কনটেন্ট রাইটিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বিষয়ে ৩১জুলাই’২০১৬তে আমার একটি ইন্টারভিউ প্রকাশিত হয়। যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য টিউনটি টেকটিউনসে প্রকাশ করলাম। তবে কিছুটা কাটসাট করে এখানে প্রকাশ করলাম্। মেইন টিউন লিংকটাও সবশেষে শেয়ার করবো। সবার জন্য শিখার অনেক কিছু পাবেন।
মো. ইকরাম : নিউজ, ব্যবসায়িক, ব্লগ কিংবা যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইটের প্রাণ হচ্ছে কনটেন্ট। একটা ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে আর্টিকেল বা লেখাগুলো থাকে, সেগুলোই হচ্ছে কনটেন্ট। এর বাইরেও কোনো পণ্যের রিভিউ, মার্কেটিংয়ের জন্য যে ব্রুশিয়ার তৈরি হয়, সেখানে যে লেখাগুলো থাকে, কিংবা কোনো ভিডিওর স্ক্রিপ্ট সবই কনটেন্ট। ব্যবসায়িক প্রচারণা, কিংবা মার্কেটিংয়ের জন্য কনটেন্টের বিকল্প নাই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কনটেন্টের ধরন আরো বিস্তৃত হয়েছে। এখন শুধু আর্টিকেল কনটেন্ট নিয়েই কেউ বসে নাই। আর্টিকেল কনটেন্টের পাশাপাশি ইমেজ কনটেন্ট, ইনফোগ্রাফিক্স কনটেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট, অডিও কনটেন্ট ইত্যাদিও যুক্ত হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য খুব শক্তিশালী বিষয় কনটেন্ট রাইটিং। আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, স্ক্রিপ্টল্যান্সার, রেন্ট-এ-কোডার, ইল্যান্স, জুমলাল্যান্সার, পিপল পার আওয়ার, ফাইবারসহ প্রায় সকল মার্কেটপ্লেসগুলোর পাশাপাশি লোকাল মার্কেটেও এর প্রচুর কাজ রয়েছে। কিন্তু সকল জায়গাতেই ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট রাইটারের অভাব রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ইংরেজি কনটেন্ট রাইটারদের পাশাপাশি বাংলা কনটেন্ট রাইটাররাও লোকাল মার্কেটে কাজ করে বেশ ভালো আয় করছেন। কনটেন্ট রাইটিংয়ে দক্ষতা এ যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রফেশনাল দক্ষতা। তবে এ দক্ষতা অর্জনের জন্য ৩টি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে : প্রচুর পড়াশোনা, ব্যাপক চর্চা ও মানুষের মনে জায়গা করে নেয়ার জন্য ক্রিয়েটিভ হতে হবে।
মো. ইকরাম : অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে আইটি সেক্টরে কাজ শুরু করলাম। এরপর আইটি বিষয়েও লেখালেখিতে ভালো দক্ষতা থাকার কারণে দুটি কোম্পানির অনলাইনের প্রমোশনের দায়িত্ব পেলাম। সেই কোম্পানিগুলোর ব্রান্ডিংয়ের জন্য মূল অস্ত্র হিসেবে ব্লগিং এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন লেখালেখি করতাম। তখন দেখলাম একটা প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডিংয়ের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হচ্ছে কনটেন্ট মার্কেটিং। কিন্তু সেই কোম্পানিগুলো বিষয়টির গুরুত্ব না বোঝার কারণে কনটেন্ট রাইটার নিয়োগ দিতে রাজি হচ্ছিল না, তাই দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিতে হয়েছিল। এ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা ও একনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করি। এখন বুঝতে পারছি, তখন এ কাজটি শুরু করে নিজেই অনেক বেশি উপকৃত হয়েছি। কনটেন্ট রাইটিংয়ের দক্ষতা অর্জনের কারণে যেকোনো মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এখন খুব সহজেই সফল হতে পারছি।
মো. ইকরাম : কনটেন্ট রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো আমি লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করি, সেগুলোকে সংক্ষেপেই বলছি। যে বিষয়ে কনটেন্ট লিখব তার পাঠক কারা, কোন মিডিয়ার জন্য লিখছিÑ এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে ধারণা নেই। এরপর কনটেন্টের বিষয়টা ঠিক করি। ওই সম্পর্কিত আকর্ষণীয় বিষয় খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট ফোরাম কিংবা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অন্য ব্যক্তিদের আগ্রহগুলো বোঝার চেষ্টা করি। তারপর সেখান থেকেই টপিকস খুঁজে পাই। একটা ভালো টপিকস ভালোভাবে খুঁজে বের করতে না পারলে যতই চেষ্টা করুন, সেই লেখা খুব বেশি মানুষকে পড়ানো সম্ভব হয় না। ভালো টপিকস যখন পেয়ে গেলাম, তখন সেই টপিকস নিয়ে গুগল থেকে সার্চ করে বিভিন্ন লিখা আগে পড়ে নেই। লেখা পড়তে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পয়েন্ট কোনো লিখাতে পেয়ে গেলে সেই পয়েন্টকে সংরক্ষণ করে রাখি। এরপর লেখার কাঠামো তৈরি করে ফেলি। এবার নিজের মতো করে লেখা শুরু করি।
পুরো লেখাতে ৩টি বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করি।
১. ইউনিক,
২. অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বা মূল্যবান তথ্য এবং
৩. এনগেজিং কনটেন্ট।
লেখা শেষ করে নিজেকে পাঠকের জায়গাতে রেখে পুরো লেখাটা কয়েকবার পড়ি। সেখানে নিজের মন মতো হলেই সেটিকে টিউন করার জন্য ফাইনাল করি। সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংশোধন করে নেই।
মো. ইকরাম : ক্যারিয়ার হিসেবে কনটেন্ট রাইটিং সবসময়ই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবে। অ্যাফিলিয়েশন, কোনো সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্ট ব্রান্ডিংয়ের জন্য প্রচুর কনটেন্ট রাইটারের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি কোনো মার্কেটপ্লেসের কাজগুলোর ট্রেন্ড দেখেন, সেখানে দেখা যায় এক নাম্বার অবস্থানটি কনটেন্ট রাইটিং। তবে বর্তমানে কনটেন্ট রাইটিংয়ের পাশাপাশি ইমেজ কনটেন্ট, ভিডিও কনটেন্টগুলোর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তাই লিখালিখির পাশাপাশি ইমেজ কনটেন্ট এবং ভিডিও কনটেন্ট ডেভেলপটাও প্রাকটিস করলে ট্র্যান্ডে থাকা যাবে। কনটেন্ট রাইটিং জানা থাকলে শুধুমাত্র মার্কেটপ্লেসেই কাজ করা যায়Ñ এমন ধারণাটা ভুল। নিজের ব্লগ ডেভেলপ করে সেই ব্লগেই নিজের লিখাগুলো টিউন করতে পারেন। সেই ব্লগ থেকে অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ভালো ইনকাম পাওয়া সম্ভব। এখন বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোডাক্ট ও সেবার প্রমোশনের জন্য কনটেন্ট রাইটার নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
মো. ইকরাম : চাকরি কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি যে কেউ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এ কাজটি করতে পারেন। মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রচুর কাজ রয়েছে। চাইলে সেগুলো করতে পারেন অথবা ব্লগ তৈরি করে তার নিজের ব্লগের জন্য প্রতিদিন একটি করে আর্টিকেল লিখে টিউন করতে পারেন। এ ব্লগটি তার জন্য ভবিষ্যতে বিশাল আর্থিক সম্পদে পরিণত হবে।
মো. ইকরাম : সাধারণত নতুন কাউকে পাঁচশ’ শব্দের আর্টিকেলের জন্য পাঁচ থেকে আট ডলার পেমেন্ট করা হয়। কাজ করতে করতে এক্সপার্ট হলে পনের থেকে বিশ ডলারও পাওয়া যায়। মাসে মোটামুটি ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব। তার বেশিও করা যায়। আবার মার্কেটপ্লেসের ইনকামের পাশাপাশি ব্লগ থেকেও মাসে পাঁচশ’ থেকে পাঁচ হাজার ডলার ইনকাম সম্ভব। সবটাই নির্ভর করবে কাজের উপর।
মো. ইকরাম : বর্তমানে সারাবিশ্বে কনটেন্ট রাইটারদের চাহিদা অনেক বেশি। চাহিদার ১০% কনটেন্ট রাইটার এখনো তৈরি হয়নি। সময়ের সাথে সাথে এর চাহিদা আরো বেড়ে যাচ্ছে। কারণ যেকোনো মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কনটেন্ট রাইটারের কোনো বিকল্প নেই।
মো. ইকরাম : কনটেন্ট রাইটিং শেখার জন্য যেসব জিনিসগুলো প্রয়োজন সেগুলো হলো : ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি থাকলে প্রথমে সেটাকে ঠিক করতে হবে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। কারণ একটা প্রচলিত কথা আছে যে, এক লাইন লিখতে হলে একশ’ লাইন পড়তে হয়। সুতরাং পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত লেখালেখি করলে নিজের মধ্যে দক্ষতা তৈরি হবে। শুরুতে চেষ্টা করুন সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিদিন দুইশ’ শব্দের কনটেন্ট লিখতে। যে বিষয় নিয়ে হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডাতে তর্ক করে এসে ঘরে ফিরেছেন, সেটাই ঘরে বসে চিন্তা করে তর্কে সবার মতামত যা উঠে এসেছে, সেগুলোই লিখে ফেলুন। সেটাকেই ফেইসবুকে টিউন করুন। অন্যদের মতামত দেখুন। সম্ভব হলে এবার ফেইসবুকেই বিষয়টি নিয়ে টিউমেন্টে অন্যদের সাথে তর্ক করুন। আপনার মতামতগুলো বিস্তারিতভাবে টিউমেন্টে লিখে ফেলুন। এভাবে করতে থাকুন, আস্তে আস্তে আপনার রাইটিং স্কিল তৈরি হয়ে যাবে। একইভাবে ব্লগেও লিখুন।
মো. ইকরাম : আগ্রহীদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, কেউ জন্মগতভাবে দক্ষ হয়ে আসেন না। নিজের ইচ্ছাশক্তি থাকলে, কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সেই কাজ নিয়ে প্রচুর চর্চা করুন। ভালো ভালো লেখা পড়–ন, নিজেও প্রচুর লিখুন, লেখা নিজের কাছে না জমিয়ে রেখে সেটাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগগুলোতে টিউন করুন। তাহলে অন্যদের মতামত জানতে পারবেন। নেগেটিভ টিউমেন্ট পেলে নিজের উন্নতি করার চেষ্টা করবেন। পজেটিভ টিউমেন্ট পেলে এ উৎসাহকে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি বেশি করে লিখুন। যখন দক্ষ হয়ে যাবেন, তখন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজের জন্য আবেদন করুন। কাজের জন্য আবেদন করার সময় অবশ্যই পূর্বে আপনার প্রকাশিত ৩টি লেখার লিংক শেয়ার করুন। ইনশাল্লাহ, কাজ পেয়ে যাবেন।
ইনকিলাবে প্রকাশিত লিংক: ক্লিক করুন এখানে
যেকোন সহযোগিতার জন্য আমার পেজে এসে ইনবক্স করুন।
আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/
আলহামদুলিল্লাহ, Content writer হওয়ার ইচ্চে টা বেশ আগে থেকেই, আজকে আপনার পোস্ট টা পড়ে আগ্রহ আরও অনেকটা বাড়লো। ধন্যবাদ।