বর্তমানের একটি জনপ্রিয় এবং সন্মানজনক পেশা ফ্রিলান্সিং। দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতগুলোর মধ্যে এটিও একটি। ফ্রিলান্সিং কি, এটা সম্পর্কে কম বেশী ধারনা সবার মধ্যেই আছে, ওদিকে আর গেলাম না। আমাদের দেশের আরেকটা সমস্যা হল, যখন কোন একটা খাত সফলতা পায় তখন সে খাতের পিছনে কতগুলো উদ্ভট পলিসি নিয়ে বেড়ে উঠে কিছু ব্যবসায়িক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। আর সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো সে সাফল্যমণ্ডিত খাতটাকে উর্বর না করে বরং অনুর্বর করে তোলে। যেমন শ্রমবাজার কিছু দালাল চক্র, এজেন্সি, সরকারের কুটনৈতিক অদক্ষতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়ছে দিনকে দিন। একইভাবে এই উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ফ্রিলান্সিং খাতটারও একই দশা হতে চলছে কিছু ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে, এবং এ সম্পর্কিত সরকারের কলা কৌশলীর নিরবতার কারনে। "৫ হাজার টাকায় কোর্স করে ঘরে বসেই আয় করুন প্রতি মাসে ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা" এইযে লোভনীয় শিরোনামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তরুণ সমাজকে ফ্রিলান্সিং এর সপ্ন দেখিয়ে তাদের সেন্টারে ভর্তি নিচ্ছেন, কয়জনকে ফ্রিলান্সার বানাতে পারছেন, শতকরা কত পার্সেন্ট? এসব ট্রেনিং সেন্টার এর মালিক এবং ট্রেইনাররা আর যাই হোক ফ্রিলান্সার না। কারন একজন ফ্রিলান্সার এরকম সেন্টারে ট্রেনিং দেয়ার সময় কই পাবে? তারা এরকমই কোন এক ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং নিয়ে বসে পড়ে ফ্রিলান্সার তৈরির কারিগর হিসেবে। মুলত তারা কিভাবে odesk, freelancer -এ একটা কাভার লেটার লিখে ড্রপ করতে হয় সেটাই জানে কি না সন্দেহ। শহরের অলিতে গলিতে বেড়ে উঠছে এসব ট্রেনিং সেন্টারগুলো।
আমার নিজের স্বপ্নভঙ্গ এবং সেখান থেকে উঠে আসার গল্পঃ
সিঙ্গাপুর থাকাকালীন সময়েই ফ্রিলান্সার হওয়ার পরিকল্পনাটা মাথায় আসে অনলাইনের বিভিন্ন গ্রুপ আর ব্লগের আর্টিকেল পড়ে। টার্গেট ছিল ওয়েব ডিজাইনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর উপর। দেশে এসে একটা "৫ হাজার টাকায় কোর্স করে ঘরে বসেই আয় করুন প্রতি মাসে ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা" জাতীয় ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হলাম। তবে কোর্সটার ফি ১২০০০ টাকা ছিল, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর প্রায় সব বিষয় বস্তু অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা ২০জনের মত স্টুডেন্ট নিয়ে ক্লাস শুরু হল। দিন যায় ক্লাস যায়, স্যার আমদের শিখাচ্ছেন, আমরা শিখতেছি। দিনে দিনে স্টুডেন্টের সংখ্যাও কমতেছে। সবাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেছে। সর্বশেষ আমিসহ ৫ জন অবশিষ্ট ছিলাম ক্লাসে। সত্যি কথা এই ৫ জনের এক জনের মধ্যে একটা সামান্য CRUD apps তৈরির মেন্টালিটিও আনতে পারেনি তারা। হতাস, স্বপ্নভঙ্গ। আমি আমাদের ব্যাচের আগের ও পরের ব্যাচের খোঁজ নিয়ে দেখলাম প্রায় আমাদের মত সেইম রেকর্ড।
আমার কিন্তু ধর্য্য ধারণের ক্ষমতা অনেক। সহজে হাল ছাড়ার লোক নয়। google কে বেচে নিলাম শিক্ষক হিসেবে। stackoverflow তো সাথে আছেই। tutsplus এর এক বছরের প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ কিনলাম। udemy এর কয়েকটা প্রিমিয়াম টিউটোরিয়াল নিলাম। techtunes এরও আছে অনেক রিসোর্স ও টিউটোরিয়াল। দীর্ঘ এক বৎসর ধরে প্রতিদিন ১৪-১৫ ঘণ্টা করে প্রেকটিজ। সকালের নাস্তা, দুপুরের ভাতটা পর্যন্ত কম্পিউটার টেবিলের সামনে বসে খেতাম। সারাটা দিন থাকতাম কোড নিয়ে। ফলশ্রুতিতে আজকের এই অবস্থান। এখনও পরিপূর্ণ ফ্রিলান্সার হতে অনেক দূর। odesk, freelancer.com ৮-৯টা অর্ডার কমপ্লিট করেছি মাত্র।
প্রশ্ন থাকতে পারে তাহলে কীভাবে ফ্রীলান্সার হব, অনলাইনে কাজ করব? হুম, এই সেক্টরে আসতে হলে প্রথমে দরকার হল আত্মবিশ্বাস ও ধর্য্য। তারপর ডিসিশন নিন কোন সেক্টরে আপনি কাজ করবেন? গ্রাফিক্স ডিজাইনিং নাকি ওয়েব ডিজাইনিং, ডেভেলপিং নাকি থ্রিডি বা অন্য কিছু। আত্মবিশ্বাস আর ধর্য্য এই দু'টি জিনিস যদি আপনার থাকে তাহলে আজই নেমে পড়ুন কাজে। অনলাইনে প্রচুর রিসোর্স আছে ফ্রি। গুগলকে কাজে লাগান, ইউটিউব কে কাজে লাগান। টেকটিউনসেও পাবেন lynda.com, tutsplus.com, udemy.com এর অনেক টিউটোরিয়াল।
তবে হ্যা সব ট্রেনিং সেন্টারগুলোই যে একই মানের তা নয় ভাল মানের ট্রেনিং সেন্টারও দেশে আছে। পারলে দেখে শুনে ভাল একটা সেন্টার থেকে ট্রেনিং নিতে পারেন। এতে আপনার শেখার গতিটা বাড়বে।
আজ এই পর্যন্তই। ওয়েব ডিজাইন & ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন রিসোর্সের লাইব্রেরি নিয়ে হাজির হব আগামী টিউনে। শুভ কামনা সবার জন্য। ভাল থাকবেন।
আমি সুমন বালক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 68 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আপাতত কোডিং দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি।