বিশ্বে ডিজিটাল ফটোগ্রাফির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। বাংলাদেশে এর ছোঁয়া লাগে ২০০৩ সাল থেকে। এনালগ এবং ডিজিটাল ইমেজ তথা ফিল্ম ক্যামেরায় তোলা ছবি এবং ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবির মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। আছে কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা। এই গুলো নিয়েই আমার এই প্রবন্ধ। নিচে এইসবের কিছু আলোকপাত করা হলো।
ফিল্ম ক্যামেরা এবং ডিজিটাল ক্যামেরার ইমেজ তৈরিতে স্পষ্ট পার্থক্য হলো ছবিটি তোলার জন্য ব্যবহৃত সেন্সর। ফিল্ম ক্যামেরায় ফিল্মের সংবেদনশীল অংশ লেন্সের পিছনে রাখা হয়। ছবি তোলার সময় যখন সাটার রিলিজ বাটনে ক্লিক করা হয় তখন কপাটটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে যায় এবং ঐ সময় আলো ফিল্মের সংবেদনশীল অংশে আঘাত করে এর ফলে ছবিটি ফিল্মে ধারণ হয়ে যায়। নতুন কোন ছবি তুলতে হলে ফিল্মটি আবার সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয় এবং একই ভাবে নতুন কোন ছবি তোলা হয়।
ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ইলেকট্রনিক সেন্সর একই ভাবে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় এটাকে সিসিডি বলে। ক্ষুদ্র হালকা আলো নিয়ে এই সেন্সর তৈরি হয়। যেটাকে বলে পিক্সেল। যখন কপাট খোলে তখন আলো সিসিডিতে আঘাত করে পিক্সেল তৈরি হয় এবং সংবেদনশীল অংশে ছবিটা রেকর্ড হয়। নতুন কোন ছবি তোলার জন্য ছবিটির পিক্সেলগুলো একটা ডিজিটাল মিডিয়ায় সেভ হয় এবং সিসিডি খালি হয়ে যায়।
ফিল্ম ক্যামেরায় ছবি তোলার খরচ অনেক বেশি। ছবি তোলার জন্য ফিল্ম কিনতে হয়। এরপর ফিল্মটি প্রসেস এবং প্রিন্ট করতে হয়। এতে করে খরচ অনেক বেড়ে যায়। এটার প্রতিটি ক্লিকেই খরচ বাড়ে। পক্ষান্তরে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য তেমন একটা খরচ নেই। ছবি গুলো তোলার পর erasable মেমরি কার্ডে ধারণ করা হয়। সেখান থেকে ধারণকৃত ছবিগুলো মুছে ফেলে দেয়া যায় বা অন্য কোন ডিজিটাল মিডিয়ায় কপি করা যায়।
ফিল্ম ক্যামেরায় ছবির ধারণ ক্ষমতা সীমিত। ৩৬টা ছবির একটা রোল ফিল্ম দিয়ে ৩৬ টি ছবি তোলা যায়। ফিল্মের রোল পরিবর্তন করার মাধ্যমে নতুন ছবি তোলা যায়। ডিজিটাল ক্যামেরায় দিয়ে হাজার হাজার ছবি ধারণ করা যায়। পকেটে যদি মেমরি কার্ড থাকে তা হলে অগণিত ছবি ধারণ করা সম্ভব। এর ফলে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে কার্যত অসীম পরিমাণ ছবি ধারণ করা যায়।
ফিল্ম ক্যামেরার ক্ষেত্রে এক রোল ফিল্ম শেষ হলে তা পরিবর্তন করতে হয়। তাই ঘন ঘন ফিল্ম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে দ্রুত মেমরি কার্ড পরিবর্তন করতে হয় না। আবার ফিল্ম রোল পরিবর্তন করতে গেলে খানিকটা সময় বেশি লাগে। কিন্তু মেমরি কার্ড দ্রুত পরিবর্তন করা যায়।
ফিল্ম ক্যামেরার তোলা ছবি প্রসেস না করা পর্যন্ত দেখা যায় না ছবিটা কেমন হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তাৎক্ষণিকভাবে ছবিটি এলসিডি পর্দায় দেখা যায়। এতে করে আমরা ছবির ফলাফলটা বুঝতে পারি। কোন কারণে ছবিটা ভাল না লাগলে আবার তোলার জন্য চেষ্টা করা যায়। কিন্তু ফিল্ম ক্যামেরায় তাৎক্ষণিকভাবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।
ফিল্ম ক্যামেরার প্রতিটা রোল একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে ভাল ফলাফলের জন্য সেইভাবে ফিল্ম তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন আলোর সংবেদনশীলতার জন্য ইনডোর, আউটডোর অথাবা রাতের আলোতে ফটোগ্রাফির জন্য আলাদা আলাদাভাবে ফিল্ম তৈরি করা হয়। ডিজিটাল ক্যামেরার সেন্সর এর সংবেদনশীলতার বৈশিষ্ট্য প্রতিটি ছবির জন্য তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন করা যায়। একটি বাটনে ক্লিক করেই আউটডোর, কম আলো, নাইট ফটোগ্রাফি ইত্যাদি মোড পরিবর্তন করা যায়। আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই মোডগুলো পরিবর্তন করার ব্যবস্থা আছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিল্মে তোলা ছবিতে নেতিবাচক প্রভাব পরে। এটার রং পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা যদি পুরোনো ছবির অ্যালবামের ছবিগুলো দেখি তা হলে সহজেই এটা বুঝতে পারব। অপর দিকে ডিজিটাল ছবির মান কখনো পরে যায় না। একটি ডিজিটাল ছবি আজ দেখতে যেমন ৫০০ বছর পরেও তার মান অভিন্ন থাকবে।
ফিল্ম ক্যামেরায় তোলা ছবির আরকাইভিং এর জন্য অনেক বেশি জায়টা লাগে। এইগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আসবাবপত্র, কেমিক্যাল, ডি-হিউমিডিফিয়ার মেশিন লাগে। পক্ষান্তরে বিভিন্ন মিডিয়াতে ডিজিটাল ফাইলগুলো রাখা যায় তাই এটার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই। আবার সফটওয়্যার মাধ্যমে কী-ওয়ার্ড, ক্যাপশন ব্যবহার করে খুব সহজেই ডিজিটাল ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ফিল্ম ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো ম্যানুয়ালি সংরক্ষণ করা হয়। ইন্ডেক্সিং করা থাকলেও খুঁজে পেতে অনেক বেশি সময় লাগে। অনেকটা নিজের স্মরণসশক্তির ওপর নির্ভর করে।
ফিল্মে তোলা ছবিটাই হল মূল বা আসল কন্টেন্ট। এটা হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সেটা আর প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। ছবিটা হয়তো কপি করা যেতে পারে কিন্তু এতে করে জেনারেশন বা মান কিছুটা পরে যায়। কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি সহজেই কপি করা যায় এবং একই রকম মান ধরে রাখা সম্ভব।
সাধারণত ফিল্মটা যার কাছে থাকে তাকেই ছবির মুল মালিক বলা যেতে পারে তেমনিভাবে ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রে র-ফাইল যার কাছে থাকে তাকেই মুল মালিক বলা চলে। তবে ছবির মালিকানা এবং কপিরাইট ইস্যু বিভিন্ন অবস্থা এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।
প্রকাশনার জন্য ফিল্মে তোলা ছবিকে স্ক্যান করতে হয় পক্ষান্তরে ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রে স্ক্যান করার দরকার পরে না।
ফিল্মে তোলা ছবি একস্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠানোর অনেক ঝুঁকি থাকে। ছবি হারিয়ে যেতে পারে, নষ্ট হবার সম্বাবনা থাকে। কিন্তু ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি নেই। আমরা খুব সহজেই ডিজিটাল ফাইল একস্থান থেকে অন্য স্থানে মুহূর্তের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে পারি।
ডিজিটাল ছবি খুব সহজেই এডিট করা যায়। বিভিন্ন এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহার যায়। আবার ক্যামেরার মধ্যেই কিছু সংশোধনীর ব্যবস্থা আছে। ফিল্ম ক্যামেরায় তোলা ছবি এডিট করা অনেক কঠিন। এটা করতে হলে ছবি প্রিন্ট করার সময় ডজিং এবং বারনিং করতে হয় অথবা স্ক্যান করে অর্থাৎ ডিজিটালে রূপান্তর করে এডিট এর কাজ করতে হয়। এটা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।
অনেক বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছিল ফিল্ম ক্যামেরা। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল ক্যামেরার যাত্রা শুরু হয়। এখন আর ফিল্ম ক্যামেরা বা ফিল্ম তৈরি হয় না। ডিজিটাল ক্যামেরার নানাবিধ সুবিধা থাকার কারণে ফিল্ম ক্যামেরার ব্যবহার আস্তে আস্তে বাজার থেকে উঠে যায়। তবে একটা কথা না বললেই নয় যারা ফিল্ম ক্যামেরা ব্যবহার করতেন তারা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে ছবি তুলতেন কেননা প্রতিটি ক্লিকের সঙ্গেই খরচের ব্যাপার জড়িত ছিল।
আমি আব্দুল্লাহ আল ফারুক। Digital Marketer, Self Employed, Bogura। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 34 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 23 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।