ফিল্ম কোয়ালিটি ফটো তৈরি করুন ফটোশপে!

সাধারণত ফিল্মে যে কোয়ালিটি থাকে তা আসলে বর্ণনাতীত ও অনন্য এক বৈশিষ্টের। তবে আজকাল আমরা সোশাল মিডিয়াগুলোতে যেসব ফটো দেখে থাকি তাও যে অনেক উন্নত তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।

ফিল্ম কোয়ালিটি কী?

ইমেজে সর্বোচ্চ ভালভাবে ইফেক্ট দেবার পরই সেটা ফিল্ম কোয়ালিটি লাভ করে। আর এর কারণ হলো এর মনোরোম কালার ও শ্যাডো ফিল্ম। একেক ফিল্মে বিভিন্ন ধরনের ইমেজ কোয়ালিটিগুলো যেমন শ্যাডো, স্যাচুরেশন, কালার রেঞ্জ, হোয়াইট ব্যালেন্স ইত্যাদি একেকরকমভাবে কাজ করে। আর এটি পোট্র্যায়েট বা ল্যান্ডস্কেপ  উভয় ধরনের ফটোতে একটা আলাদা আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এই ফটো ও ফটো তোলার মাধ্যম, লাইট ও ফিল্ম গ্রেইনের সমন্বয়ে এক দারুন রকমের, আকর্ষণীয় ফিল্ম কোয়ালিটি চলে আসে ফটোতে। ইমেজ ইডিটররা সাধারণত এই বৈশিষ্টগুলো মাথায় রেখে ইমেজগুলোর কাজ করে এবং ফটোতে বেশ দারুণ একটা ভাব নিয়ে আসে।

তার মানে অবশ্য এটা বলছি না যে ডিজিটাল ফটোগ্রাফির চেয়ে এ ধরনের ফিল্ম ফটোগ্রাফিই বেশি ভালো বা বেশি খারাপ। এটাও বলছি না যে টিউন প্রোডাকশন ও ইমেজ ইডিটিং এর মাধ্যমে কাজ করা ছবিগুলো কোয়ালিটির দিক থেকে ফিল্ম ইমেজের মতো হবে। তবে এতটুকু বলা যায় যে এটি হলো ডিজিটাল ফটো বা ইমেজকে উন্নতির মাধ্যমে একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।

কালার কারেকশন ও ফিল্মি টেক্সচারগুলো এখন ডিজিটাল ইমেজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এটা যেহেতু ডিজিটাল ফটো তাই ফিল্মের মতো কালার ও শেড প্যালেটের সাথে এটি পেরে ওঠেনা। ভিজুয়াল ডাটাগুলোকে কনট্রাস্ট ও কালার ডেপ্‌থ ও ফিল্মি বৈশিষ্ট দেবার জন্য নিজে নিজে ইডিট করতে হয়। যা ফিল্মের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবেই হয়।

ডিজিটাল ইমেজে ফিল্ম কোয়ালিটি আনার উপায়

নিচের পদ্ধতিতে কোনো ইমেজে ফিল্ম কোয়ালিটি আনা সম্পূর্ণ নিজের উপর নির্ভর করে। এটি আপনাকে প্রয়োজনীয় কালার কোয়ালিটি সিলেক্ট করতে সাহায্য করবে।  আমরা নিচের ফটোটিকে ইডিট করবো। ফটোটি তোলা হয়েছে  Nikon D3200 ডি এস এল আর ক্যামেরা দিয়ে। তবে আপনার কাছে যদি সেরকম কোনো ফটো না থাকে তাহলে আপনি Pixabay তে যেতে পারেন অথবা এ জাতীয় আরো কিছু ওয়েবসাইট থেকে ফটো নিতে পারেন।

ধাপ ০১: কার্ভ অ্যাডজাস্ট করুন

সর্বপ্রথম আপনার যে কাজটি করতে হবে তা হলো আপনাকে কালো ও সাদা রঙের জন্য কনট্রাস্ট ঠিক করতে হবে। ফিল্ম ফটোগুলোতে সাধারণত কালো রঙগুলো উজ্জ্বল থাকে এবং সাদা রঙগুলো অনুজ্জ্বল থাকে। এটি ফটোতে এক ধরনের মিলিয়ে যাওয়া বা ধূসর মতোন কোয়ালিটি তৈরি করে। আর এটা করার জন্য আমরা কার্ভ টুল ব্যবহার করবো।

 

প্রথমেই ফটোশপে আপনার ফটো লেয়ারে মাউসের ডান বাটনে ক্লিক করুন Convert to Smart Object অপশনটিতে ক্লিক করুন।এই অপশনটি আপনাকে ইফেক্ট দেবার পরেও সেটা ইডিট ও মডিফাই করার সুবিধা দেবে। এরপর ইমেজের নিচ থেকে Curves-এ ক্লিক করুন এবং এরপর Adjustments>Curves.

কার্ভ প্যানেল ওপেন হলে, যে সমস্ত পয়েন্টে গ্রাফের বর্গটি মূল লাইনকে ছেদ করে সেখানে ক্লিক করুন। এর মাধ্যমে আপনি নোড তৈরি করতে পারবেন। আর তাতে করে ফটোর কোয়ালিটিও পরিবর্তিত হবে। এরপর নিচের বামপাশের নোডটিকে উপরে এবং উপরের ডানপাশের নোডটিকে হালকা করে নিচে নামান। আসলে এটা ভিডিও আকারে দেখালে ভাল হতো। তথ্যবহুল তাই আমি টেক্সট ও ছবি আকারে দিচ্ছি। এরপর কার্ভে ইংরেজির 'এস' অক্ষরটি তৈরি করার চেষ্টা করুন। মাউস দিয়ে একটু চেষ্টা করলেই পারবেন। আপনি প্রায় কাজটি করে ফেলেছেন।

কার্ভ অ্যাডজাস্ট করতে সময় দিন। আর অতো দ্রুত চেঞ্জ করবেন না। এমনকি বেশি কনট্রাস্টও দিতে যাবেন না।

ধাপ ০২:  শ্যাডো ও হাইলাইট টিন্ট ঠিক করুন

এই ধাপনি আপনার ফটোতে একটা নির্দিষ্ট রকম কালার পেতে সাহায্য করবে। আর এ কাজটি করার জন্য প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে-

Image >Adjustments > Color Balance-য়ে।

তিন সেটের তিনটি টোনাল ব্যালেন্স সেট করার অপশন পাবেন। এটা আসলে নির্ভর করবে আপনার ফটোর উপর। উদাহরণস্বরুপ দেখুন, উপরে দেখানো ফটোতে লক্ষ করলে দেখবেন একটু বেশিই হলুদাভ। এমনকি লাল রঙের অস্তিত্বই নেই। এজন্য আমি শ্যাডোতে নীল বা ব্লু মিডটোনে সায়ান আর হাইলাইটে লাল সিলেক্ট করলাম। এটি করতে তাড়াহুড়ো করবেন না। অ্যাডজাস্ট করতে থাকুন। যতক্ষন পর্যন্ত না আপনার মনমতো কালার পাচ্ছেন।

ধাপ ৩: হিউ এবং স্যাচুরেশন

এরপর আপনার ফটোতে হিউ ও স্যাচুরেশনের মাত্রা ঠিক করুন। আসলে ফিল্ম কোয়ালিটি ফটোটা অনেকাংশেই এই কালার সিলেকশনের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, কিছু ফিল্মে অতিরিক্ত মাত্রায় স্যাচুরেশন থাকে। সেটা এক ধরনের হালকা পপ্‌ ইফেক্ট তৈরি করে। অনেকে আবার হালকা কমলা বা লাল অথবা হালকা সবুজ বা নীল ইফেক্ট দিয়েও মজা পান। মূল বিষয় হলো আপনাকে লক্ষ করতে হবে যে কোন্‌টাতে ফটোটা বেশি মানানসই হয়। আর এজন্য বেশি বেশি ফটো ইডিট করতে হবে।

তো যাই হোক। এটা করতে প্রথমেই-

Image>Adjustments>Hue/Saturation-তে যান। এরপর সেই উইন্ডোর ড্রপডাউন মেনু থেকে Master সিলেক্ট করে একটি কালার সিলেক্ট করুন।আর অপশন থেকেHue, Saturation, Lightness ইত্যাদি পরিবর্তন করতে পারেন।

হিউ ফটোর কালার ভ্যালুর পরিবর্তন ঘটাবে, স্যাচুরেশন ফটোতে ভাইব্রেন্সি আনবে আর লাইটনেস ফটোকে উজ্জ্বল বা অনুজ্জ্বল করে তুলবে। তবে কালার রেঞ্জগুলো পরিবর্তনের সময় বেশ মনোযোগী হবেন। এখানে আপনি রঙের বর্ণালীগুলো দেখতে পাবেন। আর সে অনুযায়ী ঠিক করুন আপনি কোন্‌টা চান।

আমি শুধুমাত্র হালকা নীল রঙের স্যাচুরেশন কমিয়েছি আর লাল রঙের স্যাচুরেশনটা একটু বাড়িয়েছি। আর তেমন কিছু চেঞ্জ করিনি।

ধাপ ০৪:  অপশনাল নয়েজ ও লাইট লিক

এই ধাপটি আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে। এই অপশনটি একটি ফটোর অনেক অসংগতি দূর করে থাকে। এজন্য প্রথমেই ফটোতে কিছু নয়েজ যোগ করুন।

এজন্য আপনাকে-

Filter > Noise > Add Noise-তে যেতে হবে। সেথানে নয়েজ উইন্ডো দেখতে পাবেন।Uniform সিলেক্ট করতে পারেন। কারণ এটা Gaussian এর চেয়ে স্পষ্ট নয়েজ দেবে। তবে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে যাবেন না। ফটোর কোয়ালিটি উল্টে যাবে। আর শুধু সাদাকালো নয়েজ ব্যবহার করা জন্য Monochromatic  অপশনটি সিলেক্ট করুন।এর পরের কাজ হলো ইমেজে লাইট লিক ব্যবহার করা। ফিল্ম ক্যামেরাগুলো এই লাইট লিকগুলো এক ধরনের ভিজ্যুয়াল বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

এগুলো ক্যামেরার  চেম্বার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। যাতে করে অতিরিক্ত আলো সমস্যার সৃষ্টি না করে। আর আপনারা সবাই জানেন যে ফিল্মের জন্য আলো ক্ষতিকর। নিচে একটা উদাহরণ দিলাম।

প্রথমে লেয়ারটি সবার উপরে রাখুন। এরপর লেয়ার টাইপ পরিবর্তন করে Screen করুন এবং লেয়ারের Opacity কমিয়ে দিন।

হ্যাঁ এরকম হবে।

শেষে পান ফিল্মি টাইপ ফটো

উপরের সবকিছু ঠিক থাকলে শেষ পর্যন্ত এরকম একটি ফটো পাবেন।

আসলে ইডিটিং এর সংখ্যার উপর নির্ভর করে না যে ফটোটি কেমন ফিল্মি হবে বা আদৌ হবে কিনা। এটা একটা টেকনিক। এভাবে আপনি অারো অনেক ফটো ইডিট করে পরীক্ষা করতে পারেন। যত বেশি করবেন তত দ্রুত বিষয়টা আয়ত্তে এসে যাবে। তাই চিন্তা না করে প্র্যাকটিস করতে থাকুন।

পরিশেষে, টেকটিউনস হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এক সুবিশাল প্ল্যাটফর্ম।প্রতিনিয়তই থাকবেন নতুন নতুন জ্ঞানের মধ্যে। জানবেন অজানাকে। তবে হ্যাঁ। শুধু জেনেই বসে থাকবেন না। এই জ্ঞানগুলো ছড়িয়ে দিন তাদের নিকট যাদের কাছে এই টিউনগুলো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জ্ঞান নিজের কাছে রাখার জিনিস না। ছড়িয়ে দিন আশেপাশে যারা আছে সবার মাঝে। প্রযুক্তিকে ভালবাসুন, প্রযুক্তির সাথে থাকুন। টেকটিউনসের সাথে থাকুন।

আজকের মতো এ পর্যন্তই। সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। টিউন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে টিউমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন। এছাড়াও ফেইসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ফেইসবুকে আমি: Mamun Mehedee

Level 2

আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাইজান টিউনটি ভালো লেগেছে তবে যে পিকচার দিয়ে ইটিড করা দেখিয়েছেন খুবই খারাপ লেগেছে। অন্য কোন ইমেজ নিয়ে ইটিড করা দেখালে বেশি ভালো লাগতো। আশা করি মানুষের কেমন লাগবে রুচিবোধ সেটা নিয়ে ভাববেন। ধন্যবাদ।