কিভাবে পড়াশোনাকে নেশায় পরিণত করবেন?

📌পড়ালেখাকে কিভাবে Addiction বানাবে?📌অবাক লাগছে তাই না শুনে, যে পড়াশোনা কি আবার নেশা হয়।

Addiction, নেশা কিংবা আসক্তি শব্দগুলো যেন খুব সহজেই কিছু শব্দের শেষে বসে যায়।
যেমনঃ প্রেমের নেশা, প্রেমে আসক্ত, সিগারেটের নেশা,
মা বাপের কাছ থেকে সবথেকে বেশি শোনা শব্দটাও মোবাইলের নেশা কিংবা গেইমের নেশা।
আরেকটু নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে পাবজির কিংবা ফ্রি ফায়ারের নেশা৷
এই শব্দগুলোর সাথে নেশা কিংবা আসক্তি শব্দগুলো খুব সহজে জুড়ে দেওয়া গেলেও পড়ালেখার নেশা সেটা খুবই দুর্লভ।
এই পড়ালেখা শব্দটার পরে নেশা শব্দটা এত সহজে না বসতে পারার কারণ হল পড়ালেখার প্রতি আসক্তি খুব অল্প মানুষেরেই আছে যেটা গেমের প্রতি কিংবা মোবাইলের প্রতি আছে এরকম মানুষের তুলনায়।

আজকে আমি আলোচনা করব কিভাবে পড়ালেখার প্রতি আসক্তি আনা যায়।
তবে তার আগে আসক্তির কিছু বেসিক ফিলোসফি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
আচ্ছা এখন যদি প্রশ্ন করি যে পাবজির প্রতি কিংবা সিগারেটের প্রতি নেশাটা কি সেগুলো প্রথমদিনের এক্সপেরিয়েন্সেই হয়ে গেছিল?
না সেগুলো প্রথম দিনেই হয় নাই।
এমন অনেক মানুষ আছে যারা সিগারেটের ধোঁয়া পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না
কিন্তু আপনি কয়েকমাস পরে গিয়ে দেখলেন চেইন স্মোকার।
এই ব্যক্তিটাও যখন সিগারেট নিতে গেছিল
তখন হু হু করে কাশতে কাশতে দম গেছিল,
গলায় আটকা পড়ছিল,
ফুসফুস পর্যন্ত ধোঁয়া পৌঁছানোর আগেই নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হয়ে বায়ুমন্ডলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে গেছিল।

কিংবা পাবজি ফ্রি ফায়ার খেলতে গেলেন প্রথমদিন সেটিংস দেখেই মাথা নষ্ট হয়ে যাবে
মানে কোনটাতে প্রেস করলে কি কাজ করে কিংবা কোনটাতে প্রেস করে কন্ট্রোল করতে হবে সেগুলো যতদিন আয়ত্তে না আসে ততদিন ব্যাপারটা নেশা হচ্ছে না।
মানে বুঝাচ্ছে অধিকাংশ নেশাই শুরুর দিকে আমাদের বিরক্তির কারণ।
সেই বিরক্তিটাকে আমাদের চেষ্টা প্রয়োগ করে ভয়ঙকর অভ্যস্ততা কিংবা নিজেদেরকে ঐ বিরক্তির প্রতি নির্ভরশীল বানায়ে দেওয়ার নামই নেশা।
সেক্ষেত্রে বিরক্তিই দীর্ঘ অভ্যাস সাপেক্ষে নেশা।
এই যে যেমন, প্রেমের প্রথমদিকে সচরাচর এই বাক্যগুলো ব্যবহার করবার প্রবণতা দেখা যায়।

"আমি কি তোমার বিরক্তির কারণ হতে পারি?"😍

তারপর সেই বিরক্তি গিয়ে একদিন নেশায় রুপান্তরিত হয়।
সব মিলায়ে একটা জেনারেল ফর্মুলা দাঁড় করায়ে ফেলা যায়,
"প্রত্যেক নেশারেই একটা সেইফ পিরিয়ড আছে। "

মানে যেই পিরিয়ডে আপনি যে নেশায় পড়তে যাচ্ছেন সেটা বিরক্তির কারণ।
এই সময়ের মধ্যে আপনি সেটাকে কন্টিনিউ না করলে সেই বিরক্তিটা আর নেশা হবে না, বিরক্তিই থেকে যাবে।
যে ব্যক্তিটা প্রথমদিনেই সিগারেট নিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবার পর দ্বিতীয়দিন বিরক্তির খাতিরে আর সিগারেট নেয় নাই সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে সিগারেট আর নেশা হয়ে উঠে নাই।
কিংবা পাবজি ফ্রি ফায়ার খেলতে গিয়ে প্রথমদিন একটাও কিল না করতে পেরে যে
"ধুর এইটা কেম্নে খেলে কিছুই বুঝি না "
বলে পরেরদিন গেম খেলা বন্ধ রাখছিল
তার আর জীবনে পাবজিটা নেশা হয়ে উঠে নাই।
কিন্তু আজকের বিরক্তিটাকে মেনে নিয়ে, কালকেও সেইম কাজ করলেন, এর পরেরদিন আবার গেইম খেলতে গেলেন, ৫/৬ দিনের দিনে গিয়ে দেখলেন এক দুইটা শত্রু কিল করতে পারতেছেন তখনেই আপনার উৎসাহ বেড়ে যাবে।
দেখি শালা এর পরের বার কয়টারে মারতে পারি।
অর্থাৎ আপনি যদি বিরক্তিটাকে সহ্য করে সেইফ পিরিয়ড পাড়ি দিলেন তবেই সেটা আপনার নেশা হবে।

এই কথাগুলো কেন বললাম কারণ পড়ালেখার ব্যাপারটাও এরকম।
প্রথমদিকে পড়তে বসলেন।
এক ঘন্টার মধ্যেই বিরক্তি চলে আসবে৷
সেটা আপনি আমি সবার আসবে।
সেই প্রথমদিকের এক ঘন্টাকে মনে হবে মহাকালসম,
এই এক ঘন্টার ভার মনে হবে বুকে পাহাড় রেখে দেওয়ার মতন অসহ্য,
বই খাতা চরম শত্রু, মা বাপের তাগিদ তখন কোনোভাবেই সহ্য না করতে পারা বিরক্তির কারণ।
পড়া শুরু করতে গেলেন মানেই বিরক্তি।
হাজারটা প্রশ্ন,
এত পড়ে কি হবে?
পড়ালেখা না থাকলে জীবনটা কত সুন্দর হত! এরকম হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাবে।

আমাকে বিশ্বাস করুন পড়ালেখা আপনার নেশা হবে।
কিন্তু একটা শুরুতেই নেশার যেই বেসিক ফিলোসফিগুলা আলোচনা করলাম সেটা মনে করুন।
অধিকাংশ নেশাই শুরুর দিকে বিরক্তির কারণ।
আপনি এখন পড়ালেখার শুরুর দিকে আছেন, এক ঘন্টা হইছে মাত্র আপনি এখনো সেইফ পিরিয়ড পাড়ি দিতে পারেন নাই ভাই।
আমাদের অধিকাংশ মানুষ ঠিক এই জায়গাটাতেই ভুলটা করি।
পড়ালেখা যখন শুরুর দিকেই বিরক্তি লাগে,
পেছন গরম হয়ে যেতে থাকে তখনেই আমরা পড়াটা থেকে উঠে আসি।
কিন্তু ঐ যে আপনি যতক্ষণ না সেই বিরক্তিটাকে মেনে নিয়ে সেইফ পিরিয়ড পাড়ি দিচ্ছেন তার আগে ব্যাপারটা আপনার নেশা হচ্ছে না, বিরক্তিতে থেকে যাচ্ছে।
তাই আমাদের এই পড়ালেখাটা আজীবনের জন্য আর নেশা হয়ে উঠে না।
আমাদের ভুলটা ঠিক এই জায়গাটাতেই হয়।
আমরা পড়ালেখার বিরক্তিটাকে সাথে নিয়ে সেইফ পিরিয়ড অতিক্রম করি না।
আপনি প্রথমদিন পড়তে বসলেন, বিরক্তি আসবেই।
৫/৬ ঘন্টা চেয়ার তবু বসে থাকেন, তারপরে বসে থাকতে আর মন চাইবে না পড়তে মন চাইবে না।
তবু বসে থাকুন বই সামনে নিয়ে।
এইভাবে বিরক্তিকে সাথে নিয়ে অন্তত ২/৩ দিন কিংবা বেশি হলে ৫/৬ দিনই বসে থেকে দেখুন না ভাই
৭ দিনের দিনে গিয়ে আপনার পড়ার প্রতি নেশা জন্মাবে, আগ্রহ আসবে।
৮ দিনের দিনে ঠিকই আপনি পড়তে বসতে চাইবেন, আপনার পড়া ভাল লাগবে,
আপনি পড়ালেখাকে ভালবাসবেন।
কিন্তু যদি মাঝখানে উঠে যান, অন্য নেশায় পড়ে যান তখন আর পড়াটা নেশা হবে না।
বিরক্তিকে সাথে নিয়ে অভ্যস্ততা কিংবা নির্ভরশীলতার পর্যায়ে পৌঁছায়ে যেতে হবে।
কিন্তু এইখানে একটা কথা আছে সেই বিরক্তিটা যেন একই রকমের হয়, একই ধরনের, একই স্বাদের হয়।
তাই আমি যেটা করি সেটা হচ্ছে একটা সাব্জেক্ট টানা ৭/৮ দিন পড়ে ফেলি।
কেমেস্ট্রির বিরক্তির ফ্লেভার আর গণিত কিংবা বাংলা ইংরেজির বিরক্তির ফ্লেভার এক না।
এই এক ঘন্টা কেমেস্ট্রি পড়লাম যেই কেমেস্ট্রির একটা প্রবলেম সামনে আসল
সেই নিয়ে নিলাম গণিত সাব্জেক্ট
তার মানে সেইখানে আমি কেমেস্ট্রির বিরক্তিটাকে কন্টিনিউ করলাম না,
এইবার গণিতের বিরক্তিকে যেই সঙ্গী করলাম একটু পর ঠিক সেই বিরক্তিটাকেও কন্টিনিউ করলাম না।
এইবার বাংলা ইংরেজি শুরু করলাম।
মানে এইখানে প্রতিবারেই আমি নতুন করে বিরক্তির ধাপ শুরু করতেছি।
কিন্তু একটা সাব্জেক্ট টানা ৭/৮ দিন পড়ার মধ্যে যেই মজাটা পেলাম সেইটা হচ্ছে অলওয়েজ আমি সেইম ফ্লেভারের প্রবলেম নিয়ে ডিল করতেছি।
কয়েকদিন ধরে শুধু কেমেস্ট্রির প্রবলেমেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
সো দিনশেষে গিয়ে সেইটা নেশায় রুপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।
তাই আমি সেই ছোটবেলা থেকেই এক সাব্জেক্ট ৭-৮ দিন টানা পড়ে অভ্যস্ত।
কিন্তু এইখানে অনেকের এক প্রকার শঙ্কা জন্মাবে।
আচ্ছা তাইলে সেইম সাব্জেক্ট এর রুটিন আবার ঘুরে ফিরে আসতে তো সেই এক দুই মাস লেগে যাবে।
তাহলে এই সাবজেক্ট এর সব পড়া কি ভুলে যাব না?
আসলে ভাই বুঝে পড়লে সবই মনে থাকে।
এন্ড এই বুঝে পড়াটাও নেশা তৈরির একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
আপনি একটা ম্যাথ নিয়ে প্রবলেম এ পড়ছেন।
এইটার সমাধানের জন্য গাইড বই বা স্যারের পেছনে না দৌঁড়ায়ে আগে নিজে সলভ করার চেষ্টা করেন।
আগে সেটা জানার চেষ্টা করেন যে, এই টপিকের আপনি কি জানেন না। "
"সেই ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী, যেই ব্যক্তি জানে যে, সে কি জানে না। "
তো আপনাকেও খুঁজে বের করতে হবে যে এই ম্যাথটার কি জানেন না। এইটা করতে পারলে তবেই সমাধানের পথ খুঁজে পাবেন।
এখন ৫/৬ ঘন্টা চেষ্টা করে, অনেক ঘাটাঘাটি যুদ্ধ করে একটা লাইন,
একটা লাইন মানে যদি একটা শব্দও নিজের চেষ্টায় বুঝতে পারেন তাইলে দেখবেন আপনার খুশিতে লাফাইতে ইচ্ছা করতেছে।
আপনার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহটা আরো বেড়ে যাবে।
এইভাবে পড়লে আপনি একটা পড়া জীবনে ভুলবেনও না আর পড়ালেখাটাও ভাল লাগবে।
এই যে নিজে নিজে সমাধান করতে পারাটা একটা রিওয়ার্ড হিসেবে কাজ করে যেমন আপনার ফেইসবুকের টিউনে লাইক দিলে সেটা রিওয়ার্ড হিসেবে কাজ করে।

অনেক বান্দা আবার এতটুকু পড়ে চিন্তায় পড়ে গেছে, অনেকদিন তো বইয়ের থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন।
এখন কিভাবে পড়ালেখা শুরু করব?
একটা বাস্তব কথা বলি ভাই,
আপনি যতদিন চিন্তা করবেন কেমনে পড়ালেখা শুরু করব ততদিন পড়ালেখাটা আপনার শুরু করা হবে না।
কোন দ্বিতীয় চিন্তা না করে পড়ার টেবিলে বসে পড়তে হবে।
আপনি পড়া কিভাবে শুরু করবেন সেটা চিন্তা করতেছেন মানে,
আপনি সাঁতার শিখতে চান কিন্তু আপনি চিন্তা করতেছেন কেমনে পানিতে নামবেন।
আরে ভাই আগে পানিতে তো নামেন,
তারপরে না হয় ভাবলেন কিভাবে সাঁতার শিখতে হয়।
তো কোন চিন্তা না করেই পড়াটা শুরু করে দেন, তারপর নিজ থেকেই পথ খুঁজে পাবেন কেম্নে কি করতে হবে।

এইভাবে পড়ালেখা করলে পড়ে আমাদের নর্মাল ডিপ্রেশন কমে যায়।
কেন কমে যায় সেটা বুঝতে চাইলে আগে আমাদের বুঝতে হবে, কেন আমাদের ডিপ্রেশন হয়।
অবশ্য তার আগে বলে রাখি এই ডিপ্রেশন প্রেমের ছ্যাঁকা খাওয়া থেকে যেই ডিপ্রেশন আসে সেটা না।
এইখানে ডিপ্রেশন বলতে স্পেশালি "কিচ্ছু ভাল লাগে না " নামক ডিপ্রেশনের কথা বলা হইতেছে।

"বরং কিচ্ছু ভাল না লাগা এক প্রকার সুখজনিত অবসাদের নাম। "

সো এইসব ডিপ্রেশনের মূলে গেলে পাবেন মনোঅ্যামাইন হাইপোথিসিস।
মানে নর্মালি কিছু নিউরোট্রান্সমিটার যেমনঃএড্রেনালিন, সেরাটোনিন এইসব কম পরিমাণে রিলিজ হলেই তবে আমাদের এই সমস্ত ডিপ্রেশনের শুরু হয়।
"কিচ্ছু ভাল লাগতেছে না " এই সময়ে মনে করেন হঠাৎ করেই প্রেমে পড়ে গেলেন।
দেখবেন জীবনে এখন সবকিছুই ভাল লাগা শুরু হয়ে গেছে।
কেমন ফুরফুরা একটা মেজাজ।
আপনি ভাবতেছেন আপনার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড এর কারণে আপনার এতটা খুশি খুশি?
আরে না ভাই এইটা পরোক্ষ কারণ।
প্রত্যক্ষ কারণ হল আপনার ব্রেইনে এখন সেরাটোনিন, এড্রেনালিন এইসব নিউরোট্রান্সমিটার এর রিলিজ বেড়ে গেছে।
এই সমস্ত নিউরোট্রান্সমিটার এর রিলিজ কিন্তু আপনি যখন একটা কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে করবেন তখনো বেড়ে যাবে।
অর্থাৎ খুব মনোযোগ দিয়ে একটা কাজ করলে "কিচ্ছু ভাল লাগে না টাইপ ডিপ্রেশন কেটে যাবে।
সো আপনি যখন খুব গভীরে গিয়ে পড়ালেখা করবেন তখনো এই সমস্ত নিউরোট্রান্সমিটারের রিলিজ বেড়ে যাবে।
তাই আপনারো ভাল লাগা কাজ করবে।
তো এই কোয়ারেন্টাইনে কিচ্ছু যখন ভাল লাগতেছে না আপনার, জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছেন না,
তখন ফেইসবুকে প্রেমের চেষ্টা না করে, বইয়ের সাথে প্রেম করার চেষ্টা করুন।
বইকে নেশা বানায়ে ফেলেন।
হ্রস্ব ই কার খুব সহজেই তবে হ্রস্ব উ কারে পরিণত হবে।

লেখা-
Touhidul Islam Emon.
MBBS (4th year), Sir Salimullah Medical College, Dhaka.

 

Level 1

আমি সুমাইয়া মৌ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাষা অনেক জটিল লেগেছে।আর একটু সহজ করবেন আশাকরি।