এই পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সম্পদ দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী সকল ধরনের পণ্য বা উপাদান যোগান নেই। ধরুন, ইট, বালু, পাথর ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের সংকট কিংবা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ অপ্রতুল হতে বেশি দিন সময় লাগবে না। প্রতিটি বিষয়ই খুব গুরত্বপূর্ণ, পৃথিবীর রাস্তা ঘাট উন্নয়নে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বেলায়ও অনেক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমরা দেখেছি এগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন ও অগ্রাহ্য করে আসছে। এখানে স্বাধীনতার পর থেকে নিম্ন মানের রাস্তা ঘাট করা হয়, যার মেয়াদকাল খুবই কম হয়। মোটকথা টেকসই উন্নয়ন হয় না। সড়ক ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ বিভিন্ন নির্মানকাজ ঠিকাদার দিয়ে করা হয়। বাংলাদেশের কোন সরকারের আমলেই এই সেক্টরকে উন্নত করা হয়নি। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেরাই অবকাঠামো উন্নয়নে নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করে কিন্তু বাংলাদেশে এই চেষ্টা বা পরিকল্পনা আজ অবদি দেখা যায়নি। অনেক সময় দেখা যায়, দেশের বাহিরে থেকে ঠিকাদার এনেও বিভিন্ন ব্রিজ, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার ইত্যাদি করা হয়। এসবের অর্থ হলো স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। আমাদের প্রতিটি কাজে রয়েছে আবহেলা ও ভোগান্তি। তার উপরে চেপে বসেছে দূর্নীতি ও কমিশন বানিজ্য। এই প্রক্রিয়ার সাথে সরকারী আমলা, রাজনৈতিক প্রভাব ও ঠিকাদার সরাসরি জড়িত। তাদের সম্মলিত যোগসাজশে প্রতিনিয়ত এদেশে নিম্ন মানের কাজ হচ্ছে, দেখা যায় প্রায় প্রতিটি রাস্তা ১০ বছরে ২ বার অত্যন্ত একটি রাস্তা নতুন করে করতে হয়। এতে করে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ শুধু নয় পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যপক অপচয় হচ্ছে। একদল দানব এদেশের জনসাধারনের অর্থ লোপাট করছে উন্নয়নের নামে। আমরা বেশিরভাগ সময় নগদ অর্থের ক্ষতির কথা চিন্তা করি বা বলি। কিন্তু আমরা একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে বা মনোযোগ দিলে জানতে পারব এদেশে বহু কিছুর অপচয় ও ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। কারন প্রতিটি খনিজ সম্পদের শেষ আছে, এমনিতেই এদেশে জনসংখ্যার একটি বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের প্রতিনিয়ত বহন করে চলতে হচ্ছে। তার উপর আবার সম্পদ ও অর্থের অপচয় করে আরো বেশি ক্ষতি করে যাচ্ছি। এতে পৃথিবীও আমাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উন্নত দেশগুলোতে খাবারের যেমন অপচয় হয়। তেমনি এদেশে সরকারী ব্যবস্থপনায় প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্টের বন্দোবস্ত করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও এখন প্রায় অনেক খাদ্য আমাদের বিদেশ থেকে আমদানী করে আনতে হয়। তেমনি আমাদের পাথরের আমদানী করতে হয়, বালু উত্তোলন করে নির্মান কাজে ব্যবহার করি ও মাটি দিয়ে ইট তৈরি করি। এসবের সঠিক ব্যবহার ও ব্যবস্থপনা টেঁকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এতে বাংলাদেশ তথা সামগ্রিক পৃথিবীর মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
আমরা যদি একটি পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখবো, এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ইউরোপে ব্যয় হয় ৩০ কোটি টাকা বা কিছুটা কমবেশি হতে পারে, চীন-ভারতে ১৫-২০ কোটি টাকা, সেখানে বাংলাদেশে ব্যয় হয় ৫০-৮০ কোটি টাকা। রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রেও হিসাবটা এমন বা এরচেয়েও বেশি- মেট্রোরেল নির্মাণেও বাংলাদেশ পাশের দেশ ভারতের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করছে, ? বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নির্মানে ব্যয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ, এতে বোঝা যাচ্ছে এখানে কত বড় ধরনের অর্থনৈতিক দূর্নীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি করা হচ্ছে। বিগত সরকার প্রতিটি সড়ক নির্মানে শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর মধ্যে প্রথম হয়েছে। কিন্তু আমরা আসলেই আমাদের সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করে মান সম্মত রাস্তা লাভ করেছি। উত্তর হলো না। টিআইবি এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুললেও সরকারীভাবে তাদের কাছে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বিশ্ব ব্যাংকও সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যয় কমানোর জন্য তাগিদ দিলেও বিগত সরকারের দলীয় ও আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। আমরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ ব্যয় করে, সর্বনিম্ন মানের উন্নয়ন লাভ করি। আমার মনে হয় না এই ধরনের দিনে দুপুরে ডাকাতি অন্য কোন দেশে কোন কালে করা হয়েছে কিনা!
আমরা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ রাস্তা বা অবকাঠামো উন্নয়নে নষ্ট করছি না। আমরা বনভূমি কেটে কাঠ, পানি ও মাটির ব্যাপক ক্ষতি করছি। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পয়ানের ফলে ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যপক ব্যবহার হচ্ছে। এতে অর্থও ব্যয় হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য দিন দিন ঝুকির মধ্যে পড়ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে নানা ধরনের হুমকির মধ্যে পরে আছি। বিজ্ঞানীরা বলছেন- আগামী ৩০-৪০ বছরের মধ্যে বরিশাল বিভাগের অনেক জেলা সাগরের পানিতে ডুবে যাবে। কারন আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার কোন সঠিক পরিকল্পনা বা দিক নির্দেশনা নেই। প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে অপচয় বা অব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জীববৈচত্যের উপর বিশেষ প্রভাব, সাধারন মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নানাবিদ নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থপনায় সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। যেমন বনভূমি রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করতে হবে। সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিটি উপাদানের সঠিক ব্যবহার ও টেঁকসই উন্নয়ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে বিশেষ আইন করে চিরস্থায়ী সমাধান করতে হবে। আমাদের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় বৃক্ষরোপন ও পুনরুদ্ধার শুরু করতে হবে। এতে করে প্রাকৃতিক সম্পদ নানাভাবে বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি পর্যায়ে দূষন রোধ করা ও দূর্নীতি বন্ধ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিশেবে নিতে হবে। এবিষয়ে কঠোর নীতি ই সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে। ইতিমধ্যে আমাদের দেশের ব্যপক ক্ষতি হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ শূন্যতা বা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের অভাব অর্থনীতিতে ব্যপক ক্ষতি সাধন করবে। এর কারনগুলি যেমন অবিবেচনাপূর্ণ সম্পদের ব্যবহার, নগরায়ন, অবৈধ আহরন, তেমনি এই বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনাতেও সম্ভবনার নতুন দ্বার খুলে যেতে পারে। এজন্য সরকারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এবং জনসাধারনের সচেওতনাও কার্যকরী পদক্ষেপ হিশেবে গ্রহন করা উচিত।
আমি মোঃ আল আমীন। COO, Utpadok.com, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি লেখালিখি করতে ভালবাসি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড করে থাকি। আমি পত্রিকা, সামাজিক মাধ্যমে ও ব্লগে লেখালিখি করি। আমি বই পড়তে খুব ভালবাসি। এছাড়াও আমার নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে। আমি সেই ব্যবসার সাথে দীর্ঘ দিন যুক্ত আছি।