এটিও এক ধরনের বাতি। কিন্তু বাতিটি এক বিশেষ ধরনের ঘরে রাখা হয় বলেই সে ঘরটাকে বলে বাতিঘর। এখানে বাতির কোনাে বিশেষত্ব নেই, মূল ঘটনা হলাে বাতিটা রাখা হয় যে ঘরে সেই ঘরকে নিয়ে। সাগরে যেসব জাহাজ চলাফেরা করে বিশেষ করে অন্ধকার রাতে পথ চিনে চলতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। পথের নিশানা হারিয়ে বিপদে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই জাহাজ চলাচলের পথের বাঁকেবাকে বিশেষ বিশেষ স্থানে পথের নিশানা হিসেবে। অনেক উপরে বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয় যাতে জাহাজের সারেং এই বাতির আলাে দেখেই বুঝতে পারে তাকে এবার কোন দিকে যেতে হবে। বাতিটা রাখা হয় অনেক উঁচু মিনার তৈরি করে, মিনারের উপরে থাকে একটি ঘর। যে ঘরে জ্বালানাে থাকে পথ নির্দেশক আলাে। বাতিঘর তৈরির পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিলাে বহু বছর আগে। যখন থেকে সেকালের পালতােলা জাহাজগুলাে সাগরে ভেসে বেড়াতাে তখনি কোনাে এক সময়। বিপদ সংকেতক এই বাতিঘর তৈরি হয়।
তবে প্রথম যুগের বাতিঘর এতাে উঁচু ছিলাে না। আজকের যুগের মতাে এমন মজবুতও ছিলাে না। আগে সাগর তীরে একটি বড় খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখা হতাে কাঠ কয়লা বা কাঠের আগুন। সে আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগের কথা। সেকালের পালতােলা জাহাজের নাবিকেরা এই কাঠকয়লার আগুনের শিখা দেখেই বুঝতে পারতাে সামনে আছে অমুক বন্দর। আলাের শিখাকে ডাইনে কিংবা বাঁয় ফেলে তাকে এবার এগুতে হবে সামনের দিকে। ইতিহাস থেকে জানা যায়- খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে হেলেসপন্ট (Hellespont) নামক স্থানের কেপ সিগামে (Cape sigeum) একটি বাতিঘর ছিলাে। এটাই জানা মতে সব চেয়ে পুরনাে বাতিঘর। এরপর যে বাতিঘরটি সবচেয়ে বিখ্যাত সেটি মিশরের আলেকজান্ত্রিয়ার বাতিঘর। মিশরের আলেকজান্ত্রিয়া শহরের সমুদ্র উপকুলের সংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র দ্বীপে তাৈর হয়েছিলাে বলেই এই শহরের নামানুসারে এর নাম রাখা হয়েছিলাে আলেকজান্ত্রিয়ার বাতিঘর।
এটি এতাে বিশাল আর এতে কারুকার্যময় ছিলাে যে, এটিকে পরবর্তী সময় সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম বলে ধরা হতাে। এই বিখ্যাত বাতিঘরটি নির্মাণ করেন মিশরের ফারাওগণ। সেই সময়েই এর নির্মাণ ব্যয় ছিলাে ১০, ০০, ০০০ পাউণ্ড। এখন আর এর অস্তিত্ব নেই। রােমানরাও ফ্রান্সের সমুদ্র উপকূলে অনেকগুলাে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বাতিঘর তৈরি করেছিলেন, যেগুলাে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্তও কার্যক্ষম ছিলাে। তবে অতীতের বাতিঘরগুলাের প্রায় সবই ছিলাে কাঁচা ভিতের উপর তৈরি। অধিকাংশই ছিলাে নিচু। তবে এখন আন্তর্জাতিক আইন পাস করে পৃথিবীর সব গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র উপকূলেই বাতিঘর তৈরি করা হয়েছে। যেসব দেশের সমুদ্রবন্দর আছে সেই সব দেশের সরকারকে অবশ্যই এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে কুতুবদিয়াতেও একটি প্রকাণ্ড বড় বাতিঘর আছে। বাংলাদেশ থেকেই তার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব জাহাজ আসে। তাদের নিশানা হলাে কুতুবদিয়ার বাতিঘর। আগে মিনারের উপরে যে বাতিঘর বসানাে হতাে, তাছিলাে কাঁচের জানালাবিশিষ্ট কাঠের বা ইটের ঘর। এখন অবশ্য এই বাতিঘর তৈরি হয়, স্টীলের ফ্রেমের দ্বারা। অথবা শক্ত পাথর দিয়ে যাতে প্রচণ্ড ঝড়েও তার কোনাে ক্ষতিসাধন করতে না পারে।
আমি Saadman Rafeed Islam Promise। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।