পড়াশুনা চলাকালীন প্রায় বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রীদের জীবনের প্রথম আয়ের উৎস হচ্ছে টিউশনি। এমন কোন ছাত্র ছাত্রী খুঁজেই পাওয়া যাবে না যে জীবনে কখনো টিউশনি করায়নি। আর যারা টিউশনি করে, তাদের পড়াশুনার পাশাপাশি আরেকটি বিশাল উপকারও হয়।
আর সেটা হচ্ছে নিজের ব্রেনকে ধার দেওয়া। অর্থাৎ টিউশনি করলে টাকা আয় করার পাশাপাশি নিজের ব্রেনের পুরানো অর্জিত জ্ঞান ভান্ডারকে পুনরায় ঝালাই করে দেওয়া যায়। ফলে পড়াশুনা শেষে চাকুরীর জন্য যখন এপ্লাই করা হয়, তখন তেমন পড়াশুনা করতে হয় না।
কারণ, অধিকাংশ চাকুরীর পরীক্ষায় নবম-দশম শ্রেণী ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর প্রশ্নই বেশি আসে। আর এখন টিউশনির মূল্য অনেক বেশি। আমরা যখন কাউকে পড়াতে যেতাম তখন সর্বোচ্চ হাজার খানেক টাকা দিলেই আমরা বিশাল খুশি হতাম। কিন্তু এখন ৩য় শ্রেণীর একটা স্টুডেন্ট পড়ালেই মিনিমাম তিন থেকে চার হাজার টাকা পাওয়া যায়।
আমাদের আশাকরিয়ে এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন যে, তারা এখন নিজেরাই একটা একাডেমিক কোচিং সেন্টার খুলে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী পড়াচ্ছেন। আর তারা এই টিউশনিকেই পেশা হিসাবে যুক্ত করে নিয়েছেন। একজন ছাত্রকে বাসায় যেয়ে পড়ালে যদি মাসে ৫০০০ টাকা পাওয়া যায়, তাহলে ৪ জনকে পড়ালে ২০০০০ টাকা আসে মাসে।
এই রকম অনেকই আমার পরিচিত আছেন যারা টিউশনি করে করে শহরে জমি কিনে নিজের স্বপ্নের বাড়ি বানাচ্ছেন।
গ্রাম থেকে আমাদের ভাই বন্ধু বান্ধব অনেকেই শহরে যায় নিজের উচ্চ শিক্ষার জন্য। এসময়ে শহরে নিজে কিছু আয় করতে পারলে বাড়ি থেকে তেমন টাকা নেওয়া লাগে না। আবার অনেকের ফ্যামিলির অবস্থা একটু তেমন ভালো থাকেনা বা অনেক খারাপ থাকে। তাই টিউশনি পেলে নিজের খরচের পাশাপাশি নিজের পরিবারকেও একটু সহায়তা করা যায়।
টিউশনি পাওয়াটা তো আর এত সহজ না। কারণ, শহরে কেউই আপনাকে তেমন চেনে না। আপনার কোয়ালিফিকেশন কি সেটাও কেউ জানে না। তাই শহরে গিয়ে টিউশনি পাওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু আমি আজকে বলবো যে, আপনি চাইলে অবশ্যই টিউশনি পাবেন। কারণ, চেষ্টায় সব হয়। তবে আপনাকে কিছু কৌশল সঠিকভাবে অবলম্বন করতে হবে। কারণ, অতি দ্রুত আপনার কাঙ্ক্ষিত টিউশনি পাওয়ার জন্য কৌশলে কাজ না করলে হবে না। শহরে নতুন হওয়ায় আপনার কোয়ালিফিকেশন সবারই অজানা থাকার জন্য কেউই আপনাকে হোম টিচার হিসাবে নিয়োগ দেবে না এটাই স্বাভাবিক।
আজকে আমি আপনাকে কিছু এমন উপায় বলে দেব। যেগুলো আপনি বাস্তবভাবে প্রয়োগ করতে পারলে অবশ্যই আপনি আপনার টিউশনি পাবেন। তবে তার আগে আমি একটা কথা বলতে চাই, আপনি যদি ভাল পড়াতে না পারেন এবং আপনার স্টুডেন্টদের সাথে ভাল ব্যবহার না করতে পারেন তাহলে আপনার এই পেশায় না আসাই ভাল। কারণ, আপনার ছাত্রদের উন্নতি যদি আপনি করাতে না পারেন তাহলে সেই ছাত্র ছাত্রী আপনার কাছে বেশি দিন পড়তে চাইবে না।
তাছাড়া ঐ সকল ছাত্র ছাত্রীদের অবিভাবকরাও আপনার কাছে তাদের ছেলে-মেয়ে পড়তে দিতে চাইবে না। ফলে কিছু টিউশনি পেলেও অচিরেই তা হাত ছাড়া হতেও সময় লাগবে না।
আর তখন পড়াতে চাই পড়াতে চাই বলে চেঁচিয়েও কোন লাভ হবে না। যাই হোক অনেক জ্ঞান দিয়ে ফেললাম বোধ হয়, তাই এখন আসি কাজের কথায়।
এখন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো টিউশনি পাবার উপায়গুলো।
আপনি যেখানে থাকেন সেখানে আপনার অনেক বড় ভাই বা বন্ধু-বান্ধব আছে, অথবা আপনার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও অনেক বড় ভাই বা বন্ধু-বান্ধব আছে যারা টিউশনি করে। আপনি আপনার সেই বন্ধু বড় ভাইদের সহায়তা নিতে পারেন।
কারণ, তারা যেহেতু আগে থেকেই টিউশনি করাচ্ছে সেহেতু তাদের কাছে অনেক টিউশনির অফার আসে এবং আসা করা যায় যে, এবিষয়ে তাদের নেটওয়ার্কও অনেক ভাল হবে। আপনি চাইলে তাদের জানিয়ে রাখতে পারেন। তারা আপনার জন্য কোন না কোন ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
একটা বাসায় টিউশনি করালে ঐ এলাকায় যাওয়া আসা করতে করতে একটু পরিচিতি লাভ করা যায়। ফলে অনেক গার্ডিয়ানই আসে তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর বিভিন্ন অফার নিয়ে। তাই আপনার বন্ধু-বান্ধব যারা আছে এরা চাইলেই ঐ অফার গুলো আপনাকে দিতে পারে। কারন, একজনের পক্ষে অসংখ্য স্টুডেন্ট পড়ানো সম্ভব নয়। তবে এর জন্য আপনাকে বড় ভাইদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি ভাল ব্যবহার করতে হবে এবং আপনার বন্ধু বান্ধবদের ও ভাইদের সাথেও ভাল যোগাযোগ রাখতে হবে।
আর এদেরকে আপনার পড়ানোর দক্ষতার ও প্রমাণ দিতে হবে যে আপনি ভালো পড়াতে পারেন। কারন, তারা যেন আপনার উপর আস্থা রাখতে পারে।
আপনি যদি বড় ভাই বা বন্ধু-বান্ধবদের সহায়তা না পান তাহলে আপনি নিজেই নিজের টিউশনি পাওয়ার একটা কাজ করতে পারেন। আর সেটা হল আপনার নিজে নিজের টিউশনি পাওয়ার জন্য একটা বিজ্ঞাপণ প্রচার করা। যে বিজ্ঞাপণ বোঝাবে যে আপনি টিউশনি করাতে চান। এটা আপনাকে অনেক উপকার করবে টিউশনির খোঁজ দিতে। এই যুগে এখন অনেকেই এই পথে টিউশনি পাচ্ছে। আর দিনে দিনে এই কৌশল খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তাই এটা আপনিও চেষ্টা করুন।
এখন কথা হলো আপনি কিভাবে নিজের টিউশন পাওয়ার জন্য বিজ্ঞাপণ বানাবেন আর বিজ্ঞপনে কিই বা লিখবেন?
আপনি নিশ্চয়ই Television এ অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণ দেখেছেন! বিজ্ঞাপণ গুলাতে কিন্তু ঐ প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের ভাল দিকগুলো এবং সুযোগ-সুবিধা গুলো তুলে ধরা হয়ে থাকে। ঠিক এমনিভাবেই আপনি আপনার Qualification আপনি কোন কোন শ্রেণীর students পড়াতে চান এবং আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য একটা বা দুইটা সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে বিজ্ঞাপণ বানাতে পারেন।
এখন আসি আপনার প্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপণ বানানোর খরচের দিকে। আপনার বিজ্ঞাপণের ধরনের ওপর এর খরচ নির্ভর করছে। হ্যা, আপনি লিফলেট, টিউনার, বা ফেস্টুনের সাহায্যে আপনার বিজ্ঞাপণ খুব দারুণ ভাবে প্রচার করতে পারেন।
এখন প্রথমেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে যে, আপনি কোন ধরনের বিজ্ঞাপণ ব্যবহার করবেন?
সব থেকে কম খরচে যেটা সম্ভব সেটি হলো কাগজের মাধ্যমে আপনার টিউশনির বিজ্ঞাপণ প্রিন্ট করে তার কিছু Photocopy করা।
আপনার বাসায় যদি computer বা laptop থাকে তবে আপনি নিজেই বাসায় বসে একটি বিজ্ঞাপণ বানাতে পারেন। Microsoft office সফটওয়ারে নিজের পছন্দমত ফরম্যাট ক্রিয়েট করে বিজ্ঞাপণ তৈরি করতে পারেন। আর আপনার বাসায় যদি Printing থাকে তাহলে তো কথাই নেই। আপনার একটা টাকাও খরচ হবে না বিজ্ঞাপণ বানানোর জন্য।
“বাসায় গিয়ে পড়াতে চাই” এই টাইটেলটি ব্যবহার করে একটি বিজ্ঞাপণ বানাবেন। টাইটেলের নিচে আপনার Qualification ও আপনি কোন শ্রেণী এবং কোন গ্রুপ বা Subjects গুলো পড়াতে চান সেগুলো উল্লেখ করে দিবেন। সবশেষে নিজের সচল কোন মোবাইল নাম্বার দিবেন। সচল মোবাইল নাম্বার না দিলে কিন্তু পড়তে ইচ্ছুক students বা তাদের গার্ডিয়ানরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।
এবার তৈরি করা বিজ্ঞাপনটি কাগজে প্রিন্ট করার পালা। একটি A4 সাইজের পেপারে বিজ্ঞাপনটি প্রিন্ট করুন ও এরপর তা কোন ফটোকপির দোকান থেকে অনেকগুলো copy print করে নিন।
আমি মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। Founder, EarnBangla.com, Chittagong। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে খুব ভালো লাগে। তাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিজে শেখার পাশাপাশি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভালোবাসি।