কোরআনে বর্ণিত আদম আঃ এর ঘটনা-১

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
কোরআন ও হাদিস ভিত্তিক হযরত আদম আ.এর ঘটনার।
একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, সৃষ্টির প্রথম মানব হলেন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আ.। তার এবং তার সহধর্মিণী থেকেই আল্লাহ তা'আলা মানব জাতিকে বিশ্বমন্ডলে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন_
[আন নিসাঃ আয়াত নং ১]
يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وٰحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَآءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِى تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

অর্থঃ হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।

ফেরেশতার সাথে আল্লাহর কথোপকথন
আদম সৃষ্টির ব্যাপারে ফেরেশতাদের সাথে আল্লাহ তায়ালার যে কথোপকথন হয়, পবিত্র কুরআনে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে_
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلٰٓئِكَةِ إِنِّى جَاعِلٌ فِى الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوٓا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّىٓ أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
وَعَلَّمَ ءَادَمَ الْأَسْمَآءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلٰٓئِكَةِ فَقَالَ أَنۢبِـُٔونِى بِأَسْمَآءِ هٰٓؤُلَآءِ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ
قَالُوا سُبْحٰنَكَ لَا عِلْمَ لَنَآ إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
قَالَ يٰٓـَٔادَمُ أَنۢبِئْهُم بِأَسْمَآئِهِمْ ۖ فَلَمَّآ أَنۢبَأَهُم بِأَسْمَآئِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّىٓ أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ
অর্থঃ আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।
তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর!(সূরা বাকারা আয়াত নাম্বার ৩০-৩৩)

আদম সৃষ্টির কাহিনী
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নিকট পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি প্রেরণের ইচ্ছা ব্যক্ত করলে ফেরেশতাগণ বললেন, হে আল্লাহ! আপনি পৃথিবীতে এমন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চান, যে পৃথিবীতে ফেতনা-ফাসাদ করবে ও রক্তপাত ঘটাবে। আল্লাহ তায়ালা বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা যা জানো না আমি তা জানি।
এরপর জিব্রাইল আ. কে নির্দেশ দেন-জমিনের উপরিভাগ থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে আসো। এ নির্দেশ পেয়ে জিব্রাইল আ. তৎক্ষণাৎ জামিনে এসে বর্তমানে যে স্থানে কাবা শরীফ বিদ্যমান সেখান থেকে এক মুষ্টি মাটি নিতে চাইলেন। জমিন জিব্রাইল আ.কে কসম দিয়ে বলল, হে জিব্রাইল! আমার থেকে মাটি নিও না। এ মাটি থেকে আল্লাহ তায়ালার খলিফা বা প্রতিনিধি সৃষ্টি করবেন। সে প্রতিনিধির সন্তান-সন্ততি বড় পাপী ও শাস্তিযোগ্য হবে। আমি অসহায় মাটি। আল্লাহ তায়ালা শাস্তি ভোগ করার শক্তি আমার নেই। একথা শুনে জিব্রাইল আ. মাটি না নিয়ে ফিরে যান। এভাবে মিকাঈল ইসরাফিল আলাইহিমাস্সালাম ও মাটি না নিয়ে ফিরে যান। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আজরাইল আলাইহি সাল্লামকে মাটি আনার নির্দেশ দিয়ে প্রেরন করেন। এবারও জমিন পূর্বের ন্যায়  আল্লার কসম দিয়ে মাটি নিতে নিষেধ করে। আজরাইল আলাইহি সালাম মাটির নিষেধ উপেক্ষা করে বললেন, তুমি যার কসম দিচ্ছ, আমি তার নির্দেশেই এসেছি। আমি তার নির্দেশ অমান্য করতে পারবোনা। আমি তোমাকে নিয়েই যাব। এরপর আজরাইল আলাইহি সালাম সমস্ত জমিন থেকে উৎকৃষ্ট, নিকৃষ্ট, লাল, শুভ্র ও কৃষ্ণবর্ণের মাটি নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হন। এজন্যই মানুষের মধ্যে কেউ শ্বেতবর্ণ, কেউ কৃষ্ণবর্ণ, কেউ সৎকর্মশীল এবং কেউ দুরাত্মা পাপিষ্ট হয়ে থাকে। তারপর মাটিতে পানি মিশিয়ে খামিরা তৈরি করা হয়। অতঃপর তা পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটি তে পরিণত হয়। যেমন কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে_[আল হিজরঃ আয়াত নং ২৬]

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسٰنَ مِن صَلْصٰلٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ

অর্থঃ আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী শুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।
আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ. এর দেহ তৈরি করার পর তার দেহে রুহ ফুকে দেন। দেহে রূহ প্রবেশ করার পর আদ যখন হাচি দেন, তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, হে আদম! বল الحمد (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার। )
আদম বললেনالحمد لله আল্লাহ তাআলা বললেন, رحيمك ربك(তোমার পালনকর্তা তোমার প্রতি অনুকম্পা করেছেন)
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আদম! এ হলো তোমার ও তোমার সন্তান সন্ততির জন্য অভিবাদন বা সম্ভাষণ নীতি। (আল বিদায়া ও আদ্দুররুল মানসুর)
আদমকে সেজদা করার নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ. কে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাগণকে হুকুম করলেন যে, তোমরা আদমকে সিজদা করো। তখন সমস্ত ফেরেশতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করল, শয়তান ব্যতীত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে "আর যখন ফেরেশতাদেরকে আমি বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো ‌ তখন সকলেই সিজদা করল; কিন্তু ইবলিশ সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানাল ও দাম্ভিকতা প্রকাশ করল এবং সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারা আয়াত নাম্বার ৩৪)
সেজদা করতে শয়তানের অস্বীকৃতি ও যুক্তি
ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্ণিত, ইবলিশ দুনিয়া ও আসমানের ফেরেশতাগণের সরদার ছিল। কিন্তু সে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানায়। যদিও আল্লাহ তা'আলা  বর্তমান ভবিষ্যৎ অদৃশ্য এবং অন্তরের অবস্থা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত, তথাপি শয়তানকে পরখ করার লক্ষ্যে জিজ্ঞেস করেন, "যখন আমি তোমাকে আদেশ করলাম তখন তোমাকে কোন জিনিস নিভৃত করলো যে, তুমি সিজদা করলে না? শয়তান বলল আমি আদম থেকে উত্তম। কেন না আমাকে তুমি অগ্নি থেকে সৃষ্টি করেছ আর তাকে মাটিতে কি সৃষ্টি করেছ"এ কথার দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য হলো, আমি আদম থেকে উত্তম। কেননা তুমি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছে, যার স্বভাব ঊর্ধ্বগামী হওয়া, আর আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছ যা স্বভাব অধঃগতি। সুতরাং আমি আদম থেকে সর্বাবস্থায় শ্রেষ্ঠ। অতএব সে আমাকে সিজদা করবে। আমি তাকে সিজদা করতে পারিনা। হতভাগা শয়তান স্রস্টার হুকুমের ওপর যুক্তি পেশ করে চিরজীবনের জন্য ধিকৃত অভিশপ্ত হলো। সে আত্মহংকারবশত ভুলে গেছে যে, সে আল্লাহ তাআলার মাখলুক। আর মাখলুকের কাজ হল, যুক্তির পেছনে না পরে খালেক তথা স্রস্টার হুকুম মান্য করা। (কাসাসুল কুরআন  খ২/২১)
শয়তানের দাবি অযৌক্তিক
মাখলুকের কাজ হল, যুক্তির পেছনে না পরে খালেকের হুকুম নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া, তদুপুরি শয়তানের দাবিটি ও যুক্তিনির্ভর ছিল না; বরং তা ছিল অমূলক ও অযৌক্তিক। কারণ প্রকৃতপক্ষে মাটি অগ্নি থেকে উৎকৃষ্ট। কেননা মাটিতে নম্রতা, সহনশীলতা, উদ্ভিদ নির্গত করা ও প্রবৃদ্ধির ক্ষমতা প্রভৃতি ভালো গুণ রয়েছে। পক্ষান্তরে অগ্নিতে তাড়াহুড়া, অস্থিরতা, ধ্বংস ও ভূষিভুত করা প্রভৃতি মন্দ স্বভাব রয়েছে। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, শয়তানের দাবি ত্রুটিপূর্ণ, অযৌক্তিক ও ভ্রান্তিমূলক। (আল বিদায়া খ ১/৮১)

আমাদের ব্লগ
https://cutt.ly/tWAHwxN

আজ এখানেই শেষ করলাম বাকি অংশ অচিরেই দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
_
আপনার কোন মন্তব্য থাকলে টিউমেন্টে লিখে ফেলোন।
ইনশাল্লাহ দেখা হবে আবার কোন আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Level 0

আমি সুলতান উদ্দীন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস