বিশ্বে অনেক ব্যক্তিই আছে যারা নিজ যোগ্যতায়, নিজেকে করে তুলেছে অনন্য। নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরেছে সম্মানের সাথে। এর মধ্যে থাকতে পারে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। সেই পেশার মধ্য থেকে একটি পেশার নাম হচ্ছে 'উদ্যোক্তা'।
এর মধ্যে বিখ্যাত একজনের নাম হচ্ছে 'এলেন মাস্ক'। যার চিন্তাধারা একটু ভিন্নধর্মী। তিনি একবার হয়তো চিন্তা করছেন অনলাইন মাধ্যমকে নিয়ে, আবার হয়তো চিন্তা করছেন যোগাযোগ ব্যাবস্থা নিয়ে। এমনকি মহাকাশে বসবাস নিয়েও ভাবতে থাকা একজন লোক তিনি। তিনি অন্যদের মতো এই চিন্তা-ভাবনা করে থেমে থাকেননি। চেষ্টা করেছেন সেগুলোকে বাস্তবে রুপ দেয়ার এবং হয়েছেন সফলও।
'এলেন মাস্ক' একাধারে 'স্পেসএক্স, টিসলা মটোর ইনকোঅর্পারেটেড, ই বে, পে পাল' প্রতিষ্ঠা করেছে। একই ভাবে তিনি 'অপেন এআই' এর কো-ফাউন্ডার এবং কো-চেয়ারমেন।
এখন, আসুন তার জীবন সম্পর্কে কিছু ধারনা নেয়া যাক।
'এলেন মাস্কে'র পুরো নাম 'এলেন রিভ মাস্ক'। এনার বাবা ছিলেন একজন 'দক্ষিন আফ্রিকান' এবং মা ছিলেন 'কানাডিয়ান'। সে সহ, তার ছিলো আরও দুই ভাই। 'এলেন মাস্ক' তার পারিবারিক জীবন অনেক সাধারন ভাব কাটিয়েছিলেন। ছোট বাবা-মা'য়ের ছাড়াছারি হয়ে যায়। 'এলেন' তার বাবা এবং তার দুই ভাইয়ের সাথেই থেকে যান।
'এলেন' ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি অনেক আগ্রহী ছিলেন। 'এলেন মাস্ক' বিভিন্ন সময়েই তার বক্তৃতায় বলেন, যে তাকে তার মা-বাবা বড় করেননি। সে বড় হয়েছে বইয়ের মাধ্যমে। তাছাড়া বই এর পাশাপাশি কম্পিউটার নিয়েও সে অনেক আগ্রহী ছিলেন। ছোটবেলা তেই সে প্রোগামিং এর কাজ বুঝে ফেলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই সে 'ব্লাস্টারস' নামে একটি গেইম তৈরী করে ফেলেন। যেটা সে তখন একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন ৫০০ডলারের মূল্যে। যেটা সে সময়ে অনেক বড় একটি অ্যামাউন্ট।
যুবক বয়সে সে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন নিয়ে পাড়ি জমান 'মার্কিন যুক্তরাজ্যে'। সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি 'পদার্থবিজ্ঞান' এবং 'ইকোনোমিতে' স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তীতে ভর্তি হন 'ক্যালিফোর্নিয়া'র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে অর্জন করে নেন 'পিএইচডি'। এরপরে তিনি শুরু করেন তার কর্মজীবন। কিন্তু তার কর্মজীবনের শুরুটা ভালো ছিলো না। 'নেটস্কেপ' নামক একটি টেকনোলজি কোম্পানি তাকে বাতিল করে দেয়। কারন, তার ছিলো না কোনো কম্পিউটার সাইন্সের ডিগ্রী।
কিন্তু সে থেমে থাকেননি। ১৯৯৫ সালে সে তার ভাইয়ের কাছ থেকে ২৮, ০০০ ডলার ঋন নিয়ে খুলে ফেলেন একটি সফটওয়্যার। যেটি তখনকার সংবাদপত্র গুলোকে সম্মোলিত করতো। পরে ১৯৯৯ সালে তার এই সফটওয়্যারটি একটি কোম্পানি কিনে নেয়। সেটার ৭শতাংশ মালিকানা পেয়ে যায় 'এলেন মাস্ক'। এরপর সে তার নতুন একটি অনলাইন ব্যাংকিং মাধ্যম শুরু করেন। যেটার বর্তমান নাম 'পে পাল'। এই অনলাইন মাধ্যমে তিনি প্রথমে সিইও হিসেবে ছিলেন। কিন্তু পরে তাকে সরে যেতে হয়। ২০০২ সালে 'ইবে' অনলাইন মার্কেটপ্লেসকে কিনে নেয় 'পে পাল'। সেখান থেকে এলেন মাস্ক ১১.৭% এর শেয়ারে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেন।
এলন মাস্কের এই অনলাইন সফলতা পাওয়ার পর মাথায় আসে অন্য চিন্তা। সে মঙ্গলে পদার্পণের জন্য চিন্তা করতে থাকেন। এই পরিকল্পনা করে তিনি চলে যান রাশিয়া এবং সেখান থেকে দেশে ফিরে তিনি রকেট তৈরীর কোম্পানি বানান। যেখানে তিনি পরিকল্পনা করেন সাশ্রয়ী মূল্যে মহাকাশযান বানানোর জন্য। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন। পরে সেই বছরই তৈরি করা হয় 'স্পেস এক্স'। ২০০৬ সালে স্পেস এক্স তাদের প্রথম রকেট লঞ্চ করে। দুর্ভাগ্যবশত চালানোর ৩৩ সেকেন্ড পরেই সে রকেটটি ধ্বংস হয়ে যায়।
২০০৮ সালে 'স্পেস এক্স' নাসার সাথে এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করে৷ পরবর্তীতে স্পেস এক্স তাদের প্রথম মহাকাশযান 'ফ্যালকন নাইন' মহাকাশে পাঠাতে সক্ষম হয়। স্পেস এক্স এর মহাকাশযান তৈরি করার পূর্বে রকেট গুলো একবার ব্যবহার করা হতো। কিন্তু স্পেস এক্স ই প্রথম পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরি করে। যেটা একবার মহাকাশে প্রেরণ করার পর দ্বিতীয়বারও প্রেরণ করা সম্ভব হবে।
এই সফলতার পর এলন মাস্কের মাথায় আসে আরেক চিন্তা। সে পরিবেশবান্ধব কিছু করতে চায়। তিনি এর জন্য সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন। এরপর তিনি সোলার সিটি নামক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে, এটিকে এগিয়ে নিয়ে যান সামনের দিকে। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থায় তিনি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বর্তমানে যোগাযোগের জন্য যে সকল গাড়ি ব্যবহার করা হয় সেগুলো বেশিরভাগই খনিজ তেল যুক্ত হয়। যার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। দূষণ কমিয়ে আনার জন্য এলার্ম মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন 'টেসলা মটরস'। যেটার মাধ্যমে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি। গাড়িগুলো চার্জ দিয়েই চালানো যাবে। ফলে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচবে।
এলন মাস্কের এই 'টেসলা মোটরস' বিশ্বের অনেকের কাছেই পরিচিত হয়ে ওঠে। এই ধরনের বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি গুলো অনেকেরই চোখে পড়ে এবং পছন্দ হয়। যার কারনে এলন মাস্কের এই টেসলা মোটরস অনেকদূর এগিয়ে যায়। এভাবেই এলন মাস্ক একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হতে থাকেন। এ সফলতার মাধ্যমেই তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। তিনি অনেকের আইকনিক উদ্যোক্তা। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনীদের মধ্যে এই এলন মাস্ক একজন। বর্তমানে তিনি উনষাট দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের মালিক।
'এলেন মাস্ক' তার নিজের যোগ্যতায় নিজেকে নিয়ে গেছে অনেক দূরে। সে নিজের আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্যের কারনে নিজেকে নিয়ে গেছে সফলতার দ্বারপ্রান্তে। সে তার একেকটি চিন্তাভাবনাকে কার্যে রূপান্তরিত করেছে। তিনি প্রমান করে গেছেন ধৈর্য ধরে কিছুতে লেগে থাকলে সাফল্য একদিন আসবেই।
আমি মোঃ ইউসুফ আলী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 9 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।
Great