আমার প্রথম অনলাইন ইনকাম এবং পিছনের গল্প

আমি ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। এই সুবাদে ২০১১ সালে কম্পিউটার কিনেছিলাম। লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারাক্ষণ কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকতাম। তাতে সিজিপিএটা হালকা একটু কমে গিয়েছিলো। হয়তো কিছুটা ক্ষতি হয়েছে তবে এই চার বছরে আমি অর্জন করেছি একগাদা অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতাটাকে হয়তো আমি আগেই কাজে লাগাতে পারতাম কিন্তু অলসতা আমাকে আটকে দিয়েছিলো। আশেপাশে দেখতাম যারা আমার থেকে কম জানে তারা অনলাইন থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করে। শুধু দেখতাম আর ভাবতাম আমিও একদিন ইনকাম করবো।কাজজানিকিন্তুগাইডলাইন নাই। মাঝে মাঝে এখানে ওখানে অ্যাকাউন্ট খুলতাম কিন্তু কোন লাভ হতো না। এক বন্ধুর কথা শুনে মাইক্রোওয়ার্কারসে কিছু ডলার জমাইছিলাম কিন্তু সেটা আর তোলা হয়নি। ৪ টা টিউশনি করতাম তাই হাতে সবসময় টাকা থাকতো, তাই তেমন কোন চাপ ছিল না। এক সময় মনে হল আমার অভিজ্ঞতাটাকে কাজে লাগানো দরকার।

আমার নতুন পথচলা –

একদিন আমার বড়ভাই আমাকে বলল, রতন তুমি একটা ভালো জায়গায় কোর্স করে ফ্রীলাঞ্চিং শুরু কর। আমি বললাম, আচ্ছা দেখি। সেইদিন আমি বাসায় এসে ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম, ভাইয়া কোর্সটা কোথায় করবো। ভাইয়া বলল, ক্রিয়েটিভ আইটির কথা। আমিও টেকটিউনসের সুবাদে ক্রিয়েটিভ আইটির কথা জানতাম। চলে গেলাম ধানমন্ডি, ভর্তি হলাম ক্রিয়েটিভ আইটির এসএই কোর্সে। তারপর থেকে শুরু আমার নতুন পথচলা।

ক্লাস করার অভিজ্ঞতা –

আমার ক্লাস ছিল সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত। প্রচণ্ড গরমের ভিতর হাতিরঝিল দিয়ে ২০ কিমি সাইকেল চালিয়ে যেতাম আর আসতাম। বেশিরভাগি আমাকে না খেয়ে যেতে হতো কারন আমি সকালে টিউশনি করায়ে সরাসরি ক্লাসে যেতাম।

ক্লাসে যা শিখলাম –

প্রথম পেলাম হাসিখুশি ইমন ভাইয়ের কিওয়ার্ড রিসার্চের ক্লাস। খুব ভালো লেগেছিল কারন আমি যা জানি আর ক্লাসে যা শিখায় তার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। আমি শিখেছিলাম নানান রকমের বাংলা টিউটোরিয়াল থেকে। তারপর একদিন ক্লাসে আসলো ইকরাম স্যার। তিনি যা যা বললেন সেগুলা শুনে মনের মাঝে আলাদা একটা শক্তি পেলাম। তার কথা শুনলেই কাজের স্পিড বেড়ে যেত। যাই হোক এভাবে তিন মাস পর ক্লাস শেষ হল। অনেক কিছু শিখলাম। এবার কাজ শুরু।

আমার কাজ শুরু করা –

ইকরাম ভাই প্রথম ক্লাসেই আমাদের ফাইভার সম্পর্কে ধারণা দিয়ে দিয়েছিলেন। কারন তিনি চেয়েছিলেন আমরা যেন কোর্স চলাকালিন সময়েই কিছু টাকা ইনকাম করতে পারি। কিভাবে গিগ তৈরি করতে হবে তিনি তা আমাদের দেখিয়ে দিলেন। বাসায় এসে তৈরি করলাম কিওয়ার্ড রিসার্চ নিয়ে একটা গিগ। ইকরাম ভাইয়ের কথামত গিগ প্রমোট করা শুরু করলাম। ৫ দিন পর একটা অর্ডার পেলাম। ২ ঘন্টার মাঝে কাজ ডেলিভারি দিলাম। ৫ স্টার সহ পজিটিভ রিভিউ পেলাম। এভাবে ১৫ দিনের মধ্যে ১১ টা কাজ করে ১০৬ ডলার ইনকাম করলাম। এরপর একটা আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট করলাম। ২ দিনেই একটা কাজ পেলাম ৯০ ডলারের। সেটাও করলাম মাত্র ৫ দিনে। বায়ার আমারে বলল, আপনি রিভিউ লিখে দেন আমি টিউন করবো। পেয়ে গেলাম ৫ স্টার রিভিউ।

 

শুরু হল আমার হতাশা –

টাকা তো ইনকাম করলাম এখন তুলবো কিভাবে? আমার ভোটার আইডি কার্ড নাই তাই কোন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট করতে পারলাম না। অবশেষে এক আঙ্কেলের সহযোগিতায় ডাচ-বাংলা ব্যাঙ্কে একটা অ্যাকাউন্ট করলাম। তারপর যখন টাকা তুলতে গেলাম তখন আপওয়ার্ক বলল, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নামের সাথে আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট নামের মিল নাই তাই টাকা তুলতে পারলামনা। কিছুদিন পর কিছু ভুলের কারনে আমার ফাইভার অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যায়। সেখানে আমি আর কোন কাজ করতে পারবোনা কিন্তু টাকা তুলতে পারবো এই মর্মে আমারে ইমেইল দেয়। খুব কষ্ট পাইলাম। কয়েকদিন পর আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্টটাও সাসপেন্স হয়ে গেল। সেখানেও একি কথা কাজ করতে পারবোনা কিন্তু টাকা তুলতে পারবো। তখন মনে হল আইডি কার্ড না হলে মনে হয় কিচ্ছু হবেনা। যেদিন আইডি কার্ড হাতে পাবো সেইদিন কাজ শুরু করবো। কয়েকদিন কাজে মনোযোগ দিলাম না। ফাইভারে অ্যাকাউন্ট করার পরে পেওনিয়ার কার্ডের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম। ভাগ্যক্রমে কোন ডকুমেন্ট লাগেনাই। অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরেও যখন কার্ড হাতে পাচ্ছিলাম না তখন ভেবেছিলাম আর মনে হয় পাবোনা। প্রতিদিন টিউনম্যানকে ফোন দিতাম কার্ড এসেছে কিনা জানার জন্য।

টাকা হাতে পাওয়া –

তারপর একদিন সকালে একটা ফোন আসলো। ধরতেই বলল, আপনার কার্ড এসেছে নিয়ে যান। আমি তো মহা খুশি। গেলাম কার্ড নিতে টিউনম্যানকে কিছু বখশিশ দিতে হল। দিলাম। তারপর বাসায় এসে কার্ড একটিভ করে ডলার উইথড্র করলাম। এক মিনিটে টাকা আসলো কার্ডে। চলে গেলাম বুথে। কয়েকটা বাটন চাপতেই পেয়ে গেলাম ১২০০০/= টাকা। আমি তখন মহাখুশি। ভাবতেই পারছিলাম না আমি অনলাইন থেকে ইনকাম করা টাকা তুলতে পেরেছি। মন থেকে ধন্যবাদ দিলাম ক্রিয়েটিভ আইটিকে, ইকরাম স্যার আর ইমন স্যার কে। যাদের জন্য আজকে আমার এই সফলতা।

 

তারপর সারাদিন বাইরে কিছু কাজ করে এই টিউনটা লেখা শুরু করলাম। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। নতুন করে আবার ফাইভারে অ্যাকাউন্ট করেছি, দুইটা অর্ডারও পেয়ে গেছি। ডেলিভারিও দিছি। পজিটিভ রিভিউও পাইছি। এখন আর কোন সমস্যা হবে না আশা করি।

আমার ওয়েবসাইট - Ratan Mia
Mobile Price in Bangladesh
Mobile Price in Singapore

Level 1

আমি রতন খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস