এবারে যে বিষয়টি আসবে এইটা একটু সিরিয়াস এমেচাররা ভাবতে পারেন, প্রফেশনালরা ভাবতে পারেন, অন্যদের জন্য ততোখানি তফাৎ করবেনা, সেটি হচ্ছে Shutter response time; সহজ কথায় এটা হচ্ছে Shutter release button চাপার পরে ছবি তুলে নেওয়ার মাঝের সময় কতোখানি লাগছে ক্যামেরার। সাধারনভাবে ১ সেকেন্ডের নিচের সময় হলে ভালো, ০.৫ সেকেন্ডের নিচে হলে খুবই ভালো। কেন এটা জরুরী? ধরুন আপনার সামনে কিছু ঘটনা এগিয়ে চলেছে জোর গতিতে, এবং আপনি একটি ছবি তুলেই পরের ছবিও নিতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে এই শাটার রেসপন্স টাইমের প্রাধান্য অসীম। স্টেজে নাচের প্রোগ্রাম চলছে, তার ছবি নিতে গিয়ে এর প্রয়োজন বুঝবেন এক সময়ে, কিম্বা ধরুন ফুটবল/ক্রিকেট খেলা চলার সময়ে ছবি তুলতে গেলেও বুঝবেন। (দ্রুতগতিতে ঘটে চলা ঘটনার ছবি তোলার সময়ে ছবি তোলার পরে LCD'তে প্রিভিউ অপশান অফ্ করে রাখবেন নইলে এখানে কয়েক সেকেন্ড হারাতে পারেন)
এবারে আসি লেন্সের কথায়। আগে যেমন বলেছি ভিউফাইন্ডার হচ্ছে ক্যামেরায় স্তিত আপনার চোখ, তেমনই লেন্স হচ্ছে আপনার ক্যামেরার চোখ। যারা প্রফেশনাল নন, তাদের জন্য এটি খুব বেশি ভাবনার বিষয় হবেনা এই মূহুর্তে। আজকাল সমস্ত ডিজিটাল ক্যামেরায় যেসব লেন্স ব্যবহার হয় সবই সাধারন দৈনন্দিন জীবনে কাজ চালানোর মতো ফটোগ্রাফির পক্ষে ভালোই। তবুও এটা সম্বন্ধে একটু একটু করে জানতে শুরু করা ভালো, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে কারন সিরিয়াস এমেচার এবং প্রফেশনালদের জন্য লেন্স ভারী গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেকেই দেখেছেন, প্রফেশনালদের কাছে বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন লেন্স থাকে। তবে আপনার ডিজিটাল ক্যামেরায় কি লেন্স আছে, মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় কি লেন্স আছে এবং তার রিভিউগুলি জানতে শুরু করতে পারেন ইন্টারনেটের অনেক রিভিউ সাইট থেকে।
এবারে শাটার স্পিড। Shutter কি? সোজা বাংলায় ইংরাজী শব্দ Shut কথার মানে হচ্ছে "বন্ধ", ক্যামেরার লেন্স এবং ফোকাল প্লেনে স্তিত ফিল্মের মাঝে শাটার একটি অন্তরায়। আলো আটকে রাখার কাজ করে। আপনারা জানেন ফিল্মে আলো লাগলেই ফিল্ম নষ্ট হয়ে যাবে। ছবি তোলার সময়ে এই শাটার অল্পক্ষণের জন্য খুলে যাবে এবং আবারও বন্ধ হয়ে যাবে। এই হচ্ছে পুরোনো দিনের বেসিক আইডিয়া। এখন ফিল্মের জায়গায় এসেছে ডিজিটাল মিডিয়া। কিন্তু ক্যামেরার বেসিক সেই প্রথা এখনও একই আছে। তাই, সহজ ভাষায় শাটার স্পিড হচ্ছে এই লেন্স এবং ফিল্ম/মিডিয়ার মাঝের অন্তরায়টি খুলে যাওয়া এবং বন্ধ হয়ে যাওয়ার টাইম গ্যাপ। সাধারন ভাবে এই সময়টি এক সেকেন্ডেরও অনেক কম, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি। 1/125, 1/250, 1/500, 1/1000, 1/2000 ইত্যাদি শাটার স্পিডের উধারন। এখানে ১/২০০০ মানে ১ সেকেন্ডের ২০০০ ভাগের এক ভাগ সময়কেই বলা হচ্ছে। রাতের বেলার শট নিতে ফটোগ্রাফাররা ব্যবহার করেন এক সেকেন্ডের বেশি স্পিড, মানে লঙ এক্সপোজার। SLR ক্যামেরায় দেখে থাকবেন "B" নামের একটি সেটিং আছে শাটার স্পিড ডায়ালে। এর মাধ্যমেই সুন্দর সুন্দর রাতের ছবিগুলি উপহার দেন ফটোগ্রাফাররা।
ঠিক এর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হচ্ছে Aperture, সহজ কথায় এটি হচ্ছে লেন্সের ভিতরে রাখা Shutter blades'এর দ্বারা আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রণ করা। লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশের নিয়ন্ত্রণের জন্য Aperture বিভিন্ন সাইজের ছোট/বড় গোল আকৃতির সৃষ্টি করে। সাধারনভাবে দিনের আলোয় ছবি তোলার জন্য শাটার বেশিক্ষণ খোলা রাখলে এপারচার রাখতে হয় কম, এবং রাতের বেলায় শাটার বেশিক্ষণ খোলা রেখে এপারচারও সম্পুর্ণরূপে খুলে দেওয়াই ভালো। (এখানে বেশি শাটার স্পিড বলতে খুবই অল্প সময়ের জন্য শাটার খোলাকেই বলছি, যেমন ১/২০০০) Aperture'কে লেন্সের উপরে লেখা হয় F-Stop হিসেবে, হয়তো দেখেছেন অনেকেই। f2, f5.6, f11 ইত্যাদি দ্বারা এপারচার বোঝানো হয়।
শাটার স্পিড এবং এপারচারের সঠিক মিলমিশ না হলেই ছবি "ওভার এক্সপোজ" কিম্বা "আন্ডার এক্সপোজ" হয়ে যাবে, অর্থাৎ ছবি অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে গিয়ে প্রায় সাদা হয়ে যেতে পারে, কিম্বা উলটোটা হতে পারে যে একেবারেই কালো হয়ে গেল। আপনারা যারা ম্যানুয়ালি করে দেখতে চাইবেন, তারা f5.6 স্ট্যান্ডার্ড এপারচার রেখে শাটার স্পিড তারতম্য করে পরীক্ষা শুরু করতে পারেন। কিন্তু আমরা এখানে আলোচনা করছি ক্যামেরা বাছাই করার বিষয়ে, তাই এই দুই সেটিং যতোখানি রেঞ্জের পাওয়া যাবে তাই ভালো, ততোখানি ফ্লেক্সিবল হবে আপনার ক্যামেরা, মানে, ততো বেশি বিভিন্ন পরিস্থিতির ছবি তুলতে সক্ষম হবেন।
আরেকটি জরুরী বিষয় যা এর সাথেই যুক্ত, ISO/ASA/DIN স্পিড, এটি আসলে ফিল্ম স্পিড নামেই বেশি পরিচিত। যারা ফিল্মে আগে ছবি তুলেছেন, তারা ফিল্মের প্যাকেটের গায়ে নিশ্চয় দেখেছেন ASA100/200 ইত্যাদি লেখা থাকে। ডিজিটাল মিডিয়াতেও এই রেটিং পদ্ধতি আছে। খুব critical definition'এ না গিয়েই বলছি, এটি হচ্ছে একটি মাপকাঠি, যা বলে দেয় একটি নির্দিষ্ট ফিল্ম কতোখানি তীব্র বা অল্প আলোয় কতো তাড়াতাড়ি রিয়্যাক্ট করবে। উধারন হিসেবে, ISO80 মাপের ফিল্ম অতি তীব্র আলোয় ছবি তোলার জন্য, এই মাপের ফিল্ম তীব্র আলোয় একটু দেরীতে রিয়্যাক্ট করবে।
যেমন, হিমালয় পাহাড়ে ছবি তুলবেন, চারদিকে শুধুই বরফ এবং দূষণহীন সূর্যালোকে বরফের উপরে আলো ঠিকরে পড়লে সেই আলো অনেক তীব্র হয় (এইজন্য পর্বতারোহীরা কালো চশমা পড়েন এইসব স্থানে)। এইভাবে স্বল্প আলোয় ছবিগুলির জন্য ISO1600 মানের ফিল্ম উপযুক্ত হবে, যেটা অল্প আলোয় তাড়াতাড়ি রিয়্যাক্ট করবে। ডিজিটাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রযোজ্য আছে। ফিল্মের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কিনতে হয়, কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরায় এই সেটিং পাবেন ক্যামেরার মধ্যেই। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেই এটা বদলে নিতে পারেন, অথবা ক্যামেরার অটো মোডের উপরেই ছেড়ে দিতে পারেন ব্যাপারটা। স্লো এবং হাই স্পীড সেটিংয়ের উপরে grain ব্যাপারটাও এসে যাবে, সেটা ব্যবহার করতে করতে নিজেই অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। আপনারা চাইলে এইসব ব্যাপারে পরে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু আপাতত পরের বিষয়ে যাই...
ক্যামেরার সেন্সর। এটিই হচ্ছে ডিজিটাল ক্যামেরার মূল জিনিস যা দিয়ে লেন্স দিয়ে আসা আলোকে মিডিয়াতে তুলে নেয় ক্যামেরা। সেন্সর কোয়ালিটির উপরে কিন্তু নির্ভর করবে কেমন মানের ছবি দেবে আপনার ক্যামেরা। ক্যামেরা কেনার আগে এটা দেখে নিতে পারেন বিভিন্ন রিভিউগুলিতে। সাধারন ভাবে একটি ১০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশানের মধ্যে পাবেন এইরকমের কিছু তথ্য - Imaging sensor 10.38, Sensor size 1/1.8, Effective megapixels 10.16 এইরকম কিছু। নতুনরা বেশি ভাববেন না এইসব নিয়ে, সিরিয়াস এমেচাররা দেখতে পারেন।
অনেকেই মনে করতে পারেন যে অনেক কিছুই লেখা হল, অথচ আসল একটি জিনিস লেখাই হলনা, অনেক টাকা দিয়ে ক্যামেরা কেনা হবে তার শুধু গুণ জানলেই কি হবে? দেখতে কেমন এবং কতোখানি সুন্দর সেই বিষয়ে কোনো আলাপ আলোচনাই হলনা। ক্যামেরার ডিজাইন এবং রঙের বাহার নিয়ে আমি কিছুই লিখিনি তার কারন এইগুলি এক একজনের নিজস্ব পছন্দ অপছন্দের উপরেই নির্ভর করে, অবশ্যই এইদিকটাও বিচার করবেন, তবে সেটা আমি বলে দিতে পারবোনা, অসংখ্য সামগ্রীর মাঝে আপনার মনের মতো মডেল আপনার চোখ দিয়েই সৌন্দর্য বেছে নেবেন। টাকা খরচ যেহেতু আপনিই করবেন, ব্যবহারও আপনিই করবেন, তাই পছন্দ করাটাও আপনারই অধিকার।
ক্যামেরা বেছে নেওয়ার অংশটি এখানেই শেষ। এর পরে, আপনারা যদি চান, তাহলে ক্যামেরার অন্যান্য ফিচারের ব্যবহারিক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা চালানো যেতে পারে। টিনটিন খুব সুন্দর একটি টিউন লিখেছেন, "ডিজিটাল ক্যামেরায় ফেস ডিটেকশান টেকনোলজি", যারা পড়েননি তারা পড়ে দেখতে পারেন, ভালো লাগবে।
আমি রিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 362 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনের সব ভুল, যদি ফুল হয়ে যায়... জীবনের সব কালো, যদি আলো হয়ে যায়...
ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে আপনার এই চার পর্বের লিখা টেকটিউনস তো বটেই পুরো ইন্টারনেটেই বাংলা ভাষায় লিখা একটা ‘সত্যিকারের দরকারি’ আর্টিকেল হয়ে থাকল।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।ক্যামেরা নিয়ে নাড়াচাড়া করছি অনেকদিন।তবুও বলতে দ্বিধা নেই বাংলাতে আপনার লিখার টেকনিক্যাল টার্মগুলা পড়ে আবারো নতুন করে ক্লিয়ার হলাম ব্যাপারগুলাতে।
আপনার এই লিখায় যা আমাকে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষন করেছে তা হল সাধারনত আইটি বা টেকনোলজি রিলেটেড অধিকাংশ লিখাই আমরা ইংরেজী থেকে কপি করে লিখে তা কিছুটা নিজের ভাষায় লিখে প্রকাশ করি(বড় টিউনাররা রাগ করবেন না আবার)।কিন্তু আপনার লিখাটি থেকে বুঝলাম যে-না,আপনি আসলে নিজেও এই টপিকে বেশ একটা ভালো রকমের জ্ঞান রাখেন।আরেকটা ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেকে আপনার ১ম লিখায় দেখলাম কোন ক্যামেরা কিনব এই জাতীয় প্রশ্ন করেছে।তাদের আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি(প্রফেশনালদের জন্য প্রযোজ্য না,ডিএসএলআর-এর ক্ষেত্রেও একই কথা) ক্যাননের পিকচার কোয়ালিটি বেশ ভালো।আর পকেটে টাকা থাকলে সনি সাইবার শট অতুলনীয়।কিন্তু হ্যা মডেলভেদে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়।যেমন আমার ৪২০০০ হাজার টাকা দামের সনি টি-৭০০ এর ফ্লাশ কিন্তু সনির অনেক কম দামী মডেলের চেয়েও খারাপ বা অন্ধকারে কম আলো দেয়।সেটা এই মডেলের জন্য।সনির দোষ কিন্তু আপনি দিতে পারবেন না।
অনেকে আপনার টিউনে দাম সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।তারা বিশেষ কোন মডেলের দাম জানতে চাইলে বলুন আমি এই টিউনেই তা জানাতে চেষ্টা করব।
সবাইকে ধন্যবাদ