শরীর এবং মন ঠাণ্ডা থাকা নির্ভর করে পরিবেশের উপর, আর আপনার একান্ত নিজের আশ্রয় কিংবা কর্মস্থলে এই পরিবেশ কিভাবে নিয়ন্ত্রন করবেন তা নির্ভর করে আপনার অপর। বর্তমান আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একটি পুর্নাঙ্গ শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা থাকা যেন একদম অত্যাবশ্যকীয়। তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, আপনার ঘরের কৃত্রিম শীতল পরিবেশ ব্যবস্থা যেন আসল পরিবেশের ক্ষতি না করে। একটি এসির এই গুণটি নির্ভর করবে সেই এসির কার্যক্ষমতা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীতা এবং সেটিতে কতটা পরিবেশবান্ধব গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে সেসকল বিচারে।
আর যখন এসব সূচকে একটি এসি যখন পরিপূর্ণ থাকে তবে অবশ্যই আমরা সেই এসিকে একটি ভালো এবং মানসম্মত এসি বলব। আর সেটিও যদি হয় খুবি সাশ্রয়ী দামে, প্রায় সকল মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে, তাহলে তো কথাই নেই! ঠিক প্রতিনিয়ত এমনি সব নিত্যনতুন প্রযুক্তির এসি নিয়ে আসে বাংলাদেশী ইলেক্ট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন। তারই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন সম্প্রতি বাজারে উন্মোচন করেছে তাদের নতুন ডায়মন্ড সিরিজ।
আজকে আমরা এই ডায়মন্ড সিরিজের একটি ১৮০০০ বিটিইউ তথা দেড় টনের ইনভার্টার স্মার্ট এসি সম্পর্কে জানব। এসিটির মডেল নামঃ WSI-DIAMOND-18F [Smart], এসিটির ওয়াটঃ ৫২৭৫, এসিটিতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্টঃ আর-৩২, এসিটিতে ব্যবহৃত কমপ্রেসর টাইপঃ রোটারি-ইনভার্টার, এসিটির দামঃ৬৫০০০ টাকা। WSI-DIAMOND-18F [Smart] এসিটি একটি আইওটি নির্ভর স্মার্ট এসি, যার মানে এটিকে ইন্টারনেট এর সাথে সংযুক্ত করে, একটি স্মার্টফোন মোবাইল অ্যাপলিকেশন এর মাধ্যমে ঘরে বসে, এমনকি পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে খুব সহজেই।
এসিটির অন্যতম একটি কার্যকরী প্রযুক্তি হচ্ছে এসিটির ‘ফ্রস্ট ক্লিন প্রযুক্তি’। বেশিরভাগ এসির ইনডোর ইউনিট এর ‘এভাপরেটরে’ ময়লা জমে। এখানে ময়লা জমতে জমতে নানারকম ব্যাকটেরিয়া তথা মাইক্রোঅর্গানিজম’ও জন্ম নেয়। এমনকি সামনের এই অংশে ফাঙ্গাসও জমে! এই জন্য সবাই নিয়মিত এসির ইনডোর ইউনিট খুলে পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে WSI-DIAMOND-18F [Smart] এসিতে থাকা এই ফ্রস্ট ক্লিন প্রযুক্তি এসিটির রিমোট কন্ট্রোলার এর মাধ্যমে চালু করলে, বিশেষ প্রক্রিয়ায় এসিটি নিজে থেকেই এই এভাপরেটর’কে পরিষ্কার করার কাজ করবে; একে শুষ্ক এবং ফাঙ্গাসমুক্ত রাখবে।
এসিটিতে পাওয়া যাবে রোটারি ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসর। ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি সাধারন ইনভার্টার এসির থেকেও অনেক বেশি কার্যকর। নন-ইনভার্টার এসি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে। এখানে এসি পূর্ণ শক্তিতে চালু হওয়ার পর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক অবস্থায় এলে এসির কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। আবার ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলে, তখন চালু হয়। এভাবে বারবার এসি চালু ও বন্ধ হওয়ার কারণে, এসি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যার ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। পরে রুমের পরিবেশের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে।
একটি এসির কার্যক্ষমতা কতটা ভালো এবং সেটি বাতাসে ঠিক কি পরিমাণে তাপ ছড়াচ্ছে তা নিরূপণের অনেকগুলো বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে এসির COP তথা কো-ইফিসিয়েন্ট অফ পাওয়ার। COP রেটিং যত বেশি হবে সেই এসির পারফর্মেন্স তত বেশি ধরা হবে, COP রেটিং পয়েন্ট মূলত ১.৫ থেকে ৪ এর ভেতর হয়। মূলত COP রেটিং ৩ এর ওপর হলে সেই এসিকে সাশ্রয়ী এবং কার্যক্ষমতার দিক দিয়ে তুলনামূলক ভালো ধরা হয়। আর এই ডায়মন্ড এসিটির COP রেটিং পয়েন্ট ৩.৩৫। সবমিলিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কমপ্রেসর লাইফ, সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ খরচ, উন্নত মোটর নিয়ে এসিটি ৬০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
এসি কতটা সাশ্রয়ী, সেটিও অনেকটা নির্ভর করে এসিটিতে কোন রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে তার উপর। ডায়মন্ড এসিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আর-৩২ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক এয়ার কন্ডিশনারে আর৪১০এ বেশ মানসম্মত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, আর ৩২ তার থেকেও পরিবেশসম্মত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। আগে ‘আর২২’ ব্যবহার করা হত যা ছিল অজোন স্তর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
যেহেতু গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মত বৈশ্বিক সমস্যার জন্য অন্যতম দ্বায়ী এসির মত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র, তাই এসিতে সঠিক এবং পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা আমাদের জন্য বিবেচনায় নেয়া অতীব জরুরি। রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস এর আরেকটি সূচক মাত্রা হল GWP, তথা গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল মান। GWP মান যত কম হবে এসিটি বাতাসে তত কম তাপ উৎপন্ন তথা কার্বন ছাড়বে। R-410A রেফ্রিজারেন্ট এর GWP মান ২০৯০। এবং R-32 রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস, এটির GWP মান ৬৭৫।
ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার প্রযুক্তি, ৪ স্তরে নানা দিক থেকে অনেক বেশি কার্যক্ষম বলে এসিটি এমনিতেও ৬০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। আর তাছাড়াও এসিটির কমপ্রেসর বিশেষ করে আমাদের দেশের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে আমাদের দেশের সাপেক্ষে তা অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে অন্যান্য বাইরের এসির তুলনায়।
ডায়মন্ড এসিতে আপনি পাবেন ১৬ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত টেম্পারেচার মোড। বাজারের বহু এসিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাওয়া যায় ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে এতে সর্বনিম্ন ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পাবেন। ডায়মন্ড এসিটি মাল্টি ডাইরেকশনে বাতাস প্রবাহ করতে সক্ষম। বহু এসি শুধু সিঙ্গেল ডাইরেকশনে বাতাস প্রবাহ করে, যার ফলে যারা কেবল এসির সামনে অবস্থান করে তারাই বাতাস পায়, ঘরের কোনায় কিংবা অন্য কোন স্থানে থাকা ব্যক্তি বাতাস পায় না। তবে ডায়মন্ড এসির মাল্টি ডাইরেকশনে বাতাস প্রবাহ করার সক্ষমতার ফলে সব দিকেই সমানভাবে শীতল বাতাস প্রবাহিত হবে।
এসিটি দেখতে অবশ্যই আপনার আসেপাশের নিকটস্থ ওয়ালটন ডিলার শো-রুম অথবা ওয়ালটন প্লাজায় চলে যেতে পারেন। অথবা কিনতে এবং নানারকম তথ্য দেখে আসতে পারেন ওয়ালটন ইপ্লাজা থেকে। এসিতে থাকছে ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি। এসির কম্প্রেসরে আপনি পাবেন সর্বোচ্চ ১০ বছরের ওয়ারেন্টি। আরো পাবেন ৩ বছর পর্যন্ত ফ্রি বিক্রয়োত্তর সুবিধা। বর্তমানে সারা দেশে আইএসও সনদপ্রাপ্ত ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কর্তৃক পরিচালিত ৭২টি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। যেখানে যেকোনো সমস্যায় খুব সহজেই সেবা পেয়ে যাবেন।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।