বাংলাদেশে বেকার মানুষের অভাব নেই। এর মাঝেই শিক্ষিত বেকার প্রতি ১০০ জনে ৪৭ জন! আজকে তাই আলোচনা করব চাকরি করা ছাড়াও আয় করার উপায় নিয়ে।
এসএসসি পাশ করার আগে চিন্তা থাকে কোন কলেজে ভর্তি হব?
এইচএসসির পরে চিন্তা ঢুকে কোন ভার্সিটিতে চান্স পাবো।
ভার্সিটি পরে চিন্তা থাকে কোথায় চাকরি করব?
চিন্তা করতে করতেই আমরা জীবনের ২৫টা বছর পার করে দেই। আমাদের আল্টিমেট চিন্তা থাকে চাকরি নিয়ে।
কারো স্বপ্ন থাকে বিসিএস চাকরি করার। কেউবা ব্যাংকে চাকরি করার সুযোগ খুঁজেন।
ব্যর্থ হয়ে এরাই ঢু মারেন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়। যারা প্রাথমিক শিক্ষক বনে যান, তাঁরা ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষায় আবার চেষ্টা করেন।
এভাবেই ৩০ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা একটার পর একটা পরীক্ষা দিতেই থাকেন।
শতকরা ৯০ ভাগের মাথায়ই চাকরি ছাড়া কিছু ঢুকে না। কিন্তু এই পরিশ্রম যদি চাকরি ছাড়া অন্য কোন জায়গায় দেন। তাহলে ৩০ বছরেই অনেক টাকা, সম্মান, উদ্যোক্তা বনে যাবেন।
আজকে চাকরি করা ছাড়াও আয় করার উপায় এবং উপায়গুলোর বিস্তারিত নিয়ে লিখব।
চাকরি বলতে যতক্ষন কাজ করা, ততক্ষনই টাকা। কাজ বন্ধ তো টাকা ও বন্ধ।
আর মাসের শেষে একটা এমাউন্ট। যা প্রথম সপ্তাহেই শেষ হয়ে যায়।
মাসের বাকি দিন গুলো আবার এদিক ঐদিক করে চলতে হয়।
কেমন হয় যদি সারাক্ষনই টাকা উপার্জন হতে থাকে? কাজ করলেও, কাজ না করলেও?
সারাক্ষন উপার্জন করা কি অসম্ভব কিছু?
অবশ্যই না। অনেক গুলো সুন্দর পথ রয়েছে।
ব্যবসা করা, ইনভেস্ট করা, ক্রিয়েটিভ কাজ করা যেমন ডিজাইনিং, ডেভেলপিং, লেখালেখি/ব্লগিং, ফটোগ্রাফি, সহ আরো অনেক।
এগুলো থেকে রয়ালিটি ইনকাম আসতে থাকে। প্রথম প্রথম সময় দিতে হয়। এর পর আর তেমন সময় না দিলেও হয়।
প্রথম প্রথম যে সময় দিতে হয়, তা একটি চাকরি খোঁজার সময় থেকেও কম। অনেক কম কষ্টের।
চাকরি করলে নিজের বেতন বাড়বে না। বছরে দুই এক বার সামান্য কিছু বাড়ানো হয়। কিন্তু নিজের কাজে ইচ্ছে করলেই বেতন বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
শুধু মাত্র পরিশ্রম একটু বাড়িয়ে দিলেই হয়।
চাকরি খোঁজার জন্য অনেকেই অনেক ট্রেনিং নেয়, বা অনেক গুলো বই পড়ে। এগুলো না পড়ে স্কিল উন্নত করা জরুরী।
স্কিল ডেভেলপ করলে কাজের অভাব হবে না।
যে গুলো কাজে লাগিয়ে আরো ভালো কিছু করা যায়।
চলুন দেখে নিই দারুণ কিছু কাজ যা বদলে দিতে পারে আপনার ভবিষ্যত।
১। প্রোগ্রামিং এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (সবচেয়ে লাভজনক)
প্রোগ্রামিং জিনিসটা আজকাল সব জায়গাতেই লাগে। মানুষের ভাষা কম্পিউটারকে বুঝাতে পারাই প্রোগ্রামিং।
খেয়াল করলে দেখবেন, আশেপাশের সবকিছু আস্তে আস্তে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
সুপারশপে যান, বিল কম্পিউটার দিবে। সিসিটিভি ফুটেজ কম্পিউটারে থাকবে।
কোম্পানিতে ঢুকতে হলে আইডি কার্ড স্ক্যান করানো লাগে।
এইসবই কিন্ত প্রোগ্রামাররা তৈরি করে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট জানা থাকলে ওয়েব সাইট তৈরি করা যেতে পারে। একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ওয়েব সাইট তৈরি করে তা থেকে সহজেই আয় করা যায়।
এডভার্টাইজ বা এফিলিয়েট এর মাধ্যমে। এখানেও প্রথম প্রথম কিছু দিন সময় দেওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট সময় পর ভালো রেভিনিউ আসতে থাকে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ভালো ভাবে জানা থাকলে ওয়েব সাইটের জন্য টেমপ্লেট তৈরি করা যেতে পারে। যে গুলো সেল করে একটা ভালো রয়ালিটি ইনকাম জেনারেট করা যেতে পারে।
এ ওয়েব টেমপ্লেট সেল করার উল্যেখযোগ্য সাইট হচ্ছে http://themeforest.net/। এরকম আরো অনেক গুলো রয়েছে অনলাইনে। একটু সার্চ করলেই পাওয়া যাবে।
কিভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখবেন?
প্রথমেই আপনাকে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষা শিখতে হবে। তারপর যেকোন একটা কোয়েরি ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে।
মোটের উপর বিগিনারদের জন্য প্রথমেই যেগুলো জানতে হবে তাহলঃ
HTML5
CSS3
Bootstrap
JavaScript
JQuery
NodeJS
PHP
Laravel
MySQL ইত্যাদি।
সবগুলোর উপরেই ফ্রিতে ইউটিউভে ভিডিও পেয়ে যাবেন। একটা একটা করে শিখবেন এবং প্র্যাকটিস করবেন।
এই ভিডিওটিতে ফ্রিতেই এগুলো শিখে নিতে পারেন।
তারপরে কোড লেখার জন্য যেকোন একটি টেক্সট এডিটর ব্যবহার করা শিখুন।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য যে টেক্সট এডিটর গুলো ব্যবহার করতে পারেনঃ
VS Code
Sublime Text
Atom
Vim
Notepad+
VS Code শিখতে এই ভিডিওটি দেখুন।
এভাবেই শুরু করুন। তারপরে ফ্রিলান্সিং বা ফেসবুকের মাধ্যমে কাজ খুঁজুন।
কাজ করতে থাকলে অনেক কিছু শিখবেন।
এভাবেই আপনি একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার হয়ে যাবেন।
২। ভিডিও বানান (৫ মিনিটে বানান, ২ ঘন্টায় এডিট করুন)
আজকের দুনিয়ায় সবাই লেখার পাশাপাশি টিউটোরিয়াল খুঁজে। তাই ভিডিও বানানোতে এক্সপার্ট হলে অনেক কাজ পাবেন।
প্রথমেই ক্যামেরার বেসিক জেনে নিন। ক্যামেরা মোবাইল হলেও চলবে।
তারপরে ভিডিও এডিটিং এর কাজ শিখে নিন।
Adobe After Effects বা Filmora GO এই দুইটার একটা সফটওয়্যারের কাজ শিখুন। ইউটিউভে ফ্রিতেই আছে সব।
Adobe After Effects শিখতে এই ভিডিও দেখতে পারেন।
Filmora GO জানতে এই ভিডিও দেখতে পারেন।
৩। মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট (বেশ বড় কাজ, টাকাও বেশি)
এছাড়া এখন মোবাইল মার্কেট গুলোতে রয়েছে ভালো ক্যারিয়ার। এন্ড্রয়েড, আইফোন বা উইন্ডোজ ফোনের জন্য অ্যাপ তৈরি করা যেতে পারে।
যে সময় ধরে মানুষ চাকরি খুজবে, তার থেকে কম সময়ের মধ্যে এসব ডেভেলপমেন্ট স্কিল শেখা যায়। এক রাতেই মিলিনিয়ার হওয়ার মত গল্প রয়েছে মোবাইল অ্যাপ নিয়ে।
রয়ালিটি ইনকামের জন্য অ্যাপ সেলিং অবশ্যই সুন্দর পন্থা। সহজেই শেখা যায় এবং খুব দ্রুত রেভিনিউ জেনারেট করা যায়।
৪। ফটোগ্রাফি (শখের কাজকে আয়ের মাধ্যম)
অনেকের কাছেই DSLR ক্যামেরা দেখা যায়। ক্যামেরা দিয়ে যেকোন অনুষ্ঠানের ছবি তুলা যায়। আর একাজের জন্য টাকা দেয়া হয়।
আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পথ রয়েছে। নিজের ফটো ব্লগ খুলে তা থেকে আয় করা যায়। কোন একটা বিষয় খুঁজে তার উপর ফটোগ্রাফি করা যেতে পারে।
অনলাইনে অনেক গুলো সাইট রয়েছে ফটো সেল করার।
এর মধ্যে এগুলোতে দেখতে পারেনঃ
Alamy.
500px.
SmugMug Pro.
Shutterstock.
iStock Photo.
Etsy.
এগুলোর যেকোন একটিতে আপনার তোলা ছবি বিক্রি করতে পারেন। ভালো ছবি তুলতে পারলে অনেক টাকা আয় করা যায়।
৫। লেখালেখি বা কন্টেন্ট রাইটিং (চাকরির পাশাপাশি আয়)
লেখা লেখি সব সময়ই রয়ালিটি ইনকাম করার সুন্দর একটা পন্থা। ইনটারনেটের কারণে এটা আরো সহজ এবং ইফেক্টিভ।
ওয়েব সাইট খুলে নিজের পছন্দের বিষয় এর উপর লিখলে এবং ওয়েব সাইটে অ্যাড দিয়ে সুন্দর একটা রেভিনিউ জেনারেট করা যায়।
ফুটবল, ক্রিকেট বা যেকোন খেলা, রান্না বান্না, বই এর রিভিউ, মুভি রিভিউ সহ যে কোন বিষয়ের উপর আর্টিকেল লেখা যায়।
একই সাইটকে ব্যবহার করা যায় Affiliate Marketing এর জন্য।
Affiliate Marketing(অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং) নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল পড়ে নিন।
অথবা আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে “কন্টেন্ট রাইটিং” সেবা দিতে পারেন।
আপনি উনাদের জন্য একটি বিষয়ে লিখবেন। তার বিনিময়ে আপনাকে টাকা দেয়া হবে।
এভাবে প্রতি ১০০০ শব্দের কন্টেন্টের জন্য ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন।
৬। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং (চাকরির বিকল্প)
এই কাজের অভাব কোনকালেই পড়বে না। বাংলাদেশে ফ্রিলান্সিং এ সবচেয়ে বেশি আছেন গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা। কিন্তু অনলাইনে এই কাজের অভাব নেই।
নিজে থেকেই চাইলে শিখতে পারবেন।
আর নিজে থেকে না পারলে, বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায়ই গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স করানো হয়। যেকোন একটাতে ভর্তি হয়ে যান।
তারপর শিখবেন আর প্র্যাকটিস করবেন। একসময় কাজে দক্ষ হলে, ফাইবার বা আপওয়ার্কে একাউন্ট খুলে নিবেন।
আপনার করা কিছু ডিজাইন একাউন্টে দিবেন। ভালো ডিজাইন থাকলে অনেকেই আপনাকে কাজ দিবে।
তবে এর জন্য কিছু সময় লাগতে পারে। তাই অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু প্রথম কাজ পেয়ে গেলে আর পেছনে তাকাতে হবে না। একটার পর একটা কাজ পেতেই থাকবেন।
এই উপায়ে ২ বছর পরে মাসে ২ লাখ পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন।
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক গুলো বিষয় রয়েছে যে গুলো নিয়ে কাজ করা যায়। রিসার্চে একটু সময় দিলেই বের করা সম্ভব।
খুঁজে বের করতে হবে নিজে কোনটাতে ভালো। নিজের কাছে কি ভালো লাগে।
নিজে কোথায় থাকি, তা কোন ব্যাপার নয়। উপভোগ করা যাবে সুন্দর জীবন, স্বাধীন জীবন। সত্যিকারের স্বাধীনতা।
তাই দেরি না করে চাকরি করা ছাড়াও আয় করার উপায় আজকের এই আর্টিকেল পড়ে কাজ করা শুরু করে দিন।
আমি সাজেদুর মাহিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।