহার করায় মিররলেস ক্যামেরার ব্যাটারি লাইফ কম থাকে।
উদাহরণস্বরূপ- আমার আগের ক্যামেরার (Nikon D5100) ব্যাটারি লাইফ ছিল প্রায় ৬৬০ শট। অন্যদিকে বর্তমান ক্যামেরার (Sony a6400) ব্যাটারি লাইফ ৪১০ শট।
তবে কোম্পানিগুলো নতুন ক্যামেরাগুলোতে বেশ উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন – Sony a6600 ক্যামেরার ব্যাটারি লাইফ প্রায় ৮১০ শট (যদিও ক্যামেরাটি গত বছর থেকে মার্কেট আউট হয়ে গেছে)।
০৭. লেন্সের সহজলভ্যতা:
DSLR তুলনামূলক পুরোনো প্রযুক্তি হওয়ার কারণে এর লেন্সের সংখ্যা মিররলেসের তুলনায় বেশি।
কিন্তু, বর্তমানে ক্যামেরা কোম্পানিগুলো মিররলেসের দিকে বেশি ফোকাস করার কারণে এবং DSLR উৎপাদন বন্ধ কিংবা সীমাবদ্ধ করে দেয়ার কারণে DSLR এর অনেক লেন্সই বাজারে পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মিররলেসের নতুন নতুন লেন্সগুলো বাজারে আসতে শুরু করেছে।
০৮. ক্যামেরার দাম:
মিররলেস ক্যামেরার দাম DSLR এর তুলনায় বেশি। এমন কি মিররলেস ক্যামেরার লেন্সের দামও। এরপরও যেখানে ক্যানন DSLR-এর একটি মডেল (Canon 250D) কিট লেন্স সহ ৫৫-৬০ হাজারের ভিতর পাওয়া যায়, সেখানে কম্পারেটিভ মিররলেস মডেল (M50 mark ii) দাম কিটলেন্স সহ প্রায় ৭৫-৮০ হাজার টাকা।
DSLR এবং মিররলেসের যে মূল পার্থক্যগুলো, এই টিউনে মূলত সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে। এরপরও ক্যামেরা কেনার আগে নিজের কমফোর্ট জোনের কথা চিন্তা করেই কেনা উচিত।
সামনের কোন টিউনে DSLR ও মিররলেস ক্যামেরার ব্যবহারিক সুবিধা, অসুবিধা নিয়ে কথা বলবো ইন শা আল্লাহ।
সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন।
আমি সাইফুল্লাহ সাকিব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 5 টিউনারকে ফলো করি।
I am a Mechanical Engineer. Besides my profession, I like writings and do photography.